পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হালদা ও মুহুরী নদী বিপসীমার উপরে : নতুন করে বন্যা কবলিত ফেনী
বিভিন্ন নদীতে ভাঙন ভয়াবহ : কুশিয়ারায় নামছে
ইনকিলাব ডেস্ক : দেশের ৯০টি নদ-নদীর পানি পর্যবেক্ষণ পয়েন্টের মধ্যে সর্বশেষ তিনটি নদী ৩টি পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ২৮টিতে। পানি হ্রাস পেয়েছে ৫৮টি পয়েন্টে । এতে দেশের বন্যার প্রকোপ কমে আসলেও ভয়াবহ আকার ধারন করেছে নদীভাঙন। তবে মুহুরী নদীর পানি বিপসীমার উপরে থাকায় নতুন করে ফেনীর ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। আঞ্চলিক সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বন্ধ রয়েছে যান চলাচল। ভাঙন রোধে ফেনীর পানি উন্ন্য়ন বোর্ডের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী। মাদারীপুর জেলায় নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে ৩ শতাধিক ঘর-বাড়ি,মসজিদ, আশ্রয়কেন্দ্র। বন্যা পরবর্তী এ সকল এলাকায় খাদ্য সঙ্কট ও নদী ভাঙনের শিকার মানুষগুলো দুঃখ-কষ্টের কথা তুলে ধরে আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্যের আলোকে রিপোর্ট-
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, টানা অতিবৃষ্টির কারণে পাহাড়ি ঢলের তোড়ে দক্ষিণ-পূর্ব পার্বত্য অববাহিকা চট্টগ্রাম অঞ্চলের খর¯্রােতা নদ-নদীর পানি হঠাৎ করে আবারও বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সাথে বাড়ছে নদীর পাড়ের জপদদে ভয়াবহ ভাঙন। গতকাল (শুক্রবার) উত্তর চট্টগ্রামের হালদা নদী এবং ফেনীতে মুহুরী নদী বিপসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। অন্যদিকে সিলেটে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার উপর থেকে আরও নেমেছে। বিভিন্ন স্থানে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, ওষুধসহ ত্রাণের অভাব এখনও প্রকট। বন্যার্তদের দুর্ভোগেরও শেষ নেই। মুহুরী নদীতে পাহাড়ি ঢলের তোড়ে গত দু’দিনে ভয়াবহ মাত্রায় পানি বৃদ্ধি পায়। পরশুরাম পয়েন্টে বিপদসীমার উপরে প্রবাহ এখন (২২০ সেমি ঊর্ধ্বে) ‘রেড এলার্টে’র পর্যায়ে চলে গেছে। মুহুরীর বন্যায় বিশেষত বাঁধের ভয়াবহ ভাঙনে পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদর উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। পানি আগামী ২৪ ঘণ্টায় বৃদ্ধির পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।
গতকাল বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সর্বশেষ তথ্য-উপাত্ত অনুসারে, তিনটি নদী তিনটি পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছিল। এরমধ্যে কুশিয়ারা নদী শেওলা পয়েন্টে আরও হ্রাস পেয়ে বিপদসীমার ১১ সেমি উপরে (শনিবার নাগাদ নামতে পারে) রয়েছে। দীর্ঘদিন পর কুশিয়ারা নদী শেরপুর-সিলেট পয়েন্টে পানি কমে গিয়ে বিকেল পর্যন্ত বিপদসীমার বরাবর (জিরো লাইনে) নেমে গেছে। অন্যদিকে পাহাড়ি অববাহিকায় ফেনীর পরশুরাম পয়েন্টে মুহুরী নদী বিপদসীমার ২২০ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। আর উত্তর চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলায় নারায়ণহাট পয়েন্টে হালদা নদী বিপদসীমার ৮০ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে বিকেল পর্যন্ত পানির চাপ কিছুটা হ্রাস পেয়ে ওই পর্যায়ে আসে। তবে হালদা পাঁচপুকুরিয়া পয়েন্টে আরও কিছুটা বেড়ে গিয়ে বিপদসীমার ২৭ সেমি নীচে রয়েছে। কক্সবাজারের চিরিঙ্গা পয়েন্টে মাতামুহুরী নদীর পানিও ফের বেড়ে যাচ্ছে, যদিও বিপদসীমার ৪৮ সেমি নীচে রয়েছে।
