হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির খড়গ : আসামের এনআরসি এবং বাংলাদেশ
কিশোর শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক দাবীর আন্দোলনে ঢাকাসহ সারাদেশে তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছিল,
মহিউদ্দিন খান মোহন
দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন সর্বাধিক আলোচিত বিষয় নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত রোডম্যাপ। গত ১৬ জুলাই প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা এ রোডম্যাপ ঘোষণা করেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ঘোষিত এ নির্বাচনী রোডম্যাপ সঙ্গতকারণেই সচেতন মহলে আলোচনার ঝড় তুলেছে। কেননা, ইসি ঘোষিত এ রোডম্যাপ বাস্তবায়নের ওপর আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ধরন অনেকাংশে নির্ভর করছে। সে নির্বাচন সব দলের অংশ গ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে, নাকি আবারো একটি একতরফা নির্বাচনের দিকে দেশকে ধাবিত করবে তা অনেকটাই নির্ভর করছে নির্বাচন কমিশনের দৃঢ়তা এবং ঘোষিত রোডম্যাপের বাস্তবায়নের ওপর। ইসির রোডম্যাপ ঘোষণার পর দেশের রাজনৈতিক দল এবং বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দ তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তাতে রোডম্যাপের পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন নিয়ে অনেকের মনেই সন্দেহ-সংশয়ের বিষয়টি বেরিয়ে এসেছে।
নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত রোডম্যাপে সাতটি কর্ম-পরিকল্পনাকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে- ১. আইনি কাঠামোগুলো পর্যালোচনা ও সংস্কার, ২. নির্বাচন প্রক্রিয়া সহজীকরণ ও যুগোপযোগী করতে সংশ্লিষ্ট সবার পরামর্শ গ্রহণ, ৩. সংসদীয় এলাকার নির্বাচনী সীমানা পুনর্নির্ধারণ, ৪. নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও সরবরাহ, ৫. বিধি বিধান অনুসরণপূর্বক ভোট কেন্দ্র স্থাপন, ৬. নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন এবং নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নিরীক্ষা ও ৭. সুষ্ঠু নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট সবার সক্ষমতা বৃদ্ধির কার্যক্রম গ্রহণ।
নতুন রোডম্যাপ ঘোষণা করে সিইসি নূরুল হুদা বলেছেন, নির্বাচনী রোডম্যাপের এই দলিল সর্বশেষ নয়। সময় ও সচ্ছতার নিরিখে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে কমিশন কর্মকর্তারা আরো বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। তিনি আরো বলেছেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে বিদ্যমান আইনই যথেষ্ট। সিইসি বলেছেন, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের স্বার্থে সংলাপে রাজনৈতিক দলসহ অংশীজনের কাছ থেকে সুপারিশের পাশাপাশি সহযোগিতাও চাওয়া হবে। তবে, নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির দায় নির্বাচন কমিশনের নেই বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন। সিইসি তার বক্তব্যে এটাও বলেছেন যে, শুধু সরকার কেন রাজনৈতিক দল বা দেশি-বিদেশি যে কোন সংস্থার প্রভাবমুক্ত নির্বাচন তারা করতে পারবেন। বর্তমান সরকারের অধীনেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
এদিকে নির্বাচন কমিশনের রোডম্যাপ ঘোষণার পর পরই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ওইদিন নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, রোডম্যাপ দিয়ে নির্বাচন নিয়ে চলমান সঙ্কটের সমাধান হবে না। রোড তো থাকতে হবে। এখন পর্যন্ত আমরা রোড দেখতে পাচ্ছি না। সুতরাং ম্যাপ তো পরের প্রশ্ন। তিনি বলেছেন, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য একটা সহায়ক সরকার প্রয়োজন, সেই সহায়ক সরকার গঠনের ব্যাপারে আলোচনা বড় প্রয়োজন এই মুহূর্তে। গত ১৮ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনে দলের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করতে গিয়ে মির্জা আলমগীর বলেছেন, নির্বাচন কমিশন ঘোষিত রোডম্যাপ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে আবারো ক্ষমতায় আনার নীলনকশা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এ রোডম্যাপ ঘোষণা করা হলেও এতে জাতির আশা আকাঙ্খাকে উপেক্ষা করা হয়েছে।
