পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মহসিন রাজু, বগুড়া থেকে : বগুড়ার সন্ত্রাস চাঁদাবাজি ধর্ষণ খুন দখলবাজিসহ সব অপরাধ ও আন্ডার ওয়ার্ল্ডের অন্ধকার জগতের অধিপতি তরুণ কোটিপতি তুফান সরকারকে গ্রেফতার, সরকারি দলের অঙ্গসংগঠন শ্রমিকদলের শহর শাখার আহ্বায়কের পদ থেকে তুফান সরকারকে এবং যুবলীগের শহর কমিটির যুগ্ম সম্পাদকের পদ থেকে তুফানের বড় ভাই মতিন সরকারকে বহিষ্কারকে ঘিরে যুগপতভাবে উত্তপ্ত ও আতঙ্কিত বগুড়ায় আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা পরিষ্কার ভাবে ঘোষণা দিয়েছেন, ‘‘আওয়ামীলীগের নাম ভেঙে কোনো অপরাধীরই পার পাওয়ার সুযোগ নেই। ’’
গতকাল দুপুরে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে বঙ্গবন্ধুর শোক দিবসের ধারাবাহিক কর্মসূচির পাশাপাশি বগুড়ায় চলমান সন্ত্রাস, চাঁদাবাজী, খুন, ধর্ষণ, পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজি, জবর দখলসহ সব অপরাধ নির্মূলের দাবিতে আয়োজিত এক বিরাট সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বগুড়ার জৈষ্ঠ রাজনীতিবিদ মমতাজ উদ্দিন পরিষ্কার ভাষায় ঘোষণা দেন, যারা চাঁদাবাজ, খুনি, ধর্ষক দখলদার, সমাজে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী তাদের কাউকে ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই। প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষন করে তিনি বলেন, যারা সমাজ বিরোধী, অপরাধী তারা নিজেদের সুরক্ষার জন্য কখনো যদি আওয়ামী লীগের পরিচয় দেয়, তাদেরকে ছাড় দেবেননা।’’
সমাবেশে উপস্থিত একাধিক নেতা কর্মী ইনকিলাবকে নিশ্চিত করেছেন, দল থেকে মতিন তুফানকে বহিষ্কারকে ঘিরে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে যারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের ফর্মুলায় পানি ঘোলা করার অপচেষ্টা করছিলেন তারা এর থেকে শিক্ষা নিয়ে আশা করি নিজ নিজ প্রয়াস থেকে বিরত থাকবেন। অন্যদিকে প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের যারা মতিন সিন্ডিকেটের সুবিধাভোগী তারাও দলীয় পরিচয়ের নামে এতদিন অপরাধের এবং অপরাধিদের প্রশ্রয় দেয়ার যে নীতি অনুসরণ করে চলছিলেন তারও সতর্ক হয়ে যাবেন।
এদিকে আওয়ামী লীগ ছাড়াও বগুড়ায় কিশোরী ধর্ষণ ও মা-মেয়েকে বর্বর নির্যাতনসহ সারাদেশে নারী নির্যাতনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বগুড়ার সাতমাথায় ‘জেলা যৌন হয়রানি নির্মূলকরণ নেটওয়ার্ক, বগুড়া ও কমিউনিটি ওয়াচ গ্রæপ’ এর যৌথ উদ্যোগে এক প্রতিবাদী ‘মানববন্ধন কর্মসূচি’ পালিত হয়েছে। উক্ত মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন জেলা যৌন হয়রানি নির্মূলকরণ নেটওয়ার্কের আহবায়ক জনাব,অ্যাডভোকেট আল মাহমুদ, সুজনের সাবেক সভাপতি মো: মোস্তাফিজুর ররহমান ফিজু, সভাপতি সুজন, জিয়াউর রহমান প্রমুখ।
তুফান ও রুমকির রিমান্ড শেষ আজ ঃ
দেশ জুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী তরুণী ধর্ষণ ও ধর্ষিতা ও তার মা ও মেয়েকে মাথার চুল কেটে দেয়ার ঘটনায় গ্রেফতার তুফান সরকার ও বগুড়া পৌরসভার মহিলা ওয়ার্ড কাউন্সিলর মারজিয়া হাসান রুমকির ৩য় দফার ২দিনের রিমান্ড শেষ হওয়ায় আজ রোববার আবার তাদের আদালতে ৪র্থ বারের মতো হাজির করা হবে বলে জানিয়েছেন, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বগুড়া সদর থানার ওসি ( অপারেশন ) আবুল কালাম আজাদ। তিনি আরও জানান, এবারও রুমকি এবং তুফান ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে না চাইলে তাদেরকে পুণঃ রিমান্ডের জন্য আবেদন জানানো যেতে পারে।
মানবী রুমকির দানবীয় রুপের অজানা অধ্যায়