দেশের ৯০টি নদ-নদীর পানি পর্যবেক্ষণ পয়েন্টের মধ্যে সর্বশেষ তিনটি নদী ৩টি পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। আর পানি হ্রাস পায় ৫৮টি পয়েন্টে। পানি বৃদ্ধি পায় ২৮টিতে। অপরিবর্তিত থাকে ৪টিতে। দেশের নদ-নদী প্রবাহের পূর্বাভাসে জানা গেছে, দক্ষিণ-পূর্ব পাহাড়ি অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে এসব এলাকার নদ-নদীর পানির সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা আগামী ২৪ ঘণ্টায় অব্যাহত থাকতে পারে। গতকাল নদ-নদী বিভিন্ন পয়েন্টের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় হালদা নদীর নারায়ণহাটে ১৫৮ মিলিমিটার। এদিকে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, গঙ্গা-পদ্মা ও সুরমা-কুশিয়ারা নদ-নদীগুলোর পানির সমতল হ্রাস অব্যাহত থাকতে পারে।
ফেনীতে ২০ গ্রাম প্লাবিত,যান চলাচল বন্ধ
মোঃ ওমর ফারুক, ফেনী থেকে জানান, ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলায় মুহুরী, কহুয়া, সিলোনীয়া ও অভয়া নদীর ৮ স্থানে ভাঙনের ফলে অন্তত ২০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সরেজমিন পরিদর্শন ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়ী ঢলে মুহুরী, কহুয়া, সিলোনীয়া ও অভয়া নদীর পানি অস্বাভাবিক বেড়ে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।একপর্যায়ে বৃহস্পতিবার রাত থেকে নদীর বিভিন্ন স্থানে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়। স্থানীয়রা চেষ্টা চালিয়ে ভাঙনের প্রথম দিকে কয়েকটি জায়গায় তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়ার ফলে ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি থেকে রক্ষা পায় ঐ এলাকার কয়েকটি গ্রাম। এলাকাবাসী জানায় গত বৃহস্পতিবার রাতে ফুলগাজীর জয়পুর গ্রামে বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দিলে মসজিদের মাইকে এ খবর এলাকায় ঘোষণা করা হয়। তাৎক্ষণিক এলাকাবাসী ব্যবস্থা নিলে ভাঙন প্রতিরোধ করে। কিন্তু সর্বশেষ স্থানীয়দের চেষ্টা ব্যর্থ হয়। এ দীর্ঘ সময়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোন কর্মকর্তা ঐ এলাকা পরিদর্শন করেনি। এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাঁধ ভাঙলে পাউবোর আর নেতাদের লাভ বেশি। তাই বৃহস্পতিবার দিনরাত ২৪ ঘন্টায়ও কেউ তাদেও সহযোগিতায় এগিয়ে যায়নি। কিন্তু ভাঙ্গনের পর ত্রাণ বিতরণের নামে হরিলুট আর বাঁধ বাঁধার নামে অর্থলুটের জন্য সবাই দুর্গত এলাকায় ছুটে যায়।
এদিকে পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় রাতেই ফুলগাজী উপজেলা বাজার বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়। একপর্যায়ে উপজেলার বণিকপাড়া, সাহাপাড়া, দক্ষিণ দৌলতপুর ও উত্তর দৌলতপুরে মুহুরী নদীর ভাঙ্গনের ফলে লোকালয়ে প্রবলবেগে নদীর পানি প্রবেশ করতে শুরু করে। এতে বাজারের পানি নামতে শুরু করে।
