পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গোপালগঞ্জের কাশিয়ানির ওরাকান্দিতে বলেন, ভারত-বাংলাদেশ অস্থিরতা, সন্ত্রাস ও অশান্তির পরিবর্তে স্থিতিশীলতা, প্রেম ও শান্তির পৃথিবী গড়তে চায়। উভয় দেশই নিজেদের বিকাশ ও নিজেদের প্রগতির চেয়ে সমগ্র বিশ্বের উন্নতি দেখতে চায়। গতকাল তিনি সাতক্ষীরার শ্যামনগরের যশোরেশ্বরী মন্দির ও গোপালগঞ্জের কাশিয়ানির ওড়াকান্দি ঠাকুরবাড়ি হরি মন্দিরে পূজা অর্চনা করেন। আমাদের সাতক্ষীরা ও গোপালগঞ্জ সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্যে এ প্রতিবেদন-
আবদুল ওয়াজেদ কচি স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা জানান, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ সফররত ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সাতক্ষীরার শ্যামনগরের যশোরেশ্বরী মন্দিরে পূজা দিয়েছেন। এ উপলক্ষে তাকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি গতকাল সকাল ১০টা ১২ মিনিটে শ্যামনগরের ঈশ্বরীপুর এ সোবহান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে পৌঁছায়। পরে জিপযোগে মন্দিরে পৌঁছান তিনি। গাড়ি থেকে নেমে পায়ে হেঁটে মন্দিরে প্রবেশ করলে উলুর ধ্বনি ও শংখ ধ্বনিতে মোদিকে বরণ করে নেন পূজারীরা।
মন্দিরে প্রবেশের পর রীতি অনুযায়ী দেবীকে মুকুট পরিয়ে দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এরপর দেবীর বস্ত্রদান করেন তিনি। দেবীকে মাল্যদানের পর যোগাসনে বসে পাঠ করেন পূজার মন্ত্র। পুষ্পার্ঘ অর্পণের পর তিনি দেবীকে প্রদক্ষিণ করেন। পূজা শেষে পুরোহিত তাকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন। এরপর ভারতের প্রধানমন্ত্রী যশোরেশ্বরী মন্দির প্রদক্ষিণ শেষে স্থানীয় পূজারীদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় ও ছবি তোলেন। এসময় তিনি ভারতীয় একটি চ্যানেলে অনুভ‚তি ব্যক্ত করেন। সকাল ১০টা ৩৬ মিনিটে তিনি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার উদ্দেশে সাতক্ষীরা ত্যাগ করেন।
চৌধূরী হাসান মাহমুদ গোপালগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে হেলিকপ্টার যোগে ওড়াকান্দি পৌঁছান নরেন্দ্র মোদি। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও গোপালগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম সেখানে নরেন্দ্র মোদিকে স্বাগত জানান।
শান্তিজল ছিটিয়ে, বরণকুলা ও ধান-দূর্বা দিয়ে মতুয়া রীতিতে শ্রীধাম ওড়াকান্দিতে নরেন্দ্র মোদিকে বরণ করে নেয়া হয়। এরপর তিনি ওড়াকান্দি ঠাকুরবাড়ি হরি মন্দিরে পূজা অর্চনা করেন। হরিমন্দিরের পূজারী সঞ্জয় মন্ডল ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে পূজায় সহযোগিতা প্রদান করেন।
দুপুর ১টা ১০ মিনিটে নরেন্দ্র মোদি ওড়াকান্দি ঠাকুর বাড়িতে অনুষ্ঠিত সুধী সমাবেশে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের সরকার দু’দেশের সামাজিক সম্পর্ককে শক্তিশালী করছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্ব, ভিশন ও তার বিশ্বাস বাংলাদেশের জন্য আলোকবার্তা বয়ে এনেছে। এর আগে আমি টুঙ্গিপাড়ায় গিয়ে তার সমাধিতে শ্রদ্ধাঞ্জলী অর্পণ করেছি।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সাংস্কৃতিকভাবেও ঠাকুরবাড়ি, শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের বার্তা বহু বছর ধরে চলে আসছে। একইভাবে এই স্থানও ভারত-বাংলাদেশের তীর্থক্ষেত্র। মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্ক, মনের সাথে মনের সম্পর্ক। এই মূল্যবোধ ও শিক্ষা শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুর আমাদের দিয়েছিলেন। আজ আমরা যে মূল্যবোধের কথা বলি, মানবিকতার যে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখি-সেই মূল্যবোধের জন্য শ্রী শ্রী হরিচাঁদজী নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। করোনায় মোকাবেলায় এক সাথে কাজ করবে বাংলাদেশ ও ভারত। দুই দেশ বিশ্বকে শান্তি ও ভালোবাসার পথ দেখাবে।’
নরেন্দ্র মোদি বলেন, মহান কবি মহানন্দ হালদার তার শ্রী শ্রী গুরুচাঁদ চরিতে লিখেছিলেন, তফশীল জাতির মাধুর্য যা কিছু হয়েছে, হরিচাঁদ কল্প বৃক্ষ সকলে পেয়েছে। অর্থাৎ নির্যাতীত নিপীড়িত গরীব অবহেলিত সমাজ যা কিছু চেয়েছে, যা কিছু পেয়েছে-তার সবকিছুই হরিচাঁদ ঠাকুরের কল্পবৃক্ষের ফল। হরিচাঁদজীর দেখানো পথে চলে আজ আমরা এ সমাজ একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ সমাজের দিকে এগুচ্ছি। তিনি ওই সময় নারীদের শিক্ষা ও তাদের সামাজিক অংশীদারিত্বের জন্য কাজ শুরু করে দিয়েছিলেন। আমরা মহিলাদের ক্ষমতায়নের প্রচেষ্টায় সমগ্র বিশ্বকে এগিয়ে যেতে দেখেছি’।
