পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
মুসলমানদের পবিত্র নগরী মক্কার পবিত্রতম স্থান কাবা শরীফকে ঘিরে থাকা মসজিদুল হারামে পরিকল্পিত সন্ত্রাসী হামলার চেষ্টা সৌদি নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ ভন্ডুল করে দিতে সক্ষম হয়েছে বলে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে। রমজান মাসের শেষ দশদিনে লাইলাতুল ক্বদর উপলক্ষে ওমরাহ করতে বিশ্বের প্রতিটি প্রান্ত থেকে লাখ লাখ মুসলমান কাবাগৃহের আশপাশে সমবেত হয়ে থাকে। প্রতিবছরের মত এবারো রমজান মাসে প্রায় ৩০ লাখ মুসলমান ওমরাহ পালনের উদ্দেশ্যে সেখানে সমবেত হয়েছিল। সউদি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের বিবৃতি এবং বিশ্ব গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, গত শুক্রবার রমজান মাসের শেষ শুক্রবার মসজিদুল হারামে আত্মঘাতি এ হামলা-পরিকল্পনা করা হয়েছিল। সউদি নিরাপত্তা বাহিনী আগেই তা শনাক্ত করায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি ও রক্তাক্ত ঘটনার আগেই এই পরিকল্পনা ভন্ডুল করতে সক্ষম হয়। এ ধরনের আত্মাঘাতি হামলা সফল হলে তা’ হতো বিশ্বের মুসলমানদের হৃদয় ও চেতনার উপর অনেক বড় আঘাত। হজ মওসুমের পর এটিই হচ্ছে কাবা শরীফে সর্বোচ্চ জনসমাবেশ। সমবেত মুসলমানের উপর আত্মঘাতি হামলার ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী পরিকল্পনা নস্যাৎ করতে সক্ষম হওয়ায় আমরা পরম করুণাময় আল্লাহর দরবারের শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।
দীর্ঘদিন ধরে মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমবর্ধমান হারে সন্ত্রাসী তৎপরতা বেড়ে চলেছে। ইরাক, সিরিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে সন্ত্রাস বিরোধি যুদ্ধ এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। তবে বিশ্ব মুসলিমের প্রাণকেন্দ্র মক্কা ও মদিনা শরীফের পবিত্র স্থানগুলোতে যে কোন ধরনের সন্ত্রাসী ঘটনাকে কেউ বিন্দুমাত্র বরদাশত করতে প্রস্তুত নয়। মক্কা- মদিনার পর মুসলমানদের জন্য তৃতীয় পবিত্র স্থান জেরুজালেমের মসজিদুল আকসার উপর জায়নবাদি ইসরাইলের দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে বিশ্বমুসলিমের ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ ও পুনরুদ্ধারের শপথ নিয়ে রমজান মাসের শেষ শুক্রবার আল কুদস দিবস হিসেবে পালিত হয়। মুসলমানদের মনোবল ভেঙ্গে দিতে জায়নবাদের ক্রীড়নক আত্মঘাতি সন্ত্রাসীরা এই পবিত্র দিনে মুসলমানদের জন্য সবচেয়ে স্পর্শকাতর স্থানটিতে আঘাতের পরিকল্পনা গ্রহন করেছিল। তিন আত্মঘাতি সন্ত্রাসীর একটি গ্রুপ মক্কা এবং জেদ্দায় সন্ত্রাসী হামলা বাস্তবায়নের আগেই সৌদি নিরাপত্তা রক্ষিরা মক্কার মসজিদের কাছাকাছি অভিযান পরিচালনা করলে নিরাপত্তা রক্ষীদের ঘিরে রাখা একটি বাড়িতে এক আত্মঘাতি সন্ত্রাসী নিজের শরীরে বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে সন্ত্রাসীর শরীর ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়, সেই সাথে বাড়িটিও বিধ্বস্ত হয়। এতে আত্মঘাতি সন্ত্রাসীর নিহত হওয়ার পাশাপাশি ৬ জন বিদেশী নাগরিক এবং নিরাপত্তা বাহিনীর ৫ সদস্যসহ অন্তত ১১জন আহত হয়। