বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
চট্টগ্রামে আলোচিত সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও হত্যার সাজানো মামলায় পিবিআই হেফাজতে বর্বরোচিত নির্যাতনের প্রতিবাদ এবং তার মুক্তি ও চাকরিত পুনর্বহালের দাবিতে ঝিনাইদহের শৈলকুপায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ সোমবার বিকালে উপজেলার হাটফাজিলপুরে সর্বস্তরের এলাকাবাসীর ব্যানারে এ মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এ মানববন্ধনে এলাকার শত শত নারী পুরুষ স্বতস্ফূর্তভাবে ব্যানার প্লাকার্ড নিয়ে অংশ নেন। এসব ব্যানার প্লাকার্ডে লেখা ছিল, বনজ কুমারের ফাঁসি চাই, বাবুল আক্তারের মুক্তি চাই, পরকীয়ার আষাঢ়ে গল্প মানিনা, রিমান্ডের নামে নির্যাতনের বিচার চাই।
সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য ও শৈলকুপা উপজেলার আবাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন মোল্লার সভাপতিত্বে ও আবাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সম্রাট হোসেন বিশ্বাসের সঞ্চালনায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেন আবাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ হেলাল উদ্দীন বিশ্বাস, ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. খালেকুজ্জামান উকিল, বাবুল আক্তারের বাবা সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াদুদ মিয়া, শামীম আহমেদ, ইকতিয়ার হোসেন মিয়া, বগুড়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি আশিকুর রহমান কাজল প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, দেশ সেরা পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তার কেবল ঝিনাইদহের কৃতি সন্তান নন, তিনি পুলিশ বাহিনীর গর্ব, বাংলাদেশের সম্পদ। জীবন বাজি রেখে তিনি দেশের জন্য শ্বাসরুদ্ধকর সব অভিযান চালিয়েছেন। তার কারণে পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়তে থাকে। অপরাধীদের দমনে তার একের পর এক সাফল্যে পুলিশের অনেক দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার ঘুম হারাম হয়ে যায়। বিভাগের মধ্যে অনেকের শত্রুতে পরিণত হন তিনি। ২০১৬ সালের ২৫ জানুয়ারি চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন বাজারের বাহার মার্কেটে স্বর্ণের গুদামে অভিযান চালানোর সময় ২ কোটি টাকা ঘুষের প্রস্তাব দেয়া হয়। এ অনৈতিক প্রস্তাবে তিনি রাজি না হওয়ায় তাকে দেখে নেয়ার হুমকি দেন তৎকালীন সিএমপির উপ-কমিশনার বনজ কুমার মজুমদার। এ ঘটনার পর বনজ কুমারকে ঢাকায় বদলি করা হয়। এরপর থেকে শুরু হয় বাবুলকে হত্যার যড়যন্ত্র। দুই দফায় তার ওপর হামলা চালানো হয়। এতে ব্যর্থ হয়ে ২০১৬ সালের ৫জুন চট্টগ্রাামের জিইসি মোড়ে তার স্ত্রী মিতুকে প্রকাশ্যে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। স্ত্রী খুনের ঘটনায় তিনি যখন শোকে কাতর তখন ওই বছরের ২৪ জুন তাকে ঢাকার বনশ্রীর শ্বশুর বাড়ি থেকে উঠিয়ে ডিবি অফিসে নিয়ে ১৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ সময় তার জোরপূর্বক চাকরির অব্যাহতিপত্রে স্বাক্ষর নেয়া হয়। এরপরও চলতে থাকে ষড়যন্ত্র।
এ ষড়যন্ত্রেরই নীলনকশা হিসেবে ২০২১ সালের ১০ মে বাবুল আক্তারকে পিবিআই চট্টগ্রামের খুলশী কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে বেআইনিভাবে ৫৩ ঘণ্টা আটকে বর্বরোচিত নির্যাতন করা হয়। ভারতীয় নারী গায়ত্রী অমর সেনের সঙ্গে তথাকথিত পরকীয়ার আষাঢ়ে গল্প বলা হয় মিডিয়ার কাছে। এর দুই দিন পর ১২ মে তার শ্বশুর মোশাররফ হোসেনকে পিবিআইয়ের গাড়িতে করে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে নিয়ে স্ত্রী মিতু হত্যার সাজানো মামলা করা হয়। এ মামলায় পাঁচ দিন রিমান্ডে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়। টানা ৫ দিন চোখ বেধে ও হ্যান্ডকাফ পরিয়ে জোরপূর্বক ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি নেয়ার চেষ্টা করা হয়। মিডিয়া ট্রায়ালের মাধ্যমে বাবুলের চরিত্র হননের চেষ্টা করা হয়। আমরা পুলিশ হেফাজতে তার ওপর চালানো বর্বরোচিত এ নির্যাতনের তীব্র নিন্দা প্রতিবাদ জানাই। একই সঙ্গে নির্যাতনের ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার জোর দাবি জানাই। বিনাবিচারে ১৭ মাস ধরে কারাগারে বন্দি সৎ পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। পাশাপাশি তার স্ত্রী হত্যা মামলা পিবিআইয়ের পরিবর্তে বিচার বিভাগীয় তদন্তের ব্যাবস্থ করতে হবে, অবৈধভাবে পিবিআই কার্যালয়ে ৫৩ ঘন্টা আটক ও ৫ দিন রিমান্ডে নিয়ে অমানুষিক নিষ্ঠুর নির্যাতনের কারনে বনজ কুমারসহ অভিযুক্তদের শাস্তির ব্যবস্থা, ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে স্বাক্ষী আদায় ও মিডিয়া ট্রায়েলের মাধ্যমে বাবুল আক্তারকে অন্যায় ভাবে ফাসানোর অপরাধে বনজ কুমারের শাস্তি দাবি, চট্টগ্রামে স্বর্ণের অভিযানের পর বাবুল আক্তারের উপর দুই দুই বার হামলা ও অভিযানে অনৈতিক হস্তক্ষেপের সুষ্ঠ তদন্ত, কারাগারে বাবুল আক্তারের নিরাপত্তা ও হয়রানি বন্ধের পাশাপাশি তার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। গোঁজামিলের তদন্ত, মিডিয়া ট্রায়ালের তদন্ত আমরা মানি না। এ ব্যাপারে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।