Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অবস্থার উন্নতি হচ্ছে না ফরহাদ মজহারের

| প্রকাশের সময় : ৭ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বাস কাউন্টার ম্যানেজারের আদালতে জবানবন্দি
বিশেষ সংবাদদাতা : কবি, প্রাবন্ধিক ও বুদ্ধিজীবী ফরহাদ মজহার বারডেম হাসপাতালের কেবিনে চিকিৎসাধীন থাকলেও তার শারীরিক অবস্থান খুব একটা উন্নতি হচ্ছে না। মানসিক অবস্থার উন্নতি ঘটানোর কৌশলগত কারণে হাসপাতালে অবস্থানের কথা তাকে বলা হচ্ছেনা। বলা হচ্ছে তিনি বাসায় রয়েছেন। ফরহাদ মজহারের সেবাযত্মের দায়িত্বে থাকা ঘনিষ্ঠজন সীমা দাস সিমু এসব কথা বলেন সাংবাদিকদের। যশোরে যে পরিবহনের বাস থেকে ফরহাদ মজহারকে উদ্ধার করা হয়েছিল, সেই হানিফ এন্ট্রারপ্রাাইজের খুলনা শিববাড়ী কাউন্টারের ম্যানেজার নাজমুস সাদাত সাদী ঢাকায় এসে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ফরহাদ মজহার নিখোঁজ রহস্যের ঘটনায় এখন গোটা জাতি মানসিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত। সরকার দেশের মানুষকে বিষাক্ত কাঁটার খাঁচার মধ্যে বন্দী করে রেখেছে। বাংলাদেশে প্রতিটি জনপদে, বাড়িতে বাড়িতে মৃত্যু, গুম, অপহরণ, নিখোঁজ, বিনা বিচারে আটক হওয়ার ভয় নিয়ে মানুষ জীবনযাপন করছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর শাহবাগে বারডেম হাসপাতাল ১১ তলার ১১০৬ নম্বর থেকে বেরিয়ে সীমা দাস সিমু বলেন, উনি (ফরহাদ মজহার) খুবই দুর্বল, ট্রমাটাইজড। ট্রমাই তার বড় সমস্যা। খুব একটা কথা বলেননা। কাউকে দেখলে শুধু তাকিয়ে থাকেন। ঠিকমত বুঝতে পারছেন না। সারাক্ষণ চুপ থাকছেন। ঘুমানোর চেষ্টা করলেও ঘুম আসেনা। এত কাছ থেকে এর আগে এমন ট্রমাটাইজড মানুষ দেখিনি। ডাক্তার বলেছেন, ট্রমা কাটতে ৭ থেকে ১ মাস সময় লাগবে। সীমা দাস বলেন, ওনার (ফরহাদ মজহার) অবস্থা ভালো না। আজ তাকে স্যালাইন দেয়া হয়েছে। ডা. এ কে এম মুসা বলেছেন- ফরহাদ মজহারকে মনোরোগ চিকিৎসক দেখানো জরুরি। এই হাসপাতালের মনোরোগ চিকিৎসক দেখানো হতে পারে কিংবা বাহিরের মনোরোগ চিকিৎসকের কাছে তাকে নেয়া হতে পারে। তবে সেটা এখানকার চিকিৎসকরা নির্ধারণ করে দিবেন। অন্যদিকে উদ্ধারের পর তার কাছ থেকে পাওয়া একটি ব্যাগে কী আছে এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সীমা দাস সিমুও। তার ভাষ্য, ফুটেজে দেখা গেছে ফরহাদ মজহার খালি হাতে গেছেন। তাহলে উনি ব্যাগ পেলেন কোথায়? ব্যাগ খুলে দেখেন কী আছে সেখানে যোগ করেন সীমা।
