Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অতি বর্ষণে বন্যার বিস্তার

প্রকাশের সময় : ৬ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১:০৮ এএম, ৬ জুলাই, ২০১৭

কক্সবাজারে দু’জনের মৃত্যু, ৫ লাখ মানুষ পানিবন্দি : বান্দরবানের অধিকাংশ এলাকা পানির নিচে : সুনামগঞ্জে পানি বাড়ছে : সিলেটে অপরিবর্তিত : মৌলভীবাজারে উন্নতি, ত্রাণের অপেক্ষায় মানুষ

ইনকিলাব ডেস্ক : ঘূর্ণিঝড় ‘মোরার’ ক্ষত না শুকাতেই আবারো প্লাবিত হয়েছে দেশের পূর্ব ও উত্তরের জনপদ। প্রবল বর্ষণ, উজান থেকে নেমে আসা বন্যার পানি, পাহাড়ী ঢল ও জোয়ারের পানির সাথে একাকার হয়ে গেছে দেশের পূর্ব ও উত্তরের নি¤œাঞ্চল। এ বিষয়ে আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো বিস্তারিত প্রতিবেদন-
কক্সবাজার থেকে শামসুল হক শারেক জানান, জেলায় শিশুসহ দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন ৫ লক্ষাধিক মানুষ। গত ৫ দিনের লাগাতার প্রবল বৃষ্টিতে জেলার অধিকাংশ এলাকায় বন্যা সৃষ্টি হয়েছে। চকরিয়া, রামু, কক্সবাজার সদরসহ আরো কয়েক স্থানে পানির নিচে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ। অন্যদিকে বসতবাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও রাস্তা-ঘাটসহ সব ধরনের স্থাপনার সাধিত হয়েছে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি। তলিয়ে গেছে রাস্তা-ঘাট, চিংড়ি প্রজেক্ট, পানের বরজ ও বীজতলাসহ ফসলি জমি। প্রবল বৃষ্টিতে কক্সবাজার জেলার ছোট বড় সব নদ-নদী দিয়ে উজানের ঢল এলাকায় পানিবদ্ধতা সৃষ্টি করেছে। কক্সবাজার শহরেও সৃষ্টি হয়ে পানিবদ্ধতা। শত শত দোকানে পানি ঢুকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানান দোকান মালিক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি মোস্তাক আহমদ।
চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলায় ২৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার এলাকার ৩ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বাঁকখালী নদীর দুই পাড় উপচে রামু ও কক্সবাজার সদরের নি¤œাঞ্চলে বন্যা সৃষ্টি হয়েছে। কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁও নদীর পানিতে ঈদগাঁও, গোমাতলী, পোকখালী পিএমখালীসহ নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে লক্ষাধিক মানুষ পানি বন্দি হয়ে জনদূর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
বান্দরবান থেকে মোঃ সাদাতউল্লাহ জানান, বান্দরবান জেলায় টানা বর্ষণে বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। জেলার লামা আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়িতে শত শত মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। সাঙ্গু, মাতামুহুরী ও বাকখালী নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পাহাড়ি ঢলে লামা বাজারের অধিকাংশ এলাকা এখন পানির নিচে। বান্দরবান শহরের আর্মি পাড়া, মেম্বার পাড়া ও ইসলামপুর ওয়াপদা ব্রিজ এলাকায় অধিকাংশ বাড়ীতে পানি উঠেছে। শহরে আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বান্দরবানের সাথে সবকটি উপজেলা ও রাঙ্গামাটি জেলার সদরের সাথে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
এদিকে বান্দরবান রুমা সড়কের ওয়াই জংশনসহ বেশ কয়েকটি স্থানে পাহাড় ধসে পড়ায় সড়কে চলাচল বন্ধ রয়েছে। সেনাবাহিনীর প্রকৌশল বিভাগ যোগাযোগ পুনঃস্থাপনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। অপরদিকে বান্দরবান জেলা প্রশাসক সম্ভাব্য প্রানহানি ঠেকাতে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের নিরাপদে আশ্রয় নেয়ার জন্য মাইকিং করেছেন।
সিলেট থেকে খলিলুর রহমান জানান, সিলেটের আটটি উপজেলায় দীর্ঘমেয়াদী বন্যা দেখা দিয়েছে। গতকাল বিকালে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত ছিল। তবে বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্লাবিত হয়েছে ৪৬৬ গ্রাম। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন ৩২ হাজার ৮৪৭টি পরিবার। তবে বন্যা কবলিত এলাকার মানুষের জন্য নতুন করে বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। এছাড়াও বন্যায় রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়াতে গঠন করা হয়েছে মেডিকেল টিম।
সিলেট জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বন্যায় সিলেটের আটটি উপজেলায় ৫৫টি ইউনিয়ন পরিষদের ৪৬৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ৩২ হাজার ৮৪৭টি পরিবার। বন্যায় চার হাজার ৩৩০ হেক্টর আউশ ধান ও ৩৫ হেক্টর আমন ধান ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সিলেটের বালাগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলায় বন্যার্তদের জন্য ১১টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ১৪৫টি পরিবারের ৬২৯ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। ইতিমধ্যেই বন্যার্তদের সহায়তায় ১২৭ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
