Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আইএস বধূ শামিমা বেগমের গল্পে নতুন মোড়

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৩ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০১ এএম

ইসলামিক স্টেটের সঙ্গে যোগ দিতে লন্ডন থেকে সিরিয়ায় পালিয়ে যাওয়া বাংলাদেশি বংশোদ্ভ‚ত ব্রিটিশ স্কুলছাত্রী শামীমা বেগম সম্প্রতি স্বীকার করেছেন যে, তিনি একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীতে যোগ দিয়েছিলেন। সিরিয়ার একটি শরণার্থী শিবিরে বিবিসিকে দেয়া সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে শামীমা যে একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীতে যোগ দিয়েছিলেন এটা তিনি মানেন কিনা, এ প্রশ্ন করা হলে শামীমা বেগম বলেন, ‘হ্যাঁ, যোগ দিয়েছিলাম।’ বুধবার বিবিসি সাউন্ডে প্রকাশিত ‘আই এম নট এ মনস্টার : দ্য শামীমা বেগম স্টোরি’ শীর্ষক সাক্ষাতকারটিতে শামীমা আরো বলেন, ‘আমি জানি, এখন মানুষ আমাকে নিজেদের নিরাপত্তা ও জীবনযাত্রার জন্য বিপদ ও ঝুঁকি হিসেবে দেখে। কিন্তু তারা আমাকে যেমনটি মনে করে, আমি তেমনটি নই।’

বিবিসির ‘দ্য শামীমা বেগম স্টোরি’তে শামীমা তার সিরিয়া-যাত্রার ঘটনা প্রথমবারের মতো বিস্তারিতভাবে জানান। তিনি বলেন, যুক্তরাজ্য ছেড়ে গিয়ে ‘স্বস্তি’ পেয়েছিলেন। যুক্তরাজ্য ত্যাগের পর আর কখনো এ দেশে ফিরবেন না বলে ভেবেছিলেন। আইএসে যোগ দেওয়ার প্রসঙ্গে শামীমা আরো বলেন, ‘আমার পরিবার ভাবত, আমি দুর্বল প্রকৃতির। আমি যে এ ধরনের পাগলামি করতে পারব, এটা তাদের ধারণাতেই ছিল না।’ বিবিসিকে দেয়া এ সাক্ষাৎকারে শামীমা কীভাবে ২০১৫ সালে সিরিয়ায় গিয়েছিলেন তার বিস্তারিত বিবরণ এই প্রথমবারের মতো তুলে ধরেন। তিনি জানান, আইএস সদস্যরা তাকে এ ব্যাপারে বিস্তারিত নির্দেশনা দিয়েছিল, তবে এর পরিকল্পনা তিনি নিজেও করেছিলেন।

২০১৯ সালে ইসলামিক স্টেটের পতন ঘটার আগে ৪১ হাজারেও বেশি বিদেশী সিরিয়া এবং ইরাকে গোষ্ঠিটির স্বঘোষিত খিলাফতে যোগ দিতে নিজ নিজ দেশ ত্যাগ করেছিল। ব্রিটিশ স্কুল ছাত্রী শামীমা বেগম তাদের একজন। ১৫ বছর বয়সে তিনি একজন জিহাদির বাল্যবধূ হয়েছিলেন। শাস্তিস্বরূপ, ব্রিটেন চার বছর পর ২০১৯ সালে শামিমার নাগরিকত্ব প্রত্যাহার করে নেয়। শামিমার আইনজীবীরা এ রায়কে চ্যালেঞ্জ করে যুক্তি দিচ্ছিলেন যে, তাকে আইএস এর কাছে পাচার করা হয়েছিল।

শামীমার স্বীকারোক্তিমতে, বেথনাল গ্রিন থেকে আইএস-অধ্যুষিত সিরিয়ার রাক্কায় যেতে তিনি এবং আরো দুই কিশোরী নিজেরাই নানা বিষয়ে ব্যাপক খোঁজখবর নিয়েছিলেন। পাশাপাশি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটির সদস্যরাও তাদের বিস্তৃত নির্দেশনা দিয়ে সহায়তা করেছিল। অন্য দুই কিশোরীর মধ্যে একজন পরে মারা যায়, আরেকজন সিরিয়াতেই নিহত হন বলে ধারণা করা হচ্ছে। শামীমা বলেন, ‘অনলাইনে মানুষজন আমাদের অনেক কিছু বলছিল। যেমন কী করতে হবে, কী করা যাবে না, এসব উপদেশ দিচ্ছিল। এর মধ্যে ছিল, ধরা পড়লে কী গল্প ফাঁদতে হবে তাও।’ শামীমা আরো বলেন, তারা নিজেরা যেসব বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছিলেন, তার মধ্যে ছিল ভ্রমণ খরচ আর কাজ চালিয়ে নেওয়ার মতো টুকটাক তুর্কি ভাষা শেখা। আইএস-নিয়ন্ত্রিত সিরিয়ায় প্রবেশের আগে সীমান্ত পাড়ি দিতে তাঁদের তুর্কি ভাষা জানা দরকার ছিল।

