Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

১০ আসামির ৯ জনই গ্রেফতার

বগুড়ায় তরুণী ধর্ষণ মামলায় এএসপির ব্রিফিং

| প্রকাশের সময় : ১ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মোটা টাকার অফারেও পাওয়া গেল না আসামি পক্ষের উকিল
মহসিন রাজু, বগুড়া থেকে : বগুড়ায় চাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী তরুনী সোনালী ধর্ষণ ও সে সহ তার মায়ের ওপর বর্বর নির্যাতনের ঘটনায় বগুড়ার পুলিশ সুপার আছাদুজ্জামান গতকাল তাঁর কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিং এ বলেছেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে পুলিশ এই ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার ১০ আসামীর মধ্যে ৯ জনকেই গ্রেফতার করেছে। এজাহারের বাইরেও সোনালী ও তার মা’ মুন্নী বেগমকে নির্যাতনের দায়ে অভিযুক্ত ওয়ার্ড কাউন্সিলর রুমকীর বাবা ও ধর্ষক তুফানের শ্বশুর রুনুকেও গ্রেফতার করেছে। যে নাপিতকে দিয়ে সোনালীদের ন্যাড়া করা হয়েছিল সেই জীবন লালকেও প্রেস ব্রিফিং চলাকালীন সময়ে গ্রেফতার করা হয় বলেও জানান হয় ।
সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, প্রভাবশালী হলেও আসামিদের গ্রেফতারের বিষয়ে কোন চাপ ছিলো না। গণমাধ্যম কর্মীরাও নির্মম এই ঘটনাটি জানার আগেই অভিযোগ পেয়ে প্রধান আসামি ধর্ষক তুফান সরকারসহ তার সহযোগীদের গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ সুপার আরো বলেন, ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন আইনে দুটি মামলা করা হয়েছে। দুটি মামলারই প্রধান আসামি তুফান সরকার। সন্দেহজনক আসামি হিসেবে রুমকির বাবা রুনুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলার আসামি তুফান সরকার, তার স্ত্রী আশা সরকার, আশার বড় বোন কাউন্সিলর মার্জিয়া হাসান রুমকি, তুফানের শ্বাশুড়ী রুমি, সহযোগি আতিক, মুন্না, দিপু, জিতু ও রুপমকে গ্রেফতার করা হয়। এজাহারভুক্ত অপর আসামি শিমুলকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। দ্রুততম সময়ে এ ধরণের প্রভাবশালী আসামিদের গ্রেফতার করা পুলিশের বিশেষ সাফল্য।
৩ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন : হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তরুণী সোনালীকে ধর্ষণ ও মাসহ তার ওপর পরিচালিত শারীরীক নির্যাতনের ব্যাপারে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের উপাধ্যাক্ষ্য ডাঃ রেজাউল আলম জুয়েল জানান, ফরেনসিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডাঃ এ কে এম সাইফুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। ধর্ষিতার বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা করা হয়েছে। সবগুলো রিপোর্ট একত্রিত করে আগামী সাতদিনের মধ্যে রিপোর্ট প্রদান করা হবে।
দুদকের তদন্ত কার্যক্রম : ধর্ষনের অভিযোগে অভিযুক্ত বহিষ্কৃত শ্রমিক নেতা তুফান সরকার ও তাদের পরিবারের অপরাপর সদস্যের অবৈধ অথর্ বিত্তে¡র উৎস অনুসন্ধানে বিভাগীয় তদন্ত শুরুর প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানা গেছে। দুদক বগুড়ার সহকারী পরিচালক মোঃ আমিনুল ইসলাম বিষয়টি স্বীকার করেছেন ইনকিলাবের কাছে।
সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নানের অনুদান : ধর্ষিতা সোনালীর মা জানান, সোমবার সকালে কেন্দ্রীয় আ’লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নান তাদের হাসপাতালে দেখতে আসেন। চিকিৎসার জন্য তিনি নগদ ৫০ হাজার টাকা প্রদান করে জানান, তিনি এবং তার সংগঠন সব সময় সুষ্ঠ বিচারের লক্ষ্যে তাদের পাশে থাকবে।
বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান : ধর্ষিতার মা গতকাল অভিযোগ করে বলেন, ধর্ষক তুফানের পক্ষ নিয়ে বিভিন্ন মহল বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে ঘটনার মিমাংসার জন্য চাপ ও প্রলোভন দিচ্ছে। তাদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে আমি বলে দিয়েছি, আমার মেয়ের বিয়ের বয়স হয়নি। পড়া লেখা করবে সে। তাছাড়া তুফানের স্ত্রী-সন্তান রয়েছে। কোনভাবেই আমার মেয়েকে তার সাথে বিয়ে দেব না। আমি তুফান ও কাউন্সিলর রুমকির দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি চাই। এমন শাস্তি চাই সারাদেশের মানুষ তাদের শাস্তি দেখে যেন খুশি হয়।
রিমান্ডে রুমকি ও আশা সহ অন্যরা : তরুণী ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনায় গ্রেফতারকৃত আসামি তুফানের স্ত্রী আশা, ওয়ার্ড কাউন্সিলর রুমকি এবং তাদের অপরাপর সহযোগি জিতু, মুন্না, রুপম, দিপু, রুমি, রুনু ও নাপিত জীবনকে আদালতে হাজির করে সাতদিনের রিমান্ড আবেদন চাওয়া হলে আদালত ওয়ার্ড ওয়ার্ড কাউন্সিলর রুমকির ৪দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে। আর অন্যান্যদের ২দিন করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড মঞ্জুর করে ।
রুমকিদের পক্ষে কোর্টে দাঁড়ায়নি উকিল : বিকেলের দিকে পুলিশ তরুনী ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনায় গ্রেফতারকৃত আসামি তুফানের স্ত্রী আশা, ওয়ার্ড কাউন্সিলর রুমকি এবং তাদের অপরাপর সহযোগি জিতু, মুন্না, রুপম, দিপু, রুমি, রুনু ও নাপিত জীবনকে আদালতে হাজির করে রিমান্ডের জন্য আবেদন করে। এ সময় আসামিদের সহযোগিরা তাদের পক্ষে আইনজীবী নিয়োগের জন্য উকিলদের এজলাসে মোটা টাকার অফার নিয়ে ধর্ণা দিলেও কোন উকিলই তাদের পক্ষে কোর্টে দাঁড়াতে অস্বিকার করে। ফলে বিচারক আসামিদের সবাই অকপটে নিজেদের কৃতকর্মের কথা স্বীকার করে। তার বলে স্যার চুল কেটে দেওয়া যে এতবড় অপরাধ আমরা বুঝতে পারিনি । তাদের এত টাকা পয়সা থাকলেও এই ঘোর বিপদের দিনে কেন কোন উকিল তাদের পক্ষে দাঁড়ালোনা তা নিয়ে তার রীতিমত অবাক হয়ে যায়। যে নাপিতকে দিয়ে চুল কাটানো হয় সেও বলে , স্যার আমি গরীব মানুষ , আপাদের কথায় চুল কেটেছি আমার কি দোষ?
মানববন্ধনে জড়িতদের শাস্তি দাবি : গতকাল সোমবার বগুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথায় বগুড়ার সম্মিলিত সাংষ্কৃতিক জোট ও নারী মুক্তি কেন্দ্রের পক্ষ থেকে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। মানববন্ধনে সংশ্লিষ্ট সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ স্বতস্ফ‚র্ত ভাবে অংশ গ্রহণ করে তরুণী ধর্ষণ নারী নির্যাতনের তীব্র প্রতিবাদ জানান। সবাই প্রশাসন ও পুলিশের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, তুফানদের ভয়াল উত্থানের সাথে যারা জড়িত তাদেরও শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবী জানান। পাশাপাশি তারা বগুড়ার চাঁদাবাজী , মাদক সহ সব ধরণের অপরাধ সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়ার দাবি জানান।



