Inqilab Logo

রোববার, ১৬ জুন ২০২৪, ০২ আষাঢ় ১৪৩১, ০৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সৌম্যর লড়াইটা নিজের সাথেই

| প্রকাশের সময় : ১৮ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্পোর্টস রিপোর্টার : মাত্র আড়াই বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। এর মধ্যেই মুদ্রার দুই পিঠ কয়েক দফায় দেখা হয়ে গেছে সৌম্য সরকারের। গত কয়েক মাসেও খাবি খেয়েছেন সাফল্য আর ব্যর্থতার বিপরীতমুখী ¯্রােতে। আসছে মৌসুমের আগে সমাধানটা নিজেই বের করতে চান সৌম্য। এগিয়ে যেতে চান সাফল্যের ¯্রােতে ভেসে।
গত কয়েক মাসেই সৌম্যর ক্যারিয়ার গ্রাফ ছুটোছুটি করেছে ওপরে আর নীচে। ডিসেম্বরে নিউ জিল্যান্ড সফরে প্রথম ওয়ানডের পর বাদ পড়লেন। টি-টোয়েন্টিতে সুযোগ পেয়ে শেষ দুই ম্যাচে ভালোই করলেন। টেস্ট দলে নিয়মিত ছিলেন না। ইমরুল কায়েসের চোটে সুযোগ পেয়ে ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে খেলেন ৮৬ রানের দারুণ ইনিংস। পরের ইনিংসে ৩৬। ভারতে গিয়ে হায়দরাবাদ টেস্টে ১৫ ও ৪২। শ্রীলঙ্কা সফরে দুই টেস্টে তিন বার ছাড়ালেন পঞ্চাশ। কিন্তু ওয়ানডে সিরিজে সুবিধে করতে পারলেন না বেশি। টি-টোয়েন্টিতে বড় রান না পেলেও দুটি ম্যাচে বিস্ফোরক শুরু এনে দিলেন দলকে। এই দ্বিমুখী যাত্রা চলতে থাকল ইংল্যান্ড-আয়ারল্যান্ড সফরেও। আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে দারুণ দুটি ইনিংস খেললেন। কিন্তু ইংল্যান্ডে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে চূড়ান্ত ব্যর্থ।
ব্যাটে রান অধারাবাহিক বলে তাকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা ধারাবাহিক। নিজের এই ধারাবাহিকতার অভাব ভাবাচ্ছে সৌম্যকেও। এসব নিয়ে অনেক কথা হয়েছে, অনেকের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। কোনো টোটকায় কাজ হয়নি। এবার সমাধান বের করতে চান নিজের পথেই, ‘কাজ করে যেতেই হবে। একদিন ভালো করছি, আরেকদিন হচ্ছে না। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খারাপ করেছি। তার আগের সিরিজটা আবার ভালো করেছি। সবাই হয়ত বলছে, আমি সবার কথা শুনছি না। আমি নিজেই উপলব্ধি করছি। আমার সমস্যার সমাধান আমাকেই বের করতে হবে। নিয়মিত যদি একই রকম আউট হতাম, তাহলে বুঝতাম আমার সমস্যা একই রকম। কিন্তু আউটগুলো এক রকম নয়। সমস্যাটা তাই ভিন্ন। আমি চেষ্টা করছি সমস্যাগুলো সমাধান করার। রান আমাকে করতেই হবে। এটাই আমার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।’
সমালোচনা আছে তার আউট হওয়ার ধরন নিয়েও। অনেকের মতেই যা অনেক সময় দৃষ্টিকটু। সৌম্য মনে করিয়ে দিলেন ক্রিকেটীয় বাস্তবতা। তার মত সহজাত আক্রমণাত্মক ঘরানার ব্যাটসম্যানদের শট দেখতে যেমন দৃষ্টিসুখকর, আউটও তেমনি অনেক সময় দেখতে ভালো লাগবে না, ‘আমার খেলার ধরনটাই এমন। যখন রান করি তখন ব্যাটিং দেখতে হয়তো ভালো লাগে। যখন রান না পাই তখন হয়তো ব্যাটিংটা দেখতে বাজে লাগে।’
