পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
শফিউল আলম : চাল আমদানির হার ব্যাপক। প্রতিদিনই চট্টগ্রাম বন্দরে প্রচুর চালের চালান খালাস হচ্ছে। দেশে চালের মজুদ তলানিতে ঠেকে গিয়ে মূল্যবৃদ্ধির পর ব্যবসায়ীদের কৌশলী চাপ ও আবদার পূরণে শুল্ক-কর ছাড়ের সুযোগ অবারিত করে দেয় সরকার। এরপর থেকেই চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে শুল্ক-কর ছাড় পাওয়া চালের আমদানি চালান আসে একের পর এক। শুধুই তাই নয়, চট্টগ্রাম অঞ্চলের খুব কাছাকাছি চাল আমদানির বড় উৎস মিয়ানমারের আকিয়াব (সিটুইয়ে) থেকে টেকনাফ স্থল বন্দর দিয়ে ব্যাপক পরিমাণে চাল আসতে থাকে।
বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে জেটি-বার্থে দ্রুতায়িত বিশেষ সুবিধা দিয়েই সরকারি খাতে পাঁচটি জাহাজে বোঝাই প্রায় সোয়া এক লাখ মেট্রিক টন চাল খালাস কাজ অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু এতোসব উদ্যোগ-আয়োজন সত্তে¡ও অব্যাহত চাল আমদানির কোন সুফলই পাচ্ছেন না ক্রেতা সাধারণ। চালের দাম এখনও আগের সেই আকাশছোঁয়াই রয়ে গেছে। এমনকি অতিরিক্ত চাহিদা রয়েছে এমন সবধরনের চাল কেজিতে আরও দুই থেকে ৫টাকা পর্যন্ত বাড়তি দাম উসুল করে নিচ্ছে অতিমুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা। গতকাল (রোববার) বন্দরনগরী চট্টগ্রামের অন্যতম বৃহৎ চালের বাজার রেয়াজুদ্দিন বাজার ও চকবাজারে বিভিন্ন দোকানে মূল্য যাচাই করে কোথাও চালের দর হ্রাসের আলামত মিলেনি। গরিবের মোটা চাল হিসেবে পরিচিত স্বর্ণা ও চায়না ইরি চাল খুচরা কেজি ৪৬ থেকে ৪৮ টাকার নিচে নেই। যদিও টিসিবি গতকালের এ চালের দর বলছে কেজি ৪৩ থেকে ৪৫ টাকা। গতবছরের এ সময়ের তুলনায় সবচেয়ে কম দামি মোটা চালের দাম বেড়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ। আর টিসিবির হিসাবেও তা ৩৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। অতিসম্প্রতি ভারত ও মিয়ানমার থেকে নিম্নমানের চাল আমদানি করা হয়েছে। যার বেশিরভাগই উৎকট দুর্গন্ধযুক্ত। গরিবের মোটা চাল ছাড়াও মধ্যবিত্তের পছন্দের পাইজাম, মিনিকেট, জিরা শাইল, নাজির শাইল, লতা চাল বিক্রি হচ্ছে কেজি ৫২ টাকা থেকে ৬২ টাকা পর্যন্ত। মধ্যমমানের চালের মূল্য বৃদ্ধির হার গতবছরের দরের তুলনায় প্রায় ১৮-২০ শতাংশ পর্যন্ত। সরু ও সুগন্ধি চাল মানভেদে কেজি ৮০ থেকে ১১০ টাকায় বিকিকিনি হচ্ছে।
এ ব্যাপারে খুচরা ব্যবসায়ী ও দোকানিরা বলছেন, পাইকারি আড়তে দাম না কমার কারণে তাদেরকে আগের বেশি মূল্যে বিক্রি করতে হচ্ছে। অন্যদিকে পাইকাররা বলছেন, চালের চাহিদা ও ঘাটতির বিপরীতে আমদানি ও যোগান এখনো পর্যাপ্ত নয়। তবে আমদানি যেহেতু বেড়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে দামও কমে আসবে। চালের আন্তর্জাতিক মূল্যও বর্তমানে চড়া বলে তারা জানান। তাহলে সরকারের শুল্ক-কর ছাড়ের সুবিধা কার পকেটে যাচ্ছে? ক্রেতাদের এই প্রশ্নের জবাব মিলছে না।
