Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ষোড়শ সংশোধনী রায়ে উত্তাল হবে সংসদ

| প্রকাশের সময় : ৯ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

পঞ্চায়েত হাবিব : বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে দিতে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধন বাতিল করে দেয়া হাইকোর্টের রায় আপিল বিভাগ বহাল রাখায় ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে এমপিদের মাঝে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন টানা দ্বিতীয় মেয়াদের দশম জাতীয় সংসদের সরকার দলীয়, বিরোধী দলীয় এমনকি স্বতন্ত্র এমপিরাও এই রায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। তারা বলছেন, এই রায় সার্বভৌম সংসদের প্রতি আঘাত। সংসদের সিদ্ধান্ত আদালত বাতিল করতে পারে না।
সংসদের সিদ্ধান্তই চ‚ড়ান্ত। সংসদের কাছে সবার জবাবদিহিতা থাকতে হবে। সংবিধানেও সংসদের কাছে সবাই ‘অ্যাকউন্ট্যাবল’ দাবি করে এ নিয়ে সংসদের চলমান মূলতবি অধিবেশন শুরুর পর আলোচনা করা হবে বলেও জানান একাধিক এমপি। গত সোমবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন ৭ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে দিতে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধন বাতিল করে দেয়া হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন। এর পরপরই এমপিরা রায়ের বিষয়ে তাদের অসন্তোষটির কথা জানান।সংবিধান অনুযায়ী প্রেসিডেন্টকে সংসদ ইমপিচ (অভিশংসন) করতে পারলে বিচারপতিকে কেন করা যাবে না-এমন প্রশ্ন তুলে সরকার দলীয় এমপি ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমরা জেনেছি, আপিল বিভাগ আমাদের আপিল খারিজ করে হাইকোর্টের রায়কে বলা রেখেছে। আমি মনে করি না, সুপ্রিম কোর্ট সঠিক জাজমেন্ট দিয়েছে। আমরা এটা নিয়ে সংসদে কথা বলবো। সংবিধান অনুযায়ী আমরা প্রেসিডেন্টকেও ইমপিচ করতে পারি। যদি প্রেসিডেন্টকে পারি, হোয়াই নট চিফ জাস্টিস অ্যান্ড আদার জাস্টিস? এটা হচ্ছে আমার স্পষ্ট বক্তব্য।’ জাতীয় সংসদ জাতিকে যেভাবে প্রতিনিধিত্ব করে, বিচার বিভাগ ওইভাবে প্রতিনিধিত্ব করে না মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সিনিয়র এই এমপি বলেন, পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশেই সংসদ হচ্ছে হাউস অব দ্য নেশন। বাংলাদেশের সংবিধানেও সংসদের কাছে সবাই অ্যাকউন্ট্যাবল। সংসদের কাছে সবার জবাবদিহিতা থাকতে হবে। সংসদের হাতে সর্বোচ্চ ক্ষমতা থাকবে। বাহাত্তরের সংবিধানের মূল স্পিরিটও ছিল এটা।
কুষ্টিয়া-৩ আসনের সরকারদলীয় এমপি মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, এই রায়টি জনগণের ক্ষমতায়নের পরিপন্থী এবং বাহাত্তরের সংবিধানের স্পিরিটেরও বিরোধী। এনিয়ে সংসদে আলোচনা হবে বলেও জানান আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক
এদিকে ক্ষমতাসীন জোটের অন্যতম শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি বলেন, সার্বভৌম সংসদের সিদ্ধান্ত আদালত বাতিল করতে পারে না। সংসদের সিদ্ধান্তই চ‚ড়ান্ত। আমরা বিষয়টি নিয়ে আবারও সংসদে কথা বলবো। ১৯৭২ সালের সংবিধানে মূল কাঠামোর আলোকে আইনটি তৈরি করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
যে কারণে সংসদের কাছে ক্ষমতা ফিরে আনতে চান এমপিরা : ১৯৭২ সালে সংবিধান প্রণয়নের সময় উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ছিল। ১৯৭৫ সালে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর (বাকশাল গঠন) মাধ্যমে বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের হাতে ন্যস্ত হয়। চতুর্থ সংশোধনী বাতিল হলে জিয়াউর রহমানের সামরিক সরকারের আমলে এক সামরিক আদেশে বিচারপতিদের অভিশংসনের জন্য সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করা হয়। ২০১১ সালে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর সময়ে বিচারপতিদের সরানোর ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে দেয়া নিয়ে আলোচনা ওঠে, যদিও তখন তা করা হয়নি। পরে ২০১২ সালে তৎকালীন স্পিকার ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদের একটি রুলিংকে কেন্দ্র করে কয়েকজন এমপি হাই কোর্টের একজন বিচারপতিকে অপসারণের দাবি তোলেন। মূলত সে সময়েই বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে আনার দাবি জোরালো হয়। এলক্ষ্যে ‘সংবিধান (ষোড়শ সংশোধন) বিল-২০১৪’ শীর্ষক বিলটি প্রস্তুত করে সংসদে উত্থাপনের পর ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর এটি পাস হয়, যাতে বিচারক অপসারণের ক্ষমতা ফিরে পায় সংসদ। বিলটি পাসের পর ওই বছরের ২২ সেপ্টেম্বর তা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়।
যেভাবে পাস হয় বিল : নির্দিষ্ট তারিখে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ‘সংবিধান (ষোড়শ সংশোধন) বিল-২০১৪’ পাসের প্রস্তাব তুলেন। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে চলা অধিবেশনে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের উপস্থিতিতে প্রথমে কণ্ঠ এবং বিভক্তি ভোটে পাস হয় সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব। স্পিকার বিভক্তি ভোটের ফলাফল পড়ে শোনালে দেখা যায়, বিলের পক্ষে ৩২৭টি ভোট পড়ে, আর বিপক্ষে কোনো ভোট নেই। অর্থাৎ সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও তার শরিকরাসহ বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সবাই বিলের পক্ষে ভোট দেন।
ঐতিহাসিক এই বিলটি পাসের সময় এর ওপর জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাব দেন বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, কাজী ফিরোজ রশীদ, এম এ হান্নান, ইয়াহইয়া চৌধুরী, রওশন আরা মান্নান, নুরুল ইসলাম মিলন, স্বতন্ত্র সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী, হাজী মো. সেলিম, তাহজীব আলম সিদ্দিকী, আব্দুল মতিন, বিএনএফ এর আবুল কালাম আজাদ, জাসদের মইন উদ্দীন খান বাদল। বিলটি বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব দেন স্বতন্ত্র সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী, হাজী মো. সেলিম, তাহজীব আলম সিদ্দিকী, আব্দুল মতিন, জাতীয় পার্টির এম এ হান্নান, ইয়াহইয়া চৌধুরী, রওশন আরা মান্নান, বিএনএফ’র আবুল কালাম আজাদ। জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাব স্পিকার ভোটে দিলে সরকারী দলের সাথে জাতীয় পার্টির হাত তুলে বিপক্ষে ভোট দেয়; যদিও তারা এই প্রস্তাবের পক্ষে ছিল। পরে বিলটি স্পিকার ভোটে দিলে প্রথমে কণ্ঠভোটে তা গ্রহণ করা হয়। পরে বিভক্তি ভোটের মাধ্যমে সেটি পাস করা হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ষোড়শ সংশোধনী

১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