বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
প্রকল্পের ডিজাইন মানছে না ব্যবসায়ীরা
আবু হেনা মুক্তি : ভৈরব নদীর তীরে অবস্থিত খুলনা শহর। আর এই শহর রক্ষা বাঁধই এখন হুমকির মুখে। ব্যবসায়ীরা ট্রেড ইউনিয়নের জোরে প্রকৌশলীদের ডিজাইন না মেনে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে অবৈধভাবে। বাঁধের ওপর প্রতিষ্ঠান। বাঁধের বিভিন্ন স্থানে ফাটল। বাঁধ সেল্টার বøক ফুটো করে তৈরী হয়েছে স্থাপনা। যেখানে সেখানে থামছে ট্রলার নৌকা। অপরিকল্পিতভাবে ঝুঁকি নিয়ে মালামাল ওঠা নামানোসহ বিভিন্ন কারণে শহর রক্ষা বাঁধের অস্তিত্ব এখন চরম ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া শুরু হয়েছে বর্ষাকাল। শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থা খুবই দুর্বল। বাজারে পানির স্রোত এসে এলোপাতাড়িভাবে আচড়ে পড়ছে শহর রক্ষা বাঁধে। পাশাপাশি ভরা কটালে নদীতে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়েও বাড়ছে। বাঁধের কোথাও কোথাও পানি সরছে না। তাই যে কোন মুহূর্তে বড় ধরনের ধস নেমে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৯৩-৯৪ অর্থ বছরে এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) আর্থিক সহায়তায় সেকেন্ডারী টাউন ইন্ট্রিগেটেড ফাড প্রটেকশন প্রজেক্টের আওতায় খুলনা শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়। এই প্রকল্পের আওতায় ২৮/২ পোল্ডারে সাড়ে ৩ কিলোমিটার বিকল্প বাঁধ নির্মাণ, ৬টি রেগুলেটর স্থাপন এবং নদীর তীরের ভাঙন কবলিত খুলনা জেলখানা ঘাট, সদর হাসপাতাল, বড় বাজার, আইডব্লিউটিএ ঘাট, রুজভেল্ট জেটি, আনসার ফাওযার মিল ও দৌলতপুর বিএল কলেজ এলাকায় ২দশমিক ৮৯ কিলোমিটার জায়গা রক্ষার কাজ অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ৩৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনা-২ এর তত্ত¡াবধানে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়। নির্ধারিত সময়ের অনেক পর ১৯৯৮ অর্থ বছরে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়।
এই প্রকল্পের আওতায় জেলখানা ঘাট থেকে রুজভেল্ট জেটি পর্যন্ত নদীর তীর সংরক্ষণ কাজকে মোট ১০টি প্যাকেজে ভাগ করা হয়। এর মধ্যে রুজভেল্ট এলাকায় ২টি, জেলখানা ঘাট থেকে সদর হাসপাতালের পশ্চিম সীমানা পর্যন্ত দু’টি এবং বড়বাজার এলাকার জুতাপট্টি হয়ে আইডবিøউটিএ ঘাট পর্যন্ত ৬টি প্যাকেজ ভাগ করা হয়। বøক তৈরী করে তা’ নদীর কুলে প্লেজ করা হয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে এবং খুলনা শহরকে নদীর জোয়ারের পানি মুক্ত করার জন্য বাঁধ নির্মাণের সময় ব্যবসায়ীরা যে শর্ত মানার অঙ্গিকার করেছিল তা পরবর্তীতে রক্ষা হয়নি। বাঁঁধ নির্মাণ কাজ শেষে প্রসিদ্ধ বড় বাজারের ব্যবসায়ীরা তাদের স্থাপনা বাঁধের ভিতরে রাখার অঙ্গিকার করলেও এখন শত শত দোকান বাঁধের বাইরে। ট্রেড ইউনিয়নের চাপ এবং রাজনৈতিক সেল্টারে সুবিধাবাদীরা বিআইডবিøউটিএ’র ইজারা নিয়ে আবার কেউ কেউ মালিকানাধীন জমির কাগজপত্র তৈরী করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে ব্যবসা অব্যাহত রেখেছে।
সরজমিনে দেখা যায়, জেলখানা খেয়াঘাট থেকে ৫নং ঘাট পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা নতুন করে ব্যবসা শুরুর সময় কোন শর্ত রক্ষা করেননি। বিশেষজ্ঞরা যে ডিজাইন করেছে সে মোতাবেক স্থাপনা নির্মাণ হয়নি। পাউবো’র প্রতিবাদও বিসর্জন হয়েছে ক্ষমতাসীনদের কাছে। সব সরকারের আমলেই সুবিধাবাদীরা সুযোগ বুঝে সুযোগ নিয়েছে। কোন নিয়ম নীতি না মেনে বাঁধ দখল ও নদী দখলের মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা ঘর তৈরী করায় শহর রক্ষা বাঁধ হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যেই হাসপাতাল ঘাট, কালিবাড়ী, ডেল্টাঘাটসহ ৭/৮টি স্থানে শহর রক্ষা বাঁধের বøক ধসে নদী গর্ভে চলে গেছে এবং মূল বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে।
এ ব্যাপারে খুলনা বড় বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইনকিলাবকে বলেন, এক শ্রেণীর প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা বাঁধ দখল করে ঘর তৈরী করেছে। বøক সরিয়ে ছিদ্র করে ঘর তৈরী করা হয়েছে। তাদের কারণেই শহর রক্ষা বাঁধ এখন ক্ষতির সম্মুখীন। খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের একজন প্রকৌশলী জানান, বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক প্রভাবে শহর রক্ষা বাঁধের ক্ষতি হয়েছে। সরকারি চাকরি করে অনেক সময় কথা বলা দুরুহ হয়ে পড়ে । এ কারণে দখলদারদের বিরত করা যায়নি।
খুলনার বিশিষ্ট নাগরিক নেতা মো: আব্দুল হালিম ইনকিলাবকে বলেন, আবারও খুলনা প্রোটেকশন বাঁধ মেরামত ও নতুন প্রকল্প গ্রহন এখন সময়ের দাবি। তবে সরকারের গৃহীত প্রকল্পগুলি যেন হরিলুট না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এখনতো টেন্ডার থেকেই শুরু হয় দুর্নীতি। তাই কাজের গুনগত মান শেষ পর্যন্ত ঠিক থাকেনা। কিন্তু খুলনার মানুষের কথা চিন্তা করে নতুন প্রকল্প গ্রহন ও বাস্তবায়নের স্বচ্ছতা আনতে হবে। আর টাউন প্রোটেকশনের বিষয়টি হিমাগারে ফেলে রাখলে হবে না। তাছাড়া সুবিধাভোগীদেরও নিয়ম কানুন অবশ্যই মানতে হবে। শুধু ব্যবসায়ীদের দলবাজি করলেই হবে না। জাতীয় স্বার্থ ঠিক রাখতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।