পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিদেশি বিশেষজ্ঞদের মতে মেরামত সময়সাপেক্ষ
বিশেষ সংবাদদাতা, চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রাম বন্দরে বিদেশি জাহাজ ‘এমভি এক্সপ্রেস সুয়েজে’র বেপরোয়া আঘাতে সিসিটির বিধ্বস্ত দু’টি কী গ্যান্ট্রি ক্রেনের যান্ত্রিক ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা বেশ ব্যাপক। এরমধ্যে ৩নং গ্যান্ট্রি ক্রেনটি প্রায় দুমড়ে মুচড়ে গেছে। সেটির মেরামত প্রক্রিয়ায় ৪ থেকে ৬ মাস এমনকি আরও বেশি সময় লেগে যেতে পারে। আর ৪নং কী গ্যান্ট্রি ক্রেনটির কম ক্ষতি হলেও মেরামতে মাসখানেক সময় যাবে। তবে মেরামত নির্ভর করছে জাপান থেকে যন্ত্রপাতি সংস্থানের দীর্ঘ সময়সাপেক্ষ ও জটিল প্রক্রিয়ার উপর। সিসিটি জেটি-বার্থ পরিদর্শন শেষে জাপানী বিশেষজ্ঞ দল উপরোক্ত মতামত দিয়েছেন। তারা এই গ্যান্ট্রি ক্রেন দু’টির মূল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান জাপানের মিৎসুবিশির পক্ষ থেকে আসেন। গতকাল (রোববার) বন্দর কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা ও প্রকৌশলীরা জাপানী বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণ ও মতামত নিয়ে আলোচনা করেন। এ নিয়ে আরও বৈঠকের কথা রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরো জানা গেছে, জাপানের সুমিতোমো হেভি ইন্ডাস্ট্রিজের (মেটেরিয়াল হ্যান্ডলিং ডিপার্টমেন্ট) জিএম ইথোর নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিশেষজ্ঞ দলটি গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার দু’দিন যাবত সিসিটিতে কী গ্যান্ট্রি ক্রেন দু’টির ক্ষয়ক্ষতি নিবিড় পর্যবেক্ষণ করেন। তারা ক্ষতিগ্রস্ত উভয় ক্রেনের ক্ষয়ক্ষতির একটি তালিকা তৈরি করে বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিয়েছেন। এতে কী গ্যান্ট্রি ক্রেনের ক্ষয়ক্ষতি বন্দরের যান্ত্রিক প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তাদের ধারণার চেয়ে বেশি। পর্যবেক্ষণকালে যথারীতি জাহাজের সম্পৃক্ত পিএন্ডআই ক্লাবের প্রতিনিধিরাও যৌথ সার্ভে করেন। এ সময় বন্দর কর্মকর্তারাও ছিলেন। তবে ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ নিরূপণ এখনো করা হয়নি। উভয় কী গ্যান্ট্রি ক্রেন তথা বন্দরের বৃহৎ এই যান্ত্রিক সরঞ্জামের মূল্য কয়েকশ’ কোটি টাকা।
বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) জাফর আলম জানান, গ্যান্ট্রি ক্রেন দু’টির ক্ষয়ক্ষতি বা যেসব যন্ত্রাংশ বিনষ্ট হয়েছে তার একটি তালিকা নিয়ে জাপানে ফিরে গেছে বিশেষজ্ঞ দলটি। সেখানে মূল ড্রয়িং ও ডিজাইনের সাথে তালিকাটি মিলিয়ে ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ নিরূপন করা হবে। এর পাশাপাশি যেসব যন্ত্রাংশ প্রয়োজন হবে তাও সরবরাহ করা হবে। এরপর থেকে গ্যান্ট্রি ক্রেন মেরামত কাজ শুরু হবে। এই প্রক্রিয়া শিগগির যাতে সম্পন্ন হয় এখন সেই প্রচেষ্টা চলছে। জানা গেছে, গ্যান্ট্রি ক্রেন দু’টির ক্ষতিগ্রস্ত যন্ত্রপাতি পাঠানোর পর কিভাবে মেরামত কাজ এগিয়ে নেয়া হবে ইথোর নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞরা সে সম্পর্কে বন্দর কর্তৃপক্ষকে গাইডলাইন দেবেন।
