পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নূরুল ইসলাম : এ যেনো ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’। রাজধানীর মগবাজার-মালিবাগ ফ্লাইওভারের কাজ বছরের পর বছর ধরে শেষ হচ্ছে না। তার উপর ফ্লাইওভারের নীচের রাস্তাগুলো চলাচলের অনুপযোগী। বড় বড় গর্ত তৈরী হয়ে গেছে। একটুখানি বৃষ্টিতেই জমে থাকছে পানি। চলছে খোঁড়াখুুঁড়ির কাজ। চলতে গিয়ে বিকল হয়ে যাচ্ছে গাড়ি। সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। তাতে সীমাহীন ভোগান্তি পোহাচ্ছে নগরবাসী। এর আগে কর্তৃপক্ষ দাবি করেছিল চলতি বছরের ৩০ জুনের মধ্যে ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ শেষ হবে। সে হিসাবে গত পরশু আরও এক দফা সময়সীমা শেষ হয়ে গেছে। কবে শেষ হবে এই ফ্লাইওভারের কাজ? কবে শেষ হবে এই দুর্ভোগ? মগবাজার-মালিবাগ ফ্লাইওভারের প্রাক্তন প্রকল্প পরিচালক ও বর্তমান উপদেষ্টা নাজমুল আলম বলেন, হয়তো এ মাসের মধ্যেই সব কাজ শেষ হয়ে যাবে। কখন চালু হবে সবাই জানতে পারবেন। দুর্ভোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মানুষের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে ইতোমধ্যে বেশ কিছু রাস্তা ঢালাই করা হয়েছে। যতোটুকু বাকী আছে সেগুলোও ঢালাই করা হবে।
মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার নির্মাণের শুরু থেকেই বাংলামোটর-মগবাজার-মৌচাক-রামপুরা-রাজারবাগ-শান্তিনগরের প্রধান সড়কের যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। ফ্লাইওভারের নিচে একাধারে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ করেছে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি), সিটি কর্পোরেশন, তিতাস ও অপটিক্যাল ফাইবার কোম্পানীগুলো। তিন বছর ধরে চলা এ ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার সময়ও পার হয়েছে বেশ কয়েকবার। তারপরও শেষ হয়নি কাজ, শেষ হয়নি জনভোগান্তি। গত মাসে কয়েক দফা বৃষ্টিতে ভোগান্তির মাত্রা আরও বেড়েছে। সর্বশেষ গতকালের বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে বেশ কয়েকটি এলাকার রাস্তা। সামান্য বৃষ্টিতে পানি জমে যাওয়ায় রাস্তাগুলো দিয়ে যানবাহন চলাচল করতে গিয়ে বিকল হয়ে পড়ছে। ভুক্তভোগিদের মতে, দীর্ঘদিন চলা ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজের কারণে এমনিতেই ভয়াবহ দুর্ভোগে পড়েছেন নগরবাসী, তার ওপর রাস্তা খোঁড়ার কারণে বিপর্যয় নেমে এসেছে। রমজানে মালিবাগ এলাকার রাস্তা ব্যবহারকারী লাখ লাখ নগরবাসীকে দীর্ঘ যানজটে পড়তে হয়েছে। নষ্ট হয়েছে বিপুল কর্মঘণ্টা।
সরেজমিন রাজারবাগ, মালিবাগ মোড়, শান্তিনগর, মৌচাক, মালিবাগ রেলগেট, এফডিসি মোড় ঘুরে দেখা গেছে, একদিকে ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ অন্যদিকে সিটি করপোরেশনের ড্রেন নির্মাণের কাজ চলছে। কোনো কোনো স্থানে দিয়ে চলাচলের উপায় নেই। কোথাও চলছে ফ্লাইওভারের বিম ঢালাইয়ের কাজ। নির্মাণ শ্রমিকরা জানিয়েছেন, ঈদের কয়েক দিন কাজ একেবারে বন্ধ ছিল। গত দুদিন ধরে কাজ চললেও পুরোদমে এখনও শুরু হয়নি। এ কারনে চলতি মাসেও কাজ শেষ হবে কিনা তাতে সন্দেহ রয়েছে। মালিবাগ –রামপুরা সড়ক দিয়ে যাতায়াত করা বাসচালকরা জানান, ফ্লাইওভারের কাজ চলাতে সড়কের নিচে থাকা বিভিন্ন ড্রেন ও স্যুয়ারেজের লাইনগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। এতে বৃষ্টির পানি জমে থাকে ও স্যুয়ারেজের ময়লা পানি সড়কের ওপর ভেসে ওঠে। ময়লা কাদা পানিতে চলতে গিয়ে কিছুক্ষণ পর পর রিকশা, মোটরসাইকেল, অটোরিকশার মতো ছোট গাড়ি নষ্ট হয়ে আটকে পড়ছে। এ সড়কে যানজট আগেও ছিল, এখনও আছে। এ বিষয়ে ফ্লাইওভার প্রকল্পের উপদেষ্টা নাজমুল