নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
ইমরান মাহমুদ : ০, ৩, ৩, ২৮- চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির চার ম্যাচে তার রানের টালি। সর্ব সাকুল্যে ৩৪। উদ্বোধোনী ম্যাচে ওভালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২৮, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সমান তিন করে এবং গতকাল ভারতের বিপক্ষে হাইভোল্টেজ সেমিফাইনালে এজবাস্টনের মত ব্যাটিং স্বর্গে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির এবারের আসরে তার আগের সকল রেকর্ডকে ছাপিয়ে আউট হয়েছেন শূণ্য রানে!
এরও অনেক আগে থেকেই ক্রিজে খাবি খাচ্ছে তার ব্যাট। আসর শুরুর আগে দুটি ভারত-পাকিস্তানের বিপক্ষে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচেও যথারীতি ¤øান তার ব্যাট, খেলেছেন যথাক্রমে ২ ও ১৯ রানের ইনিংস। ইংল্যান্ডে আসবার পথে আয়ারল্যান্ড ‘ভ্রমনে’ গিয়ে যে ত্রী-দেশীয় সিরিজ খেলেছিল বাংলাদেশ, তার প্রথমটিতে ১৭, দ্বিতীয়টিতে ৫, আর শেষেরটাতে মেরেছেন ডাক! তাতে কী? মাঝের দুটো ম্যাচে খেলেছেন যথাক্রমে ৮৭* ও ৬১ রানের ঝলমলে দুটি ইনিংস! তাতেই মন ভরে গেছে?
২০১৪ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অভিষেক। এরপর থেকে ৩১টি ম্যাচে হাজার না পেরুনো রান (৯৫৯) যতটা না তার বিদ্ধংসী ব্যাটিংকে বোঝায় তারচাইতে ¤øান করে নামের পাশে ৩টি ডাক! গড়ে ৩৫ এর ওপরে হলেও দলের প্রয়োজনে জ্বলে উঠতে পেরেছেন খুব কম ম্যাচেই। ২০১৫ বিশ্বকাপে বোল্ট-সাউদির সুইংয়ের ফাঁক গলে ৫২ রানের চোখ ধাঁধানো ইনিংস, পাকিস্তানের বিপক্ষে দারুণ শুরু এবং দ্রæত শেষ হয়ে যাওয়া। ভারত, নিউজিল্যান্ডের বোলাররা তো ওই সময় সৌম্যর ব্যাটিং মূর্তিকে দুঃস্বপ্নেও দেখতেন। ঘরের মাটিতে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশের ম্যাচে তার অপরাজিত ১২৭, ভুলবার নয়। আমরা ভুলবো-ও না। আমরা তার এই গুটি কয়েক ইনিংস আজীবন মনের গহীনে, অন্তরের অন্তস্থলে গেঁথে রাখবো। তাই বলে একের পর এক ম্যাচে ব্যর্থতা, অ-বিবেচকের পরিচয় দিয়েও কোন অদৃশ্য কারনে দলে ঠাঁই মিলছে তার, তা বোধগম্য নয়।
তবে কী সৌম্যর ঋণ শোধ করবার আর কোন পথ নেই? আর কতদিন এমন একজন ‘ব্যাটসম্যানের’ বোঝা বয়ে নিয়ে বেড়াতে হবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে? দলে যেখানে অর্ডার নিয়ে ‘মধুর সমস্যার’ দোহাই দিয়ে ইমরুল কায়েস, সফিউল ইসলামের মত অভিজ্ঞ, মেহেদী হাসান মিরাজ, মোসাদ্দেক হোসেনর মত পরীক্ষিত, সানজামুলের মত পরিশ্রমী ক্রিকেটার স্কোয়াডে থাকতেও অতটা বিলাসিতা কি বিসিবির মানায়?
যেখানে ভারতে হারিয়ে আইসিসির কোন ইভেন্টে প্রথম ফাইনালের স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছিলেন বাংলাদেশের ১৬ কোটি ক্রিকেটপাগল মুনুষ, মাশরাফির ৩০ রানের ঝড়ো ইনিংসতো আছেই, তাসকিনসহ সকলেই খেললেন ডাবল ফিগারের ইনিংস, সেখানে একজন সৌম্যর অমন অপরিণত আউটের খেসারত আর কত দিতে হবে? এমন প্রশ্নে সরব ফেসবুক, টুইটারও। আউট হবার পর সৌম্যর হতাশ একটি ছবি দিয়ে ফেসবুকে একজন লিখেছেন ‘সৌম্যকে জাতীয় দল থেকে বাদ দেয়া হোক, কে কে একমত?’ যার উত্তরে মাত্র ২ ঘন্টার মধ্যে ‘ইয়েস’ লিখেছেন ৯ হাজার ২০৮জন (রিপোর্টটি লেখা পর্যন্ত) ক্রিকেট ভক্ত। অনেকে এককাঠি এগিয়ে এমনটিও মত দিয়েছেন, ‘ওকে (সৌম্য) আরে আগেই বাদ দেয়া উচিত ছিল।’ অপর একজন লিখেছেন, ‘আমার হাতে ক্ষমতা থাকলে তাকে এখনি বাদ দিয়ে দিতাম।’ আরেকজন তো বিসিবির এমন অদুরদর্শিতা নিয়েও প্রশ্ন তুলে লিখেছেন, ‘নাসির, জিয়ার মত অলরাউন্ডার থাকতে সৌম্যকে কেন দলে নেয়া হয়, বুঝিনা?’। খুঁজলে এর বিপক্ষে আরো অনেক মতামত পাওয়া যাবে। তবে জানি, এগুলো বাংলাদেশ ক্রিকেটকে যারা ভালোবাসে তাদের দুশ্চিন্তার বহিঃপ্রকাশ মাত্র, আবেগের বহিঃপ্রকাশও বলা চলে। সেদিকে না গিয়ে, ‘পরিসংখ্যানের পাতায়ও কী চোখ বুলানো যায় না’? এমন প্রশ্নও করেছেন কেউ কেউ।
তবে এটা বলতে দ্বিধা নেই, সৌম্য শুরুতে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। তার ব্যাটিং আমাদের আনন্দ দিয়েছে, বিশ্বাস দিয়েছে। ফলে তিনটি ম্যাচের ব্যর্থতার পরও তাকে বাদ দেওয়া যাবে না- টিম ম্যানেজমেন্টের এই চিন্তার সাথে সহমত পোষণ করেছিলাম। তবে গতকাল ভারতের বিপক্ষে যা হলো, তাতে সৌম্যকে নিয়েই এখন চিন্তার ভাঁজ অনেকের মত আমার কপালেও। এর আগে এই ভারতের বিপক্ষেই ৫ ম্যাচে করেছেন ১৫৭। গতকালের হাইভোল্টেজ ম্যাচে অমন অ-বিবেচক, অনভিজ্ঞের মত শট খেলতে গিয়ে ২ বলে শূণ্য রানে ফেরা- সমর্থনটা সংশয়ে পড়ে গেছে। সৌম্য বড় ব্যাটসম্যান, তাতে সন্দেহ নেই। তবে আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে খাবি খেয়ে আত্মবিশ্বাসটা স্থায়ীভাবে তলানিতে পাঠানোর চেয়ে জরুরী তাকে বিশ্রামে পাঠিয়ে মাথাটা ঠান্ডা করার একটা সুযোগ দেওয়া। সকলেই জানি, তিনি অবশ্যই ফিরে আসবেন। তাকে ফিরতেই হবে- বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য, বাংলাদেশের জন্য।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।