পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ষড়ঋতু যাচ্ছে হারিয়ে : ফল-ফসল জনস্বাস্থ্যে ক্ষতি
শফিউল আলম : শুধু সিলেট ছাড়া দেশজুড়ে থেমেছে অকাল বৃষ্টিপাত। গতকাল (মঙ্গলবার) থেকে তাপমাত্রার পারদ ফের বাড়তে শুরু করেছে। গরম আজ বুধবার বাড়তে পারে স্থানভেদে ১ থেকে ৩ ডিগ্রি (সেলসিয়াস) পর্যন্ত। এভাবে বৃষ্টিহীন গরম বাড়তে পারে টানা তিন দিন। চলতি এপ্রিল মাসের বাদবাকি কয়েকদিন এবং পরের মে মাসের প্রথমার্ধে (বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ) দেশের অনেক জায়গায় মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এ সময় তাপমাত্রা (৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সে.) থাকতে পারে। দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলে এ তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। আবহাওয়া দপ্তর ও আন্তর্জাতিক আবহাওয়া নেটওয়ার্কে এই পূর্বাভাস পাওয়া গেছে। গত মার্চ ও চলতি এপ্রিল মাসে সারাদেশে গড় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত ও তা একটানা হওয়ায় তাপমাত্রা ছিল স্থানভেদে ৫ থেকে ৯ ডিগ্রি সে. পর্যন্ত কম। অনেক জায়গায় বিরাজ করে শীতের আমেজ। ছিল না চৈত্র-বৈশাখের তির্যক সূর্যের নিচে কাঠফাটা প্রাণ ওষ্ঠাগত গরমের চিরচেনা রূপ।
অসময়ের টানা ভারী বর্ষণে ও উজান থেকে নেমে আসা ভারতীয় ঢলের তোড়ে দেশের উত্তর-পূর্বের বিস্তীর্ণ হাওর অঞ্চল বোরো-ইরি আধাপাকা ধানসহ বানে ভেসে চলেছে এখনও। অতিবর্ষণে চট্টগ্রাম ও ঢাকা মহানগরীতে গ্রীষ্মের বৈশাখে মানুষকে নাকাল হতে হয়েছে পানিবদ্ধতার কারণে। অথচ আবহাওয়া অধিদপ্তরের বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস বাস্তবের সাথে মিলেনি। এপ্রিলের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে আবহাওয়া বিভাগ জানায়, এ মাসে দেশে ‘স্বাভাবিক’ অথবা ‘স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি’ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু এপ্রিলের ২৩ দিনেই স্বাভাবিকে তুলনায় সারাদেশে ১১৯ শতাংশ বেশি বৃষ্টি, যা ৩০ বছরের ব্যবধানে সর্বোচ্চ বর্ষণ হতে পারে কিনা এ বিষয়টি আবহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাসের বাইরে চলে গেছে। তাছাড়া গত মার্চ মাসেও সারাদেশে স্বাভাবিক গড় বৃষ্টিপাতের চেয়ে ১৫২ শতাংশ বর্ষণ বেশি হয়।
আবহাওয়া-প্রকৃতির প্রতিশোধ
পৃথিবীর অনেক দেশের মতো জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক ধারায় রুদ্ররূপী, চরম ভাবাপন্ন হয়ে উঠেছে আবহাওয়া, পরিবেশ ও প্রকৃতি। যা বিশেষজ্ঞগণ জলবায়ু ও প্রকৃতির অনিবার্য প্রতিশোধ হিসেবে দেখছেন। কেননা মানুষের অপরিণামদর্শী কর্মকাÐের পরিণতিতে আবহাওয়া, পরিবেশ ও প্রকৃতির চিরকালের নিটোল রূপ বিষিয়ে উঠেছে। চিরচেনা রূপ যাচ্ছে হারিয়ে। এতে করে নানামুখী দুর্ভোগ পোহাচ্ছে মানুষ।
এ বছর শীতকাল অতিবাহিত হয়েছে গরমের আমেজে। ডিসেম্বর, জানুয়ারি, ফেব্রæয়ারি (অগ্রহায়ণ-পৌষ-মাঘ) মাসগুলোতে মাঝখানে শুধু কয়েকটা দিন শীতের হঠাৎ আসা-যাওয়া বাদ দিলে ‘স্বাভাবিক’ শীত অনুভূত হয়নি। তখন দেশে দিন ও রাতের গড় স্বাভাবিকের চেয়ে ২ থেকে ৬ ডিগ্রি সে. পর্যন্ত বেশি ছিল। আবহাওয়ার গরম ভাব বা উষ্ণায়ন-প্রবণতা অব্যাহত থাকলে রুগ্ন ও রুক্ষ আবহাওয়া আরও জেঁকে বসবে। সেই সাথে মার্চ, এপ্রিল, মে মাসে বজ্রপাত, বজ্রঝড়, কালবৈশাখীর ঘনঘটা বেড়ে যাচ্ছে। গত ৩-৪ বছরে দেশে বজ্রপাতের হার, মাত্রা, উচ্চশব্দ ও এর ব্যাপকতা এবং বজ্রপাতে প্রাণহানির সংখ্যা অতীতের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। সর্বত্র বেড়েছে রীতিমতো বজ্রপাত আতঙ্ক।
