Inqilab Logo

সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

কোরবানির জন্য প্রস্তুত হচ্ছে সোয়া কোটি পশু

| প্রকাশের সময় : ১৯ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মিজানুর রহমান তোতা : সারাদেশে পশুসম্পদের উন্নয়ন ঘটেছে। আরো সমৃদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল। গত দুই বছর কোরবানির পশুর কোন ঘাটতি হয়নি। বরং গেল বছর সারপ্লাস ছিল। এবারও কোনরূপ ঘাটতি স্পর্শ করবে না। এই তথ্য প্রাণী সম্পদ অধিপ্তরের দায়িত্বশীল সূত্রের। সূত্রমতে, কোরবানির জন্য ভারতের পশুর দিকে চাতক পাখির মতো তাকিয়ে থাকতে হতো। কোরবানি সময় ছাড়াও সীমান্তের করিডোর দিয়ে প্রচুর গরু ঢুকতো ভারত থেকে। যার জন্য দেশীয় গরু ও ছাগলের উৎপাদন একেবারেই কমে যায়। এখন উৎপাদন বেড়েছে অনেক। শুধু কোরবানির পশুর ক্ষেত্রে নয়, আর্থ-সামাজিক স্থিতিশীলতায় গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকায় রাখে। এই খাতে খুব সহজেই বিপ্লব ঘটানোর সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য দরকার সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ আরো বেশী নজর দেয়া। সূত্রমতে, আমিষের ঘাটতি পূরণ, চামড়া ও গোশত রফতানী বৃদ্ধি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয়, বেকারত্ব ও দারিদ্র্যতা বিমোচনে আর্থিক নিরাপত্তা গড়ে তোলা সম্ভব গ্রামে গ্রামে পশুসম্পদ উন্নয়নে। এতে জাতীয় অর্থনীতিতেও বিরাট অবদান রাখতে সক্ষম হবে।
প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে আমাদের পশুসম্পদে। পশু সম্পদকে ঘিরেই গ্রামীণ অর্থনীতিতে গতি সৃষ্টি হচ্ছে। সব ধরণের পরিবেশ এ অঞ্চলে বিদ্যমান। দরকার শুধু সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো। গত দুই বছর (২০১৫ ও ২০১৬) কোরবানির পশু বিক্রি করে কৃষকরা বেশ লাভবান হয়। তাই ব্যাপক উদ্যোম কৃষকরা নিয়ে গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ ও হাঁস-মুরগী লালন পালন করতে মাঠে নামেন। সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে প্রায় অর্ধকোটি কৃষক পরিবার গরু পালন করছে। সর্বশেষ হিসাবানুযায়ী গবাদি পশুর (গরু ও ছাগল) সংখ্যা রয়েছে ৫ কোটি ৪৩ লাখ। এর মধ্যে গরু ২ কোটি ৩৭ লাখ, ছাগল ২ কোটি ৫৭ লাখ, মহিষ ১৪লাখ ৭১হাজার, ভেড়া ৩৩লাখ ৩৫হাজার। সূত্র জানায়, কোরবানির জন্য প্রস্তত করা হচ্ছে এক কোটি ১৫লাখ গরু-ছাগল। গতবছর কোরবানির জন্য প্রস্তত ছিল ১ কোটি ১০ লাখ পশু। সঙ্কট মোকাবেলা করে সারপ্লাস হয়েছে। সব বিক্রি হয়নি। এবারও চাহিদানুযায়ী কোরবানির পশু বাজারে তোলার জন্য পর্যাপ্ত পশু উৎপাদন হচ্ছে।
প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর জানায়, একটি গরু বছরে একটি বাছুর এবং একটি ছাগল বছরে অন্তত ৬টি বাচ্চা দেয়। অস্বচ্ছল পরিবারে কয়েকটি গরু, ছাগল ও হাঁস-মুরগী থাকলে অনায়াসেই স্বচ্ছলতা আনা সম্ভব। বাড়ি বাড়ি গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগী পালন করে সংসার নির্বাহের খরচ যোগাড়ের অসংখ্য দৃষ্টান্ত রয়েছে গ্রামবাংলায়। গ্রামবাংলায় গরু, ছাগল ও হাঁস-মুরগী পালনের দৃশ্য অতি পরিচিত। এমন কোন গ্রাম খুঁজে পাওয়া যাবে না যেখানে গবাদি পশু লালন পালন হয় না। গতানুগতিক ধারার সাথে এখন যুক্ত হয়েছে আধুনিক পরিকল্পনা। এতে পশুসম্পদ সমৃদ্ধ হচ্ছে। অনেকেরই বদ্ধমূল ধারণা ছিল ভারত থেকে গরু না আসলে বাংলাদেশে কোরবানির পশু সংকট হবে। চলমান বাজারে গোশতের মূল্য হবে আকাশছোঁয়া। পশু সঙ্কট হবে, গরুর মূল্য হবে-এমন আশঙ্কার দিন শেষ হয়ে গেছে। সবকিছু ছাপিয়ে প্রমাণ হয়েছে পশুসম্পদে সমৃদ্ধ দেশ। কোনরূপ সঙ্কট হয়নি গত দুইবছর। দেশের কৃষকরা প্রমাণ করেছেন, পশু উন্নয়নে তারা সফল ভারতের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না। প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, সারাদেশে গত কোরবানির ঈদে গরু ও ছাগল বেচাকেনা হয়েছে যার শতকরা ৯৮ ভাগই গবাদি পশু দেশীয়। মাত্র ২ ভাগ পশু ঢোকে ভারত ও মায়ানমার থেকে।
মাঠপর্যায়ের আরেক প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা জানালেন, প্রাণীসম্পদ উন্নয়নে কিছু সমস্যা আছে। সেসব সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের পদক্ষেপ বিশেষ করে ক্ষুদ্র খামারীদের সহজশর্তে ঋণের ব্যবস্থা নেয়া হলে পশুসম্পদ উন্নয়নে গতিশীলতা সৃষ্টি হবে। এক্ষেত্রে অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে ওই কর্মকর্তা জানালেন, সরকার সাধারণত একেবারে হতদরিদ্রদের মাঝে দারিদ্র্য বিমোচনে ঋণ দিয়ে থাকে। তাদের অন্য কোনভাবে স্বাবলম্বী করার ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি জানালেন, বেশীরভাগ হতদরিদ্র্য ব্যক্তি গবাদি পশু লালন পালন না করে ঋণের অর্থ সংসারের বিশেষ প্রয়োজনে ব্যয় করে থাকেন। তাছাড়া পালনের মাঝপথে গোখাদ্যের খরচ যোগাড় করতে না পেরে লালন পালনে অনাগ্রহী হয়ে পড়ে। তার মতে, যদি গ্রামে গ্রামে ছোটখাটো খামার ও জমি যাদের আছে তাদের ঋণ দিলে গবাদি পশু পালন বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে। কারণ তারা নিজেদের জমির খড়, খাস গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে সহজেই। তাদের ঋণ ও লালন পালনে ভর্তুকি সিস্টেম চালু করলে আরো দেশে গরু ও ছাগলের সংখ্যা বাড়বে। তখন গোশত ও চামড়া রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কোরবানি

৯ জুলাই, ২০২২
৯ জুলাই, ২০২২
৮ জুলাই, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