Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯ আশ্বিন ১৪৩১, ২০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

মিডিয়ার কারসাজি কালোকে সাদা আর সাদাকে কালো করা

| প্রকাশের সময় : ১ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আফতাব চৌধুরী : আজকের দিনে মানতে হবে যে, মিডিয়া এক গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র। এই মিডিয়া কালো জিনিসকে সাদা করতে পারে, দিনকে রাত বানাতে পারে রাতকে পারে দিন বানাতে, হিরোকে ভিলেন বানাতে পারে এবং ভিলেনকে হিরো বানাতে পারে। এই মিডিয়া সাদা জিনিসকে পারে কালো করতে অনেক কিছু করতে পারে। আজকের দিনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনেক উন্নত।
মিডিয়াকে ৪টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে- ১. প্রিন্ট মিডিয়া(Print Media) ২. অডিও মিডিয়া (Audio Media) ৩. ভিডিও মিডিয়া (Video Media) ৪. কম্পিউটার মিডিয়া বা ইনফরমেশন টেকনলজি (Computer Media or I.T)। প্রিন্ট মিডিয়াকে দু’ভাগে ভাগ হয়েছে। (১) নন-পিরিওডিকেল প্রিন্ট মিডিয়া (Non-periodical Print Media) বই, প্রবন্ধ, সাহিত্য ইত্যাদি। (২) পিরিওডিকেল প্রিন্ট মিডিয়া (Periodical Print Media) নিউজ পেপার, নিউজ লেটার- যেটা ছাপানো হয় প্রতিদিনে, প্রতিপক্ষে, প্রতিমাসে, প্রতি দুইমাসে, প্রতিবছরে ইত্যাদি। অডিও মিডিয়াকে আমরা বিভিন্নভাবে পেয়ে থাকি যেমন অডিও টেপ, ওয়াকমেন, রেডিও এর মাধ্যমে। ভিডিও মিডিয়াকে আমরা পেয়ে থাকি যেমন, ভিসিডি (VCD) HD DVD, Telivision, Telivision News Channel, এর মাধ্যমে। কম্পিউটার মিডিয়াকে (Computer Medio) বা ((Information Technology), আমরা পেয়ে থাকি বিভিন্নভাবে। যেমন-Website, Google, Whats app, Tweeter, Mobile etc.
বর্তমানে ঝপরবহঃরভরপ জবংবধৎপয চলছে কোন মিডিয়ায় মানুষের মনে রাখার ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি। একজন মানুষ প্রিন্ট মিডিয়ার কোন জিনিস যখন পড়ে, আনুমানিক তার কয়েক শতাংশ মনে থাকে। একজন মানুষ যখন কিছু শোনে সেটার আনুমানিক ১০ শতাংশ মনে থাকে। একজন মানুষ যখন কিছু দেখে সেটার আনুমানিক ৩০ শতাংশ মনে থাকে। আর একজন মানুষ যখন কিছু দেখে ও শোনে সেটার আনুমানিক ৫০ শতাংশ মনে থাকে। মনে রাখার দিক দিয়ে ভিডিও মিডিয়া সবচেয়ে ভাল।
বর্তমানে আন্তর্জাতিক মিডিয়া (ওহঃবৎহধঃরড়হধষ গবফরধ) ইসলামকে এমনভাবে তুলে ধরছে যেন এটা একটা সন্ত্রাসের ধর্ম। এটা এমন ধর্ম যেটা এই পৃথিবীতে শান্তি চায় না। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা মুসলমানরা এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছি না। এই মিডিয়া ইসলামকে বিভিন্ন কলাকৌশলের মাধ্যমে সম্পূর্ণভাবে অপব্যাখ্যামূলকভাবে তুলে ধরছে। এই মিডিয়া কিছু কুলাঙ্গার মুসলিমকে তুলে ধরছে আর বলছে, এই হল মুসলিমদের দৃষ্টান্ত, তারা এমনটা বলছে, এই মুসলিম ধর্ম অন্যায় কাজকে উৎসাহ দেয়, যেটা মানবতার বিরুদ্ধে।
