Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৭ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামিক স্টেটের পতনের পর শুরু হবে আসল লড়াই

| প্রকাশের সময় : ২ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম


চায়না.ওআরজি.সিএন : ইরাকি সেনাবাহিনী এখন মসুল শহরের মধ্যে আটকে পড়া ইসলামিক স্টেটের (আইএস) যোদ্ধাদের পলায়ন বন্ধ করতে লড়াই করছে। এর মধ্য দিয়ে মসুলের লড়াই চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌছেছে। জানা গেছে, আইএসের অবশিষ্ট যোদ্ধারা শহরের চারটি প্রান্ত নিয়ন্ত্রণ করছে। ইরাকে তাদের স্বঘোষিত খিলাফতের এটুকুই তারা ধরে রাখতে পেরেছে। এখন বলা হচ্ছে যে, আইএসের পতনের পর আসল লড়াই শুরু হবে।
অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হচ্ছে আইএসের মসুলের ঐতিহাসিক আল নূরী মসজিদ ধ্বংসের ঘটনা। আইএস যোদ্ধাদের অধিকাংশ সিরিয়ার তাদের পতনোন্মুখ খিলাফতের রাজধানী রাক্কায় গিয়ে আশ্রয় নেয়ার আগে মসজিদটি ধ্বংস করে। এখন আইএসের অল্প কিছু ধর্মোন্মাদ যোদ্ধা শেষ লড়াইয়ের জন্য সেখানে রয়ে গেছে। এ কারণে ইরাকি সেনাবাহিনীর মসুলের অবশিষ্টাংশ অবরোধ দীর্ঘস্থায়ী রূপ নিয়েছে। বুঝে ওঠা মুশকিল যে মসুল মুক্ত করার জন্য কেন এত সময় লাগছে। মসুল পুনর্দখলের যুদ্ধে অগ্রভাগে রয়েছে ইরাকি সেনাবাহিনীর পাশ্চাত্য - প্রশিক্ষিত বিশেষ বাহিনী। মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের জঙ্গি বিমান বিরামহীন বোমা বর্ষণের মধ্য দিয়ে তাদের সমর্থন দিয়ে চলেছে। পাশ্চাত্য বোমা বর্ষণ কৌশল প্রিসিশন গাইডেড ও নির্বাচিত। তা সত্তে¡ও মসুল পুনর্দখলে ইরাক আগ্রাসনের সময়ের ‘শক অ্যান্ড অ’-র মত প্রচন্ড শক্তি ব্যবহার করে শত্রæকে ভীষণ কাবু করে ফেলার অভিযান শুরুর পর তাদের বিমান হামলায় ৫শ’রও বেশী বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে।
যদিও ইরাকি সেনাবাহিনী বেসামরিক লোকদের অবাধে বেরিয়ে যেতে দিচ্ছে, আইএসের কৌশল হচ্ছে শহরের কেন্দ্রস্থল নিয়ন্ত্রণ করা।  তার অর্থ আইএস যোদ্ধারা শহরের বিভিন্ন পকেটে জড়ো হয়ে আছে। স্বাভাবিকভাবেই, শহরকে আইএস মুক্ত করতে সময় লাগবে।
বলা হচ্ছে, কোনো পেশাদার সামরিক বাহিনীর একটি শহর জঙ্গিমুক্ত করতে ও তা নিয়ন্ত্রণে আনতে ৮ মাসের বেশী সময় লাগা উচিত নয়, বিশেষ করে একচেটিয়া বিমান সমর্থন থাকার পর।
এবং এখানে কিছু আছে, যা হচ্ছে সমন্বয়ের অভাব এবং বিভক্ত স্বার্থ। প্রত্যেকেই জানে যে একটি সত্তা হিসেবে আইএস শেষ। চার বছর ধরে গড়ে ওঠা ইসলামিক স্টেটের তার চেয়েও কম সময়ে পতন ঘটেছে।  
একটি টেকসই আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে আইএসের দিন শেষ এবং মানচিত্র থেকে তাদের খিলাফতের বিলুপ্তি সময়ের ব্যাপার মাত্র। প্রশ্ন হচ্ছে, তারপর কী হবে? ওয়াশিংটন পোস্টের বিশিষ্ট কলামিস্ট চার্লস ক্রাউটহ্যামার পরিস্থিতিকে ১৯৪৫ সালে ইউরোপের অনুরূপ বলে আখ্যায়িত করেছেন যখন নাজি মতাদর্শ ভেঙ্গে পড়ছিল এবং বিভিন্ন অগ্রসরমান শক্তি তাদের প্রভাব বিস্তার করতে চাইছিল।