বালাগঞ্জ (সিলেট) থেকে আবুল কালাম আজাদ জানান, বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগর উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। বিগত এক মাসের স্থায়ী বন্যায় প্রতি দিনই নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। তবে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে পানি কিছুটা কমেছে। জনপ্রতিনিধি স্থানীয়দের মতে দুই উপজেলায় পানিবন্দি লোকজনের সংখ্যা প্রায় দুই লাখে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। পানিবন্দি লোকজনের মধ্যে খাদ্য সঙ্কটের পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করেছে। ত্রাণের জন্য বাড়ছে আহাকার। গোখাদ্যের চরম সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বন্যার্ত লোকজনের মধ্যে দেখা দিয়েছে বিভিন্ন পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব। বন্যাদুর্গত এলাকায় পানি বিশুদ্ধকরণ ও রোগ বালাই দমনে সরকারি হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীদের কোনো তৎপরতা নেই বলে স্থানীয়রা জানান। বন্যা পরিস্থিতি দীর্ঘ হওয়ায় কাঁচা ঘর নিয়ে ঝুঁকিতে বসবাস করছেন বন্যায় আক্রান্ত মানুষ। অনেকে বাড়ি ছেড়ে আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে চলে গেছেন। সর্বশেষ গতকাল দুই উপজেলায় ৪২ মেট্রিকটন চাল নতুন ত্রাণ হিসেবে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বালাগঞ্জে ১৮ মেট্রিকটন ও ওসমানীনগরে ২৪টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলে উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়। এখনো সেগুলো বিতরণ করা হয়নি। এ বরাদ্দ দুই উপজেলার জন্য অপ্রতুল বলে জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়রা মনে করছেন। গতকাল বালাগঞ্জ উপজেলার বন্যা আক্রান্ত এলাকা পূর্ব গৌরিপুর এলাকায় ত্রাণ বিতরণ ও পরিদর্শন করেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো: ফয়জুর রহমান। এ সময় তিনি আশ্রয় কেন্দ্রের পরিবারগুলোর মধ্যে চাল, ডাল, পিয়াজ, তেল ও আলু বিতরণ করেন।
সুনামগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, সুনামগঞ্জে গতকাল তেমন বৃষ্টিপাত না হলেও জেলার নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। জেলার ছাতক উপজেলার পিয়াইন, চেলা ও মরা চেলা, ধলাই নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এসকল নদীর উৎপত্তি স্থল বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় হওয়ায় ভারতের মেঘালয়ে বৃষ্টিপাত হলে পাহাড়ী নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পায়। ফলে ছাতকসহ অন্যান্য উপজেলার নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তবে সুনামগঞ্জে সুরমার পানি ৫ সেন্টিমিটার কমেছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের তথ্য মতে গতকাল বিকেল ৩টায় সুনামগঞ্জে সুরমার পানি বিপদ সীমার ৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। গতকাল সকাল ৬টায় গত ২৪ ঘন্টায় সুনামগঞ্জে ৪৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সুনামগঞ্জে এখনও বন্যা দেখা না দিলেও বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মৌলভীবাজার থেকে এসএম উমেদ আলী জানান, উজানে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখায় বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। তবে রাজনগর উপজেলার মনুপ্রকল্প এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, কুশিয়ারা নদীর পানি কিছুটা কমলেও শেরপুরে ১৭ সেন্টিমিটার বিপদ সীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদ সীমার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হলে মৌলভীবাজার জেলার সার্বিক পরিস্থিতির পুরোপুরি উন্নতি হবে। গত দু’দিন উজানে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখার বন্যা কবলিত এলাকায় ৫-৬ ইঞ্চি পানি কমেছে। তবে রাজনগর উপজেলায় বন্যা অপরিবর্তিত রয়েছে।



 

Show all comments
  • ফিরোজ খান ৬ জুলাই, ২০১৭, ১২:৩৮ পিএম says : 0
    হে আল্লাহ তুমি আমাদের প্রতি রহমত নাযিল করো।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বর্ষণ

৫ জুলাই, ২০২১
৩ অক্টোবর, ২০২০

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