আন্তর্জাতিক মিডিয়া বলছে, ইসলামিক মাদরাসা বন্ধ করে দেওয়া উচিত, কারণ তারা মানুষকে বদলে ফেলে সন্ত্রাসে। এরা এই পৃথিবীর শান্তিকে নষ্ট করে দেয়। আলহামদুলিল্লাহ, আমরা এমন একজনকে দেখতে পাই না যারা মাদরাসা থেকে পাশ করে এই পৃথিবীর শান্তিতে ব্যাঘাত ঘটাতে চায়। এর মানে এই নয় যে, মাদরাসা থেকে পাশ করে যারা বের হয় তারা অন্যায় কাজ করে না। সব মিলিয়ে তাদের অন্যায় কাজ হয়তো ০.১ শতাংশ হতে পারে। পৃথিবীতে হিটলার প্রায় ৬০ লক্ষ মানুষকে হত্যা করেছে। হিটলার তো কোন মাদরাসা থেকে পাশ করেনি। একজন মুসলমানকে দেখান যে, হাজার হাজার লোককে হত্যা করেছে। তারপর ইতিহাস ঘাটেন, চিনের কুখ্যাত ‘মাও সি সাং’ তিন কোটি লোককে হত্যা করেছে। মাও সি সাং কোন মাদরাসা থেকে পাশ করেনি। তাদের পরিচয় জানার চেষ্টা করেন। তাদের মধ্যে ০.১ শতাংশও পাবেন না যারা মাদরাসা থেকে পাশ করেছেন, তারা পড়েছিল বিভিন্ন ইউনিভার্সিটিতে, মিডিয়া কিন্তু সেভাবে সত্যি সত্যি তথ্য ও সংবাদ নিরপেক্ষভাবে প্রচার করতে সাহস রাখে না।
কেউ যদি ইসলামকে বিচার করতে চায়, তাহলে কুলাঙ্গার মুসলিমরা কী করে বা মুসলিম সমাজ কী করে সেটা দিয়ে বিচার করবেন না। ইসলাম ধর্মকে বিচার করতে হলে দেখতে হবে ইসলামী ধর্মগ্রন্থকে। ইসলাম ধর্মের ধর্মগ্রন্থ হল পবিত্র কুরআন এবং নবীজি (স.)এর হাদিস। যেমন, একটি গাড়িতে যদি এমন এক জন চালক বসে যে ভালো করে গাড়ি চালাতে পারে না, সে চালক যদি গাড়ি নিয়ে দুর্ঘটনা ঘটায়, আপনারা কাকে দোষ দেবেন? গাড়িকে না ড্রাইভারকে? নিশ্চয়ই ড্রাইভারকে। একইভাবে ইসলামকে বিচার করতে হলে কুলাঙ্গার মুসলিমরা কী করে সেটা দিয়ে বিচার করবেন না, এখানে বিচার করবেন সেরা মুসলিমদের দিয়ে।
ইসলামের বিরুদ্ধে অপবাদ দিতে মিডিয়া যে কৌশল অবলম্বন করে সেটা হল প্রসঙ্গ ছাড়া পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন উদ্ধৃত করা। আর সেটা হল পবিত্র কুরআনের অপব্যাখ্যা। মিডিয়া প্রসঙ্গ ছাড়া পবিত্র কুরআন বা হাদিসের উদ্ধৃতি দেয়। এক আয়াতের ‘শানে নুজুল’ হল যে, মক্কায় মুশরীকদের সাথে মুসলমানদের একটা শান্তিচুক্তি হয়েছিল। পরে মক্কার মুশরিকরা এই শান্তিচুক্তির শর্ত ভেঙ্গে দিলে আল্লাহপাক পবিত্র কুরআনের আয়াত নাজিল করলেন এবং বললেন মুসলিমদের উদ্দেশ্যে যে, যুদ্ধক্ষেত্রে তোমরা ভয় পেয়ো না, যখন তোমরা তোমাদের শত্রæদের দেখতে পাবে তখনই তোমরা তাকে মেরে ফেলবে। এখানে যুদ্ধকালীন কথা বলা হয়েছে। আমেরিকার সঙ্গে রাশিয়ার যুদ্ধ হলে আমেরিকার ‘আর্মি জেনারেল’ তাদের সৈন্যদের মনোবল বাড়ানোর জন্য এই কথাই বলতেন!
