Inqilab Logo

শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

রাজধানীর তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের মানববন্ধনে বাধা

| প্রকাশের সময় : ২৪ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

পুলিশ ছাত্রলীগ মিলেমিশে পন্ড করে দিয়েছে শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি, অভিযোগ সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের : ডান চোখে দেখছেন না সিদ্দিকুর, বা চোখে মাঝে-মধ্যে দেখছেন
স্টাফ রিপোর্টার : পুলিশ মারমুখি বেপরোয়া। শিক্ষার্থীদের রাস্তায় দাঁড়াতেই দিচ্ছে না। পুলিশ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মিলেমিশে তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন কর্মসূচি গতকাল পন্ড করে দিয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছেন, সিদ্দিকুর চিকিৎসার দায়িত্ব নেয়া ও শিক্ষার্থীদের নামে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে তিতুমীর কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন করতে দেয়নি পুলিশ। গতকাল সকালে পুলিশ ও ছাত্রলীগের বাধায় তারা মানববন্ধন করতে না পারার অভিযোগ করেছেন। তিতুমীর কলেজের সামনে মানববন্ধন করতে গিয়ে বাধা পাওয়ার অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে চিকিৎসাধী সিদ্দিকুর রহমান ডান চোখে কিছুই দেখছেন না। বা চোখে মাঝে মধ্যে কিছুটা দেখতে পারেন বলে জানিয়েছে সিদ্দিকুরের চিকিৎসকরা।
একাধিক শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, তারা সকালে কলেজের মূল ফটকের সামনে কর্মসূচি পালন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সকাল থেকেই কলেজের ফটকে অবস্থান নিয়ে পুলিশ তাদের বাধা দিতে থাকে। পরে তারা কলেজের অদূরে আমতলী এলাকায় যান। সেখানে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাদের মানববন্ধন কর্মসূচি পন্ড করে দেন।
কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের একছাত্রী বলেন, সকাল ১০টার দিকে তারা আমতলীতে জড়ো হন। এ সময় কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ডলার মাহমুদের নেতৃত্বে সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা তাদের বাধা দেন। কয়েকজনকে কলেজের ভেতরে ধরে নিয়ে যান। পরে তাদের উদ্ধার করা হয়।
বাংলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আনারুল ইসলাম বলেন, ছাত্রলীগ কর্মী আল আমিন তাকে কলার ধরে টানতে টানতে কলেজের ভেতরে নিয়ে যান। ধাক্কাধাক্কি করেন। অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন।
সাইদুল হক নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ছাত্রলীগের বাধা দেয়ার ঘটনার ছবি তুলছিলেন তিনি। ছাত্রলীগের ছেলেরা তার ক্যামেরা কেড়ে নিয়ে ছবি মুছে দেন। কলেজের ফটকে বাধা পেয়ে শিক্ষার্থীরা আমতলী এলাকায় মানববন্ধনে দাঁড়ান। সেখানেও বাধা পাওয়ার অভিযোগ করেছেন তারা।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ডলার মাহমুদ প্রথমে বলেন, যারা মানববন্ধন করতে চেয়েছিলেন, তারা কলেজের শিক্ষার্থীই না। পরে কথা বদলে ডলার মাহমুদ বলেন, তারা শিক্ষার্থী হলেও কেন আমতলীতে গেলেন? তাদের মানববন্ধন করতে বাধা দেয়া হয়নি। তাদের ডেকে এনে কথা বলা হয়েছে। তাদের মধ্য থেকে দু’জন প্রতিনিধি ঠিক করে দেয়া হয়েছে, যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেবেন।
এদিকে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছেন আহত শিক্ষার্থী সিদ্দিকুর রহমান। অস্ত্রোপচারের পর সিদ্দিকুর রহমান তার ডান চোখে কোনো আলো দেখছেন না। বা চোখে কখনো আলো দেখার কথা বলছেন। কখনো বলছেন, আলো দেখছেন না।