দেশের বিশিষ্ট নাগরিকগণ অভিমত দিয়েছেন যে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। নির্বাচনে অংশ নেয়া রাজনৈতিক দলগুলো যাতে সমানভাবে সভা সমাবেশ করতে পারে সে বিষয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা নিতে পারে কমিশন। এ বিষয়ে নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার পর সকল রাজনৈতিক দলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। কারণ, রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত। অথচ সরকার তাদেরকে সভা সমাবেশ করতে দিচ্ছে না। তার জন্য কমিশন উচ্চ আদালতের নির্দেশনা নিতে পারে। তা না করতে পারলে রোডম্যাপ ঘোষণা দিয়ে কিছুই হবে না। যে লাউ সে কদু’। তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও সুজনের সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেছেন, আমার মনে হয় এ কমিশন দিয়ে জাতীয় নির্বাচন হবে না। তিনি বলেন, সিইসি বলেছেন এ মুহূর্তে সরকার কীভাবে পরিচালিত হবে ও রাজনৈতিক কর্ম পরিবেশের বিষয়গুলো আমাদের এখতিয়ারে নেই। তার বক্তব্য সঠিক নয়। এখন থেকে দেশের সকল রাজনৈতিক দলকে সমাবেশ করার সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে ইসিকে। এ বিষয়ে তিনিও ইসিকে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা গ্রহণের কথা বলেছেন। এছাড়া সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগ্রেডিয়ার এম সাখাওয়াত হোসেন (অব.) বলেছেন, আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে হলে এখন থেকেই রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। সব দলকে সমানভাবে সভা সমাবেশ করতে দিতে হবে। এটা করতে দেয়া দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। সরকারের সদিচ্ছা না থাকলে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয় এবং জনগণ ওই নির্বাচনে অংশ নেবে না। (সূত্র : দৈনিক ইনকিলাব, ১৭ জুলাই ২০১৭)
ঘোষিত রোড ম্যাপকে স্বাগত জানালেও তেমন কোনো উৎসাহী মন্তব্য করেনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, নির্বাচন কমিশন যে পথ নকশা জাতির সামনে পেশ করেছে তা খুবই সুন্দর এবং বাস্তবসম্মত। আর ঘোষিত রোডম্যাপের বাস্তবায়ন দেখে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাবেন বলে জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তবে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচন কমিশনের রোডম্যাপের ব্যাপারে অতি উৎসাহী না হতে তার সরকারের মন্ত্রী ও দলের নেতাদের পরামর্শ দিয়েছেন। গত ১৭ জুলাই মন্ত্রী পরিষদের বৈঠক শেষে তিনি সবার উদ্দেশ্য বলেন, রোডম্যাপ ইসির বিষয়। এই রোডম্যাপ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে আপনারা কোনো মন্তব্য করবেন না। প্রধানমন্ত্রী এও বলেছেন, আগামী নির্বাচন যাতে না হয়, সে রকম ষড়যন্ত্র চলতে পারে। তাই চোখ কান খোলা রেখে কথা বলতে হবে।
নির্বাচন কমিশন তাদের ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী কতোটা এগোতে পারবে বা এর কতোটা বাস্তবায়ন করতে পারবে সে সম্পর্কে মন্তব্য করার সময় এখনো আসেনি। তবে, রাজনৈতিক দলগুলোর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া, রাজনীতি, নির্বাচন ও সংবিধান বিশেষজ্ঞদের অভিমত থেকে এটি স্পষ্ট যে, এ রোডম্যাপের ওপর কেউ-ই আস্থা রাখতে পারছেন না। এক্ষেত্রে বিএনপি মহাসচিবের মন্তব্য অত্যন্ত তীর্যক ও বাস্তবসম্মত বলেই ধরে নেয়া যায়। কেননা, একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য যে ধরনের রাজনৈতিক পরিবেশ অপরিহার্য