Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারী বর্ষণের আভাস

বাংলাদেশ-ভারতে আগাম সক্রিয় মৌসুমী বায়ু : নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ৮ জুন, ২০২১, ১২:০০ এএম | আপডেট : ৯:২১ এএম, ৮ জুন, ২০২১

দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু (বর্ষা) আগেভাগেই এসে গেছে। বাংলাদেশ, ভারত, তিব্বতসহ চীন, নেপাল ও আশপাশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে গত শুক্রবার-রোববার থেকে মৌসুমী বায়ু আগমনের সাথে সাথে ক্রমেই বিস্তার লাভ করছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর হয়ে এ অঞ্চলে মৌসুমী বায়ু সক্রিয় এবং জোরদার হচ্ছে। এর প্রভাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এবং উজানভাগে তিব্বতসহ চীন, ভারত, নেপালে বিশেষ করে হিমালয় পাদদেশীয় এলাকায় ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। অভ্যন্তরীণ ও উজানে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণে দেশের প্রধান নদ-নদীসমূহের পানি ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। গতকাল সোমবার বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া বিভাগ এ পূর্বাভাস দিয়েছে।
মৌসুমী বায়ুর আগমনের সাথে সাথেই বর্ষার আবহ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। গত তিন-চার দিনে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ হয়েছে দেশের অনেক জেলায়। সেই সাথে বজ্রপাত ও দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়ার ঘনঘটা তৈরি হয়েছে। চলতি জুন মাসে দেশে স্বাভাবিক হারে বৃষ্টিপাতের কথা দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হয়েছে। তবে গত ডিসেম্বর থেকে মে পর্যন্ত ছয় মাসে সারাদেশে সার্বিকভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে গড়ে ৮০ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। গেল তিন মাসে উত্তর-পূর্ব ভারতেও বৃষ্টি হয়েছে স্বাভাবিকের চেয়ে ৬০ শতাংশ নিচে।
ভারতের আবহাওয়া বিভাগের উদ্ধৃতি দিয়ে দি টাইমস অব ইন্ডিয়া গতকাল জানায়, বর্ষার মৌসুমী বায়ু রোববার থেকে ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলে বিস্তার লাভ করছে। একই সাথে সক্রিয় হয়ে উঠছে। আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, মিজোরাম, অরুণাচল, নাগাল্যান্ড, মনিপুর, সিকিম এবং গাঙ্গেয় ও হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ তথা উত্তর-পূর্ব ভারতব্যাপী মৌসুমী বায়ুর সক্রিয়তার পাশাপাশি বৃষ্টিপাতের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী সপ্তাহ পর্যন্ত উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে বিক্ষিপ্ত মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ, কোথাও কোথাও অতি ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। ভারতের একাংশ ও বঙ্গোপসাগর হয়ে বাংলাদেশ পর্যন্ত মৌসুমী বায়ুর একটি বলয় তৈরি হয়েছে।
তবে মৌসুমী বায়ুর আগমন ও সক্রিয় হওয়ার সাথে সাথে চলমান বৃষ্টিপাতের কারণে প্রধান নদ-নদীর উজানের অববাহিকায় পানি ফুলে-ফেঁপে উঠবে কিনা অথবা বন্যা পরিস্থিতির কারণ ঘটবে কিনা তা এ মুহূর্তে পূর্বাভাসে বলা হয়নি। বরং ভারতের আবহাওয়া বিভাগের দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাসে চলতি বর্ষা মৌসুমে (জুন-সেপ্টেম্বর) স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাতের কথা জানানো হয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ আবহাওয়া বিভাগ দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাসে চলতি জুন মাসে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে কতিপয় স্থানে ভারী বর্ষণের কারণে আকস্মিক ও অস্থায়ী বন্যার আশঙ্কার কথা জানায়।
গতকাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী আগামী ৭২ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও এর সংলগ্ন উত্তর-পূর্ব ভারতের আসাম, মেঘালয় ও ত্রিপুরার বিভিন্ন স্থানে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এ সময়ে আপার মেঘনা অববাহিকায় (সুরমা-কুশিয়ারাসহ বিভিন্ন নদ-নদী) এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের পাহাড়ী অববাহিকায় নদ-নদীসমূহে সময় বিশেষে পানি দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। গত ২৪ ঘণ্টায় উত্তর-পূর্ব ভারতের গ্যাংটকে ১০৩ মিলিমিটার এবং গোয়ালপাড়া ও জলপাইগুড়িতে ভারী বর্ষণ হয়েছে। এ সময় দেশের বিভিন্ন স্থানেও মাঝারি থেকে ভারী, কোথাও কোথাও অতি ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে।
পাউবো পূর্বাভাসে আরও জানায়, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদের পানির সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে, আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। সুরমা ব্যতীত আপার মেঘনা অববাহিকায় প্রধান নদ-নদীসমূহের পানির সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। দেশের প্রধান নদ-নদীসমূহের ১০১টি পানির সমতল পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে ৫৭টিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে, ৩৭টিতে পানি হ্রাস পাচ্ছে এবং ৬টি পয়েন্টে অপরিবর্তিত রয়েছে।
প্রসঙ্গত গেল বছরে মৌসুমী বায়ু বেশ আগেই বাংলাদেশ-ভারত ও এ অঞ্চলে প্রবেশ করে, সক্রিয় হয়। বিদায় নেয় দীর্ঘ বিলম্বে। এতে করে উজানে অতি বৃষ্টিতে ভারতের ঢলে ৩৩টি জেলা দীর্ঘস্থায়ী বন্যা কবলিত হয়।
এবার মায়ানমার-টেকনাফ উপকূল হয়ে রোববার খুব দ্রুতগতিতে এবং আগেভাগে বাংলাদেশে মৌসুমী বায়ুর আগমন ঘটে। ক্রমেই বিস্তার লাভ করছে বর্ষার মৌসুমী বাযু। সর্বশেষ আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা যায়, বর্ষার দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু দেশের সবকটি বিভাগে বিস্তার লাভ করছে এবং ক্রমেই সক্রিয় হচ্ছে। উত্তর-বঙ্গোপসাগরে মাঝারি ধরনের সক্রিয়। মৌসুমী বায়ু জোরালো হওয়ার সাথে সাথে পঞ্জিকার হিসাবে ‘বর্ষাকাল’ আগমনের আগেই বর্ষার আবহ তৈরি হয়েছে সারাদেশে। আবহাওয়া বিভাগ বলছে, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সারাদেশে মৌসুমী বায়ু পুরোপুরি বিস্তার লাভ করবে। এর পরের ৫ দিনে অর্থাৎ আসছে সপ্তাহে উত্তর-বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে।
গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের বেশিরভাগ জেলায় হালকা থেকে মাঝারি, কোথাও কোথাও ভারী বর্ষণ হয়েছে। সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয় নোয়াখালীতে ৫১ মিলিমিটার। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল পাবনায় ৩৭.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকার পারদ সর্বোচ্চ ৩৪.৫ ও সর্বনিম্ন ২৫.২ ডিগ্রি সে.।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারী বর্ষণের আভাস
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