এদিকে গতকাল সিদ্দিকুরের চিকিৎসায় নিয়োজিত মেডিক্যাল বোর্ডের বৈঠক শেষে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. গোলাম ফারুক বলেছেন, সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী সিদ্দিকুর রহমানের বাম চোখে দৃষ্টি ফিরে আসার ক্ষীণ সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে সিদ্দিকুরের ডান চোখের অবস্থা একেবারেই খারাপ। বাম চোখের কর্ণিয়ায় ইনজুরি আছে। ওই চোখটি ওয়াশ করা হয়েছে। তবে আরও ক্লিয়ার করে তারপর অপারেশন করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, তবে গতকাল সকালের এমআরআই রিপোর্ট দেখে আমরা আশাবাদী হয়েছি। সিদ্দিকুরের বাম চোখ নিয়ে পুরোপুরি না হলেও ক্ষীণ আশা আমরা দেখতে পাচ্ছি।
চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের এ পরিচালক আরও জানান, সিদ্দিকুরের চিকিৎসার জন্য মেডিক্যাল বোর্ড পুনর্গঠন করা হয়েছে। রবিবার সকালে তার এমআরআই ও চোখের আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো হয়েছে। এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষার আগে ও পরে দুইবার বৈঠক করেছি আমরা। পরীক্ষার রিপোর্টকে আমরা ইতিবাচক মনে করছি।
সিদ্দিকুরের জন্য গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের অন্য সদস্য অধ্যাপক দীপক কুমার নাগ, সহযোগী অধ্যাপক আব্দুল কাদের, সহযোগী অধ্যাপক লুৎফুর রহমান ও সহযোগী অধ্যাপক ইফতেখার মোহাম্মদ মুনিরের সঙ্গেও কথা হয়। তারা জানান, সহযোগী অধ্যাপক ইফতেখার মোহাম্মদ মুনিরের তত্ত¡াবধানে ভর্তি আছেন সিদ্দিক।
সিদ্দিকুরের বাম চোখের অপারেশনের দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক দীপক কুমার নাগ বলেন, তার ডান চোখের অবস্থা বেশি খারাপ ছিল। গত শনিবার থেকে আমরা ওষুধ দিচ্ছি। পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলের ওপর ভিত্তি করে আমরা ওষুধ কমিয়ে-বাড়িয়ে দিচ্ছি। তবে রোগী খানিকটা ট্রমায় আছেন। ফলে তার সমস্যা বা লক্ষণগুলো ঠিকভাবে বলতে পারছেন না। এ কারণে আমরা তাকে একটু সময় দিচ্ছি। যেভাবে চলছে, আশা করছি তার অবস্থার উন্নতি হবে।
সিদ্দিকুরের চোখের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে অধ্যাপক দীপক বলেন, তার ডান চোখের অবস্থা খারাপ, সেটা আগেই বলেছি। চিকিৎসক দীপক বলেন গতকাল, সকালে তিনি একবার বলেছেন, দেখতে পাচ্ছেন, একবার বলেছেন দেখতে পাচ্ছেন না। এটা আমাদের কাছে উন্নতির লক্ষণ মনে হয়েছে। ট্রমার কারণে হয়তো তিনি সঠিকভাবে রেসপন্স করতে পারছেন না। তবে খানিকটা ভিশন (দৃষ্টি) পাওয়ার কারণে আমরা আশাবাদী হয়েছি। আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। তবে আমরা আশাবাদী, ডান চোখে না হলেও সিদ্দিকুর বাম চোখে হয়তো দেখতে পাবেন।
রুটিনসহ পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার দাবিতে শাহবাগে অবস্থান নিতে গিয়ে পুলিশের ‘কাঁদানে গ্যাসের শেলে’ দুই চোখে আঘাত পাওয়া সিদ্দিকুরের বর্তমান অবস্থা সম্পর্ক এই তথ্য জানিয়েছেন জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ইফতেখার মনির।
গত শনিবার সকালে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসকেরা সিদ্দিকুরের দুই চোখে অস্ত্রোপচার করেন। তার সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে গতকাল রোববার সকালে চিকিৎসক বোর্ড বসে। পরে হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ইফতেখার মনির বলেন, গতকালের অস্ত্রোপচারের পরও সিদ্দিকুর ডান চোখে কোনো আলো দেখছেন না। বা চোখের বিষয়ে কখনো বলছেন আলো দেখছেন, কখনো বলেছেন দেখছেন না। এটাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখা হচ্ছে না।