মিডিয়া আর যে কৌশল অবলম্বন করে তা হল ইসলামের উদ্ধৃতির ভুল ব্যাখ্যা করা, হোক সেটা কুরআন থেকে বা হাদিস থেকে। মিডিয়ার আরেকটি কৌশল হল, ইসলাম সম্পর্কে এমন অপবাদ দেয়া যেটা ইসলামে উল্লেখ নেই। মিডিয়া অপর যে কৌশল অবলম্বন করে তা হল ইসলামের আলোকে সঠিক ব্যাখ্যা দেয় কিন্তু সেটাকে আলাদা দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে। তারা বলে যে ইসলাম মানব জাতির জন্য একটা সমস্যা। প্রকৃত পক্ষে ইসলাম কোন সমস্যা নয় বরং ইসলাম মানব জাতির সমস্যার সমাধান।
আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় দেখি তারা মুসলমানদের বলছে, মৌলবাদী এবং সন্ত্রাসী। মৌলবাদী শব্দের অর্থ হল মূলনীতি মেনে চলা। উদাহরণস্বরূপ কোন লোক যদি হতে চায় বিজ্ঞানী তাহলে তাকে বিজ্ঞানের মূলনীতি মানতে হবে। যদি সেই ব্যক্তি বিজ্ঞানের ব্যাপারে মৌলবাদী না হয় তাহলে ভালো বিজ্ঞানী হতে পারবে না। আমরা সব মৌলবাদীকে এক মাপকাঠি দিয়ে মাপতে পারব না। মৌলবাদী যে, সে যেক্ষেত্রে মৌলবাদী সেটা দিয়ে মাপতে হবে। যেমন ধরুণ একজন লোক মৌলবাদী ডাকাত। সেই ব্যক্তি ডাকাতির ব্যাপারে মৌলবাদী, সে সমাজের জন্য ক্ষতিকর। অন্যদিকে একজন লোক মৌলবাদী ডাক্তার। সেই লোক হাজারও মানুষের জীবন রক্ষা করে, সেই ব্যক্তি সমাজের জন্য উপকারী। ঙীভড়ৎফ উরপঃরড়হধৎু তে আছে মৌলবাদী শব্দ প্রথমবার ব্যবহার করা হয়েছিল আমেরিকায়, চৎড়ঃবংঃধহঃ ঈযৎরংঃধহ-দের বুঝাতে। তারা চার্চ এর বিরোধিতা করেছিল। তখন খ্রিস্টান চার্চ বিশ্বাস করত বাইবেলের আদেশ ঈশ্বর প্রদত্ত। তখন চৎড়ঃবংঃধহঃ ঈযৎরংঃধহ প্রতিবাদ করেছিল বাইবেলের আদেশ ঈশ্বর প্রদত্ত নয় বরং বাইবেলের প্রতিটা শব্দ এসেছে ঈশ্বরের কাছ থেকে। যদি কেউ প্রমাণ করতে পারেন বাইবেলের আদেশ ঈশ্বর প্রদত্ত তাহলে এই আন্দোলন ভালো আন্দোলন, আর যদি কেউ প্রমাণ করতে না পারেন বাইবেলের আদেশ ঈশ্বর প্রদত্ত নয় তাহলে এই আন্দোলন ভালো নয়। ঙীভড়ৎফ উরপঃরড়হধৎু-তে আছে, মৌলবাদ হল, যে ব্যক্তি প্রাচীন কোন ধর্মের নিয়ম কঠোরভাবে অনুসরণ করে মেনে চলে। এখানে ইসলামকে মৌলবাদের সাথে জুড়ে দেওয়া হয়েছে।
এখন মুসলিমদের বলা হচ্ছে সন্ত্রাসী। সন্ত্রাসী শব্দের অর্থ, যে লোক ত্রাস ছড়িয়ে দেয়। যখন কোন ডাকাত পুলিশকে দেখতে পায় তখন সে ভয় পেয়ে যায়। তাই সেই ডাকাতের জন্য পুলিশ হল সন্ত্রাসী। যখন সমাজের অন্যায়কারী সমাজের ন্যায়কারীকে দেখতে পাবে তখন সেই অন্যায়কারী ভয় পেয়ে যাবে, তখন সেই অন্যায়কারীর কাছে সমাজের ন্যায়কারী সন্ত্রাসী। আসলে বর্তমানে সন্ত্রাসী দিয়ে যেটা বোঝানো হয় সেটা হল সাধারণ মানুষকে সন্ত্রস্ত করা। এতে বলা যায়, কোন