২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
মা হওয়ার অনুভূতি অসাধারণ । দেহের ভেতর ছোট্র যে দেহ, তার জন্য মায়ের যতেœর তাই শেষ নেই। সময়মতো খাওয়া, ঘুমানো আর সারাক্ষণ তার সুস্থতা কামনা করা। অনাগত সন্তানের সুস্থতার জন্য চাই মায়ের সুস্থ শরীর। সুস্থ, সুন্দর ফুটফুটে মায়াভরা এক হাসি মুখের স্বপ্ন প্রত্যেক গর্ভবতী মা-ই দেখেন। গর্ভাবস্থায় শিশুর বৃদ্ধি অনেকাংশে নির্ভর করে মায়ের ওপর। তাই সুস্থ মা মানেই সুস্থ শিশু। আমরা সবাই জানি শুক্রাণু আর ডিম্বাণুর মিলনের ফলে সৃষ্টি হয় অতিশয় ক্ষুদ্র ভ্রƒণ, যা কিনা মায়ের গর্ভে প্রাকৃতির নিয়মে বেড়ে ওঠে। একটি নির্দিষ্ট সময় অর্থাৎ ২৮০ দিন পর এই কণা রূপ নেয় ৩ থেকে ৩-৫ কি. গ্রাম ওজনের এক শিশুতে। তাই বুঝতেই পারছেন এই দীর্ঘ ৯ মাস শিশুর পরিপূর্ণ বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় সব উপকরণ জোগান দিতে হয় মাকেই। মা যে খাবার খাবেন শিশুও সেই খাবার পেয়ে পুষ্ট হবে। কাজেই গর্ভাবস্থায় মায়ের খাবার শিশুর সুস্থতা এবং পরিপূর্ণ বৃদ্ধির জন্য এক বিরাট ভূমিকা পালন করে। কিন্তু কথা হচ্ছে গর্ভাবস্থায় কী খাবেন? কেনই বা খাবেন? কোন খাবারটি গর্ভস্থ শিশুর জন্য প্রয়োজন- এসব প্রশ্নের যথাযথ উত্তর কি সবাই জানেন! প্রথমেই আসা যাক গর্ভবতী মায়ের খাবারের ধরন সম্পর্কে।
এক কথায় গর্ভবতী মায়ের জন্য প্রয়োজন সুষম খাবার। গর্ভাবস্থায় খাবারে অরুচি সব মায়েরই থাকে, তাই খাবার হতে হবে মুখরোচক, সেই সাথে এও লক্ষ্য রাখতে হবে যেন খাবারে পুষ্টিবিষয়ক পদার্থ পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে। এ সময়ে অনেকের বুকজ্বালা হতে পারে, এই সমস্যা যাদের হবে তারা অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার খাবেন না। কেননা, এ সময় পরিপাকতন্ত্র দুর্বল হয়ে পড়ায় মসলাযুক্ত খাদ্য হজমে অসুবিধা হতে পারে।
এখন আশা যাক গর্ভাবস্থায় কী খাবার খাবেন এবং কেন খাবেন-সেই প্রসঙ্গে। গর্ভাবস্থায় এমন খাবার খাবেন যা কি না শিশুর বয়োবৃদ্ধি ও সুস্থতার জন্য প্রয়োজন। তাহলে গর্ভবতী মায়েদের জানতে হবে এমন কী খাবার আছে যা কি না গর্ভস্থ সন্তানের যথাযথ বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন।
জিঙ্ক: গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাস জিঙ্ক এবং ফলিক এসিডের ভূমিকা অপরিসীম। জিঙ্ক গর্ভপাত প্রতিরোধ করে এবং শিশুর ওজন বাড়ায়। এই জিঙ্ক পাওয়া যায় প্রাণিজ প্রোটিনে। তা ছাড়া চিনা বাদাম, মিষ্টি কুমড়ার বীজ, গম এসবে প্রচুর পরিমাণ জিঙ্ক থাকে, যা কি না গর্ভাবস্থায় আপনার চাহিদা পূরণে সক্ষম।
ফলিক এসিড : কোষ বিভাজনে ফলিক এসিডের বড় ধরনের ভূমিকা থাকার কারণে গর্ভাবস্থায় প্রচুর পরিমাণে ফলিক এসিড দরকার । ফলিক এসিড শিশুর মেরুদন্ড গঠনে সহায়তা করে। কোনো কারণে ফলিক এসিডের অভাব হলে শিশুর মেরুদন্ডে জন্মগত ক্রটি থাকতে পারে এই অবস্থাকে বলা হয় স্পাইনা বাইফিজ। এই মূল্যবান ভিটামিনটি পাওয়া যাবে-সবুজ সবজিতে। তা ছাড়া শিম, ডাল, বাদামেও রয়েছে ফলিক এসিড।
