Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

পানিবদ্ধতা নিরসনের জন্য আনা সাকার মেশিন কী কাজে লাগছে

| প্রকাশের সময় : ২৯ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম


স্টাফ রিপোর্টার : টানা বৃষ্টিতে নগরজুড়ে পানিবদ্ধতা নিরসনে মাঠে নামানো হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসএসসির) অত্যাধুনিক জেট অ্যান্ড সাকার মেশিন। এই যন্ত্রটি ইতালি থেকে আমদানি করা হলেও এটি আসলে কী কাজে লাগে তা নিয়ে উঠেছে নানান প্রশ্ন। সাকার মেশিন দিয়ে মূলত পানিবদ্ধতা নিরসনের কথা বলা হলেও বাস্তবে দেখা গেছে, এ যন্ত্রটি দিয়ে মূলত পয়ঃনিষ্কাশন লাইন পরিষ্কারের কাজ করতে।
২০১৫ সালের জুনে ডিএনসিসি একটি মেশিন সংগ্রহ করে। গত বছরের জুনের শেষে ১১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে আরেকটি সাকার মেশিন কিনেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। দুটির মোট মূল্য সাড়ে ২১ কোটি টাকা। পানিবদ্ধতার অজুহাত দেখিয়ে ঢাকঢোল পিটিয়ে যেভাবে যন্ত্র দুটি কেনা হলো, আদতে এর কার্যকারিতা অতটা দৃশ্যমান নয়। এ নিয়ে খোদ সিটি কর্পোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও ক্ষুব্ধ।
মূলত যন্ত্র দুটি নগরীর পয়ঃনিষ্কাশন লাইনে জমে থাকা ময়লা-আবর্জনা টেনে নিয়ে পানি আলাদা করে ড্রেনে ছেড়ে দেয়। এর মাধ্যমে মাত্র ১০ মিনিটে ১২০ মিটার ড্রেনের ময়লা পরিষ্কার করে স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে আনা সম্ভব। একেকটি যন্ত্র দিয়ে গড়ে দৈনিক ২২ ঘণ্টা কাজ করা যায়। কিন্তু মেশিন দুটি দিয়ে প্রয়োজন অনুযায়ী পানিবদ্ধতা দূর হচ্ছে না। দুই বছর আগে সাকার মেশিন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন সংগ্রহ করলেও এর সফলতা দেখতে পায়নি নগরবাসী। দ্রæত সময়ে যন্ত্রটির মাধ্যমে ড্রেন পরিষ্কারের কথা বলা হলেও এখনও শ্রমিক দিয়েই তা চালিয়ে নিতে হচ্ছে। নগর বিশেষজ্ঞদের মতে, ময়লা-আবর্জনা পড়ে ড্রেন ভরাট হয়ে যাওয়াই পানিবদ্ধতার প্রধান কারণ। তবে আধুনিক মেশিন থাকার পরও ড্রেনগুলোর অবস্থার উন্নতি হয়নি।
জানা গেছে, দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকায় আড়াই হাজার কিলোমিটারের মতো ড্রেন রয়েছে। এর মধ্যে উত্তর সিটির ১ হাজার ২৩০ কিলোমিটার এবং দক্ষিণ সিটির ড্রেন রয়েছে প্রায় ১ হাজার কিলোমিটার। প্রশ্ন হচ্ছে, এই যন্ত্র যদি ১০ মিনিটের মধ্যে ১২০ মিটার ড্রেন পরিষ্কার করতে পারে তাহলে সোয়া দুই হাজার ড্রেন পরিষ্কার করতে দুটি মেশিনের সাড়ে ৬৪ দিন সময় লাগার কথা।
ডিএসসিসির তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী (যান্ত্রিক সার্কেল) মোহাম্মদ আনিছুর রহমান জানান, ড্রেনের ময়লা পানি ও আবর্জনা অপসারণ এবং ময়লা জমে বন্ধ হয়ে যাওয়া ড্রেন পরিষ্কার করতে মেশিনটি কেনা হয়েছে। এতে রয়েছে দুটি চেম্বার। এগুলো হলো, ৯ টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন এবং ৬ টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন পানি চেম্বার।
ড্রেনে জমে থাকা আবর্জনা পানিসহ জমা হয় আবর্জনা চেম্বারে। এরপর শক্ত আর্বজনা মেশিনে সংযোজিত ড্রিল দিয়ে গুঁড়ো করে এয়ার ভ্যাকুয়ামের মাধ্যমে ¯øাশ চেম্বারে জমা হয়। ¯øাশ চেম্বারে শুধু ¯øাশ সংরক্ষিত করে পানি পরিশোধিত হয়ে আপনাআপনি পানির চেম্বারে চলে যায়। ¯øাশ চেম্বার পরিপূর্ণ হয়ে গেলে মাতুয়াইল নিয়ে গিয়ে অপসারণ করা হয়।
এ প্রসঙ্গে ডিএসসিসির অতিরিক্ত প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা খন্দকার মিলাতুল ইসলাম বলেন, গত ২২ জুন মেয়র সাঈদ খোকন যন্ত্রটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এরপর মাঝে মধ্যে ড্রেন পরিষ্কারে মেশিনটি মাঠে নামানো হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএসসিসির ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, কিসের পানিবদ্ধতা নিরসন? মেশিনটি ড্রেন পরিষ্কারে কিছুটা কাজ করে। কেনার সময় যেভাবে বলা হয়েছে এটি সেভাবে কাজ করছে না। মেশিনটি ব্যবহারে খরচও পড়ে বেশি।
এ প্রসঙ্গে নগর পরিকল্পনাবিদ ও স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, আমার বুঝে আসছে না কীভাবে এই যন্ত্র দিয়ে পানিবদ্ধতা নিরসনের কথা বলা হয়। যতদূর জানি এই মেশিন ড্রেন পরিষ্কারের জন্য। যন্ত্র দিয়ে পানিবদ্ধতা নিরসনের কথা ভাবা ভুল। মেশিন দিয়ে পানিবদ্ধতা নিরসন হবে এমন কথা অর্বাচীন ছাড়া কেউ বলতে পারে না। মেশিনের ওপর নির্ভর না থেকে বাস্তবমুখী পরিকল্পনা নেওয়া উচিত।
এই নগর পরিকল্পনাবিদ ও স্থপতির ভাষ্য, যেখানে সমন্বিত উদ্যোগ, সময় নির্ভর কার্যক্রম ও জনসম্পৃক্ততা নেই, সেখানে আজগুবি কথা তো ছড়ানোই হবে। যন্ত্রের কথা না বলে যদি এসব কার্যক্রম বাড়ানো যায় তাহলে পানিবদ্ধতা নিরসন হতে পারে। যন্ত্রের গল্প কিংবা হাঁটু পানিতে দাঁড়িয়ে প্রতিশ্রæতিতে কাজ হবে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পানিবদ্ধতা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