পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সায়ীদ আবদুল মালিক : আবিরাম বৃষ্টিতে গতকালও নগরবাসীর দুর্ভোগের শেষ ছিল না। বৃষ্টির তোড়ে জনজীবন থমকে যাবার উপক্রম হয়েছে। মঙ্গলবার রাতভর বৃষ্টিতে ডুবে গেছে রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সরকারি বেসরকারি অফিস আদালতের নীচতলাসহ পথ-ঘাট। গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় পানি জমে কথায়ও হাটু পানি আবার কোথাও গলা পনি হয়ে গেছে। বৃষ্টির পানি দ্রুত নিষ্কাশন না হওয়ায় রাজধানীবাসী পড়েছে যানজটসহ পানিবদ্ধতার দুর্ভোগে।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে গতকাল বুধবার ভোর ৬টা পর্যন্ত রাজধানীতে ৬০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। রেকর্ড পরিমাণেএ বৃষ্টিপাতে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক তলিয়ে গেছে। আর এর ফলে দুভোর্গের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে তীব্র যানজট। আবহাওয়া অধিদফতর বলেছে, বৃষ্টিপাতের এ ধারা আরও তিনদিন অব্যাহত থাকতে পারে।
সরজমিন দেখা গেছে, অ্যাই যে পানি পার দশ টাকা, পানি পার দশ টাকা। বুধবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে রাজধানীর আজিমপুর পুরাতন কবরস্থানের দক্ষিণ গেটের সামনে দাঁড়িয়ে এভোবেই কোরাস সুরে পানি পারাপারের জন্য যাত্রীদের ডাকাডাকি করছিলেন একাধিক ভ্যানচালক। কবরস্থান গেটের সামনে অসংখ্য মানুষ জটলা বেধে দাঁড়িয়ে আছেন। কেউ অফিসে, কেউ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কেউবা গার্মেন্টস বা ব্যক্তিগতভাবে কাজে বেরিয়েছেন। কিন্তু কবরস্থান গেটের সামনে এসে সবাই থমকে দাঁড়িয়েছেন।
কবরস্থান গেট থেকে নীলক্ষেত মোড় পর্যন্ত রাস্তা বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে। যেন অচেনা কোনো এক নদী। গাড়ি বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয়ে প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসসহ ইঞ্জিনচালিত যানবাহনগুলো দ্রæত চলে যাওয়ার সময় দু’পাশে পানির ঢেউ আছড়ে পড়ছে। এ ছাড়া নিউমার্কেট সংলগ্ন বড় ডাস্টবিনের ময়লা পানিতে ভাসছে। কেউ কেউ নিরুপায় হয়ে এক মিনিটের পায়ে হাটার পথ ১০ টাকা দিয়ে পার হচ্ছেন। আবার কেউ জামা কাপড় ভিজিয়ে গন্তব্যে ছুটে যাচ্ছেন। রাস্তার ম্যানহোলের ঢাকনাগুলো খুলে দিয়ে পানি অপসারনের ব্যর্থ চেষ্টাও দেখা যায়।
কবরস্থানের গেটে দাঁড়িয়ে সিটি মেয়রের সমালোচনা করছিলেন আনুমানিক ষাট বছরের এক বৃদ্ধ। বলছেন, মেয়র সাহেব তো বক্তৃতায় নগর উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরতে গিয়ে মুখে ফেনা তুলে ফেলেন। কিন্তু কই এই যে পানিবদ্ধতার কারণে হাজার হাজার মানুষের দুভোর্গ হচ্ছে এর সমাধান তো করতে পারছেন না। নিউমার্কেটের মতো এলাকায় যদি এমন পানি জমে থাকে তবে কী যে উন্নয়ন হচ্ছে তা সহজেই বোঝা যায়। এদিকে, গন্তব্যে ছুটে চলা মানুষদের জন্য টাকার বিনিময়ে সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন ভ্যানচালকরা। অন্যদিকে এক মিনিটের রাস্তা পার হতে জনপ্রতি গুণতে হচ্ছে ১০ টাকা। কবরস্থান গেট সংলগ্ন আইয়ুব আলী কলোনীর জামাল নামে একজন কেয়ারটেকার জানান, ভোর বেলা ভ্যানচালকরা জনপ্রতি পাঁচ টাকায় নীলক্ষেত পর্যন্ত পারাপার করলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে রেট দ্বিগুণ অর্থাৎ দশ টাকা করে ফেলেন।
রিপন নামের এক ভ্যানচালক বলেন, এমনিতেই ভ্যান চালানো আর পানি ঠেইল্যা মানুষ ভর্তি ভ্যান চালানোর মধ্যে বিরাট পার্থক্য। তাছাড়া ডাস্টবিনের সব ময়লা পানিতে মিইশ্যা ভেজা পা খালি চুলকাইতেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কুয়েত মৈত্রি হলের ছাত্রী রোকেয়া সুলতানা জানান, এখন কবরস্থানের সামনে পানি দেখা গেলেও ভোরে তাদের হলের সামনে হাটু পানি ছিল। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে নগরপিতার কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, এ অবস্থা থেকে কী নগরবাসী পরিত্রাণ পাবে?
