Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মসুলে আইএসের পরাজয় বহু নতুন প্রশ্ন উত্থাপন করেছে

মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সম্পৃক্ততার অবসান হবে না

| প্রকাশের সময় : ১৬ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

পিটসবার্গ পোস্ট-গেজেট ও ভোয়া : ইরাকি সরকারী সেনাদের নেতৃত্বাধীন ও মার্কিন সমর্থিত জোটের কাছে মসুলের পতন ঘটেছে। ফলে ইরাকের এ প্রাচীন শহরের উপর নয় মাসের হামলা ও অবরোধের সমাপ্তি ঘটেছে। কিন্তু মার্কিন সমর্থনে ইরাকি বাহিনীর এ বিজয় বেশকিছু প্রশ্ন উত্থাপন করেছে।
ইসলামিক স্টেট (আইএস) মসুল দখলের পর সেখান থেকে ইরাক ও সিরিয়ায় তাদের দখলকৃত এলাকা নিয়ে ২০১৪ সালের জুনে ইসলামী খিলাফত প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষণা করে। আইএস কর্তৃক মসুল নিয়ন্ত্রণের ঘটনা ইরাকি প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল আবাদির জন্য এক বিরাট বিড়ম্বনা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। অবশেষে তিনি মসুল বিজয়ের কথা ঘোষণা করতে ৯ জুলাই সেখানে যান ও এ কাজের জন্য পাঁচমিশালি বাহিনীর প্রশংসা করেন।
এখন মসুলকে ঘিরে বহু অমীমাংসিত সমস্যা বিদ্যমান। প্রশ্ন হচ্ছে যে, এ পর্যায়ে আমেরিকানদের সংশ্লিষ্টতার রূপটি কী হবে। ইরাকে বর্তমানে ৫ হাজার মার্কিন সৈন্য রয়েছে।
প্রথম সমস্যা, মসুলের ভবিষ্যত নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। মসুল দখলে যারা জড়িত তারা হচ্ছে ইরাক সরকারের শিয়া মুসলিম সেনাবাহিনী, ইরানি ও ইরাকি শিয়া মিলিশিয়া, কুর্দি ও মার্কিন বাহিনী। মার্কিনিদের বিমান হামলা আইএসকে মসুল থেকে বিতাড়িত করার ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা পালন করেছে। আবাদি আশা প্রকাশ করেছেন যে, তার সরকার মার্কিনিদের সমর্থনে মসুলের নিয়ন্ত্রণ নেবে, তবে এ ব্যাপারে কোনো চুক্তি হয়নি।
দ্বিতীয় সমস্যা যা কিনা অত্যন্ত জরুরি সমস্যার একটি তা হচ্ছে মসুলের অদিবাসীরা যারা সেখানে সরকারী বাহিনীর অবরোধ ও লড়াইকালে ছিল তারা এবং পালিয়ে যাওয়া অধিবাসীরা যারা তাদের বাড়িঘর ও ব্যবসা বাণিজ্য ফেলে চলে গিয়েছিল Ñ এ উভয়পক্ষকে মানবিক সাহায্য প্রদান। এ দায়িত্ব ইরাক সরকারের উপর ন্যস্ত হওয়া উচিত, কোনো বেসরকারী মানবিক সংস্থা এবং যুক্তরাষ্ট্রের উপর নয়।
তৃতীয় ও দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা হচ্ছে মসুলের পুনর্গঠন। আসলে হামলাকারী জোট শহরটি ধ্বংস করেছে তাকে রক্ষা করার জন্য যার ফলে বিশেষ করে শহরের পশ্চিমাংশ মার্কিন বিমান হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মত সংস্থাগুলো লড়াই চলাকালে সংঘটিত বেসামরিক লোকদের মৃত্যুর জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের দায়ী করেছে যা ঠিক বা ভুল ভাবে তারা করেছে। ইরাকে মার্কিন লড়াইয়ের এ অধ্যায়টি হচ্ছে ‘তুমি এটা ভেঙ্গেছ, তুমি এটা কিনেছ’ ধরনের।