আবহাওয়া-জলবায়ুর আবহমানকালের চিরচেনা রূপ বৈশিষ্ট্যের বদল ঘটছে শুধু তাই নয়, সেটি এখন দৃশ্যমান হচ্ছে এবং অনুভূতিতেও ধরা পড়ছে প্রকটভাবে। এলোমেলো হয়ে উঠেছে আবহাওয়া-রাজ্য। ক্রমাগত অস্বাভাবিক ও বৈরী আচরণ করছে আবহাওয়া। এতে করে বাড়ছে নানামুখী জনদুর্ভোগ। ফল-ফসলের উৎপাদন মার খাচ্ছে। উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিত্যনতুন রোগব্যাধি দেখা দিয়ে জনস্বাস্থ্যে পড়ছে মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব। অস্বাভাবিক মতিগতি এবং চরম ভাবাপন্ন হয়ে দেখা দিচ্ছে আবহাওয়া। চিরায়ত ষড়ঋতুর আদি চরিত্র বদলে যাচ্ছে। পঞ্জিকার ছকে ভরা ‘বর্ষা’য় (আষাঢ়-শ্রাবণে) বৃষ্টি ঝরে কম। অথচ প্রাক-বর্ষায় ও বর্ষাত্তোর অসময়ে ভারী বর্ষণে দীর্ঘায়িত হচ্ছে ‘বর্ষাকাল’। কিন্তু বছর বছর অনাবৃষ্টি ও খরার কবলে পড়ে মরুময়তার দিকে ধাবিত হচ্ছে বরেন্দ্রভূমিসহ দেশের বিশাল উত্তর জনপদ। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ঘন ঘন প্রবল সামুদ্রিক জোয়ারে ও অতিবর্ষণে ভাসছে। ছোট ছোট জলোচ্ছ¡াসের প্রকোপ বাড়ছে। গ্রীষ্মের খরতাপ যেন মরুর আগুনের হলকা। শীতের দাপট চলে অল্প কিছুদিন।
আবহাওয়ার বৈরী আচরণ মানুষের সমগ্র জীবনযাত্রায় চরম অনিষ্ট ও দুর্ভোগ ডেকে আনছে। এরফলে ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে মানবসম্পদের সার্বিক উৎপাদনশীলতা। কমছে সক্ষমতা ও উৎপাদনশীলতার হার। সাগরের উচ্চতা বৃদ্ধি ও করাল গ্রাসে বসতি হারিয়ে প্রতিবছর পিছু হটে মূল ভূখÐের দিকে ধেয়ে আসছে উপকূল, চর, দ্বীপাঞ্চলের ভূমি ও বসতি হারা অভাবী মানুষজন। সাগরের উপরতল ফুলে-ফেঁপে উঠছে। উপর্যুপরি সতর্ক সংকেত দেখাতে হচ্ছে সমুদ্র বন্দরসমূহকে। তাপমাত্রার অস্বাভাবিক ওঠানামা হচ্ছে। ‘সিডর’ ‘নার্গিস’ ‘আইলা’, ‘কোমেন’র মতো ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ¡াস, টর্নেডো, বজ্রপাত-বজ্রঝড় ও ভূমিধসের প্রকোপ বেড়েই চলেছে। উপকূলে ছোট ধরনের জলোচ্ছ¡াস হচ্ছে ঘন ঘন। দ্বীপ ও চরাঞ্চলে ফসল উৎপাদন আগের মতো হচ্ছে না। সাগরে মাছের আহরণ কমেছে আশঙ্কাজনভাবে।
সর্বশেষ আবহাওয়া
আবহাওয়ার সর্বশেষ অবস্থায় জানা গেছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও এর সংলগ্ন বাংলাদেশ এলাকায় অবস্থান করছে, যা উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। আজকের (বুধবার) সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে জানা গেছে, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায়, রংপুর, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ী দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। সেই সাথে সিলেট বিভাগে মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সে. বৃদ্ধি পেতে পারে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগে ছাড়া দেশের কোথাও উল্লেখযোগ্য বর্ষণ হয়নি। এ সময় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল রাজশাহীতে ৩৭.২ ডিগ্রি সে.। ঢাকায় ছিল ৩৪ ডিগ্রি সে.।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।