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে সউদি নিরাপত্তা বাহিনী ৫জনকে আটক করেছে বলে প্রকাশিত খবরে উল্লেখ করা হয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যকে ঘিরে দীর্ঘমেয়াদী পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদি ষড়যন্ত্র যখন উন্মোচিত হচ্ছে, রিজিম চেঞ্জ’র ঘুঁটির দাবার শিকার হয়ে মধ্যপ্রাচ্যে একাধিক রাষ্ট্র চরম বিশৃঙ্খলা ও অকার্যকর হয়ে ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হওয়ার বাস্তবতায় বিশ্বের শতকোটি মুসলমান যখন একটি ঐক্যবদ্ধ অবস্থান গ্রহনের পক্ষে সউদি আরব ও ইরানের মত মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক শক্তির পক্ষ থেকে ঐক্য ও সমঝোতার প্রত্যাশা করছে, ঠিক তখনি সেখানে নতুন সমস্যা ও সংঘাতের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। রমজানের শুরুতে সউদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের ৬টি রাষ্ট্র কাতারের সাথে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করাসহ সীমান্ত ও আকাশ পথে অবরোধের ফলে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন সঙ্কটের সৃষ্টি হয়। এতদিন শিয়া-সুন্নী দ্বন্দের কথা বলা হলেও এখন তেলসমৃদ্ধ ধনী সুন্নী রাষ্ট্র কাতারের উপর আকষ্মিক অবরোধের ঘটনা মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতিকে জটিল ও অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিতে শুরু করেছে। সউদি আরব ও আরব আমিরাত কাতারের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার পর প্রথমবারের মত ইসরাইলের সাথে ক‚টনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে যাচ্ছে বলেও প্রকাশিত কিছু রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে। অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যের চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতি এবং সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের পেছনে ইসরাইল এবং পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নেপথ্য ভ‚মিকার কথাও ক্রমশ: স্পষ্ট হয়ে পড়ছে। তবে সউদি আরবের শাসকদের ভ‚মিকা নিয়ে যত সমালোচনা বা বিতর্ক থাক না কেন, পবিত্র কাবাশরীফ কমপ্লেক্স, মদিনা মুনাওয়ারা বা অন্যান্য পবিত্র স্থানে কোন ধরনের আঘাত করা হলে বিশ্বের কোন মুসলমান তা’ বরদাশত করবেনা। এ ধরনের যে কোন অপচেষ্টার পরিণাম হবে ভয়াবহ। মক্কায় সন্ত্রাসী হামলা চেষ্টার তথ্য প্রকাশিত হওয়ার পর বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় সব মুসলিম দেশ এবং শান্তিকামি বিশ্বের পক্ষ থেকে এই অপচেষ্টার নিন্দা করা হয়েছে। আমরা অত্যন্ত পরিতাপের সাথে লক্ষ্য করছি, মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ ও সন্ত্রাসের আগুন বিশ্ব মুসলমানের চেতনা ও বিশ্বাসের পাদপীঠ পবিত্র কাবাগৃহ পর্যন্ত ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে এর নেপথ্য কুশীলবরা। এই হীন প্রয়াসের তীব্র নিন্দা জানানোর পাশাপাশি এ ধরনের অপচেষ্টার পুনরাবৃত্তি রোধে সউদি কর্তৃপক্ষ এবং বিশ্ব মুসলমানদের মধ্যে বৃহত্তর ঐক্য ও সমঝোতা প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায়না। পবিত্র হারামাইন শরীফের খেদমতগার শাসকরা মক্কাশরীফে ও মদিনা শরীফের অর্থ্যাৎ হারামাইনের পবিত্রতা ও নিরাপত্তার প্রশ্নে সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহন করবেন, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।