সিদ্দিকুরের সহপাঠীরা জানান, তিতুমীর কলেজের ছাত্র সিদ্দিকুর স্নাতক শেষে সরকারি চাকরির জন্য বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নেয়ার পরিকল্পনা করছিলেন। রুটিনসহ পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার দাবিতে গত বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হওয়া রাজধানীর সাত সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শাহবাগে অবস্থান নিয়েছিলেন সিদ্দিকুর। পুলিশের ‘কাঁদানে গ্যাসের শেলের’ আঘাত লাগে তার দুই চোখে। একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, পুলিশের একজন সদস্য দৌড়ে এসে খুব কাছ থেকে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ছেন। তার পরপরই মাটিতে পড়ে যান সিদ্দিকুর। রাস্তার ওই স্থানটি রক্তে লাল হয়ে যায়। পরে পুলিশের কাজে বাধা দেয়া এবং হত্যাচেষ্টার অভিযোগে অজ্ঞাতনামা ১ হাজার ২০০ জনকে আসামি করে মামলা করে পুলিশ।
টিয়ার শেল না ফুলের টব অনুসন্ধান হচ্ছে -পুলিশ কমিশনার
পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, ছাত্ররা যে ফুলের টব ছুড়ে মেরেছে পুলিশের দিকে, ঢিল ছুড়ে মেরেছে সেটার আঘাত লেগে থাকতে পারে ওই ছাত্রের চোখে। তিনি বলেন, টিয়ার শেল নাকি ফুলের টবের আঘাত লেগেছে সেটি আমরা অনুসন্ধার করে দেখছি।
গতকাল শনিবার সকালে ডিএমপি সদর দপ্তরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ডিএমপি কমিশনার এ কথা বলেন।
তিনি শিক্ষার্থীদের সমালোচনা করে বলেন,কোনো দাবি-দাওয়া থাকলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অফিসের সামনে অবস্থান না নিয়ে রাস্তা অবরোধ কেন। আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ছাত্ররা অবস্থান কর্মসূচি নেয়। তাদেরকে বারবার অনুরোধ করা হয়েছে, কোনোভাবেই তারা রাস্তা থেকে যায়নি। পরে বাধ্য হয়ে পুলিশ অনলি গ্যাস ছুড়ে তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করেছে।
তিনি আরো বলেন,আমি শুনেছি একজন ছাত্র আহত হয়েছে। এবং সেটি পরস্পরবিরোধী কথা। পুলিশের বক্তব্য হচ্ছে যে ছাত্ররা যে ফুলের টব ছুড়ে মেরেছে পুলিশের দিকে, ঢিল ছুড়ে মেরেছে সেটার আঘাত লেগে থাকতে পারে। এবং ছাত্ররা বলেছে, না টিয়ার শেল তার কপালে লেগেছে। এটা কোনটি সেটি আমরা অনুসন্ধার করে দেখছি।
তিনি বলেন, স¤প্রতি রাজধানীর সাতটি সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে কিছু দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে সড়ক অবরোধের ঘটনা ঘটাচ্ছে, যা জনজীবনে চরম ভোগান্তির সৃষ্টি করছে।
গত বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে রুটিনসহ পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত রাজধানীর সাতটি সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা শাহবাগে অবস্থান নেন। পুলিশের বেঁধে দেওয়া আধা ঘণ্টা সময়ের পরও অবস্থান চালিয়ে গেলে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে এবং লাঠিপেটা করে পুলিশ। এ সময় পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেট সিদ্দিকুর রহমান নামের এক শিক্ষার্থীর চোখে বিদ্ধ হয়েছে বলে দাবি করেন সহপাঠীরা। তবে পুলিশ এই অভিযোগ অস্বীকার করে।



 

Show all comments
  • সুজন ২৪ জুলাই, ২০১৭, ২:০২ এএম says : 0
    এটা ছাত্রলীগের বেশি বাড়াবাড়ি
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মানববন্ধন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