আলম জানান, ইতোমধ্যে বেশ কিছু সড়ক ঢালাই করে দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেমালিবাগ থেকে রাজাবাজার, মালিবাগ থেকে শান্তিনগর, মালিবাগ থেকে মৌচাক পর্যন্ত সড়ক। তবে মৌচাক পর্যন্ত উত্তর দিকের রাস্তাটি এখনও ঢালাই করা হয়নি। সে কারনে ওই রাস্তায় গর্তের সৃষ্টি হয়ে পানি জমে গেছে। তাতে নগরবাসীকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। খানাখন্দে ভরা রাস্তা দিয়ে যানবাহন ধীর গতিতে চলছে। সৃষ্টি হচ্ছে যানজটের। অথচ রাজধানীর যানজট নিরসনে মগবাজার- মৌচাক ফ্লাইওভার প্রকল্পটি ২০১১ সালের ৮ মার্চ একনেকে অনুমোদন পায়। চারলেনের ৮ দশমিক ২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ ২০১৩ সালের ১৬ ফেব্রæয়ারি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চুক্তি অনুযায়ী ৭৭৩ কোটি টাকায় দুই বছরে নির্মাণ কাজ শেষের কথা থাকলেও প্রকল্পের নকশা সংশোধন এবং সময়সীমা ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় আবার জুন ২০১৭ পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছিল। সেই সময়সীমাও গত ৩০ জুন শেষ হয়ে গেছে। এখন আবার বলা হচ্ছে এ মাসের মধ্যেই কাজ শেষ হয়ে যাবে। বিভিন্ন দফায় প্রকল্পটির সময় বাড়ার সাথে টাকার অঙ্কও বেড়েছে। ব্যয় বেড়ে ১ হাজার ২১৯ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।
সরেজমিনে পরিদর্শনকালে ফ্লাইওভারের নীচের রাস্তা নিয়ে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। মালিবাগ এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী শাহীন বলেন, এ রাস্তায় দুর্ঘটনা নিত্যদিনের ঘটনা। এমন কোনো দিন নাই যে এখানে দুর্ঘটনা ঘটে না, কেউ আহত হয় না। কিছু কিছু জায়গায় এলোপাতাড়ি রড থাকায় রিকশায় চলাচলকারী অনেক মানুষ উল্টে হাত পা ভেঙেছে। তিনি বলেন, মালিবাগ- মৌচাকের নাম শুনলে মানুষ এখন ভয় পায়। স্থানীয় এক মার্কেটের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, মানুষের জন্য আতঙ্কের এক নাম হচ্ছে মালিবাগ-মৌচাক। এই ফ্লাইওভারের কারনে বহু ব্যবসায়ীর ব্যবসা নষ্ট হয়ে গেছে। পুঁজি হারিয়ে অনেকেই বিদায় নিয়ে চলে গেছেন। এখনও যারা আছেন তারা নি:স্ব জীবন যাপন করছেন। তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা এ ফ্লাইওভার ব্যবসায়ীদের জন্য অভিশাপ।
এদিকে, ফ্লাইওভারের নির্মাণ সামগ্রী সড়ক ও পার্শ্ববর্তী ফুটপাথে রাখার কারণে সরু হয়ে গেছে রাস্তা। রড, ভিম, ঢালাই বোর্ড, লোহার এঙ্গেল, খুঁটি এমনকি সিটি কর্পোরেশনের ড্রেনের বড় বড় পাইপ রাখার কারণে রাস্তার একপাশ থেকে আরেক পাশে পথচারীরা চলাফেরা করতে পারে না। চলতে গিয়ে বাধার সম্মুখিন হচ্ছে গাড়িগুলো। ভুক্তভোগি এক গাড়ি চালক বলেন, এটা কি কোনো গাড়ি চলাচলের রাস্তা? কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল রাস্তাটিতে গর্ত হওয়ার সাথে সাথে তা ভরাট করা। কিন্তু তা করা হয়নি। এমনকি জমে থাকা পানি সরানোর জন্যও কোনো ব্যবস্থা নেই। সব মিলে বেহাল দশা। বেহাল দশার মধ্যে লাখ লাখ মানুষ ভোগান্তি পোহাচ্ছে। অন্যদিকে, এলজিইডি সূত্র জানায়, বেশ কিছুদিন ধরে এই ফ্লাইওভারের প্রকল্প পরিচালক হিসাবে সুশান্ত কুমার পালকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তবে তিনি নামমাত্র প্রকল্প পরিচালক। তার কোনো ক্ষমতা নেই। এখনও সবকিছু করেন সাবেক প্রকল্প পরিচালক নাজমুল আলম। এমনকি প্রকল্প পরিচালকের গাড়িও আছে নাজমুল আলমের দখলে। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য প্রকল্প পরিচালক সুশান্ত কুমার পালের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায় নি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।