ক্যালসিয়াম : গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীরে ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি। গর্ভাবস্থার শেষ তিন মাসে শিশুর হাড় ও দাঁত গঠনের জন্য মাকে অনেক ক্যালসিয়ামের জোগান দিতে হয়। তাই গর্ভাবস্থার শুরু থেকেই মা যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম গ্রহণ করে থাকেন তাহলে তার শরীরে আর ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হবে না। আমরা জানি, ক্যালসিয়াম পাওয়া যায় দুধে। এ ছাড়া লো-ফ্যাট ডেইরি প্রোডাক্ট যেমন ধরুন পনির, দই, দুধ দিয়ে তৈরি নানা রকমের খাবারে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে। আয়রন : আমাদের দেশের বেশির ভাগ গর্ভবতী মহিলাই রক্তশূন্যতায় ভুগে থাকেন। গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীরে রক্তের পরিমাণ দ্বিগুণ বেড়ে যায়। এই সময় যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন গ্রহণ করা না যায়, তাহলে রক্তস্বল্পতা দেখা দিতে পারে। তাই রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করার জন্য মাকে আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। গরু কিংবা খাসির কলিজা, বাচ্চা মুরগি, কলা, কচুশাক এসবের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে আয়রন আছে। আরেকটি কথাও সেই সাথে মনে রাখতে হবে আর সেটা হলো ভিটামিন সি আয়রনের শোষণ ক্ষমতা বাড়ায়, পরিমাণে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার যেমন আমলকী, পেয়ারা, কমলা লেবু, বাতালি লেবু ও লেবুজাতীয় ফল খেতে হবে।
প্রোটিন: প্রোটিন শরীরে গঠন ও বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। গর্ভাবস্থায় মায়ের প্রোটিনের চাহিদা স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে বেশি। গর্ভধারণের দ্বিতীয় ট্রাইমিস্টার হতে গর্ভবতী মা তার নিজের চাহিদার অতিরিক্ত প্রোটিন খাবেন। মেনু পরিকল্পনার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যেন প্রোটিন জাতীয় খাদ্যের অর্ধেক বা এক- তৃতীয়াংশ উচ্চ জৈবমূল্যের প্রোটিন থেকে আসে। প্রোটিনের মধ্যে মাছ ও মুরগি বেশি পরিমাণে খাবেন। মাছে যে ওমেগা-৩ থাকে তা শিশুকে ভবিষ্যতে হার্টডিজিজ হওয়া থেকে রক্ষা করে।
ভিটামিন ট্যাবলেট : গর্ভাবস্থায় শরীরে অতিরিক্ত ভিটামিনের প্রয়োজন হয়। এই অতিরিক্ত ভিটামিনের চাহিদা খাবারের মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব না হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ভিটামিন ট্যাবলেট গ্রহণ করতে হবে। একটি সুস্থ সন্তানের জন্ম দেয়া দায়িত্ব মায়ের। সঠিক সময়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টিগুণসম্পন্ন খাবার গ্রহণ করে সুস্থ সন্তানের মা হোন।
ডা: মাও: লোকমান হেকিম
চিকিৎসক-কলামিষ্ট,০১৭১৬২৭০১২০
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।