পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আরটি ও রয়টারস : চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ভারতকে হয় চীনা ভূখন্ড ছাড়তে হবে নয় যুদ্ধের সম্মুখীন হতে হবে।
মঙ্গলবার চায়না গ্লোবাল টিভি নেটওয়ার্ক (সিজিটিএন)-এ আয়োজিত এক আলোচনায় আমন্ত্রিত বক্তা ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল এবং বর্তমানে প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক অশোক মেহতা এবং চীনা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সহযোগিতা কেন্দ্রের পরিচালক সিনিয়র কর্নেল ঝু বো’র মধ্যে উত্তপ্ত বিতর্ক চলাকালে চীনা কর্মকর্তা এ হুঁশিয়ারি দেন। তাদেরকে দোকলাম মালভূমি নিয়ে ভারত ও চীনের মধ্যে বিরাজিত উত্তেজনা বিষয়ে কথা বরার জন্য আমন্ত্রণ করা হয়। এ সময় ভারতের লড়াকু প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ নয়া দিল্লীর বিরুদ্ধে যুদ্ধের উত্তেজনা মূলক খবর প্রচারের জন্য চীনকে অভিযুক্ত করার পর তার চীনা প্রতিপক্ষের কাছ থেকে কড়া জবাবের সম্মুখীন হন।
প্রথমে কথা শুরু করে অশোক মেহতা দীর্ঘ ও আক্রমণাত্মক বক্তব্যে চীনাদেরকে আগ্রাসী পন্থায় ভারত বিরোধী কথা বলার জন্য অভিযুক্ত করেন। তিনি বলেন, চীনা মিডিয়া, থিংকট্যাংক, সিনহুয়া, গেøাবাল টাইমস, পিএলএ ডেইলি ভারত সম্পর্কে অত্যন্ত আগ্রাসী কথা লিখছে এবং নয়া দিল্লীকে হুমকি দিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টিকর খবর প্রকাশ করে তাকে শিক্ষা দিতে দ্বিমুখী বিরোধ শুরুর মাধ্যমে ভারতকে যুদ্ধে টেনে নিতে চাইছে।
অনুষ্ঠান সঞ্চালক এ ব্যাপারে তিনি কোনো প্রমান দিতে পারবেন কিনা এবং যুদ্ধবাজ মন্তব্য সম্বলিত সুনির্দিষ্ট চীনা নিবন্ধের নাম বলতে পারবেন কিনা জিজ্ঞেস করলে ভারতীয় বিশেষজ্ঞ কোনো নাম বলতে ব্যর্থ হন। তবে তিনি তার পেশাগত ব্যাকগ্রাউন্ডের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আমি ১৯৯১ সালে সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহণ করি। সে বছর থেকেই আমি মিডিয়ার সাথে যুক্ত হই। তিনি বলেন, আমি টিভিতে কথা বলি, আমি একজন কলামিস্ট। সে কারণে আমি কয়েক ডজন সংবাদপত্র ও সাময়িকী পাঠ করে থাকেন।
তার কথায় বাধা দিয়ে সিনিয়র কর্নেল ঝু বলেন, জেনারেল! আপনি বেশী কথা বলছেন। এটা এ আলোচনার সঠিক পথ নয়। তিনি বলেন, আমাকে কয়েক সেকেন্ড সময় দিন। আপনারা (ভারতীয় সৈন্যরা) চীনের ভূখন্ডে রয়েছেন। সুতরাং আপনারা যদি যুদ্ধ না চান তাহলে আপনাদেরকে চীনা ভূখন্ড ছাড়তে হবে।
টিভিতে সরাসরি সম্প্রচারিত এ উত্তপ্ত কথাবার্তার মূলে রয়েছে সংকীর্ণ দোকলাম ( চীনা ভাষায় দংলাং) সীমান্ত মালভূমিকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট বিরোধ। ভারত এটিকে ভুটানের ভূখন্ড বলে দাবি করে, চীন বলে এটি তার ভূখন্ড।
ঝু জিজ্ঞেস করেন এ এলাকায় ভারতের প্রবেশ করার সাহস হল কি করে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এটা করার কোনো অধিকার আপনাদের নেই, ভুটান আপনাদের আমন্ত্রণ জাানায়নি।
এর পাল্টা জবাবে মেহতা বলেন, এটা চীনের ভূখন্ড নয়। তাকে এ সময় একটি কাগজ পড়তে দেখা যায়। তিনি বলেন, ভুটানিরা জোরগলায় পরিষ্কার ভাবে বলেছেযে এটি একটি বিরোধপূর্ণ ভূখন্ড। তিনি এর স্থিতাবস্থা বিঘিœত না করার আহবান জানান।
উল্লেখ্য, চীনের নির্মাণ ব্রিগেডগুলো জুন মাসে দোকলাম মালভূমিতে সড়ক নির্মাণ শুরু করলে বর্তমান বিরোধের শুরু হয়। ভুটান ভারতের সাহায্য চাইলে ভারত সীমান্ত বরাবর সৈন্য মোতায়েন করে।
ভারত চীনের সড়ক নির্মাণের বিরোধিতা করে বলে, এর ফলে চীনারা ‘চিকেন্স নেক’ নামে পরিচিত কৌশলগত শিলিগুড়ি করিডোরের নিকটবর্তী হওয়ার সুযোগ পাবে। এ সংকীর্ণ করিডোর ভারতের বাকি অংশের সাথে তার উত্তরপূর্ব অংশকে যুক্ত করেছে।
