পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সৌমিত্র চক্রবর্তী, সীতাকুন্ড থেকে : চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলার উপজাতি ত্রিপুরা পাড়ায় অজ্ঞাত রোগে কয়েকদিনে ৯ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে গতকাল (বুধবার) মারা গেছে ৪ জন। এছাড়া আক্রান্ত হয়েছে আরো অন্তত ৩৬ শিশু। এদের মধ্যে ২৬ জনকে চিকিৎসার জন্য চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের স্থানীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় ত্রিপুরা পাড়াসহ আশপাশের এলাকায় চরম আতংক সৃষ্টি হয়েছে। খবর পেয়ে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জনসহ স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গতকাল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলেও তাৎক্ষণিক তারা রোগটি নির্ণয় করতে পারেননি। তবে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য চমেক হাসপাতালে আলাদা একটি বিশেষ ইউনিট চালু করা হয়েছে। পাশাপাশি তাদের রক্ত সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
প্রথমে সর্দি, তারপর জ্বর এরপর গায়ে হাম জাতীয় লাল র্যাশ উঠে। দুইদিনের মাথায় এসব র্যাশ কালো দাগের আকার ধারণ করে। আর তখনই দেখা দেয় শ্বাসকষ্ট। এরপর শ্বাসকষ্টেই মৃত্যু হচ্ছে শিশুদের। ভীতিকর এ মৃত্যুর ঘটনায় হতবাক এলাকাবাসী এবং স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সীতাকুন্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের মধ্যম সোনাইছড়ি গ্রামের দুর্গম পাহাড়ে অবস্থিত ত্রিপুরা উপজাতি পাড়ায় সম্প্রতি এক অজ্ঞাত রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। এ রোগে একের পর এক শিশু আক্রান্ত হয়ে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। শুধু গত এক সপ্তাহে সেখানে মারা গেছে ৯ শিশু।
সরেজমিনে গতকাল দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ত্রিপুরা পাড়ার ঘরে ঘরে শিশুরা ওই রোগে আক্রান্ত হয়ে কাতরাচ্ছে। এছাড়া দু’টি পরিবার তখনো দুই শিশুর লাশ নিয়ে বসে বসে কাঁদছে। পরিদর্শনকালে স্থানীয়রা জানান, এই পাহাড়ে ৫৭টি ত্রিপুরা পরিবার বসবাস করছে। এসব পরিবারের সদস্য সংখ্যা প্রায় ৪’শ। এদের মধ্যে শিশু সংখ্যা প্রায় অর্ধশত। যার মধ্যে বেশিরভাগই এখন অজ্ঞাত ওই রোগে আক্রান্ত। গত এক সপ্তাহে মারা যাওয়া শিশুরা হলো- তাকিপাত ত্রিপুরা (১২), জানিয়া ত্রিপুরা (৫), প্রকাতি ত্রিপুরা (৬), রমাপতি ত্রিপুরা (৯), কানাইয়া ত্রিপুরা (২), রূপালী ত্রিপুরা (৩), কসমরাই ত্রিপুরা (৮), শিমুল ত্রিপুরা (২) ও হৃদয় (৮)।
মৃত রূপালী ত্রিপুরার বাবা সুমন ত্রিপুরা ইনকিলাবকে বলেন, এই রোগটিকে তারা প্রথমে সাধারণ জ্বর বলে মনে করেছিলেন। শিশুর প্রথমে সর্দি হয়ে জ্বর আসে। তারপর গায়ে লাল লাল ছোট ছোট গোটার মত দেখা যায়। এই গোটাগুলো শুকানোর সময় কালো রং ধারণ করে তারপর হঠাৎ শ্বাসকষ্টে ভুগতে থাকে শিশুরা। একপর্যায়ে তারা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। এ রোগে আক্রান্ত হবার মাত্র ৩ দিনের মধ্যেই মারা গেছে তার মেয়ে রূপালী। তিনি আরো বলেন, তার আরো একটি মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে তাকে তিনি চিকিৎসা দিতে নিয়ে যাচ্ছেন।
জানা যায়, এ পাড়ার সর্দার সুজন ত্রিপুরার দুটি ছেলে মারা গেছে। তারা হলো জানিয়া ত্রিপুরা ও কানাইয়া ত্রিপুরা। এ পাড়ার বাসিন্দা সুবল ত্রিপুরা বলেন, আমরা কিছুই বুঝতে পারছি না। কি রোগ এটা। জ্বর হওয়ায় পাহাড় লোকজন স্থানীয় একটি হোমিও প্যাথি দোকান থেকে ঔষুধ খাইয়েছিলো। কিন্তু একজনও সুস্থ হয়নি। বরং প্রতিদিন নতুন করে শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে। গতকাল পর্যন্ত মোট ৫০ জনের মত শিশু এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। যার মধ্যে মারা গেছে ৯ জন এবং চিকিৎসাধীন রয়েছে আরো অন্তত ৩৬ জন।
এদিকে এ পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে ঘটনাস্থলে ছুটে যান চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডাঃ আজিজুর রহমান ছিদ্দিকী, উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুল ইসলাম ভূইয়া, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ নুরুল করিম রাশেদ, বিভিন্ন দপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাগণ। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ নুরুল করিম রাশেদ বলেন, ত্রিপুরা বাসিন্দাদের অসচেতনার কারণে ঘটনাটি এত বড় হয়ে গেছে। তারা প্রথম থেকেই যদি শিশুদের হাসপাতালে নিয়ে যেত এত শিশুর মৃত্যু হতো না। তিনি বলেন, এত অসচেতন যে, ৯ শিশু মৃত্যু ও আরো ২৫ থেকে ৩০ জন অসুস্থ থাকার পরও কাউকে হাসপাতালে নেয়নি। খবর পেয়ে আমি এসে জোর করে অসুস্থ ২০ থেকে ২২ জনকে চমেকে পাঠাই। এরপর আরো কয়েকজনকে অভিভাবকরা চমেকে নিয়ে গেছেন। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডাঃ আজিজুর রহমান ছিদ্দিকী বলেন, ঘটনাটি স্পর্শকাতর। রোগটি অজ্ঞাত। আমরা এ রোগে আক্রান্ত সব শিশুকে চমেক হাসপাতালে একটি বিশেষ বিভাগ খুলে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। এছাড়া রোগটি নির্ণয়ের চেষ্টা চলছে। হঠাৎ এ রোগে একের পর এক শিশু মৃত্যুর ঘটনায় ত্রিপুরা পাড়া ছাড়াও আশপাশে চরম আতংকের সৃষ্টি হয়েছে। সবাই নিজ শিশুকে নিয়ে উদ্বিগ্ন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।