এদিকে বন্দরের গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি জাহাজটির মালিকপক্ষের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবির জন্য বিদেশী বিশেষজ্ঞ দলের সম্ভাব্য আর্থিক পরিমাপের দিকে তাকিয়ে আছে। একমাত্র বাংলাদেশের সমুদ্র বন্দরে এ ধরনের ঘটনায় জাহাজের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ দাবি ও আদায়ের প্রক্রিয়া অতীতে জটিল হতে দেখা গেছে। উক্ত জাহাজটি সিসিটিতে ভিড়ার সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সেখানে গ্যান্ট্রি ক্রেন দু’টিতে এসে আঘাতের সময় ‘বাতাসের বেগ বেশি ছিল’ কিংবা ভিন্ন কোন কৌশলে ঘটনাকে ‘অ্যাক্ট অব গড’ অথবা ‘নিছক দুর্ঘটনা’ হিসেবে চিত্রিত করে দায় এড়ানোর অপচেষ্টা চলছে নেপথ্যে। যদিও সেদিন বন্দরে বা চট্টগ্রামের আবহাওয়া খুব স্বাভাবিক ছিল। অবশ্য উক্ত ঘটনার পরই সিসিটির গ্যান্ট্রি ক্রেনে আঘাতকারী মিসরের পতাকাবাহী জাহাজ ‘এমভি এক্সপ্রেস সুয়েজ’ আটক রাখা হয়। বন্দর কর্তৃপক্ষ ক্ষতিপূরণ আদায় প্রক্রিয়া যাবার সিদ্ধান্তে অনড় বলে কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়।
বিগত ২৫ জুন (ঈদের আগের দিন) বেলা ২টা ৫৫ মিনিটে বিদেশী জাহাজ ‘এমভি এক্সপ্রেস সুয়েজ’ চিটাগাং কন্টেইনার টার্মিনালের (সিসিটি) মূল স্থাপনায় জেটি-বার্থে অবস্থিত একে একে দু’টি কী গ্যান্ট্রি ক্রেনে তীব্র গতিতে আঘাত করে। এরপর থেকে সিসিটি আংশিক অচল রয়েছে। বন্দরে গিয়ারলেস (ক্রেনবিহীন) কন্টেইনার জাহাজ হ্যান্ডলিং ব্যাহত হচ্ছে। বন্দর এমনিতেই দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ধরনের ভারী যান্ত্রিক সরঞ্জামের সঙ্কটে ধুঁকছে। এ অবস্থায় বন্দরে জাহাজের জট, কন্টেইনার জট এবং জাহাজবহরের জেটি-বার্থে ভিড়ার জন্য অলস অপেক্ষাকাল তথা জাহাজের গড় অবস্থান বেড়েই চলেছে। জট সামাল দিতে গিয়ে হিমসিম অবস্থায় পড়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। নেয়া হয়েছে বিভিন্ন পদক্ষেপ।
উভয় কী গ্যান্ট্রি ক্রেন যতদিন মেরামত না হচ্ছে ততদিন বন্দরজটের উপর নেতিবাচক প্রভাব অব্যাহত থাকবে এমনটি জানান বন্দর ব্যবহারকারীরা। তবে বন্দর ব্যবহারকারী আমদানিকারক ও বেসরকারি উদ্যোক্তাদের একটি অংশের পণ্য খালাসে গড়িমসির কারণেও ঈদের আগে-পরে থেকে বন্দরজট বেড়েই চলেছে। আর খেসারত দিতে হচ্ছে গার্মেন্টসহ রফতানিমুখী শিল্পখাতগুলোকে। জটের প্রভাব পড়বে বাজারদরে। কেননা আমদানিকারকরা বন্দর-ব্যয় বেশি হওয়ার অজুহাতে নিত্য ও ভোগ্যপণ্য মূল্যবৃদ্ধি ঘটিয়ে ভোক্তা সাধারণের কাছ থেকে বাড়তি দাম ঠিকই উসুল করে নেবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।