পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশেষ সংবাদদাতা, বগুড়া থেকে : রীতিমত মাদকে ভাসছে বগুড়া। বগুড়া উত্তরাঞ্চলের কেন্দ্রীয় জেলা শহর হওয়ায় এবং বগুড়া কেন্দ্রীক যোগাযোগ সুবিধার কারণে ্এখান থেকে সারাদেশের সব জায়গায় মাদকের চালান আনা নেওয়ার সুবিধা নিতেই ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে বগুড়াকে ব্যবহার করছে মাদক ব্যবসায়ীরা। বগুড়া তথা উত্তরাঞ্চলের চিহিœত কিছু ব্যাংক লুটেরা ও কালো টাকার মালিক রাজনীতিবিদ, পরিবহণ সেক্টরের মাফিয়ারা মাদক ব্যবসায় বিনিয়োগ করছে কোটি কোটি টাকা। পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আর্মড পুলিশ ব্যাটেলিয়নের আচমকা অভিযানে বড় বড় মাদকের চালান উদ্ধার, মাদক পাচারকারী, ছিঁচকে ব্যবসায়ীরা ধরা পড়লেও মাদক সেক্টরের গড ফাদার ও অর্থ যোগানদাতারা সব সময় থেকে যাচ্ছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। অভিযোগ রয়েছে বগুড়ার মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক অসাধু চক্র মাদক নেটওয়ার্কের আদ্যপান্ত সব জানলেও লোকবলের স্বল্পতার পুরনো ডায়ালগ আউড়িয়ে সব সময় নিজেদের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন থেকে সব সময় সচেতন ভাবে বিরত থাকে।
মাদক সেক্টরের অলি গলিতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বগুড়া থেকেই এখন ট্রাডিশনাল মাদক এ্যালকোহল, বাংলা মদ, গাাঁজা ব্যবসার পুরোটাই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। বগুড়ার ৩টি চিহ্নিত হোমিও ওষুধ কোম্পানী শহরতলীর ফুলবাড়ি ও বিসিক থেকে উত্তরাঞ্চলসহ সারাদেশে চোরাই এ্যালকোহল সরবরাহ করছে। হোমিও কোম্পানীগুলো ওষুধ উৎপাদনের কথা বলে ডিস্টিলারিজ গুলো থেকে তাদের নামে বরাদ্দকৃত এ্যালকোহল (রেকটিফায়েড স্পিরিট) এর বহুগুন পরিমানে উত্তোলন করে সেগুলো মাদক হিসেবে বিক্রয় করে। কখনো কখনো তারা বিদেশ থেকেও আমদানী করে বরাদ্দের অতিরিক্ত এ্যালকোহল। বগুড়ার মোকামতলার প্রকাশ নামের একজন মাদক ব্যবসায়ী হোমিও, ইউনানি ও আয়ুর্বেদী ওষুধ উৎপাদকদের নামে বরাদ্দের বিপরীতে অতিরিক্ত এ্যালকোহল তুলে নিয়ে পাইকারী ও খুচরা মাদক বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে থাকে। এ্যালকোহলের পাশাপাশি সে ভারত থেকে গাঁজা আমদানী ও তা’ অবৈধ ভাবে বিক্রির নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণ করে। একাধিকবার সে গ্রেফতার হলেও তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার ধারা ও উপধারা এমন দূর্বলভাবে সংশ্লিষ্টরা উপস্থাপন করে যে তাতে শেষ পর্যন্ত সে পার পেয়ে যায়। বগুড়া ও বগুড়ার পাশ্ববর্তি জেলা গুলোর মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর অফিসের দুর্নীতিবাজ চক্রের সাথে রয়েছে প্রকাশের দহরম মহরম সম্পর্ক।