কাকরাইল-শান্তিনগর এলাকায় সকালে অল্প বৃষ্টিতে সড়কে যানবাহন আটকে পড়ে। হাঁটু পানিতে তলিয়ে যায় সড়ক। পানিবদ্ধাতায় অনেকগুলো সিএনজিচালিত অটোরিকশা রাস্তায় বিকল হয়ে পড়ে। অটোরিকশা পরিবর্তন করে অনেককে গন্তব্যে যেতে হয়েছে। দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় মানুষকে অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে দেখা গেছে।
বৃষ্টিতে মগবাজার, মৌচাক হয়ে মালিবাগ রেলগেট, রামপুরা ব্রিজ, মেরুল বাড্ডা, মধ্য বাড্ডা এলাকায় হাঁটুপানি জমে যায়। জমে যাওয়া পানির কারণে অটোরিকশা ও অন্য যানবাহন রাস্তায় আটকে পড়ে। মধ্য বাড্ডায় রাস্তার ওপর ময়লার ভাগাড় পানিতে মিশে একাকার হয়ে সড়কে চলাচলকারী যাত্রীদের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে দেয়।
ঢাকায় দীর্ঘদিন ধরে অল্প বৃষ্টিতে পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হলেও সিটি কর্পোরেশন দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেয় না বলে অভিযোগ করেন দুর্ভোগে পড়া যাত্রীরা। নর্দ্দা, কালাচাঁদপুর থেকে বারিধারা পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়কে অল্প বৃষ্টিতেই হাঁটু পরিমাণ পানি জমে যায়। এতে যানবাহন আটকে পড়ে। দুর্ভোগে পড়ে অফিসগামী যাত্রীরা। ফলে রিকশায় বাড়তি ভাড়া দিয়ে অনেককে অফিস ও কর্মস্থলে যেতে দেখা গেছে। তবে সামান্য বৃষ্টিতে পানিবদ্ধতার জন্য সিটি কর্পোরেশনের অবহেলাকে দায়ী করেন যাত্রীরা।
বৃষ্টিতে উত্তরার জসিম উদ্দিন রোড, এয়ারপোর্ট সড়ক, মহাখালী ফ্লাইওভারের নিচে, আইসিসিডিডিআরবি থেকে মহাখালী বাসস্টান্ড পর্যন্ত পানি জমে যায়। পানির সাথে রাস্তায় পড়ে থাকা ময়লা-আর্বজনা মিলে দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। বৃষ্টির কারণে কোথাও কোথাও তীব্র যানজট, কোথাও গাড়ি না থাকায় যাত্রীদের ময়লা পানির মধ্য দিয়ে হেঁটে চলাচল করতে দেখা যায়। বৃষ্টিতে কমলাপুর রেলস্টেশন এলাকার সব সড়ক ও স্টেশনের প্রবেশ মুখ হাঁটুপানিতে তলিয়ে যায়। দুর্ভোগে পড়ে মালামাল নিয়ে আসা যাত্রীরা। তবে পানি দ্রুত নেমে না যাওয়ায় যাত্রীরা চরম বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে।
ভিক্টোরিয়া পার্ক থেকে সদরঘাট টার্মিনাল পর্যন্ত, ঢাকা মেডিকেলের সামনে রাস্তা, গোলাপ শাহ মাজারের সামনে পানি জমে যায়। রাস্তায় থাকা ময়লা বৃষ্টির পানিতে মিশে দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে দেয়। সদরঘাটমুখী যাতায়াতকারীদের ময়লা পানি মাড়িয়ে ও বৃষ্টিতে ভিজে যেতে দেখা গেছে।
