Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাক্কা পুনর্দখলের অভিযানে অগ্রগতি মন্থর হয়ে এসেছে

আকস্মিক হামলা করে লুকিয়ে পড়ে আইএস যোদ্ধারা

| প্রকাশের সময় : ২৪ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সান ফ্রান্সিসকো ক্রনিকল : আকস্মিক হামলাটা হল ভোরের আগে। ইসলামিক স্টেট (আইএস) গ্রুপের একজন যোদ্ধা তার গুপ্ত অবস্থান থেকে বেরিয়ে এসে রাক্কার যুদ্ধক্ষেত্রে একটি পরিত্যক্ত ভবনে মার্কিন সমর্থিত সিরীয় বাহিনীর ব্যবহৃত ভবনের মধ্যে ঢুকে পড়ল। আল্লাহু আকবর বলে চিৎকার করে উঠল সে। বোমা ছুঁড়ল। নিহত হল একজন গার্ড।
টানেলের ভেতর থেকে ছুটে এলো আরো আইএস যোদ্ধা। তারা ভবনের উপর তলা পর্যন্ত ধেয়ে গেল। তারা সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেসের (এসডিএফ) ৩ যোদ্ধাকে হত্যা করে ভবনটি দখল করল। এসডিএফের আরো যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে কয়েক ঘন্টা ধরে লড়াই করল তারা।
এ যুদ্ধের এক সপ্তাহেরও বেশী সময় পর এসডিএফ যোদ্ধা ও কমান্ডাররা এসোসিয়েটেড প্রেস (এ পি)-কে বলেন,আইএস যোদ্ধারা পশ্চিম রাক্কায় ঐ ভবনটি এখনো দখল করে আছে। তাদের ¯œাইপাররা কয়েক মিটার দূরে এসডিএফ ¯œাইপারদের মুখোমুখি হয়ে আছে। এ পির সাংবাদিক যখন স্থানটি পরিদর্শনে যান, সে সময় ভবনটির শীর্ষে জঙ্গি বিমান থেকে বোমা বর্ষণ করা হয়। ঠিক তার পরই সেখানে এক আইএস ¯œাইপার এক ঝাঁক গুলি ছুঁড়ে ঘোষণা করে যে সে এখনো বেঁচে আছে।
এখন আইএসের কাছ থেকে রাক্কা পুনর্দখলে মার্কিন সমর্থিত সিরীয় বাহিনীর হামলা শুরুর পর ৭ সপ্তাহ চলছে। এখন তা রাস্তায় রাস্তায় একে অন্যকে নিকেশ করার রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে পরিণত হয়েছে, প্রত্যেকেই চেষ্টা করছে অন্যকে বিতাড়িত ও দুর্বল করতে। কয়েক মাস ধরে প্রস্তুতি নেয়া আইএস যোদ্ধারা প্রচন্ড প্রতিরোধ করে চলেছে। তারা শত্রæদের পিছনে আঘাত করার জন্য ব্যাপক টানেল নেটওয়ার্ক ববহার করছে, স্থল মাইন পেতে রাখছে এবং আত্মঘাতী হামলাকারীরা এসডিএফের অগ্রগতি মন্থর করে দিচ্ছে।
পূর্ব রাক্কা এখন লড়াইয়ের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছে। সেখানে যুদ্ধরত এক এসডিএফ যোদ্ধা বলেন, তারা ইঁদুরের মত। গোপন স্থান থেকে আসে ও আবার লুকিয়ে পড়ে।
ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে লড়াইরত মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের মুখপাত্র মার্কিন সেনাবাহিনীর কর্নেল রাায়ান ডিলন বলেন, রাক্কার আইএস যোদ্ধারা মসুলের চেয়েও বেশী সংখ্যায় মানব ঢাল হিসেবে বেসামরিক লোকদের ব্যবহার করছে। তিনি বলেন, তারা একটি ওয়ার্কশপের বাইরে শিশুদের মোতায়েন করেছে যেখানে তারা বিমান হামলা রোধে গাড়ি বোমা তৈরি করছে। মার্কিন জঙ্গি বিমান ফ্যাক্টরিগুলোকে টার্গেট করে না, কিন্তু গাড়ি বোমাগুলো এলাকা ছেড়ে বেরিয়ে আসার পর সেগুলোকে ধ্বংস করে দেয়।
তিনি বলেন, এটা যে সহজ লড়াই হবে না তা আমরা জানি। তবে এসডিএফ ধীর গতিতে হলেও এগিয়ে যাচ্ছে। তবে তিনি স্বীকার করেন যে হামলা শুরুর প্রথম দু’ সপ্তাহের দ্রুত ও তাৎক্ষণিক অগ্রগতি লাভের পর অগ্রসর হওয়ার গতি ধীর হয়ে এসেছে।
সিরীয় কুর্দি, সুন্নী আরব ও খ্রিস্টান যোদ্ধাদের সমন্বয়ে গঠিত এসডিএফ কয়েক সপ্তাহ আগে ত্বরিৎ ও বিস্ময়কর সাফল্য অর্জন করে, তারা পুরনো রাক্কা বেষ্টন করে থাকা দেয়াল ভেঙ্গে ফেলে। তারপর থেকে অগ্রগতি ধীর হয়ে মাত্র কয়েকশ’ মিটারে দাঁড়িয়েছে। ডিলন বলেন, পুরনো রাক্কা শহরে আইএস যে এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে পূর্ব থেকে পশ্চিমে তার দৈর্ঘ প্রায় দেড় মাইল।