বাংলাদেশে তার অনুপস্থিতি এখন খালি চোখেই দেখা যায়। শৃঙ্খলিত গণতান্ত্রিক পরিবেশে নির্বাচন কমিশন কতোটা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে, রাজনৈতিক দলগুলো কতোটা নির্ভয়ে মাঠে নামতে পারবে এবং জনগণ কতোটা নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারবে তা নিয়ে সবারই কমবেশি সংশয়-সন্দেহ রয়েছে। যেখানে দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলকে সরকার সভা সমাবেশ করতে দিচ্ছে না, সেখানে নির্বাচনী পরিবেশ কতোটা সুস্থ ও শান্তিপূর্ণ হবে তা সহজেই অনুমেয়। সরকারের কর্তৃত্ববাদী মনোভাবের আমূল পরিবর্তন এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ যদি জাগ্রত না হয়, তাহলে বিদ্যমান পরিবেশের তেমন কোনো উন্নতি হবে বলে মনে হয় না। সে ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের রোডম্যাপ কাগজে-কলমেই হয়তো বাস্তবায়িত হবে, বাস্তবে তা আর দৃশ্যমান হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না।
ঘোষিত রোডম্যাপে নির্বাচন কমিশন যেসব বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়েছে, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সেগুলোর অপরিহার্যতার কথা অস্বীকার করা যাবে না। তবে সবই নির্ভর করছে কমিশনের দৃঢ়তা এবং সরকারের সদিচ্ছার উপর। সরকার যদি নির্বাচন কমিশনের কাজে হস্তক্ষেপ না করে, স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয়, তাহলে হয়তো পরিবেশের উন্নতি ঘটতে পারে। কেননা, সিইসি তার বক্তৃতায় পরিষ্কার করেই বলেছেন যে, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির দায়িত্ব ইসির একার নয়, সরকারেরও। তার এ মন্তব্য শতভাগ সঠিক। কেননা, ক্ষমতাসীন সরকার যদি নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা না করে, তাহলে কমিশন কোনো পদক্ষেপই কার্যকর করতে পারবে না। নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিকভাবে স্বাধীন এবং সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে হলেও অতীত অভিজ্ঞতা আমাদেরকে তেমন আশাবাদী করতে পারছে না। সরকারের ইচ্ছায় একটি নির্বাচন কমিশন সচল ও সক্ষম যেমন হতে পারে, আবার সরকারের ইচ্ছাতেই সে কমিশন ঠুটো জগন্নাথে পরিণত হতে পারে।
প্রধান বিরোধী দল বিএনপির পক্ষ থেকে ইসির রোডম্যাপ সম্পর্কে যে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়েছে তাতে বোঝা যাচ্ছে, এ রোডম্যাপ তাদের আশান্বিত করতে পারেনি। তারা ইসির রোডম্যাপের চেয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের আলোচনার উপর গুরুত্ব দিচ্ছে বেশি। কিন্তু সে ধরনের আলোচনার সম্ভাবনা সরকার পক্ষ থেকে অনেক আগেই নাকচ করে দেয়া হয়েছে। তাছাড়া আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে সে ধরনের আলোচনায় সরকারকে বাধ্য করার মতো শক্তিও বিএনপির এ মুহূর্তে নেই। ফলে আগামী নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা ছাড়া তাদের আর কোনো গত্যন্তর আছে বলে মনে হয় না। বিএনপি যা-ই বলুক না কেন, ইসি তাদের ঘোষিত রোডম্যাপ নিয়ে কিছু কাজ অবশ্যই করবে। অন্তত নিজেদের যোগ্য ও সক্ষম প্রমাণ করতে কিছু পদক্ষেপ তারা নেবে। তবে, এমন এমন ক্ষেত্রে তারা পদক্ষেপ নেবে, যেগুলো সরকারকে বিব্রত বা ক্ষুব্ধ করবে না। সরকারকে সন্তুষ্ট রেখেই তারা যা করার করবে। যেমন ভোটার তালিকা হাল নাগাদ। এটাই হবে ইসির এক নম্বর কাজ। এ ক্ষেত্রে সরকারও তাদর সহায়তা করবে। কিন্তু বিরোধী দলকে সভা-সমাবেশ করতে দেয়ার বিষয়ে ইসি সরকারকে কোনো ধরনের অনুরোধ যে করবে না সেটা স্পষ্ট। এমনকি বিশিষ্টজনদের পরামর্শ অনুযায়ী এ বিষয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা গ্রহণের বিষয়েও তারা আগ্রহ দেখাবে বলে মনে হয় না। কেননা, সিইসি বলেই দিয়েছেন, নির্বাচনী তফসীল ঘোষণার পর সব দলের সমান সুযোগের বিষয়টি দেখার দায়িত্ব ইসির। এর আগে সরকার কীভাবে চলবে ও রাজনৈতিক কর্মপরিবেশের বিষয়গুলো তাদের এখতিয়ারভুক্ত নয়। সুতরাং, এটা পরিষ্কার যে, দেশে যে একপেশে রাজনৈতিক পরিবেশ বিরাজ করছে, তার পরিবর্তন ঘটানোর বিষয়ে নির্বাচন কমিশন কোনো উদ্যোগ বা পদক্ষেপ নেবে না। ফলে এটা অনুমান করা কষ্টকর নয় যে, নির্বাচন কমিশনের কাজকর্মে সরকারের ইচ্ছা-অনিচ্ছার প্রতিফলন ঘটবে, যেগুলো বিরোধী দল শুধু নয়, কারো কাছেই গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হবে না।