মুসলিম সাধারণ মানুষকে সন্ত্রস্ত করা যাবে না। শুধু সন্ত্রস্ত করা যায় অন্যায়কারীকে। প্রায় সময় দেখা যায়, একটা মানুষের একটা কাজকে দুটা আলাদা আলাদাভাবে লেভেল দেওয়া হয়। যেমন ভারত স্বাধীনতার আগে বৃটিশরা ভারতীয়দের বলত সন্ত্রাসী। তারা নেতাজি সুভাষ চন্দ্রকে বলত এক নম্বর সন্ত্রাসী, কিন্তু আমরা তাকে বলি দেশপ্রেমিক। আমেরিকা স্বাধীনতার আগে বৃটিশরা আমেরিকানদের বলত সন্ত্রাসী। তারা জর্জ ওয়াশিংটন, বেঞ্জামিন ফ্রাংকলিনকে বলত সন্ত্রাসী। পরে আমেরিকা যখন বৃটিশদের হাত থেকে মুক্তি পেল তখন আমেরিকার প্রথম রাষ্ট্রপতি হলেন জর্জ ওয়াশিংটন।
বর্তমানে ইসলামের যে শব্দ নিয়ে বেশি ভুল ধারণা হচ্ছে সেটা হল, জিহাদ। জিহাদ শব্দ এসেছে আরবি শব্দ জাহাদ থেকে। যার অর্থ চেষ্টা বা সংগ্রাম করা। ইসলামে এটার অর্থ সমাজের উন্নতির জন্য চেষ্টা ও সংগ্রাম করা, এর অর্থ যুদ্ধ ক্ষেত্রে আত্মরক্ষার জন্য চেষ্টা ও সংগ্রাম করা আরেকটি অর্থ অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে চেষ্টা ও সংগ্রাম করা। যদি কোন ছাত্র পরীক্ষা পাশ করার জন্য চেষ্টা ও সংগ্রাম করে যায় তাহলে সে জিহাদ করছে। জিহাদ এক এক সময় এক এক অর্থে ব্যবহৃত হয়। একবার নবীজি (স.)এর স্ত্রী হযরত আয়শা (রা.) বললেন, আমি আপনার সাথে জিহাদে যেতে চাই অর্থাৎ যুদ্ধে যেতে চাই। নবীজি বললেন, তোমার জন্য সঠিক জিহাদ হল হজ্জ পালন করা। অনেক অমুসলিম বা মিডিয়া বলে থাকে জিহাদ হল মুসলিমদের পবিত্র যুদ্ধ। এই পবিত্র যুদ্ধের আরবি হল, ‘হরভূম মোক্কাদাসা’ আর এই হরভূম মোক্কাদাসা শব্দটা কুরআন শরীফের কোন জায়গায় উল্লেখ নেই, এমনকি নবী (স.)এর হাদিস শরীফেও নেই। সবসময় বলা হয়েছে, জিহাদ কর। এই পবিত্র যুদ্ধ শব্দটা প্রথমবার ব্যবহার করা হয়েছিল ‘ক্রসেডারদের’ বুঝাতে। যখন এই ক্রসেডাররা পবিত্র যুদ্ধের নামে হাজার হাজার মুসলিমকে হত্যা করেছিল। এখন পবিত্র যুদ্ধ ব্যবহার করা হচ্ছে মুসলমানদের উদ্দেশ্যে। এই হল মিডিয়া। প্রথমে মৌলবাদী বলে বুঝাত খ্রিস্টানদের এখন বুঝায় মুসলিমদের। এই মিডিয়া প্রথমে পবিত্র যুদ্ধ বুঝাত খ্রিস্টানদের, এখন বুঝায় মুসলিমদের।
আজকের দিনে মিডিয়া বলছে, মুসলিমরা আত্মঘাতী বোমা ঝঁপরফব ইড়সনরহম হামলা করে নিরীহ লোককে হত্যা করছে। আমেরিকার শিকাগো ইউনিভার্সিটির প্রফেসর রবার্ট পেইপ তাঁর বই ‘উুরহম ঃড় রিহ’এ লিখেছেন আত্মঘাতী বোমা হামলার ওপর। তিনি বলেছেন, ইসলামে আত্মঘাতী বোমা হামলা নেই। প্রথমে আত্মঘাতী বোমা হামলা যারা করেছিল তারা হল তামিল টাইগার। পরবর্তীতে শুরু করল ‘মার্কসবাদী’ আর ‘লেলিনবাদীরা’। রবার্ট পেইপ লিখেছেন যে, ইরাকে আমেরিকানরা