Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জার্মানির মুসলমানরা ইসলামের নানা ধারার প্রতিনিধিত্ব করে

| প্রকাশের সময় : ২৪ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : জার্মানিতে ৪০ লাখেরও বেশি মুসলমান বাস করে। তারা কি এই দেশটিকে বদলে দিচ্ছে। যদি দেয়, তাহলে সেটা কীভাবে? এর উত্তর খোঁজা হয়েছে জার্মানির সংস্কৃতির অন্যতম প্রাণকেন্দ্র কোলন এবং এর আশেপাশের এলাকায়। ২০১৫ সালে প্রায় ১০ লাখ উদ্বাস্তুকে আশ্রয় দেয়ার পর, জার্মানিজুড়ে আলোচনার অন্যতম বিষয়বস্তুতে পরিণত হয় ইসলাম। বিশেষ করে দেশটির সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য নর্থ-রাইন ওয়েস্টফালিয়ার অন্যতম শহর কোলন এবং তার আশেপাশের এলাকায়। জার্মানিতে থাকা প্রায় ৪০ লাখ মুসলমানের মধ্যে ১৪ লাখের বাস এই রাজ্যে। আগামী সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য জার্মানির সংসদীয় নির্বাচন উপলক্ষে দেশটির ছয়টি বড় শহরে নানা প্রশ্ন নিয়ে সাধারণ মানুষের মুখোমুখি হন ডয়চে ভেলের দুই প্রতিবেদক নিনা হাসে এবং সুমি সমাস্কান্দা। তাদের মতে, এবারের নির্বাচন নিয়ে আলাপ-আলোচনার সময় সবচেয়ে কঠিন ছিল ইসলাম নিয়ে কথা বলা। ইসলাম জার্মানিকে ধারণ করে কিনাÑ এই প্রশ্ন উঠলেই ছড়িয়েছে, ছড়াচ্ছে উত্তাপ, জমে উঠছে আলোচনা। অনেকে এটাকে শান্তি ও সহিষ্ণুতার ধর্ম হিসেবে দেখেন। অনেকে আবার এটাকে মনে করেন, ঘৃণার বাহক বলে। কারো কারো কাছে রাস্তায় চলা নারীদের স্কার্ফ ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার অংশ। আবার কারো মতে, এটা নিপীড়নের প্রতীক। জার্মানির মুসলমানরা ইসলামের নানা ধারার প্রতিনিধিত্ব করে। এই রাজ্যেও একই অবস্থা। জার্মান সংস্কৃতির কেন্দ্র কোলন শহরে গত মাসে নতুন একটি কেন্দ্রীয় মসজিদ উদ্বোধন হয়। অটোমান তুর্কীদের ধাঁচে নির্মিত এই মসজিদের গøাস ও পাথরে চকচক করে। ৫৫ মিটার উঁচু মিনার জানান দিচ্ছে মসজিদের অস্তিত্ব। তারকা খচিত মসজিদের ভেতরটায় একত্রে হাজারেরও বেশি মানুষ নামাজ আদায় করতে পারেন। এই মসজিদটি অনেক বিতর্কেরও জন্ম দিয়েছে। কোলনের প্রধান গির্জার গম্বুজ শতাব্দীর পর শতাব্দী আকাশে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। সেই আকাশে ভাগ বসাবে মিনারÑ এটা যেন মানতে পারছিলেন না অনেক খ্রিস্টান নেতা। তাই এই স্থাপনা নিয়ে নগরের প্রধান স্থপতির দপ্তরকে রাজি করাতে টার্কিশ-ইসলামিক ইউনিয়ন ফর রিলিজিয়াস অ্যাফেয়ারকে (ডিআইটিআইবি) বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। জার্মানিতে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় সংগঠন ডিআইটিআইবি। এটি তুরস্ক সরকারের ধর্ম বিষয়ক কর্তৃপক্ষের অংশ। দলটিকে ঘিরে স¤প্রতি তুরস্ক-জার্মানির সম্পর্ক অবনতি হয়েছে। দলটির বিরুদ্ধে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগানের স্বার্থে কাজ কাজ করার অভিযোগ রয়েছে। আন্তঃধর্মীয় জীবন এখানে কতটা জটিল-এটা যেন সেটারই একটা চিত্র। পরিসংখ্যানের অধ্যাপক ও পরামর্শক ইউসেফ এল ওয়াদুদী বাস করেন কোলনে। তিনি মরোক্কো থেকে ১৮ বছর আগে জার্মানিতে আসেন। এরপর এখানে এসে তিনি একজন ভিন্নধর্মী নারীকে বিয়ে করেন। পালন করতে থাকেন সংসার-ধর্ম। তার মুসলিম পরিচয় এখন অনেকটাই ঢাকা পড়ে গেছে। গতানুগতিক ছাঁচ এবং পক্ষপাতিত্বে ইসলামকে ঘিরে থাকা রাজনৈতিক ডিসকোর্স ক্রমেই দূষিত হয়ে যাচ্ছে বলে তার মত। তিনি