এদিকে সরকারি খাতে সরাসরি অর্থাৎ জি-টু-জি চুক্তির ভিত্তিতে আমদানিকৃত আরও ৫৫ হাজার ৮শ’ মেট্রিক টন চাল বোঝাই দু’টি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে অবস্থান করছে। এই ৫৫ হাজার মেট্রিক টনসহ ৫টি জাহাজযোগে এক লাখ ২৪ হাজার ৩শ’ মেট্রিক টন চাল এ যাবত চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছেছে। সর্বশেষ দুই জাহাজের আগে ৩টি জাহাজযোগে সরকারি খাতে আমদানিকৃত চালের চালান আসে। ভিয়েতনাম সরকারের সাথে জি-টু-জি চুক্তির মাধ্যমে খুব দ্রুত আনীত তিনটি জাহাজে বোঝাই চালের খালাস কাজ অব্যাহত রয়েছে। এরমধ্যে বন্দরের জেটি-বার্থে ‘এমভি ভিসাই ভিসিটি-৫’ জাহাজে বোঝাই ২০ হাজার মেট্রিক টন চাল খালাস সম্পন্ন হয়েছে। সম্প্রতি অতিবর্ষণে ‘ভিসাই ভিসিটি’ ও ‘প্যাক্স’ জাহাজ দু’টি থেকে ভিয়েতনামের চাল খালাস ব্যাহত ও বিলম্বিত হয়। তবে নমুনা পরীক্ষাসহ শুল্ক আনুষ্ঠানিকতা খুব দ্রুত সম্পন্ন করা হয়, যার উদ্দেশ্য ছিল বাজারে চালের ঘাটতি নিরসন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোঃ নজিবুর রহমান ও সংশ্লিষ্ট শীর্ষ কর্মকর্তারা চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে গিয়ে সরেজমিনে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চাল খালাস কাজ পর্যবেক্ষণ করেন। অথচ আমদানিকৃত চালের যে ইতিবাচক প্রভাব বাজারে পড়ার কথা ছিল তা অনুপস্থিত।
শিপিং সূত্রে জানা গেছে, চালের মজুদ ঘাটতি নিরসনে এ বছর ভিয়েতনাম থেকে ১০ লাখ মেট্রিক টন চাল জি-টু-জি চুক্তির ভিত্তিতে দ্রুতায়িত করেই আমদানি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে আনীত চাল এরই অংশ। দেশে চালের ঘাটতি ও মূল্যবৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে ভিয়েতনাম থেকে সরকারিখাতে চাল আমদানির ব্যাপারে বাংলাদেশ-ভিয়েতনাম সরকারের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ভিয়েতনাম ছাড়াও থাইল্যান্ড থেকে আরো চালের জাহাজ এ মাসে দফায় দফায় চট্টগ্রাম বন্দরে আসার কথা রয়েছে। এরফলে চালের সঙ্কট কমে আসবে যতটা আশা করা হয়েছিল বাস্তবে তা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ভিয়েতনাম সরকারের সাথে চুক্তির মাধ্যমে আমদানিরত চাল সরবরাহ করছে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান। আমদানি চালের ৬০ ভাগ চট্টগ্রাম বন্দরে এবং ৪০ ভাগ মংলা বন্দর দিয়ে খালাস সম্পন্ন করা হবে। প্রথম দফা চালানের মোট ২ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন ভিয়েতনামের সিদ্ধ ও আতপ চালের ক্রয় মূল্য পড়ছে প্রায় ৯০৯ কোটি টাকা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।