চতুর্থ প্রশ্ন হচ্ছে, মসুল থেকে বিতাড়িত হয়ে ইরাক ও সিরিয়ার বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে যাওয়া আইএস যোদ্ধাদের নিয়ে কী করা হবে। আইএসের কার্যত রাজধানী সিরিয়ার রাক্কায় যুদ্ধ চলছেই। এখানে একটু আশা করা হচ্ছে যে রাক্কার লড়াই মসুলের মত দীর্ঘায়িত হবে না। কিন্তু তা হতেও পারে। ইরাক ও সিরিয়ায় এখনো আইএসের বহু যোদ্ধা রয়েছে যারা অসংগঠিত ভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের ব্যপারে কী করা হবে তা নিয়ে বাগদাদ, দামেস্ক, ওয়াশিংটন ও মস্কোতে প্রশ্ন আছে।
এটা বলা নিরাপদ যে, অধিকাংশ আমেরিকানই, যারা ইরাকে যুদ্ধ থেকে টাকা কামানো অব্যাহত রাখতে চায় তারা ছাড়া সবাই যুদ্ধের ব্যাপারে সম্পূর্ণ ক্লান্ত। ১৯৯১ সালে এর শুরু হয়েছিল। মাঝে বিরতির পর বর্তমান পর্যন্ত ২৬ বছর ধরে তা চলছে। ব্যয়বহুল এ যুদ্ধে আমেরিকার সৈন্যদের জীবনহানি ও অর্থ ব্যয় হচ্ছে। মসুলে আইএসের পতন বিতর্কহীনভাবে সঠিক পথে একটি পদক্ষেপ। একই সাথে তা যে সব প্রশ্নের মিমাংসা হয়নি এবং মার্কিনিদের অব্যাহত সম্পৃক্ততার বিষয়টি একটি দেশের জন্য উদ্বেগজনক হতে পারে যে দেশটি পররাষ্ট্র ও অভ্যন্তরীণ রাজনীতি বিষয়ে তাদের প্রকৃত অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে চায়।
এদিকে আটলান্টিক কাউন্সিলর সিনিয়র ফেলো জেসমিন আল জামাল ১৩ জুলাই ভয়েস অব আমেরিকাকে (ভোয়া) বলেন, আইএস জঙ্গিরা যখন মসুল ও রাক্কাসহ আরা এলাকা হারাচ্ছে তখন ওয়াশিংটনের জন্য প্রচলিত পন্থায় বিমান হামলা ও বোমাবর্ষণের মাধ্যমে তাদের সাথে লড়াই করা কঠিন হবে।
কিছু বিশেষজ্ঞ বলেন, আইএসের পরাজয় মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতে মার্কিন সম্পৃক্ততার অবসান করবে না, বরং আরো বৃদ্ধি করবে।
এদিকে কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশন্স বিষয়ক মিডল ইস্টার্ন স্টাডিজের সিনিয়র ফেলো এলিয়ট আব্রামস বলেন, জিহাদি গ্রæপটিকে বিতাড়িত করার পর তাদের শূন্যস্থান পূরণে নয়া ইরান -হেজবুল্লাহ-শিয়া-রাশিয়া জোটের চেষ্টা প্রতিহত করতে হবে। ফরেন পলিসি পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে অবশ্যই একটি জোট গঠন করতে হবে এবং তার মাধ্যমে ভূমিতে তাদের এ বিষয়টি অবশ্যই প্রতিহত করতে হবে।
মধ্যপ্রাচ্য ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো চার্লস লিস্টার বলেন, সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান কৌশল হচ্ছে শুধু ইসলামী জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াই করা, কিন্তু বাশার সরকারের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা নয় যা তার মতে অস্থিতিশীলতার প্রধান কারণ ও জঙ্গিবাদের দিকে চালিত করে। তিনি বলেন যুক্তরাষ্ট্র মূল কারণ রেখে উপসর্গের দিকে মনোযোগ নিবদ্ধ করেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আইএস


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