গতকাল সকালে বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে প্রবলবেগে পানি প্রবেশের ফলে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হয়। বন্যার প্রবল স্রোতে শত শত পুকুরের মাছ এবং ফসলের বীজতলা ভেসে যায়। ফলে লাখ লাখ টাকার ক্ষতির সম্মুখীন ফলে পানিবন্দি হয়ে পড়ে ফুলগাজী উপজেলার প্রায় ১২গ্রামের মানুষ। গতকাল সকাল ১০ টার দিকে ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের দেড়পাড়া গ্রামে মনিরের দোকান সংলগ্ন এলাকায় প্রায় ২শ ফুট বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। এসময় প্রবল স্রোতে স্থানীয়রা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়ে। পানিবন্দি হয়ে পড়ে বেড়িবাঁধ সংলগ্ন এলাকার মানুষ। বন্যার পানিতে ফেনী পরশুরাম আঞ্চলিক সড়ক পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় ফুলগাজী, পরশুরাম ও বিলোনীয়া স্থলবন্দরে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি ও গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে ফেনী পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী কহিনুর আলমকে ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। এদিকে গতবারের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামতে ব্যাপক অনিয়ম আর দুর্নীতির পিছনে তার হাত রয়েছে বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেন।
নদীগর্ভে ৩ শতাধিক ঘর-বাড়ি,মসজিদ
মাদারীপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ নদী অব্যাহত ভাঙ্গণে মাদারীপুর শিবচর উপজেলার ৩ ইউনিয়নের শতাধিক বাড়ি ঘর, মসজিদ, ফসলী জমি ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙণের মুখে রয়েছে স্কুল-মাদরাসাসহ অসংখ্য বাড়িঘর।
জানা গেছে, পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ নদের পানি কিছুটা হ্রাস পাওয়ায় শিবচর উপজেলার পদ্মার চরাঞ্চল কাঁঠালবাড়ি, চরজানাজাত ও আড়িয়াল খাঁ নদের তীরবর্তী সন্ন্যাসীরচরে নদী ভাঙনে শতাধিক ঘর-বাড়ি ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের তীব্রতায় ক্ষতিগ্রস্থরা ঘরবাড়ি গবাদি পশু সরিয়ে নিতেও হিমশিম খাচ্ছেন। এছাড়াও ভাঙ্গণ ঝুঁকিতে রয়েছে সন্নাসীরচর উচ্চ বিদ্যালয়, ৭৬ নং সন্ন্যাসীরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কমিউনিটি ক্লিনিক, সেতুসহ অসংখ্য স্থাপনা। ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষ এখন না খেয়ে জীবন যাপন করছে। সরকারি কোন সাহায্য-সহযোগিতা এখন পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। দূর থেকে কাউকে আসতে দেখলেই ভাঙ্গন কবলিতরাভাবে এই বুঝি কেউ আমাদের জন্য সাহায্য নিয়ে আসছে। সব চেয়ে অসহায় হয়ে পড়েছে পদ্মা বেষ্টিত চরজানাজাত ও কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের মানুষ।
ভাঙন কবলিত এলাকা ঘুরে দেখা যায়, আড়িয়াল খাঁ নদের ভাঙনে ইতিমধ্যেই এ উপজেলার সন্ন্যাসীরচরের খাসচর বাচামারা আজাদ প্রাথমিক বিদ্যালয়, সন্যাসীরচর ইউপি চেয়ারম্যান রউফ হাওলাদারের বাড়িসহ তিন শতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। দক্ষিণ বহেরাতলায় ইউনিয়নের প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন বাঁধের ৫০ মিটারসহ ২০টি ঘরবাড়ি, নিলখী ইউনিয়নের একটি মাদরাসাসহ ৪০টি ঘরবাড়ি, দত্তপাড়া ইউনিয়নের মহাসড়ক রক্ষা বাঁধের ৫শ’ মিটার বাঁধসহ ৫০টি ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। উত্তর চরজানাজাত ইউনিয়নের প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন সেন্টারের দ্বিতল ভবন, একটি গুচ্ছগ্রামসহ ৫০টি ঘরবাড়ি। এ এলাকায় নদীতে বিলীন হয়েছে কমপক্ষে ৪শ’ একর ফসলি জমি। ভাঙনের আশঙ্কা রয়েছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ সড়কপথ ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।