গণহত্যা, অপহরণ ও শিরশ্ছেদের মতো নৃশংসতার জন্য কুখ্যাত আইএস। ২০১৫ সালে প্যারিসে ও ২০১৬ সালে ব্রাসেলসে হামলার জন্য এই গোষ্ঠীর সন্ত্রাসীরা দায়ী বলে মনে করা হয়। ২০১৭ সালে লন্ডন ব্রিজ, ম্যানচেস্টার অ্যারেনাসহ যুক্তরাজ্যে বিভিন্ন স্থানে হামলার দায়দায়িত্ব স্বীকার করেছে সংগঠনটি। ২০১৯ সালে আইএসের তথাকথিত ‘খেলাফত’ পরাজিত হওয়ার পর সিরিয়ার বিভিন্ন আটক ও আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা হাজারো নারী-পুরুষ, শিশুর মধ্যে শামীমা ছিলেন সবচেয়ে বেশি পরিচিতি। এসব কেন্দ্রে থাকা হাজারো মানুষ এমন সব দেশ থেকে সিরিয়ায় এসেছিলেন, যাদের আর ফেরত নিতে চায় না তাদের দেশ।

কর্তমানে ২৩ বছর বয়সী শামীমা এখন ব্রিটিশ নাগরিকত্ব ফিরে পেতে ও লন্ডনে ফিরতে যুক্তরাজ্য সরকারের সঙ্গে আইনি লড়াই চালাচ্ছেন। শামীমা কি সিরিয়ায় পাচারের শিকার হয়েছিলেন নাকি আইএসের স্বেচ্ছাসেবক হতে দেশ ছেড়েছিলেন, ট্রাইব্যুনালের শুনানিতে সেই প্রশ্ন ঘুরেফিরে আসছে। যুক্তরাজ্যের সাবেক শিশুবিষয়ক মন্ত্রী টিম লংটন বলেছেন, ‘এখনো এটা স্পষ্ট নয় যে, শামীমা কেন কিশোর বয়সে আইএসে যোগ দিয়েছিলেন, বা কোন জিনিস তার মগজধোলাই করেছে তা পরিষ্কার হওয়া না গেলেও, তিনি যখন প্রথম নিখোঁজ হন, তখন জনসাধারণের মধ্যে তার প্রতি যে সহানুভ‚তি ছিল, ক্রমেই তা ক্রোধে পরিণত হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘অনেকে এখন মনে করছেন, বোরকা ছেড়ে পশ্চিমা ধাঁচের পোশাক পরে তিনি নাটক করছেন। তিনি নিজেকে এই জগাখিচুড়ির মধ্যে ফেলেছেন। এ থেকে তিনি কীভাবে বেরিয়ে আসবেন, তা তার ওপর নির্ভর করছে।’ সূত্র : দ্য ইকোনোমিস্ট।

 



 

Show all comments
  • Mohmmed Dolilur ১৩ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:৪৩ এএম says : 0
    যুক্তরাজ্যে না থাকতে পারলে নিজের দেশে চলে আসতে পারে,সমস্যা নেই।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohmmed Dolilur ১৩ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:৪২ এএম says : 0
    যুক্তরাজ্যে না থাকতে পারলে নিজের দেশে চলে আসতে পারে,সমস্যা নেই।
    Total Reply(0) Reply
  • Mai Ngọc ১৩ জানুয়ারি, ২০২৩, ৯:০৮ এএম says : 0
    আমাদের দেশে এই ঘটনা হইলে পুরো পরিবার সহ উৎখাত করে দিতেন ।।
    Total Reply(0) Reply
  • Hasan Amir ১৩ জানুয়ারি, ২০২৩, ৯:০৯ এএম says : 0
    যে মেয়ে আরেক দেশে গিয়ে ইসলামী স্টেট নামক ভয়ংকর যোদ্ধাকে বিয়ে করার জন্য পরিবার দেশ ছাড়তে পারে সেই মেয়েকে বংলাদেশে আশ্রয় না পায়।
    Total Reply(0) Reply
  • S M Tufayal Ahmed ১৩ জানুয়ারি, ২০২৩, ৯:০৭ এএম says : 0
    কিছু ভুলের ক্ষমা নেই। আবেগে গেছো, এখন অাবেগ দিয়া জীবন চালাও। উচিৎ শিক্ষা।
    Total Reply(0) Reply
  • S Manik Ray ১৩ জানুয়ারি, ২০২৩, ৯:০৮ এএম says : 0
    সামিমা একজন দেশদ্রহি অপরাধি তাকে বাংলাদেশে কিংবা বৃটেনে উভয়ের জন্যা হুমকি তাকে কেউ যেন স্থান নাদেয়
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আইএস বধূ শামিমা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