কাকরাইল থেকে নয়াপল্টন হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত পুরো রাস্তা ও আশপাশের গলি বৃষ্টিতে হাঁটু পরিমাণ পানি জমে যায়। অধিকাংশ স্থানে ম্যানহোলের ঢাকনা খোলা ও গর্ত থাকায় যানবাহন চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। অনেক জায়গায় যাত্রীদের সড়কে পড়ে ভিজে যেতে দেখা গেছে। তবে সিটি কর্পোরেশনকে কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি।
এছাড়া রাজধানীর অন্যান্য এলাকায়ও সামান্য বৃষ্টিতে সড়ক পানিতে তলিয়ে যায়, সৃষ্টি হয় সেই চিরাচরিত দুর্ভোগ। তাৎক্ষণিকভাবে পানি নেমে না যাওয়ায় সৃষ্টি হয় পানিবদ্ধতা। মৌচাক এলাকার মৌচাক মার্কেট, ফরচুন শপিং কমপ্লেক্স, মালিবাগের হোসাফ টাওয়ার কমপ্লেক্স, শান্তিনগর এলাকার টুইন টাওয়ার কনকর্ড শপিং কমপ্লেক্স ও ট্রপিক্যাল রাজিয়া শপিং কমপ্লেক্সের সামনে পানিবদ্ধতার দেখা দেয়। এতে ক্রেতারা পড়েন ভোগান্তিতে। সেই সঙ্গে ওই সব এলাকায় দেখা দেয় যানজটও।
রাজধানীর শান্তিনগর, মালিবাগ, আগারগাঁও, মিরপুর, যাত্রাবাড়িসহ বেশকিছু এলাকা ও মহাসড়কে বৃষ্টির কারণে তৈরি হয়েছে পানিবদ্ধতা। অপরিকল্পিত নগরায়নে পানি জমার সমস্যাটা দিন দিন প্রকট হচ্ছে বলছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা।
এছাড়া পানিবদ্ধতার অন্যতম কারণ হিসাবে রাজধানীর অপরিকল্পিত ও অপর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা দায়ী। আর পরিকল্পিত নগর ব্যবস্থা নিশ্চিত করা না গেলে রাজধানীবাসীর দুর্দশা আরো বাড়বে বলে মনে করেন নগর পরিকল্পনাবিদরা।
বর্তমানে ঢাকা শহরের প্রাণ কেন্দ্র মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার নির্মাণকাজ চলায় এ এলাকার বেশ কয়েকটি রাস্তার অবস্থা বেহাল। তাই এ এলাকার রাস্তাগুলোতে যানজট সকাল-দুপুর, রাত-দিন সবসময় লেগেই থাকে। এ থেকেই সারা শহর জুড়ে যানজট ছড়িয়ে পড়ে। এ কারণেই রাজধানীর যানজট এখন সাপ্তাহের সাত দিনই থাকে। বিশেষ করে কর্মদিবসের শুরুর দিন রোববার, প্রথানমন্ত্রী সচিবালয়ে অফিস করেন সোমবার আর কর্মদিবসের শেষ দিন বৃহস্পতিবার এ তিনদিন রাজধানীর রাস্তায় ভয়াবহ যানজটে সৃষ্টি হয়। এ সময় নগরবাসীকে রাস্তায় নেমেই চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।