Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গো-রক্ষার নামে আইন হাতে তুলে নেয়ার অধিকার কারো নেই : নরেন্দ্র মোদি

| প্রকাশের সময় : ৩০ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : গরু রক্ষার নামে মানুষ হত্যা করা গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি গতকাল দু’দিনের গুজরাট সফরে গিয়ে এক সমাবেশে ওই মন্তব্য করেন। প্রধানমন্ত্রী গতকাল গুজরাটের আহমেদাবাদে সবরমতী আশ্রমে যান। তিনি সেখানে আশ্রমের শতবর্ষ পূর্তি অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
এরপর তিনি গরু রক্ষার নামে উত্তেজিত জনতার সহিংসতা প্রসঙ্গে বলেন, ‘গো-সেবা নিয়ে মহাত্মা গান্ধী ও বিনোবাভাবের জীবন থেকে শিক্ষা নেয়া উচিত। গরু রক্ষার নামে সহিংসতা কেন? গো-সেবাই গো-ভক্তি। গরু রক্ষার নামে সহিংসতা ঠিক নয়। দেশকে অহিংসার পথে চলতে হবে। গো-ভক্তির নামে মানুষ হত্যা গ্রহণযোগ্য নয়’।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যদি কোনো ব্যক্তি ভুল করে থাকে তাহলে আইন তার নিজেস্ব পথে কাজ করবে। কাউকেই আইন হাতে তুলে নেয়ার প্রয়োজন নেই। সহিংসতা সমস্যার সমাধান নয়’।
উত্তেজিত জনতার সহিংসতাকে ভুল বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রোগীর মৃত্যুর পরে হাসপাতালে ভাঙচুর করা অন্যায়। এ ব্যাপারে চিকিৎসকের কোনো দোষ নেই। কারণ, উনি আপনার পরিবারের সদস্যকে সেবা দেয়া সত্তে¡ও ওই সদস্যকে বাঁচাতে পারেননি। কিন্তু তা সত্তে¡ও যদি আপনার কোনো অভিযোগ থাকে তাহলে আইনি উপায় রয়েছে’।
তিনি বলেন, ‘সহিংসতা সমস্যার কোনো সমাধান নয়। আমাদের দেশ অহিংসা এবং গান্ধীর দেশ। এটা অহিংসার জমিন। মহাত্মা গান্ধীর ভূমি। একথা আমরা কেন ভুলে যাচ্ছি? যদি কেউ অন্যায় করে থাকে তাহলে আইন তার বিরুদ্ধে কাজ করবে। দেশের কোনো ব্যক্তিরই আইন হাতে তুলে নেয়ার অধিকার নেই’।
গত বছর আগস্টেও প্রধানমন্ত্রী এ সংক্রান্ত এক বার্তায় বলেছিলেন, ‘গো রক্ষার নামে কিছু লোক যখন দোকান খুলে বসে তখন আমার রাগ হয়। রাতে এরা সমাজবিরোধী কাজকর্ম করে। আর দিনের বেলা গো-রক্ষক সেজে ঘুরে বেড়ায়’। কিন্তু তার পরেও অবস্থার বিশেষ পরিবর্তন হয়নি। বরং এ ধরনের ঘটনা পরপর বেড়েই চলেছে।
স¤প্রতি ঈদের বাজার নিয়ে বাসায় ফেরার পথে হাফেজ জুনাইদ খান (১৬) নামে বিজেপিশাসিত হরিয়ানার এক তরুণ গণপিটুনিসহ ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছে। তাকে ট্রেন থেকে ছুঁড়ে ফেলে দেয় হিন্দুত্ববাদী দুর্বৃত্তরা। নির্মম ওই হত্যাকাÐের কথা প্রকাশ্যে আসতেই দেশ জুড়ে এ নিয়ে প্রতিবাদ আন্দোলন শুরু হয়েছে। নারকীয় ওই ঘটনার প্রতিবাদে ভারতের একাধিক শহরে পালিত হয়েছে ‘নট ইন মাই নেম’ প্রতিবাদ কর্মসূচি।
দেশে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনায় কথিত গো-রক্ষকের গণপিটুনিতে স¤প্রতি বেশ কিছু মানুষ নিহত এবং আহত হয়েছে। প্রত্যেক ক্ষেত্রেই সংখ্যালঘু মুসলিমরা ধর্মান্ধদের টার্গেটের শিকার হয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য প্রসঙ্গে কাশ্মিরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, মহাশয় খুব ভালো কথা বলেছেন। আমি আশা করছি যারা এ ধরনের ন্যক্করজনক কাজ করছে তারা আপনার কথা মানবে এবং সেই অনুসারে আচরণ করবে। সূত্র : ওয়েবসাইট।

