পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের টাকা জমার হার বিগত পাঁচ বছরে কয়েক গুণ বেড়েছে। ২০১২ সালে যেখানে টাকা জমা রাখার পরিমাণ ছিল ১৯৩০ কোটি টাকা, সেখানে ২০১৬ সালে এসে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৬০০ কোটি টাকা। এ অর্থ দেশ থেকে কীভাবে গেল তা পরিস্কার নয়। অর্থনীতিবিদ থেকে শুরু করে ব্যাংকিং খাতের ব্যক্তিবর্গ বিভিন্ন কারণ ও অনুমানের উপর ভিত্তি করে বক্তব্য দিচ্ছেন। রাজনীতিবিদরা সরাসরি একে অপরকে দোষারোপ করছেন। প্রধান রাজনৈতিক বিরোধী দল বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বলেছেন, আওয়ামী লীগ লুটপাট করে এ অর্থ সুইস ব্যাংকে পাচার করেছে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সুইস ব্যাংকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কারো টাকা নেই। বরং এ টাকা বিএনপি নেতাদের। পারস্পরিক দোষারোপের এ রাজনীতির কারণে দেখা যাবে, দেশ থেকে অর্থ পাচার এবং এর সাথে কারা জড়িত বিষয়টি আড়ালে পড়ে যাবে। অর্থ পাচারকারীরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাবে। অর্থ পাচার হোক বা জমা করা হোক, এ প্রবণতা যে দেশের অর্থনীতির জন্য কোনোভাবেই ইতিবাচক নয়, তা ব্যাখ্যা করে বলার অপেক্ষা রাখে না।
দেশ থেকে অর্থ পাচারের ঘটনা নতুন নয়। বছরের পর বছর ধরে অর্থ পাচার হচ্ছে। ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে ৪ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে। বলা যায়, এক অর্থ বছরের বাজেটের সমপরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে। বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশ থেকে যদি এত অর্থ পাচার হয় এবং বছরের পর বছর তা চলতে থাকে, তবে এ দেশের দ্রুত উন্নয়ন আশা করা বাতুলতা মাত্র। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, যখনই অর্থ পাচারের সংবাদ প্রকাশিত হয়, তখন এ নিয়ে কিছু দিন তোলপাড় চলে। তারপর থেমে যায়। অর্থ পাচারের কারণ এবং কারা কীভাবে পাচারের সাথে জড়িত, তা কার্যকরভাবে খতিয়ে দেখা হয় না, কোনো ব্যবস্থা নেয়ার কথাও শোনা যায় না। ফলে পাচারকারিরা আরও উৎসাহী হয়ে অর্থ পাচার করে এবং ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, দেশের টাকা পাচারের বিষয়টি নিয়ে যখন সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে পারস্পরিক দোষারোপ শুরু হয়, তখনই প্রকৃত ঘটনা আড়াল হয়ে যায়। পাচার রোধে যে গুরুত্ব দিয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা অপরিহার্য তা বলা হয় না। অর্থ পাচারের সাথে যেই জড়িত থাকুক না কেন, তাদের ছাড় দেয়া হবে না-এ ধরনের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায় না। অর্থনীতিবিদরা বিভিন্ন সময়ে অর্থ পাচারের বিভিন্ন কারণ উল্লেখ করেছেন। কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে, ব্যাংকিং খাতে অব্যবস্থাপনা, বিনিয়োগের উপযুক্ত পরিবেশ ও নিরাপত্তার অভাব, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, সুশাসন ইত্যাদি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদের মতে, দেশে এক ধরনের অনিশ্চয়তা রয়েছে। দুই বছর পর নির্বাচন হবে। তারপর কী হয় না হয়, দেশের অবস্থা কোন দিকে যায়-এরকম ভাবনা থেকে অনেকে টাকা পাচার করতে পারে। এছাড়া অনেকে নানা রকম দুর্নীতির মাধ্যমে অসৎ উপায়ে অর্থ উপার্জন করছে। এসব টাকা দেশের ব্যাংকে রাখলে জবাবদিহির মধ্যে পড়তে হতে পারে, এমন আশঙ্কায় দেশের বাইরে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। উল্লেখ করা প্রয়োজন, সুইস ব্যাংকে গ্রাহকের তথ্য গোপন রাখার কারণে সেখানের ব্যাংকগুলো অবৈধ অর্থ রাখার নিরাপদ জায়গা হিসেবে পরিচিত। তবে উপযুক্ত প্রমাণসহ কোনো দেশ তথ্য চাইলে ক্ষেত্রবিশেষে দেশটি সহায়তা করে। সার্বিকভাবে গ্রাহকের তথ্য ব্যাংকগুলো গোপন রাখে। এ কারণে পাচারকারিদের অর্থ জমা রাখার প্রথম পছন্দ সুইস ব্যাংক। বিগত এক দশকে দেশে অনেক নব্য ধনী ব্যক্তির সৃষ্টি হয়েছে। এক হিসেবে দেখানো হয়েছে, দেশে এখন প্রায় ৫০ হাজার কোটিপতি রয়েছে। এদের বেশিরভাগই কোনো না কোনোভাবে ক্ষমতার সাথে যুক্ত। এদের মধ্যে কালো টাকার মালিক থাকা অস্বাভাবিক নয়। সরকারের উচিত হবে যথাযথ অনুসন্ধানের মাধ্যমে এদের অর্থের উৎস সম্পর্কে খোঁজ নেয়া।
বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশে সুশাসন, সুগঠিত আর্থিক ব্যবস্থাপনা, সুষ্ঠু ও স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ সর্বোপরি বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশের নিশ্চয়তা থাকলে অর্থ পাচার অনেকাংশে হ্রাস করা সম্ভব। ইতোমধ্যে এটা পরিলক্ষিত হয়েছে যে, দেশের আর্থিক খাতে এক ধরনের বিশৃঙ্খলা রয়েছে। ব্যাংকিং খাতে এন্তার দুর্নীতি ও লুটপাটের কথা সকলের জানা। এক ধরনের অস্থিরতা চলছে এ খাতে। শুধু আর্থিক খাতে নয়, প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি, ঘুষ, কমিশন বাণিজ্য ও বড় বড় প্রকল্পে অর্থ লোপাটের মতো ঘটনা ঘটছে। আমদানি-রপ্তানিতেও মন্দাবস্থা বিরাজ করছে। এ পরিস্থিতি অর্থ পাচারের সুযোগ সৃষ্টি করে দিচ্ছে। যারা অঢেল অর্থের মালিক তারা এখন দেশের বাইরে সম্পদ ও সম্পত্তি করতে আগ্রহী বেশি। ইতোমধ্যে মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে তারা এলাকাভিত্তিক আবাসন ও ব্যবসা-বাণিজ্য গড়ে তুলেছে। দেশের এসব মানুষ কেন দেশের বাইরে বিনিয়োগ ও স্থায়ীভাবে বসবাসের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা গভীরভাবে খতিয়ে দেখতে হবে। দেশে থেকে যারা এখন অর্থ পাচার করছে, তাদের খোঁজখবর নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সুইস ব্যাংকে যেসব ব্যক্তির অর্থ জমা আছে, তাদের তথ্য জানতে সুইস সরকারের সাথে যোগাযোগ করার উদ্যোগ নিতে হবে। অর্থ পাচার নিয়ে রাজনীতি না করে তা ঠেকানোর দিকে মনোযোগ দিতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারের দায়িত্ব বেশি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।