বলেন, সমস্যা হচ্ছে, সব ধর্মই মনে করে, সেই একমাত্র সত্য। মানুষ ধর্মকে বিভিন্নভাবে দেখে। যেমন কালো চুলের একজন মানুষ মানেই মনে করা হয়, তিনি মুসলিম। সুতরাং মুসলিম যদি কারো শত্রæ হয়, তাহলে ব্যক্তিগতভাবে চীনুক না চীনুক, কালো চুল দেখলেই শত্রæ মনে করা হয়। আপনি ধার্মিক কিনা, সেটা বিষয় নয়, এই সামাজিক সমস্যা আমাদের সবার জীবনকে প্রভাবিত করছে। এল ওয়াদুদীর আশেপাশে হাত বাড়ালেই মরোক্কান দোকান, রেস্তোরাঁ এবং মসজিদ; যেখানে অধিকাংশ মানুষই রক্ষণশীল। তার মতে, মুসলমানদের ভেতরের সমস্যাটাও গভীর। এর ফলে নিজস্ব কমিউনিটির ভেতরেও গঠনমূলক সংলাপ হয় না। উদার এবং রক্ষণশীল মুসলমানদের মাঝেও খুবই কম যোগাযোগ হয়, তারা নিজেদের মধ্যে কথা বললেও ভুল বোঝাবুঝির সম্ভাবনা থেকে যায়। এটার সবচেয়ে ভালো সমাধান হচ্ছে, ইসলামের বিভিন্ন শাখার মধ্যে একটা আলোচনার সূত্রপাত করা। অন্যদিকে রক্ষণশীল মুসলমানরাও বলছেন, তারা সংলাপের জন্য প্রস্তুত। যদিও তরুণ মুসলিমদের মাঝে ইসলামিক উগ্রপন্থার বিস্তারের ফলে একটা আশঙ্কার কালো মেঘ জমা হয়েছে। ভায়োলেন্স প্রিভেনশন নেটওয়ার্কের মতে, কেবল নর্থ-রাইন ওয়েস্টফালিয়া রাজ্যেই উগ্র সালাফিদের আক্রমণের পরিমাণ ২০১৫ সালে ৩০০ ছিল, যা পরের বছর দ্বিগুণ হয়ে গেছে। বনের পাশেই বাড গোডেসবার্গ আল-আনসার মসজিদের ইমাম আবদেলকাদের ইজেইম বলেন, যে সব রক্ষণশীল মুসলিম তাঁদের পছন্দসই বিশ্বাসকে আঁকড়ে বাঁচতে চায়, এই ধারা খুব গভীরভাবে তাদের জীবনকে প্রভাবিত করেছে। তিনি বলেন, এ সব ঘটনায় অনেক নেতিবাচক চিত্র তৈরি হয়েছে। অনেক মুসলিম রয়েছে, যারা আমাদের সম্মিলিত ভাবমর্যাদা নষ্ট করে দিয়েছে। ফলে এমন একটা ধারণা তৈরি হয়েছে যে, মুসলিম এবং ইসলাম এ রকমই। আমরা এই সব উদ্বেগ দূর করার চেষ্টা করছি। জার্মানদের দেখাতে চাই, এটা বাস্তবতা নয়। ভালো ভালো কাজ করাই ইসলামের মূল শিক্ষা। অন্য ধর্মাবলম্বীদের ইসলাম ও মুসলিমদেরকে ভয় করা উচিত নয়। কারণ ইসলাম শান্তির ধর্ম। সংলাপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কোলনে লিবারেল ইসলামিক অ্যাসোসিয়েশনের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে এর সংগঠক আনিকা মেহমেতি বলেন, তরুণ মুসলিমরা আধুনিক পৃথিবীর বিভিন্ন বিষয়ে ইসলামের মতামত জানতে চায়। যেমন সমকামিতা ইসলামে বৈধ কিনা, খ্রিস্টান ছেলে-বন্ধু রাখা যাবে কিনা ইত্যাদি। মেহমেতি বলেন, এখানে ৪ মিলিয়ন মুসলিম বাস করেন। তারা সবাই বিভিন্নভাবে তাদের ধর্ম এবং সংস্কৃতি পালন করেন। তাদের জীবনও আলাদা। আরো বড় পরিসরে চিন্তা করলে একটা খোলামেলা এবং আন্তরিক সংলাপ সম্ভব। জার্মানির উচিত, ইসলামকে তাদের দেশের অংশ হিসেবে গ্রহণ করা। এটা জার্মানিকে আরো উন্মুক্ত এবং সহিষ্ণু সমাজ উপহার দেবে, বলেন মেহমেতি। তার কথায়, কিছু কিছু মানুষ এটাকে দূরে ঠেলে দেয়। তারা বলে, এখানে ইসলামের কোনো অস্তিত্ব নেই। কিন্তু তারা বাস্তবতায় নেই। ইসলাম এখানে রয়েছে এবং সেটা একটা ভালো বিষয়। অবশ্যই ইসলামের উচিত অন্য ধর্ম এবং গণতন্ত্রের সাথে একই সমতলে এখানে অবস্থান করা। তিনি বলেন, ইসলাম ও মুসলিমরা জার্মানিকে ধারণ করে নাÑ আমি এটা আর শুনতে চাই পারছি না। ডয়চে ভেলে।



 

Show all comments
  • kamal ২৪ জুলাই, ২০১৭, ২:১২ এএম says : 0
    very good news
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জার্মানি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