তিনি বলেন, ‘শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের দয়ায় আজ এই পবিত্র ভ‚মিতে আসতে পেরেছি। আমি হরিচাঁদ ঠাকুর ও গুরুচাঁদ ঠাকুরের চরণে মস্তক নত করে প্রণাম জানাই। এখানে আসার পর কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা বিশ্বাস করতে পারেননি যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী এখানে আসতে পারেন। কিন্তু আমি ওড়াকান্দি আসতে পেরে নিজেকে খুবই ভাগ্যবান মনে করছি। ভারত থেকে আসা দর্শনার্থীরা যেরকম শান্তি অনুভব করেন আমিও তেমনি অনুভব করছি।’
এ সময় ছিলেন কৃষি মন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতা সংসদ সদস্য ও হরিচাঁদ-গুরুচাঁদ ঠাকুর বংশের উত্তরসূরী শান্তনু ঠাকুর, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, এমপি, কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান এমপি, কাশিয়ানী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সুব্রত ঠাকুর হিল্টু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোক্তার হোসেনসহ ঠাকুর পরিবারের সদস্য ও মতুয়া ভক্তরা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, ‘এখানে আসার ইচ্ছা আমার অনেক আগে থেকেই ছিল। ২০১৫ সালে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হয়ে যখন বাংলাদেশে আসি, তখনই আমি ওড়াকান্দি আসতে চেয়েছিলাম। এখানে এসে অনেক ভালোবাসা পেয়েছি। পশ্চিমবঙ্গের ঠাকুর নগরের বড় মাও আমাকে এরকম স্নেহ ও ভালোবাসা দিয়েছেন। ঠাকুর নগর থেকে ঠাকুরবাড়ি পর্যন্ত একই ধরনের শ্রদ্ধা ও আস্থা রয়েছে।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী তার ৩০ মিনিটের দীর্ঘ বক্তব্যে বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের জাতীয় অনুষ্ঠানে ভারতের ১২০ কোটি জনতার পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা নিয়ে এসেছি। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পূর্ণ হওয়ায় সবাইকে শুভেচ্ছা জানাই। গতকাল ঢাকার প্যারেড গ্রাউন্ডে সংস্কৃতি অনুষ্ঠান দেখেছি। যা আমাকে মুগ্ধ করেছে।’
১ ঘণ্টা ২৫ মিনিট ওড়াকান্দি ঠাকুরবাড়িতে অবস্থানের পর আবার হেলিকাপ্টারযোগে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন তিনি। এর আগে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বেলা ১১ টা ৩৮ মিনিটে মোদি টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে পুষ্পস্তাবক অর্পন করে এ শ্রদ্ধা জানান। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আত্মার শান্তি এবং দেশের অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি কামনায় বিশেষ প্রার্থনা করেন।
শ্রদ্ধা নিবেদনের পর তিনি ১১টা ৫৩ মিনিটে পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর এবং বঙ্গবন্ধুর সমাধি পরিদর্শন করেন। এরপর ১১টা ৫৯ মিনিটে বঙ্গবন্ধু ভবনের পাশে একটি বকুল গাছের চারা রোপন করেন। বকুলের চারা রোপনের পর সেখানে ভারতের বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানার সাথে একান্তে কিছুক্ষণ আলাপ করেন তিনি।
এর আগে বেলা ১১টা ২৫ মিনিটে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী হেলিকপ্টার টুঙ্গিপাড়া উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন হেলিপ্যাডে অবতরণ করে। পরে বেলা ১১টায় ৩৬ মিনিটে নরেন্দ্র মোদি সমাধি সৌধে এসে পৌছালে সেখানে তাকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাগত জানান। বাংলাদেশ যুবলীগের সভাপতি শেখ ফজলে শামস্ পরশ ও শেখ তম্ময় এমপিসহ প্রধানমন্ত্রীর নিকটজনেরা এসময় উপস্থিত ছিলেন।
জাতির পিতার সমাধি সৌধে ২৬ মিনিট অবস্থান শেষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ১২টা ২ মিনিটে টুঙ্গিপাড়া ত্যাগ করেন। বেলা ১২টা ১৩ মিনিটে তিনি হেলিকপ্টার যোগে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলায় মতুয়া সম্প্রদায়ের তীর্থপীঠ শ্রীধাম ওড়াকান্দি ঠাকুর বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন। ১২ টা ৩০ মিনিটে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ওড়াকান্দি ঠাকুর বাড়ির সামনের হেলিপ্যাডে আবতারন করেন। সেখান থেকে তিনি মতুয়াদের প্রধান তীর্থপীঠ শ্রীধাম ওড়াকান্দিতে হরিচাঁদ মন্দিরে যান এবং সেখানে পূজা দেন বেলা ১২ টা ৪৫ মিনিটে পর্যন্ত। বেলা ১টা ২ মিনিট থেকে ১টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সুধি সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন। এরপর ১টা ৫৫ মিনিটে তাকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।