 

Show all comments
  • গোলাম ফারুক ১ আগস্ট, ২০১৭, ৩:১৩ এএম says : 0
    আসামী পক্ষে উকিল না পাওয়া গেলে রাষ্ট্রীয় উকিল দিয়ে মামলা পরিচালনা করা যেতে পারে।
    Total Reply(0) Reply
  • মুহাম্মদ কেরামত আলী ১ আগস্ট, ২০১৭, ২:৫৮ পিএম says : 0
    তারা অবৈধ টাকার জোর দেখিয়েছে তাই তাদের সমস্ত টাকা বাজেয়াপ্ত করে ঐ মেয়ের ব্যাংক একাউন্টে দেয়া উচিত। যাদের মধ্যে মানবিকতা নাই তাদের জন্য মানবাধিকার নয়। তাদের পক্ষে আইনজীবী থাকলে আমরা সমগ্র জাতি লজ্জিত হব।
    Total Reply(0) Reply
  • এম.জি. মাহাবুব ১ আগস্ট, ২০১৭, ৮:২৮ পিএম says : 1
    একটি মামলা চলাকালে আইনজীবির অনেক ভূমিকা থাকে।একজন আইনজীবি তার মক্কেলের জন্য অনেক চেষ্ঠা তদবির করে থাকেন।আসামী যদি অবৈধ টাকার মালিক হয় তাহলে টাকার জোরেই আইনজীবিদেরকে কিনে ফেলতে চায়।ঐ অবৈধ টাকার মালিকরা মনে করে সকল আইনীজবিদেরকে টাকা দিয়ে কিনে ফেলবে ?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ধর্ষণ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