শুরুতে তাকে ভাবা হয়েছে সীমিত ওভারের ক্রিকেটের সম্পদ। গত কিছুদিনে টেস্টেই ছিলেন বেশি ধারাবাহিক। বাংলাদেশের পরের সিরিজটিও টেস্ট সিরিজ। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেই সিরিজটির জন্য মুখিয়ে আছেন সৌম্য, ‘অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে আমরা মুখিয়ে আছি। আশা করি, আমরা ভালো ক্রিকেট খেলে অস্ট্রেলিয়াকে হারাতে পারব। যেহেতু অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আমার প্রথম টেস্ট সিরিজ হবে, এটাকে স্মরনীয় করে রাখতে চাই। আমার ব্যাটিংয়ের মাধ্যমে যেন আমরা দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে কোনো টেস্ট জিততে পারি, সেই চেষ্টাই করব।’
ম্যাচ জেতানো সৌম্যকে ফিরে পেতে অপেক্ষায় আছে বাংলাদেশের ক্রিকেটও! আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এক দশক পার করে দেওয়া তামিম ইকবাল ক্রিকেটের তিন সংস্করণে উদ্বোধনী জুটিতে সঙ্গী পেয়েছেন ১৮ জন। এই লম্বা তালিকায় আছেন সৌম্যর নামও। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের শুরুতেই সৌম্য যেভাবে দ্যুতি ছড়িয়েছেন, বলা হচ্ছিল, এত দিনে তামিম অসাধারণ এক সঙ্গী পেলেন বোধ হয়! সেটি এখন আর বলার সুযোগ কোথায়? আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পিচ্ছিল পথে সৌম্য যে স্বচ্ছন্দে হাঁটতে পারছেন না! এক সিরিজে ভালো করলে পরেরটিতে ধারাবাহিকতা ধরে রাখার নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না তরুণ এই বাঁহাতি ওপেনার। অন্য প্রান্তে তামিম বদলে যাওয়া এক ওপেনার। প্রতিপক্ষ, কন্ডিশন, সংস্করণ, সিরিজ বা টুর্নামেন্ট বদলালেও তিনি বদলাচ্ছেন না। তামিম এখন অনেক পরিণত, দায়িত্বশীল ব্যাটসম্যান।
উদ্বোধনী জুটির সঙ্গী হিসেবে দুর্দান্ত এই তামিমের কাছ থেকে শেখার অনেক কিছু দেখছেন সৌম্য, ‘উনি যখন স্ট্রাইকে থাকেন, তাঁকে দেখি আর চিন্তা করি, এই বলটা কীভাবে খেলতাম! তামিম ভাইয়ের আগের খেলার চেয়ে এখনকার খেলা অনেক আলাদা। তিনি এখন অনেক পরিণত। ম্যাচ পরিস্থিতি খুব দ্রæত ধরতে পারেন। মাঠে ও মাঠের বাইরে তাঁর কাছ থেকে শেখার চেষ্টা করি। তাঁর আগের ব্যাটিংয়ের হাইলাইটস দেখি। দেখি আগে কীভাবে আক্রমণাত্মক খেলতেন আর এখন কীভাবে খেলেন।’
১০ বছরের ক্যারিয়ারে তামিম খেলেছেন ৪৯ টেস্ট, ১৭৩ ওয়ানডে ও ৫৬ টি-টোয়েন্টি। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখা সৌম্য খেলেছেন ৭ টেস্ট, ৩১ ওয়ানডে ও ২৪ টি-টোয়েন্টি। তামিমের মতো দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার স্বপ্ন দেখেন সৌম্য, ‘ওপেনিংয়ে নেমে বড় পর্দায় যখন দেখি, উনি ১৬০-১৭০ ওয়ানডে খেলে ফেলেছেন, আমি ৩০। স্বপ্ন দেখি, আমিও একদিন ১৬০-১৭০ ম্যাচ খেলব।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