ট্রাডিশনাল এ্যালকোহল, বাংলা মদ, গাঁজা র পাশাপাশি ফেন্সিডিল, হেরোইন ও ‘বাবা’ নামে খ্যাত ইয়াবা ব্যবসার সবচেয়ে বড় কারবার এখন বগুড়া থেকেই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। ‘‘হাজী জাফর আলম ’’ নামের একজন বড় মাপের ‘ইয়াবা পেডলার’ ( বাহক ) বগুড়া পুলিশের হাতে এপর্যন্ত দুইবার ধরা খেয়েছে । এই কথিত হাজির জবানবন্দী সূত্রে জানা যায়, হাজী জাফরের মতই ২০-৫০ জন পেডলার যাদের মধ্যে বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ রয়েছে তারা কক্সবাজার হয়ে মায়ানমার থেকে ইয়াবার চালান নিয়ে আসে বগুড়ায়। এদের অনেকেই বগুড়ায় পরিবার পরিজন রেখেই ইয়াবা ট্যাবলেট আনছে বগুড়ায়। এই ধরণের এক ডজন পেডলার সম্প্রতি ধরা পড়েছে বগুড়ায়।
বগুড়া শহরের নামাজগড় পল্লীর কুখ্যাত হেরোইন ব্যবসায়ী ‘‘লাল বিবি ’’ মধ্য ৮০’র দশক থেকে বগুড়ায় স্বপরিবারে চালিয়ে যাচ্ছে ইয়াবা, হেরোইন ও ফেন্সিডিলের ব্যবসা। ২৫- ৩০ বছর ধরে দাপটে মাদক ব্যবসার পয়সায় মেয়েদের ভালো ভালো জায়গায় বিয়ে দিয়েছেন লাল বিবি। ৫-৬ বার ধরা খেয়েছেন আইন-শৃংখলা বাহিনীর হাতে।
নিশ্চিত ও দ্রুত বড় অঙ্কের লাভের আশায় মাদক ব্যবসায় চোখ বন্ধ করে বিনিয়োগ করছে এক শ্রেনীর ঘুষখোর আমলা, ব্যাংক লুটেরা, পরিবহণ সেক্টরের চাঁদাবাজ মাফিয়ারা। সম্প্রতি পুতু সরকার নামের এক মাদক ব্যবসায়ীর গোপন গোডাউনে র্যাবের হানায় বিপুল মাদকের পাশাপাশি একটি প্রাইভেট কার উদ্ধার হলে দেখা যায়, প্রাইভেটকারটি একজন নিরীহ রেষ্টুরেন্ট ব্যবসায়ীর। যে হঠাৎই ব্যাংক ঋণ না নিয়েই এ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছেন কোটি কোটি টাকা। তবে কৌশলগত কারণে ওই রেস্টুরেন্ট মালিক প্রাইভেট কারটির একটি বিক্রির কাগজ দেখিয়ে পার পেলেও তার বিষয়ে খোঁজ খবর নিতে গিয়ে তার মত অনেক নিরীহ গোবেচারা ব্যবসায়ীর কোটি কোটি টাকা মাদক ব্যবসায় বিনিয়োগের চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। বগুড়া শহরের রাজাবাজার এলাকার তিনজন নামজাদা হাজী সাহেবের ছেলেরা বাবার কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে মাদক ব্যবসায়। পরবর্তীতে ওই ধনীর দুলালেরা মাদক ও নারী নিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়লে নিজেদের মাদকের চাহিদা মেটাবার পাশাপাশি কোটি কোটি টাকার সহজ মুনাফার লোভে তারা যে মাদক ব্যবসার অংশিদারে পরিণত হয়েছে সেটা প্রকাশ হয়ে পড়ে।
এদিকে মাদক ব্যবসার ভয়াবহ বিস্তারের ফলে অস্ত্র নিয়ে খুনাখুনি, স্ত্রীর সাথে ছাড়াছাড়ি, কয়েকজন কোটি পতির স্ত্রী নিজ নিজ স্বামীর কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে গৃহত্যাগের ঘটনার পর এবং মাদকাসক্ত অনেক কোটিপতি-লাখোপতির পথের ফকিরে পরিণত হওয়া এবং অকাল মৃত্যুর ঘটনায় অনেকেরই হুঁশ ফিরেছে। ফলে বগুড়ায় মাদক ব্যবসা বন্ধে কোথাও কোথাও ইদানিং আন্দোলনও শুরু হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।