সূত্র জানায়, যশোরে যে পরিবহনের বাস থেকে ফরহাদ মজহারকে নাটকীয়ভাবে উদ্ধার করা হয়েছিল, সেই হানিফ এন্টারপ্রাইজের খুলনা শিববাড়ী কাউন্টারের ম্যানেজার নাজমুস সাদাত সাদী ঢাকায় এসে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। ঢাকার মহানগর হাকিম খুরশিদ আলম গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে তার খাস কামরায় ১৬৪ ধারায় সাদীর বিচারিক জবানবন্দি রেকর্ড করেন বলে আদালত পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এসআই নিজাম উদ্দিন জানান। তিনি জানান, এই অপহরণ মামলার নতুন তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মো. মাহবুবুল হক ঘটনার সাক্ষী হিসেবে সাদীকে আদালতে হাজির করে জবানবন্দি নেয়ার আবেদন করেন। পরে নাজমুস সাদাত সাদী তার সেদিনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বিচারকের কাছে জবানবন্দি দিয়েছেন। ডানপন্থী অধিকার কর্মী হিসেবে পরিচিত কবি প্রাবন্ধিক ফরহাদ মজহার সোমবার ভোরে ঢাকার শ্যামলীর রিং রোডের বাসা থেকে বেরিয়ে ‘অপহৃত’ হন বলে তার পরিবারের অভিযোগ। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ মোবাইল ফোন ট্র্যাক করে অনুসন্ধান শুরু করে এবং রাতে যশোরে হানিফ এন্টারপ্রাইজের একটি বাস থেকে ফরহাদ মজহারকে উদ্ধারের কথা জানায় র‌্যাব।
মামলায় বলা হয়, সেদিন ভোর ৫টার দিকে ঘুম ভেঙ গেলে ফরহাদ মজহারকে না দেখে চিন্তিত হয়ে পড়েন ফরিদা। সকাল ৫টা ২৯ মিনিটে তিনি স্বামীর ফোন থেকে কল পান। ফরহাদ মজহার তাকে ‘ভয়ার্ত কণ্ঠে’ বলেন, ওরা আমাকে নিয়ে যাচ্ছে, মেরে ফেলবে। এরপর ফোনটি কেটে যায়। পরে পুলিশের উপস্থিতিতেই সারা দিনে ফরহাদ মজহারের ফোন থেকে আরও চার বার কল পান ফরিদা। সেসব ফোনালাপে ফরহাদ মজহার জানান, অপহরণকারীরা ৩৫ লাখ টাকা চেয়েছে। খুলনার শিববাড়িতে হানিফ এন্টারপ্রাইজের কাউন্টার ব্যবস্থাপক নাজমুস সাদাত সাদী পরদিন সাংবাদিকদের জানান, ফরহাদ মজহার সেদিন তার কাউন্টার থেকে ‘গফুর’ নামে টিকেট কাটেন। সোয়া ৯টার দিকে কোচটি রয়্যাল মোড় শিববাড়িতে এলে ফরহাদ মজহার গাড়িতে ওঠেন। টিকেট বিক্রির সময় ফরহাদ মজহারকে চেনেননি জানিয়ে সাদী সেদিন বলেছিলেন, র‌্যাব সদস্যরা ছবি দেখানোর পর তিনি চিনতে পারেন।
উল্লেখ্য, সোমবার (৩ জুলাই) ভোররাতে মোহাম্মদপুর লিংক রোডের হক গার্ডেনের নিজ বাসা থেকে বের হন ফরহাদ মজহার। এরপর ভোর ৫টা ২৯ মিনিটে তিনি তার স্ত্রীকে ফোন করে জানান, ওরা আমাকে নিয়ে যাচ্ছে। ওরা আমাকে মেরে ফেলবে। পরে তার স্ত্রী আদাবর থানায় অভিযোগ করেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার রাতে র‌্যাব-৬ যশোর নওয়াপাড়া থেকে তাকে উদ্ধার করে। পরে তাকে আদাবর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর তাকে মিন্টো রোডের গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে জবানবন্দি দেয়ার জন্য আদালতে পাঠানো হয়। জবানবন্দি দেয়ার পর তিনি নিজ জিম্মায় যাওয়ার আবেদন করলে শুনানি শেষে তার এই আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত। ফরহাদ মজহারের অপহরণ মামলা তদন্ত করছে ডিবি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