তুফানের হাতে বøাক মেইলিং ও ধর্ষিতা হবার সাতদিন পর তরুণী সোনালী ও তার মা ’ মুন্নি বেগম ক্যাডার দিয়ে নিজের বাড়িতে ধরে এনে নারী নির্যাতনের যে ভয়াল তান্ডব সৃষ্টি করেন তার নাম মার্জিয়া হাসান রুমকি। তিনি বগুড়া পৌরসভার ৪, ৫ ও ৬ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা আসনের কাউন্সিলর। বগুড়ার পরিবহণ জগতের এক গড ফাদারের ভাগ্নের সাথে তার বিয়ে হওয়ায় স্বামীর প্রভাবে তিনি উচ্ছৃংখল ও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। স্বামীর পরিবারের সাথে আওয়ামী রাজনীতির সংশ্লিষ্টতা থাকলেও তিনি দল করতেননা। বিগত পৌরসভা নির্বাচনের সময় জন প্রতিনিধি হওয়ার খায়েশ থেকে তিনি তার এক আত্মীয়ের সুত্র ধরে প্রথমে বিএনপির মনোনয়নের জন্য বগুড়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন চানের কাছে যান। কিন্তু জয়নাল আবেদীন চান তার প্রস্তাব সরাসরি নাকোচ করে দেন। এরপর তিনি স্বামী ও বোন জামাই তুফান সরকারের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের মনোয়ন লাভের চেষ্টা করেন। সেখানেও রুমকির প্রত্যাশা ব্যর্থ হয়। ফলে সতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তিনি নির্বাচন স্বামী জাহিদুর রহমান ও বোন জামাই তুফান সরকারের অর্থ ও ক্যাডার ব্যবহার করে বিপুল ভোটে জিতে কাউন্সিলর হন রুমকি। ভোটে জিতেই কাল বিলম্ব না করে তিনি বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেয়ার ঘোষণা দেন।
ওয়ার্ড কাউন্সিলর হিসেবে কাজে যোগ দিয়েই দেখেন বসত বাড়ি নির্মাণের জন্য প্লান পাসের সময় কিছু টাকার ভাগ চলে আসে তার কাছে। বিচার শালিসেও পাওয়া যায় কাঁচা টাকা। বিভিন্ন সূত্রে হাতে কাঁচা টাকা আসায় ক্রমশ উচ্চাভিলাসী হয়ে উঠতে থাকেন রুমকি। একপর্যায়ে টাকার নেশায় অন্ধ রুমকি তার ওয়ার্ডের বিশাল এলাকায় ধনী লোকদের বাড়ির তালিকা তৈরি করে তাদের কাছে ক্যাডার পাঠিয়ে দেখা করতে বলেন। বাড়ির মালিকরা তার সাথে দেখা করতে এলে তাদের প্রত্যেককে একই ভাষায় বলেন, আপনাদের বাড়ির প্ল্যানে গন্ডগোল আছে। গন্ডগোল ঠিক করতে হলে আমাকে টাকা দিতে হবে। টাকা না দিলে আমার ছেলেরা (ক্যাডার বাহিনী) আপনাদের পাছায় চাকু মারবে। কোন কোন মালিক “আমাদের বাড়ির প্ল্যানতো আপনি কাউন্সিলর হওয়ার আগেই পৌরসভা পাস করে দিয়েছে আবার কেন প্ল্যানে গন্ডগোলের কথা বলছেন, ধরনের কথাবার্তা বললে রুমকির নির্দেশে তার ক্যাডার বাহিনী তাদের লাঞ্ছিত করে। ফলে কোন রকম গন্ডগোলে না গিয়ে বাড়ির মালিকরা যে যা পেরেছে ওই পরিমান অর্থ দিয়ে রুমকির হাত থেকে রেহাই পেয়েছে। শুধু নিজের এলাকায় নয় পৌরসভার কিছু কিছু সেকশনে কাজ করার কর্মচারীদের কাছ থেকেও টাকা চাইতেন। তার আচরণের জন্য সবসময় মান সম্মানের ভয়ে থাকতেন বগুড়া পৌরসভার কর্মচারীরা।
রুমকি নব্য আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে মহিলা আওয়ামী লীগ বা যুব মহিলা লীগের কোন নেত্রী যদি রুমকিকে অবজ্ঞা করতেন তাহলে তার ভাগ্যে জুটতো চড়-থাপ্পড়। কিন্তু সবাই মান সম্মানের ভয়ে রুমকির এই নির্যাতন নিরবে সহ্য করতেন। আর গোপনে আল্লাহর কাছে দোয়া চাইতেন এমন কথা বলেছেন আওয়ামী লীগ সংগঠনের অনেক নেত্রী।
পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর রুমকির হাতে নির্যাতিত অনেকেই এখন আশঙ্কা করেছেন কালো টাকা ও প্রভাবের জোরে রুমকি হয়তো আবার বেরিয়ে আসবেন আরও ভয়ংকর দানবীয় রূপ ধরে। তারা বলেছেন প্রশাসন যেন এমন পদক্ষেপ নেয় আদালত যেন রুমকিকে এমন শাস্তি দেয় যাতে সে যেদিন কারাগার থেকে বের হবে সেদিন যেন একজন অনুতপ্ত ভাল মহিলা হিসেবেই বের হয়ে আসে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।