ক্রাউটহ্যামার বলেন, এটা আসলে শুরুর শেষ (উইনস্টন চার্চিলের বিখ্যাত বক্তৃতা থেকে উদ্ধৃতি)। কোনো কোনো প্রেক্ষিতে এটা সত্য হলেও অন্য প্রেক্ষিতে তা তার চেয়েও জটিল।
আইএসের উত্থান ইরাকে মর্কিন আগ্রাসনের সাথে সম্পর্কিত, কিন্তু তা আগ্রাসনের সরাসরি ফল নয়। ইরাকের ধর্মনিরপেক্ষ ও কর্তৃত্ববাদী বাথ পার্টি তার সকল ত্রুটি সত্তে¡ও মধ্যপ্রাচ্যের এক বিরাট এলাকায় প্রভাব বিস্তার করেছিল।
লিবিয়া থেকে মিসর, ইরাক থেকে সিরিয়া পর্যন্ত বাথপন্থীরা সমাজতন্ত্র, আরব জাতীয়তাবাদ এবং ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের  সমন্বয় সাধন করেছিল। যাহোক, ইরাকে বাথ প্রভাব বিলুপ্ত করার প্রক্রিয়া ছিল অসৎ উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং ইরাকি সেনাবাহিনী ও আমলাতন্ত্র ভেঙ্গে দেয়ার ফলে তারা আইএসের নানা পর্যায়ে যোগদান করে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের গবেষণায় দেখা যায়, যখন অংশীদারদের বলপূর্বক বিতাড়িত করা হয়  তখন তারা আত্মগোপন করে ও সশস্ত্র বিদ্রোহে ইন্ধন যোগায়।
এখন আইএসের চরিত্র সমাধানের অপেক্ষায় থাকা এক বিতর্কের বিষয় যা সমাধানের অপেক্ষায় আছে। কেউ যদি  একে দিব্যতান্ত্রিক বিপ্লবী রাষ্ট্র হিসেবে আখ্যায়িত করে তাহলে এর পতন স্বয়ংক্রিয় ভাবে ক্ষমতা শূন্যতার সৃষ্ট করবে।
এর সাথে ভূরাজনীতির ভূমিকা যোগ করা যায়। উপসাগর পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। কাতার ও সিরিয়া নিয়ে আঞ্চলিক যুদ্ধের জোর সম্ভাবনা রয়েছে। আইএসের পতন ঘটতে থাকায় এবং রাক্কা পুনর্দলের শেষ পর্যায়ে আমরা এখন বিভিন্ন ছায়াশক্তি ও বিভিন্ন বড় শক্তির সমর্থনপুষ্ট মিলিশিয়াদের মধ্যে বহু সরাসরি লড়াই দেখতে পাচ্ছি।
উদাহরণ স্বরূপ ইরান তেহরান থেকে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত একটি স্থল সংযোগ চায়। একটি শিয়া অর্ধচন্দ্র সবসময়ই ইরানের মহাপরিকল্পনায় ছিল। অনুরূভাবে রাশিয়া একটি খন্ডিত সিরিয়া চায় যাতে সে টিকে থাকে। তাই সে চায় একটি নৌ ও বিমান ঘাঁটি এবং ভবিষ্যত প্রভাব। অন্যদিকে আমেরিকানরা কুর্দিদের জন্য একটি অঞ্চল চায় যার প্রচন্ড বিরোধী তুরস্ক।
ভূখন্ডগত সুবিধা লাভের প্রতিযোগিতার অর্থ বড় শক্তি ও তাদের প্রক্সিরা খুব ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে যার পরিণতি আরো সংঘর্ষ ও যুদ্ধ।
সম্ভবত এটাই হচ্ছে গোটা পরিস্থিতির ট্রাজেডি ও পরিহাস। আইএস ছিল এক বর্বর শাসক এবং তারা যে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা চালু করেছিল তার পতন ঘটা ছিল অনিবার্য। এখনো কোনো ভালো পরিস্থিতি বা অধিক শান্তিপূর্ণ স্থান সৃষ্টি হতে যাচ্ছে না, বরং দীর্ঘ দুর্দশার শিকার সিরীয় জনগণের আরো রক্তপাত ঘটবে।
এ আঞ্চলিক যুদ্ধের চূড়ান্ত ও সবচেয়ে বর্বর অংশ এখনো বাকি। তা বিশ^ব্যাপী জ¦ালানি সরবরাহ চেইনকে প্রভাবিত করবে যার প্রভাব প্রত্যকের উপরেই পড়বে।



 

Show all comments
  • Habibur Rahman ২ জুলাই, ২০১৭, ১০:৪৪ এএম says : 0
    সেই ঘটনা হবে অত্যন্ত জটিল ও ভয়াবহ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আইএস


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