চীন ভুটান থেকে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে। চীন দোকলাম মালভূমিকে তার অংশ বলে প্রমাণের জন্য ঐতিহাসিক দলিলপত্র দেখিয়েছে।
বুধবার এক বিবৃতিতে চীন বলে, ভারতীয় সৈন্যরা এখনো চীনা ভূখন্ডে রয়েছে এবং চীন সতর্ক প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে ভারতকে সৈন্য প্রত্যাহার করার আহবান জানিয়েছে।
রয়টারস চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে উদ্ধৃত করে বলে, ভারত তার ভুল পদক্ষেপ সংশোধনের প্রকৃত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি তো বটেই, তারা ভারতীয় সৈন্যদের অবৈধ সীমান্ত অতিক্রমের পক্ষে অর্থহীন যুক্তি প্রদর্শন করছে যার কোনো ভিত্তি নেই।
ভারত সিকিম থেকে কোনো সেনা প্রত্যাহার করেনি
এদিকে চীন-ভারত সীমান্তের বিরোধপূর্ণ ডোকলাম উপত্যকায় কোনো সেনা প্রত্যাহার করা হয়নি বলে জানিয়েছে ভারত। গত জুন মাসের ১৮ তারিখ থেকে সেখানে মুখোমুখি অবস্থানে চীন ও ভারত সেনাবাহিনী।
গণমাধ্যমের কাছে দেয়া নথিতে বুধবার চীন দাবি করে, গত ১৬ জুন ভারতের ২৭০ জন সেনা ডোকলাম উপত্যকায় প্রবেশ করে সীমান্তের ১০০ মিটার গভীরে প্রবেশ করে চীনের রাস্তা নির্মাণ বাধা দেয়। জুলাইয়ের শেষের দিকে এখনো ৪০ জন ভারতীয় সেনা ও একটি বুলডোজার বে আইনিভাবে সেখানে অবস্থান করছে।
ভারতীয় সূত্রের বরাতে জানিয়েছে, দুই পক্ষে আনুমানিক ৪০০ জন করে সেনা মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। নয়াদিল্লি ও বেইজিং সিকিমে তিনদেশের সীমান্ত সংযোগ রেখা সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যায় বিশ্বাস করে। গত মাসে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, দুই দেশের সরকার ২০১২ সালে একমত হয়েছিল যে তিনদেশের সীমান্ত সংযোগ সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত করা হবে। এককভাবে এই সীমান্ত সম্পর্কে কোনো কিছু নির্ধারণ করা হবে সেই সমঝোতার লঙ্ঘন।
এদিকে চীনের দাবি ১৮৯০ সালে গ্রেট ব্রিটেন ও চীনের মধ্যে হওয়া সিকিম ও তিব্বত সংশ্লিষ্ট কনভেনশনে এটা পরিষ্কার করে বলা হয়েছিল, চীন সীমান্তের মধ্যে অবস্থিত ডংলাং (ডোকলাম) এলাকা অবিসংবাদিতভাবে চীনের ভূখন্ডের অন্তর্গত।
গতকাল প্রকাশিত নথিতে চীন, ভুটান ও ভারতের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের সমালোচনা করা হয়। সেখানে বলা হয়, চীন ও ভুটানের সীমান্ত বিরোধের মধ্যে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে ভারতের কোনো অধিকার নেই সেখানে বাধা দেয়ার। চীনের ভূখন্ডে ভারতের অনুপ্রবেশ শুধু চীনের ভূখন্ডের সার্বভৌমত্বই ক্ষুণœ করেনি বরং এটি ভুটানের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতাকেও হুমকির মুখে ফেলেছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দাবি, ডোকলামে চীনের রাস্তা নির্মাণ বন্ধর সিদ্ধান্ত ভারত এককভাবে নেয়নি বরং ভুটানি কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করেছে।
ভারতের দাবি ডোকলাম উপত্যকায় চীনের রাস্তা নির্মাণ ভারতের জন্য কৌশলগত নিরাপত্তা হুমকি। এই রাস্তা নির্মাণ হলে চীন ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি প্রদেশকে সংযুক্ত করা সরু ভূমি ‘চিকেন্স নেক’-এ প্রবেশ করার সক্ষমতা অর্জন করবে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বলেছেন, সমস্যা সমাধানে দুই পক্ষেরই সেনা প্রত্যাহার করে আলোচনায় বসতে হবে। তবে চীন আলোচনার পূর্বশর্ত হিসেবে বলেছে, আগে ভারতকে সেনা প্রত্যাহার করতে হবে।
তবে এনডিটিভি চীন সরকারের শীর্ষস্থানীয় সূত্রের বরাতে জানিয়েছে, পর্দার আড়ালে এই বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে এবং দুই পক্ষেই আশা করছে সীমান্ত সমস্যার সমাধান দ্রæতই হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।