পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইনকিলাব ডেস্ক : সুইস কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বাংলাদেশিদের আমানত এক বছরে ১ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা বেড়ে ৫ হাজার ৫৬৬ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। ফলে গত বছরের তুলনায় এ আমানত বৃদ্ধি পেয়েছে ১৯ শতাংশ। গতকাল সুইস কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী বিষয়টি জানা যায়।
বাংলাদেশ থেকে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে টাকা পাচার, বিদেশে কর্মরত অনেক বাংলাদেশি নাগরিক সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে টাকা জমা রাখায় এ ধরনের আমানত বাড়ছে। দীর্ঘ সময় ধরে ধনীদের অর্থ গোপনে জমা রাখার জন্য বিখ্যাত সুইস ব্যাংকে ২০১৪ সালে বাংলাদেশিদের জমার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৫০ কোটি ৬০ লাখ সুইস ফ্র্যাংক। স্থানীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ ৪ হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা (প্রতি সুইস ফ্র্যাংক ৯০ টাকা হিসাবে)। আগের বছর অর্থাৎ ২০১৩ সালে তা ছিল ৩ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা। এ হিসাবে এক বছরে বেড়েছে ১ হাজার ৩১৮ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারত এবং পাকিস্তানের পরই রয়েছে বাংলাদেশের অবস্থান। সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কোনো বাংলাদেশি তার নাগরিকত্ব গোপন করে টাকা জমা রাখলে সেসব তথ্য এই প্রতিবেদনে নেই। অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, দেশে বিনিয়োগ না হওয়ায় পুঁজি পাচার হচ্ছে। পাচার করা টাকার একটি অংশ সুইস ব্যাংকগুলোতে জমা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত এ বিষয়ে তদন্ত করে দেখা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে তদন্তের কথা বারবার বলা হলেও বিষয়টি বেশিদূর আগায়নি।
তবে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, অফিসিয়ালি বাংলাদেশ থেকে বিদেশে টাকা নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। সুইস ব্যাংকে যেসব টাকা জমা হয়েছে সেগুলো প্রবাসিদের টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তাদের মতে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে টাকা যাওয়া তো দূরের কথা, উল্টো বিদেশ থেকে বাংলাদেশে রেমিটেন্স বাবদ প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আসছে।
এর আগে গত ১২ বছরের মধ্যে ২০১৪ সালেই বাংলাদেশিরা সবচেয়ে বেশি আমানত রাখে সুইস ব্যাংকে। আলোচ্য সময়ে সুইস ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের আমানতের পরিমাণ বেড়ে ৫০ কোটি ৬০ লাখ ফ্র্যাংক হয়। স্থানীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ ৪ হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা। ২০১৩ সালে ছিল ৩৭ কোটি ২০ লাখ ফ্র্যাংক। স্থানীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ৩ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা। ২০১২ সালে ছিল ২২ কোটি ৯০ লাখ ফ্র্যাংক। ২০১১ সালে ছিল ১৫ কোটি ২০ ফ্র্যাংক। এগুলো শুধু নগদ অর্থের হিসাব। ব্যাংকের ভল্টে স্বর্ণালংকার, শিল্পকর্ম বা অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র জমা রাখলে তার আর্থিক মূল্য আমানতের এই হিসাবের সঙ্গে যোগ হয়নি। সেগুলোর হিসাব রয়েছে আলাদা।
১০ বছরে বাংলাদেশীদের আমানত : সুইস ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের আমানত ২০০২ সালে ছিল ৩ কোটি ১০ লাখ ফ্র্যাংক, ২০০৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪ কোটি ১০ লাখ ফ্র্যাংকে। ২০০৫ সালে এর পরিমাণ দ্বিগুণের বেশিও বেড়ে দাঁড়ায় ৯ কোটি ৭০ লাখ ফ্র্যাংকে। ২০০৬ সালে এর পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ১২ কোটি ৪০ লাখ ফ্র্যাংক। ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত¡াবধায়ক সরকারের আমলে এর পরিমাণ আগের বছরের চেয়ে দ্বিগুণ বেড়ে দাঁড়ায় ২৪ কোটি ৩০ লাখ ফ্র্যাংকে। ওই সময়ে সরকার বিদেশে পাচার করা টাকা ফেরত আনার প্রক্রিয়া শুরু করলে ২০০৮ সালে এর পরিমাণ নাটকীয়ভাবে কমে দাঁড়ায় ১০ কোটি ৭০ লাখ ফ্র্যাংক। ২০০৯ সালে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এলে সুইস ব্যাংককে বাংলাদেশিদের জমার পরিমাণ আবার বেড়ে ১৪ কোটি ৯০ লাখ এবং ২০১০ সালে তা আরও বেড়ে ২৩ কোটি ৬০ লাখ ফ্র্যাংকে দাঁড়ায়।