মার্কিন বিমান হামলার পাশাপাশি এ লড়াই রাক্কার আইএস নিয়ন্ত্রিত অংশে এখনো আটকা পড়ে থাকা ৩০ থেকে ৫০ হাজার বেসামরিক লোকের জন্য আশংকার সৃষ্টি করেছে। এ যুদ্ধ মনিটর করা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস-এর তথ্য অনুযায়ী রাক্কা পুনর্দখলের হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে ২৯৩ জন বেসামরিক লোক, ৪১৬ জন আইএস যোদ্ধা এবং ১৯২ জন এসডিএফ যোদ্ধা নিহত হয়েছে।
পূর্ব ফ্রন্টের এক কুর্দি কমান্ডার বলেন, আইএস যোদ্ধারা আত্মঘাতী বেল্ট পরে বেসামরিক লোকদের মধ্যে মিশে যাওয়ার চেষ্টা করছে। তারা যুদ্ধক্ষেত্রে গাড়ি বোমা পাঠাচ্ছে, সনাক্ত হওয়া এড়াতে দেয়ালের মাঝে করা গর্ত দিয়ে এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়ি যাচ্ছে।
এসডিএফের মূল যোদ্ধা শক্তি কুর্দি মিলিশিয়া গ্রুপ ওয়াইপিজি’র প্রচলিত রীতি অনুযায়ী সিয়া ছদ্ম নামধারী এক কমান্ডার বলেন, শত্রুরা সব সময় আমাদের উপর হামলা করছে। আমাদের সারাক্ষণ তাদের হামলা মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকতে হয়। তার কথার কয়েক মিনিট পরই তার সৈন্যদের কমান্ড সেন্টার হিসেবে ব্যবহৃত একটি বাড়ির কাছে আইএসর যোদ্ধাদের নিক্ষিপ্ত দু’টি মর্টারের গোলা বিস্ফোরিত হয়।
এসডিএফের দু’ প্রধান শক্তি কুর্দি ও আরব বাহিনীর মধ্যকার বিভেদকে ব্যবহার করছে আইএস । গোত্রীয় যোদ্ধাদের নিয়ে গঠিত আরব বাহিনী কুর্দিদের চেয়ে কম শৃঙ্খলাবদ্ধ। কিন্তু কুর্দিরা প্রশিক্ষিত ও অধিক দক্ষ।
এক স্থানে আইএস যোদ্ধারা এসডিএফের আরব যোদ্ধাদের অবস্থানকে হামলার লক্ষ্য করেছে। পূর্ব রাক্কার আল সানা এলাকা তারা পুনর্দখল করতে সক্ষম হয়েছে। রাক্কার পুরনো শহরের প্রবেশ পথে অগ্রগতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অবস্থান থেকে এলিট ফোর্স নামে পরিচিত আরব মিলিশিয়া বাহিনীকে পশ্চাদপসরণ করতে হয়। সিয়া বলেন, এলিট ফোর্স আইএসের মোকাবেলায় টিকতে পারেনি।
যুদ্ধক্ষেত্রে দু’দিকেই ¯œাইপার রয়েছে। দু’পক্ষের যোদ্ধারা কোনো কোনো সময় পরস্পরের দেড়শ’ গজের মধ্যে অবস্থান করে। আইএস যোদ্ধারা এসডিএফের দিকে লক্ষ্যহীনভাবে মর্টার ছোঁড়ে এবং প্রায়ই পিছন থেকে হামলা চালায়। অন্যদিকে বেসামরিক লোকেরা পালাতে গিয়ে দু’পক্ষের গোলাগুলির মাঝে পড়ে।
এসডিএফের অংশ আসিরীয় মিলিশিয়া গ্রুপ সিরিয়াক মিলিশিয়া কাউন্সিলের একজন ফিল্ড কমান্ডার আবজার বলেন, সব কিছুর উপরে এটা হচ্ছে আইএসকে নিশ্চিহ্ন করার যুদ্ধ। তারা সর্বত্র ফাঁদ পাতছে এবং তারা চায় আমরা তাদের কাছে যাই।
মসুলের মত রাক্কার যুদ্ধও জটিল। এখানে তুর্কি ও সিরীয় কুর্দি যোদ্ধাদের মধ্যে উত্তেজনা রয়েছে। তুর্কি সৈন্য ও তাদের মিত্র সিরীয় কুর্দি যোদ্ধারা পশ্চিম সিরিয়ার কুর্দি এলাকা আফরিনে গোলাবর্ষণ করে। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে রাক্কায় লড়াইরত কুর্দি যোদ্ধাদের সেখানে সরিয়ে নেয়া হতে পারে যার ফলে রাক্কা পুনর্দখলের অভিযান দুর্বল হবে।
ডিলন বলেন, এ গোলযোগ জোটের উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে, কারণ আমাদের মনোযোগের কেন্দ্র সুস্পষ্টভাবে রাক্কা। তবে এখন পর্যন্ত যোদ্ধাদের সংখ্যায় পরিবর্তন হয়নি।



 

Show all comments
  • সাব্বির ২৪ জুলাই, ২০১৭, ২:১৭ এএম says : 0
    হে আল্লাহ তুমি এই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠা করে দাও।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আইএস


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