আসার আগে ‘আত্মঘাতী বোমা’ হামলা ছিল না, সেখানে আমেরিকানরা আসার পর ‘আত্মঘাতী বোমা’ হামলা শুরু হয়ে গেল। আমরা জানি ইংল্যান্ডে ‘আই আর এ’ সমস্যা। এটাকে বলা যেতে পারে ‘ক্যাথলিক টেররিজম’ কিন্তু তারা ‘ক্যাথলিকদের টেররিজম’ বলে না, যারা কয়েক হাজার লোককে হত্যা করেছিল। যদি কোন মুসলিম জড়িত থাকেন তাহলে বলা হয় ‘ইসলামিক টেররিজম’। অমুসলিম জড়িত থাকলে এলাকার কথা বলে, কিন্তু ধর্মের কথা বলে না। মিডিয়া এভাবে ভুল প্রচার করে থাকে।
ওকলাহোম বোমা বিস্ফোরণ ঘটেছিল ১৯৯৫ সালে। সেখানে বোমা ভর্তি একটি ট্রাক, ওকলাহোমা ফেডারেল ভবনে আঘাত করে ১৬৬ জন মানুষকে মেরেছিল এবং আহত হয়েছিল আরো কয়েক শত মানুষ। প্রথমে মিডিয়া বলেছিল, এটা হল মধ্যেপ্রাচ্যের ষড়যন্ত্র। পরে জানা গেল, সেই কাজ করেছিল দুটি উগ্রপন্থী খ্রিস্টান দল টিমেথি এবং টেরি। তারপর থেকে মিডিয়া এই খবরটা বন্ধ করে দিল। এভাবে মিডিয়া খেলা করে থাকে।
একটা বই লিখেছেন রামকৃষ্ণ রাও, আমাদের নবীজী (স.)এর জীবনীর ওপর। তিনি লিখেছেন, নবী (স.)এর জীবদ্দশায় যতগুলো যুদ্ধ হয়েছিল, তাতে ২২ বছরে তাঁর হিসাব মতে মাত্র ১০১৮ জন মানুষ মারা যায়। অথচ প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ২ কোটি মানুষ মারা যায়, ১ কোটি সৈন্য এবং ১ কোটি সাধারণ মানুষ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ২ কোটি মানুষ মারা যায় আর সাড়ে তিন কোটি মানুষ আহত হয়।
একবার একটি আর্টিকেল চষধরহ ঃৎঁঃয সধমধুরহব-এ ছাপা হয়েছিল ১৯৯৬ সালে। একটা জরিপ চালানো হয়েছিল ১৯৩৪ থেকে ১৯৮৪ সালের মধ্যে মোট ৫০ বছরে প্রধান ধর্মের অনুসারী বৃদ্ধি নিয়ে। এই ৫০ বছরে যে ধর্মের অনুসারী সবচেয়ে বেশি, সেটা হল ইসলাম। ইসলাম ধর্ম বেড়েছে ২৩৫ শতাংশ এবং খ্রিস্টান ধর্ম বেড়েছে মাত্র ৪৭ শতাংশ। এই ৫০ বছরে ধর্মের নামে কী যুদ্ধ হয়েছিল যার জন্য হাজার হাজার মানুষ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে।
৯/১১ হামলার পর আমেরিকায় সাত আট মাসের মধ্যে ৩৪,০০০ মানুষ ইসলাম কবুল করেছেন। ইউরোপে প্রায় ২০,০০০ মানুষ ইসলাম কবুল করেছেন। ৯/১০ হামলার পর আমেরিকায় প্রায় ৭৫ জন প্রফেসার ও বৈজ্ঞানিক বলেছেন যে এই হামলা ভিতরের হামলা। একজন প্রফেসর স্টিভ জোনস বলেছেন, আমি বিশ্বাস করি না যে কিছু লোক আফগানিস্তান থেকে এসেছেন এবং ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে হামলা করেছেন, এটা একবারে অসম্ভব। হোক সেটা ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার বা পেন্টাগন এগুলোর বাইরে কয়েক হাজার সিসি ক্যামেরা যেখানে একটি পাখিরও নজর এড়িয়ে উড়া সম্ভব নয়, সেখানে