পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ভারি বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে দেশে দীর্ঘস্থায়ী বন্যার আশঙ্কা করছেন আবহাওয়াবিদরা। ইতোমধ্যে দেশের উত্তর-মধ্য-পূর্বাঞ্চলে পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র, যমুনা এবং পদ্মা নদীর পানি ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। সিলেট, মৌলভীবাজার, কক্সবাজার ও বান্দরবানে বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হলেও সারাদেশে অবনতি হতে পারে। আবহওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এ মাসে দেশের বেশিরভাগ স্থানে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। প্রতিবেশি ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরও কয়েক সপ্তাহ বৃষ্টি হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে। ভারতের আসাম, মেঘালয়, পশ্চিমবঙ্গ, মিজোরাম ও ত্রিপুরায় অবিরাম বৃষ্টিপাত হচ্ছে। চীনেরও বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বন্যা দেখা দিয়েছে। ফলে উজান থেকে পানির ঢলের হার বেড়েছে এবাং আগামীতে বাড়বে। এতে দেশের বেশিরভাগ নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি এবং বন্যা পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের নদ-নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে বন্যা যে ভয়াবহ রূপ লাভ করবে, তাতে সন্দেহ নেই।
আবহাওয়াবিদরা মনে করছেন, ১৯৮৮, ১৯৯৮ ও ২০০৭ সালের বন্যার আগে মৌসুমী বায়ুর গতিপ্রকৃতির সঙ্গে এবারের মৌসুমী বায়ুর গতিপ্রকৃতির মিল রয়েছে। ইতিহাস পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, আমাদের দেশে প্রতি ৭ থেকে ১০ বছর পর পর বড় আকারের বন্যা দেখা দেয়। বন্যার এই ধারাবাহিকতায় ২০০৭ সালের পর এবার এবার বড় ও দীর্ঘস্থায়ী বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির হারও অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি। ভারতের ভারি বৃষ্টিপাতে পদ্মা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি পেলে এর প্রভাবে দীর্ঘস্থায়ী বন্যা দেখা দিতে পারে। বিগত প্রায় মাস খানেক ধরে দেশে বৃষ্টিপাতের হার বেড়েছে। সক্রিয় মৌসুমী বায়ু দেশের উত্তর দিকে অগ্রসর হওয়ায় উত্তরাঞ্চলে বৃষ্টিপাতের হার বেড়েছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে বন্যা পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতির দিকে ধাবিত হবে। ভারি বৃষ্টির কারণে গত মাসে পাহাড় ধসে রাঙ্গামাটিতে দেড়শ’র বেশি লোকের মৃত্যু হয়েছে। কক্সবাজারেও পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। পাহাড় ধসের পাশাপাশি দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন্যা দেখা দেয়। বাড়ি-ঘর, জনপদসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ডুবে যায়। কয়েকশ’ স্কুল বন্ধ করে দেয়া হয়। বন্যার পানি কিছুটা কমলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। বাড়ি-ঘর, ফসলাদি ডুবে যাওয়ায় মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে। দিন মজুর ও খেটে খাওয়া মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি হয়ে তাদের জীবনযাপন করতে হচ্ছে। বন্যার সাথে সাথে নদীভাঙ্গণও তীব্র হয়ে উঠেছে। নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে বসতি ও জনপদ। এ পরিস্থিতিতে সরকারের তরফ থেকে যে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে, তা অপ্রতুল। দুর্গত এলাকার অসংখ্য মানুষ অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে। খাদ্য ও ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। এর উপর দেখা দিয়েছে ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগব্যাধি। পত্র-পত্রিকা ও টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে প্রতিদিনই বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ও দুর্গত মানুষের দুর্ভোগের চিত্র তুলে ধরা হচ্ছে। দুর্ভোগ লাঘবে যে ধরনের সরকারি ত্রাণ কার্যক্রম চালানো প্রয়োজন, তা দেখা যাচ্ছে না। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, দেশে খাদ্য সংকটের মাঝে দীর্ঘস্থায়ী বন্যার পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। চালের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাওয়ায় দুর্ভোগ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা অনুমান করতে কষ্ট হয় না। সরকারের তরফ থেকে খাদ্য সংকট হবে না বললেও, ভুক্তভোগী জনসাধারণ তাতে আশ্বস্ত হতে পারছে না। তাদের মধ্যে খাদ্য সংকটের আশঙ্কা কোনোভাবেই দূরীভূত হচ্ছে না। সরকার শুল্ক কমিয়ে চাল আমদানি শুরু করলেও, তার প্রভাব বাজারে পড়ছে না। একদিকে চালের মূল্যবৃদ্ধি ও অন্যান্য খাদ্য সংকট অন্যদিকে দীর্ঘস্থায়ী আভাস পরিস্থিতিকে গুরুতর করে তুলছে। আগামী দিনগুলোতে চরম দুর্ভোগের আশঙ্কায় তাদের দিন কাটাতে হচ্ছে।
ভারতে যে হারে ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে, তাতে পাহাড়ি ঢল ও ফারাক্কাসহ অন্যান্য বাঁধ খুলে দিলে বাংলাদেশে বন্যা পরিস্থিতি নিশ্চিতভাবেই অবনতি ঘটবে। বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে দুর্গত এলাকার মানুষের জীবন ও সম্পদ সংশয়ের মধ্যে পড়বে। ইতোমধ্যে বন্যার কারণে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় এখন পর্যন্ত সরকারের যে প্রস্তুতি, তা সন্তোষজনক নয়। দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর মতো জোরালো কার্যক্রম চোখে পড়ছে না। বিচ্ছিন্নভাবে কিছু ত্রাণ কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। আমরা মনে করি, এখন থেকেই বন্যা মোকাবেলায় সরকারকে ব্যাপক প্রস্তুতি নিতে হবে। পর্যাপ্ত খাদ্য ও ওষুধ মজুদ করাসহ দুর্গতদের পাশে দ্রুত পৌঁছানোর উদ্যোগ জোরদার করতে হবে। যেসব এলাকায় মানুষ পানিবন্দি হয়ে রয়েছে, তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসতে হবে। পর্যাপ্ত খাদ্য, ওষুধ, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে বিত্তবানদের বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াতে হবে। খাদ্যমূল্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সরকারকে আন্তরিক ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।