পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অব্যাহত বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের প্রবাহে দেশের নদ-নদীরগুলোর পানি বাড়ছে। এর প্রভাবে নদী তীরবর্তী এলাকায় ভাঙন ও নিম্নাঞ্চলে বন্যা দেখা দিয়েছে। যমুনার পনি বৃদ্ধি পাওয়ায় বগুড়া ও সিরাজগঞ্জের নদী তীরবর্তী মানুষ ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত পার করছেন। একই অবস্থা বিরাজ করছে মানিকগঞ্জের দক্ষিণ শিবালয়, ছোট আনুলিয়া ও অন্বয়পুর গ্রামের নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষদের মধ্যে।
বগুড়া ব্যুরো জানায় : যমুনা বিধৌত সোনাতলা, সারিয়াকান্দি ও ধুনট উপজেলা এলাকায় নদী তীরবর্তী হাজারো মানুষ ভাঙনের আশঙ্কায় রাত পার করছেন। যমুনা ছাড়াও বাঙালী, করতোয়া, নাগর নদীর তীরবর্তী এলাকায় আউশ, বর্ষালী ধানসহ শত শত বিঘা জমির খরিফ মৌসুমের ফসল তলিয়ে গেছে পানির নিচে।
গতকাল বুধবার বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের হাইড্রোলজি বিভাগ জানিয়েছে, যমুনার পানি এখনও বিপদসীমার ৬০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে আপাতত আশঙ্কার কিছু নেই ।
সিরাজগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান : ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি ৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৮৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত সিরাজগঞ্জে নদীর তীরবর্তী পাঁচটি উপজেলার চরাঞ্চলের মানুষ নিচু এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ছে। সেই সঙ্গে দুর্ভোগ বাড়ছে।
প্রতিদিনই যমুনায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার সদর, কাজিপুর, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার চরাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে এসব এলাকার কয়েক হাজার মানুষ। এদিকে নদী তীরবর্তী এলাকায় শুরু হয়েছে ভাঙন। সেই সাথে তলিয়ে গেছে এসব এলাকার বীজতলা, সবজি বাগান, পাট ও তিলক্ষেত।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত যমুনা নদীতে ২৪ ঘণ্টায় ৬ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৮৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ১০-১১ তারিখের মধ্যে এ পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে জানান।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আব্দুর রহিম জানান, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারি বর্ষণে যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলেও এখন পর্যন্ত জেলার কোথাও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়নি। বন্যার জন্য আগাম প্রস্তুতি রয়েছে।
(বেলকুচি) সিরাজগঞ্জ: বেলকুচি উপজেলায় যমুনা নদীর চর বেষ্টিত তিন ইউনিয়নের মানুষ পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় দুশ্চিন্তায় আছেন। পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও বেলকুচি উপজেলার চরাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী নিম্ন এলাকাগুলো প্লাবিত হতে শুরু করেছে।
অপরদিকে উপজেলার বেলকুচি সদর ইউনিয়নের বয়ড়া মাসুম, বড়পাখিয়া, ছোট বেড়াখারুয়াসহ বিভিন্ন এলাকার যমুনা নদী থেকে অবৈধভাবে ড্রেজার লাগিয়ে বালু উত্তোলন চরছিলো। ফলে পানি বাড়ার সাথে সাথে শত শত বিঘা আবাদি জমি ও বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে তলিয়ে যাচ্ছে রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজার।
বেলকুচি সদর ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান মির্জা সোলাইমান হোসেন জানান, আমার ইউনিয়নটি সম্পূর্ণ ভাবে পানিতে ডুবে যায়। পানি বাড়ার সাথে সাথে এলাকার মানুষের দুর্ভোগ বাড়তে শুরু করে। নৌকা ছাড়া যাতায়াতের অন্য কোন বাহন থাকে না। আবাদি জমি পানিতে ডুবে গেলে খাবার সঙ্কট দেখা দেয়। সবচেয়ে বেশী সমস্যায় পড়তে হয় গবাদিপশু নিয়ে।
বেলকুচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আনিসুর রহমান জানান, যমুনা নদীর পানি সাম্প্রতিক সময়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে পানি বৃদ্ধি পাওয়ার আগেই আমরা উপজেলার যে সকল অঞ্চল পানিতে ডুবে যায় ঐ সকল এলাকার জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে বর্ন্যার আগাম প্রস্তুতি হিসাবে সভা করেছি। সেই সাথে বন্যা দুর্গতদের জন্য ত্রাণ সহায়তা ব্যবস্থাসহ বেশ কয়েকটি নিরাপদ স্থান (ফ্ল্যাট সেন্টার) প্রস্তুত রেখেছি।
আরিচা : মানিকগঞ্জের শিবালয়ে দক্ষিণ শিবালয়, ছোট আনুলিয়া ও অন্বয়পুর গ্রামের যমুনা নদীর পার এলাকায় নদী ভাঙন রোধে অদ্যবধিও কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে নদী ভাঙনের তীব্রতাও বাড়ছে। এ বছর বর্ষার শুরু থেকেই নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। এসব এলাকার বহু বাড়ি-ঘর ও আবাদী জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে এবং অনেক বাড়ি-ঘর হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। ফলে এসব এলাকার লোকজন এখন চরম আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
এ ব্যাপারে গ্রামবাসির পক্ষ থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর অবেদন করা হয়েছে। কিন্তুু ভাঙনরোধে কার্যকরী কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। ফলে স্থানীয়দের মাঝে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।
জানা গেছে, এ বছর প্রায় এক মাসের বেশী সময় ধরে এ এলাকায় নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে নদী ভাঙনের তীব্রতাও বৃদ্ধি পায়। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তরা শুরু থেকেই ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্টদেরকে অবহিত করে আসছে। কিন্তুু কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না। ফলে বাড়ি- ঘরসহ বহু জায়গা জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এসব এলাকার লোকজন।
অন্বয়পুর গ্রামের বাসুদেব হলদার বলেন, এক মাসের বেশী সময় ধরে নদী ভাঙছে। আমাদের বাড়ি নদীর পারে পড়ে গেছে। যে কোন সময় নদীতে চলে যেতে পারে। আমাদের যাওয়ার কোন জায়গা নাই। তাই এই ঝুঁকির মধ্যেই আমরা বসবাস করছি। ছোট আনুলিয়া গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বিগত দিনে নদী পার এলাকার অনেক বাড়ি ঘর নদীতে চলে গেছে। এবারও বর্ষার শুরু থেকে ভাঙন শুরু হয়েছে। সরকারের কাছে আমাদের আকুল আবেদন আমাদের এখান দিয়ে যেন একটি বেড়িবাঁধ দিয়ে দেন।
অন্বয়পুর গ্রামের মিনাজ উদ্দিন বলেন, আমাদের বাড়ি তিন ভাঙা দিয়েছে। পরে আমরা নদী পার এলাকা থেকে ভিতরে গিয়ে বাড়ি করেছি। এবারও অনেক ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙনরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে নদীর তীরের অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এ ব্যাপারে মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাঈন উদ্দিন জানান, শিবালয়ের নদী ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। খুব দ্রুতই শিবালয়ের যমুনার ভাঙন রোধে কাজ শুরু করা হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।