এশিয়ার অন্যান্য দেশের আমানত : এশিয়ার অন্যান্য দেশের মধ্যে চীনা নাগরিকদের জমা ৮১০ কোটি ফ্র্যাংক, মালয়েশিয়ানদের জমা ৩৩৬ কোটি, থাইল্যান্ডের ৩০৫ কোটি, দক্ষিণ কোরিয়ার ২৭৬ কোটি, ভারতের ১৭৭ কোটি, পাকিস্তানের ১২৩ কোটি, শ্রীলংকার ৮ কোটি ২০ লাখ, নেপালের ১০ কোটি ২০ লাখ, মিয়ানমারের ৬ কোটি, মালদ্বীপের ১ কোটি ৭০ লাখ এবং আফগানিস্তান ১ কোটি ৪০ লাখ ফ্র্যাংক অর্থ জমা রয়েছে।
এর আগে মালয়েশিয়ান সরকারের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বাংলাদেশ মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোম প্রকল্পে বিনিয়োগে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। চীন প্রথম অবস্থানে। এগুলো সবই হয়েছে টাকা পাচারের মাধ্যমে। নিয়ম অনুযায়ী কোনো নাগরিকের বিদেশে টাকা নিতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অনুমতি নিয়ে বিদেশে কোনো ব্যক্তি বিনিয়োগ করেনি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই ধরনের কোনো অনুমোদনও দেয় না। ফলে ওই খাতে বাংলাদেশিরা যেসব অর্থ বিনিয়োগ করেছে তা পাচারের মাধ্যমে করেছে। তবে বিদেশে যারা আয় করেন তাদের সুইস ব্যাংকে টাকা জমা রাখতে বাংলাদেশের আইনে কোনো সমস্যা নেই। আর তিনি আয়করের আওতায় এবং প্রবাসি কোটায় কোনো সুবিধা নিয়ে থাকলে বিদেশে সম্পদ থাকার তথ্যও তার আয়কর রিটার্নে উল্লেখ করতে হবে। এই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে কোনো নাগরিক বিদেশে টাকা রাখলে তা দেশ থেকে পাচার বলে গণ্য হবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বেসরকারি বিনিয়োগ নেই বলে বিদেশে টাকা পাচার হচ্ছে। তিনি বলেন, বিনিয়োগে স্থবিরতার পরও মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি ব্যয় বেড়েছে। এটি অস্বাভাবিক। এর অর্থ হল ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে দেশ থেকে টাকা পাচার হয়েছে।
৮০ লাখ মানুষের দেশ সুইজারল্যান্ডে ব্যাংক আছে ২৮৩টি। বিশ্বের বড় বড় ধনীরা অর্থ পাচার করে দেশটির বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে জমা রাখে। ব্যাংকগুলোও কঠোর গোপনীয়তায় তা রক্ষা করে। আগে সুইস ব্যাংকে জমা টাকার কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করা হতো না। এমনকি আমানতকারীর নাম-ঠিকানাও গোপন রাখা হতো। একটি কোড নম্বরের ভিত্তিতে টাকা জমা রাখা হতো। কিন্তু বিশ্বব্যাপী টাকা পাচার রোধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ব্যাপকভাবে কার্যকর করায় আন্তর্জাতিক চাপে সুইস ব্যাংক জমা টাকার তথ্য প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে তারা ওই সময় থেকে বিভিন্ন দেশের জমা টাকার তথ্য প্রকাশ করছে। ওই প্রতিবেদনে কোন দেশের কত টাকা জমা আছে সে তথ্য তারা প্রকাশ করছে। তবে আমানতকারীদের নাম-ঠিকানা প্রকাশ করছে না। পাচারকারীরা পর্দার আড়ালেই থেকে যাচ্ছে।
এদিকে ওয়াশিংটনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান গেøাবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই) রিপোর্ট অনুসারে ২০০১ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত এক যুগে বাংলাদেশ থেকে ২ হাজার ১৩ কোটি ডলার পাচার হয়েছে। স্থানীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ১ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকা, যা দিয়ে ৬টি পদ্মা সেতু বানানো সম্ভব। আলোচ্য সময়ে দেশে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে ৯০৩ কোটি ডলার। স্থানীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ৭২ হাজার ২৪০ কোটি টাকা। অর্থাৎ যে পরিমাণ এফডিআই দেশে এসেছে তার চেয়ে দ্বিগুণের বেশি অর্থ দেশ থেকে পাচার হয়েছে। জিএফআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১২ সালে দেশ থেকে পাচার হয়েছে ১৭৮ কোটি ডলার। স্থানীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ১৪ হাজার ২৪০ কোটি টাকা। ২০১১ সালে পাচার হয়েছিল ২৮০ কোটি ৫০ লাখ ডলার বা ২২ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা। ২০১০ সালে পাচার হয়েছিল ২১৯ কোটি ১০ লাখ ডলার বা ১৭ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা। ওই এক বছরে দেশ থেকে টাকা পাচার বেড়েছে ২৮ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে গড়ে প্রতি বছর গড়ে ১৬৭ কোটি ৭৮ লাখ ডলার বা ১৩ হাজার ৪২২ কোটি টাকা দেশ থেকে পাচার হয়েছে। সূত্র : ওয়েবসাইট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।