 

৩ দিনের সফরে ইসরাইলে যাচ্ছেন
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে ইহুদিবাদী ইসরাইল সফর করবেন বলে কথা রয়েছে। তিনি ইসরাইল সফরকারী ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হবেন।
নয়াদিল্লিতে ইসরাইলি দূতাবাসের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ওই সফরের সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইসরাইলের প্রেসিডেন্ট রুভেন রিভলিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন এবং ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক ও নৈশভোজে অংশ নেবেন।
এ সময় সেখানে উচ্চপর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে এবং অন্যান্য বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকবে যাতে ভারত-ইসরাইল সম্পর্ককে সংযুক্ত করে। কোনো ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর ইসরাইলে এই বিশেষ সফর ভারত ও ইসরাইলের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ২৫ বছরের পটভূমি হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গত ২৫ জুন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটার বার্তায় ওই সফরের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, আগামী সপ্তাহে ভারতের প্রধানমন্ত্রী আমার বন্ধু নরেন্দ্র মোদি ইসরাইলে আসবেন। এটি ইসরাইলে ঐতিহাসিক সফর।
অন্যদিকে, ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন, সফরের সময় পারস্পারিক কল্যাণ সংশ্লিষ্ট সমস্ত ইস্যু নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এবং নেতানিয়াহুর মধ্যে আলোচনা হবে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী মোদি সেদেশের প্রেসিডেন্ট রিভলিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
ওই মুখপাত্র বলেন, মোদি সেখানে ভারতীয় সৈনিকদের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেয়াসহ ভারতীয় স¤প্রদায়ের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখবেন। এছাড়া মুম্বাইয়ে ২৬/১১ সন্ত্রাসী হামলায় রক্ষা পাওয়া ইসরাইলি এক শিশুর সঙ্গে দেখা করবেন। সেসময় ওই শিশুর বয়স ২ মাস ছিল। ২০০৮ সালের মুম্বাইয়ের নরিম্যান হাউসে সন্ত্রাসী হামলায় মা-বাবাসহ ৬ জন নিহত হয়েছিলেন। ভারতীয় এক নার্স ওই শিশুর জীবন বাঁচাতে সেখান থেকে বেরিয়ে পড়তে সক্ষম হয়েছিলেন। এর আগে গত ২৮ ফেব্রæয়ারি ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল দু’দিনের ইসরাইল সফরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ইহুদিবাদি ইসরাইল সফরের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে আসেন। নরেন্দ্র মোদিই ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী যিনি ইহুদিবাদী ইসরাইল সফরে যাচ্ছেন। চলতি ২০১৭ সালে ভারত ও ইসরাইলের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ২৫ বছর পালন করা হচ্ছে। ভারত এবং ইসরাইলের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রতিরক্ষা এবং কৃষিক্ষেত্র খুব গুরুত্বপূর্ণ। সা¤প্রতিক বছরগুলোতে ভারত ও ইসরাইলের মধ্যে শিক্ষা ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারত ১৯৫০ সালের ১৯ ডিসেম্বর ইহুদিবাদী ইসরাইলকে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। পরে ইসরাইল মুম্বাইতে নিজেদের একটি অভিবাসন দফতর চালু করে। দু’দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন হয় ১৯৯২ সালে। ওই বছরেই দু’দেশ পরস্পরের মধ্যে নিজেদের দূতাবাস স্থাপন করে। ২০১৫ সালের অক্টোবরে ইসরাইল সফর করেন ভারতের প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখোপাধ্যায়। ২০১৫ সালের ফেব্রæয়ারিতে ভারত সফরে এসেছিলেন সেদেশের প্রেসিডেন্ট।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নরেন্দ্র মোদি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