একটি প্লেইন এসে সোজা আঘাত করল এবং বিল্ডিং জ্বালিয়ে নিচ দিক দিয়ে পড়ল কিভাবে। এটা সম্পূর্ণ পরিষ্কার যে ভেতরের দিকে বোমা বিস্ফোরণ করা হয়েছে। তারপর ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার এর কনস্ট্রাকসন কোম্পানি বলেছে, এটা অসম্ভব যে একটা প্লেইন আঘাত করল আর বিল্ডিংটি নিচের দিকে পড়ে গেল। এটা পরিষ্কার যে ভিতরে বোমা ফিটিং ছিল এবং বলা যায় যে এটা ভিতরের হামলা।
৯/১১ হামলার পর মিডিয়া বলেছে, তারা সিআইএ-এর নিকট থেকে রিপোর্ট পেয়েছে যে তারা একটা পাসপোর্ট পেয়েছে। আর এই পাসপোর্ট নাকি এক আরব শেখের। যা পড়েছিল ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের ভিতরে। তারা প্লেইনে ওঠার আগের দিন মদের দোকানে গিয়েছে এবং মদ খেয়েছে। সিআইএ বলেছে, এখন থেকে আমেরিকার সৈন্যদের ইউনিফর্ম বানানো হবে সেই পাসপোর্ট দিয়ে। চিন্তা করুন ‘ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে’ ২০০০০ঈ তাপমাত্রা। সেখানে সব পুড়ে গেছে, শুধু পাসপোর্ট থেকে গেছে। সেই আরব লোকেরা বুঝি পরের দিন মারা যাবে এবং তারা সকলেই সেই কথা জানে, তারপর মদের দোকানে গিয়েছে এবং মদ খেয়েছে। এটা কি পরিষ্কার মুসলিমদের বিরুদ্ধে অপবাদ দেওয়া নয়?
তারপর আমেরিকার শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় একটি সার্ভে করেছিল যে কাকে এক নম্বর সন্ত্রাসী মনে করা যায়। এতে একনম্বর ওসামা বিন লাদেন, ২য় সাদ্দাম হুসেন এবং ৩য় নম্বর জর্জ বুশ বলে মন্তব্য করা হয়। তারপর উত্তর এলো ৭৮ শতাংশের মতে জর্জ বুশ একনম্বর সন্ত্রাসী, জর্জ বুশ নিজেই এই কাজ করেছে।
১৯৭৯ সালে ১৬ এপ্রিলের কথা যেটা ছাপানো হয়েছিল টাইমস অব ইন্ডিয়ায়, যে বিগত দেড়শত বছর অর্থাৎ ১৮০০ থেকে ১৯৫০ সালের মধ্যে ইসলামের বিরুদ্ধে ৬০ হাজারও বেশি বই লেখা হয়েছে। গড়ে একটি বই প্রতিদিন ইসলামের বিরুদ্ধে এবং নবীজি (স.)এর বিরুদ্ধে লেখা হয়েছে। আর ৯/১১ হামলার পর ইসলামের বিরুদ্ধে লেখার প্রবণতা আরও বেড়ে গেছে। আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআনে চারটি জায়গায় উল্লেখ করেছেন যে, ‘আল্লাহ তাঁর পথপ্রদর্শক হিসাবে নবী পাঠিয়েছেন সত্যের দ্বীনসহ যাতে এই দ্বীন অন্যান্য সব ধর্মের ওপর অবস্থান করে।’ আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআনে অন্য জায়গায় বলেছেন, ‘এবং যখন সত্য এসে মিথ্যার সামনে দাঁড়ায়, তখন মিথ্যা বিলুপ্ত হয়ে যায়, কারণ মিথ্যা প্রকৃতগত বিলুপ্ত হবার জন্যই’।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মিডিয়া


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