ঘোষিত রোডম্যাপে বলা হয়েছে, কমিশন দেশের রাজনৈতিক দল এবং ‘অংশীজন’দের কাছ থেকে পরামর্শ বা প্রস্তাবনা চাইবে। এ লক্ষ্যে চলতি জুলাই মাসের শেষ দিক থেকে তারা সংলাপ শুরু করবে। সংলাপের এ ঘোষণাও দেশের সচেতন মহলকে আশ্বস্ত করতে পারছে না। কেননা, অতীতে এ ধরনের সংলাপ ও তার ফলাফল দেশবাসী দেখেছে। নির্বাচন কমিশন আলোচনা করে ঠিকই, কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে গোপন কোনো স্থান থেকে আসা নির্দেশনা অনুযায়ী। ফলে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সংলাপ শেষ পর্যন্ত ‘সঙ-লাফে’ পর্যবসিত হয়।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত রোডম্যাপ নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ যে এবার চাতুর্যপূর্ণ অবস্থান নিয়েছে তা এখন পরিষ্কার। ওবায়দুল কাদেরের ‘রোডম্যাপের বাস্তবায়ন’ দেখে প্রতিক্রিয়া জানানোর ঘোষণা এবং রোডম্যাপ নিয়ে ‘অতি উৎসাহী’ না হওয়ার জন্য নেতা-মন্ত্রীদেরকে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ থেকে অনুমান করা যায় যে, তারা ধীরেসুস্থে তাদের ‘কর্মপরিকল্পনা’ বাস্তবায়নে তৎপর। যেখানে নির্বাচন কমিশনই ক্ষমতাসীনদের ‘রোডম্যাপ’ বাস্তবায়নের দায়িত্ব নিয়েছে, সেখানে অতি উৎসাহী হয়ে কথা বলে বিতর্ক সৃষ্টি করার কি দরকার? তাদের শতভাগ আস্থাভাজন নির্বাচন কমিশন যে তাদের ‘বাড়া ভাতে ছাই’ দেয়ার মতো কোনো পদক্ষেপ নেবে না, সে বিষয়ে তো তারা শতভাগ নিশ্চিত! ফলে ইসির রোডম্যাপের পক্ষে হৈ হুল্লোড় করে বিএনপির হাতে ‘প্রেস ব্রিফিং’ করার আরেকটি ইস্যু তুলে দেয়ার দরকার কি? স্বার্থ রক্ষার শিখÐি যদি আসল জায়গায় নিয়োজিত থাকে, তাহলে নাকে খাঁটি সরিষার তেল দিয়ে ঘুমাতে বাধা কোথায়? আওয়ামী লীগ এখন ইসির রোডম্যাপ নিয়ে সেটাই করবে। কারণ তারা জানে, ইসির এ রোডম্যাপের রোড সেখানে গিয়েই শেষ হবে, যেখানে তাদের (আওয়ামী লীগ) স্বার্থের মঞ্জিল অবস্থিত।
প্রশ্ন হলো, জনগণের প্রত্যাশার কী হবে? দেশবাসী একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের অপেক্ষায় আছে অধীর আগ্রহ নিয়ে। আর সে নির্বাচন নির্ভর করছে নির্বাচন কমিশনের ওপর। সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় রেখেই নির্বাচন হওয়ার কথা। তা সত্তে¡ও নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হতে পারে, যদি নির্বাচন কমিশন মেরুদÐ সোজা ও শক্ত করে সংবিধান প্রদত্ত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সে রকম কোনো লক্ষণ দেশবাসী দেখতে পায়নি। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত রোডম্যাপ যদি বাস্তবায়িত হয়, তাহলে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথ উন্মুক্ত হতে পারে। তবে তা নির্ভর করছে সরকারের সদিচ্ছার ওপর।
বিএনপি নির্বাচকালীন সহায়ক সরকারের কথা বলছে; যদিও সেটার রূপরেখা এখন পর্যন্ত দেয়নি। তারপরও দলটির নেতানেত্রীদের কথাবার্তা থেকে এটা পরিষ্কার যে, তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে নির্বাচনে যাবে না। তারা হয়তো সহায়ক সরকারের রূপরেখায়ও তা উল্লেখ করবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ যে কোনো ধরনের ছাড় দেবে না, সেটাও ইতোমধ্যে স্পষ্ট হয়ে গেছে। তাহলে শেষ পর্যন্ত কী হবে? সরকার ও বিরোধী দল যদি নির্বাচন প্রশ্নে সমঝোতায় আসতে না পারে, তাহলে দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ কি আবারো বিশৃঙ্খলার আবর্তে নিমজ্জিত হবে?
লেখক: সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।