পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কালীপদ দাস, কলকাতা থেকে : সামনেই ভারতের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এই নির্বাচনকে ঘিরে ভারতের মাটি এখন রীতিমতো উত্তপ্ত। ফলাফল মোটামুটি নিশ্চিত হলেও এবারের প্রেসিডেন্ট ভোটে এক বিশেষ মাত্রা যোগ করার চেষ্টা করেছে শাসক দল ও বিরোধী দল। উভয়েরই ট্রাম কার্ড দলিত। দলিত রামনাথ কোবিন্দের বিপরীতে বিরোধী প্রার্থী দলিত কন্যা মীরাকুমার। আরও স্পষ্ট করে বললে বলতে হয় বিহারের ‘দলিত বেটি’ মীরাকুমার বনাম উত্তর প্রদেশের ‘দলিত বেটা’ কোবিন্দ। নির্বাচনের ফলাফল মোটামুটি জানা থাকলেও দেশের দলিত অর্থাৎ অনুন্নত শ্রেণির পাশে থাকার বার্তা দিয়েছে দু’পক্ষই।
উল্লেখ্য এই মীরাকুমার ভারতের সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী বাবু জগজীবন রামের মেয়ে এবং বিহারের সাসারামের সাংসদ। তিনি দেশের লোকসভার প্রথম মহিলা স্পীকার এবং মোট পাঁচবারের সাংসদ। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজেপি প্রধান এনডিএ-এর পক্ষ থেকে প্রায় সকলকে চমকে দিয়ে গত সোমবার প্রার্থী ঘোষণা করা হয় বিহারের রাজ্যপাল রামনাথ কোবিন্দকে। ভদ্র, শিক্ষিত, মার্জিত কম কথার মানুষ কোবিন্দকে প্রার্থী করে দলিতদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদী। শুধু দলিতদের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে এনডিএ কোবিন্দকে প্রার্থী ঘোষণা করার পর বিরোধী পক্ষকে প্রায় চমকে দিয়ে তাদের যাবতীয় অংক ভেস্তে দিলেও সামলে নিতে মোটেই সময় নেয়নি বিরোধী পক্ষের ইউপিএসহ ১৭টি দল। ‘ইট কা জবাব পাত্থর’-এ দিতে তারা গত বৃহস্পতিবার তুলে নিয়ে আসে স্পীকার মীরাকুমারকে। ফলে লড়াইটা এসে দাঁড়ায় ‘দলিত বনাম দলিত’-এ। দেশের ইতিহাসে এই প্রথম রাইসিনা হিলসের প্রেসিডেন্ট ভবনে যাওয়ার লড়াইটা দুই দলিত নেতা ও নেত্রীর মধ্যে হবে।
আগামী সোমবারের বিরোধী ১৭টি দলের বৈঠক উপস্থিত ছিলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ, কংগ্রেস নেতা গুলাম নবী আজাদ, মল্লিকার্জুন খাড়গে ও আহমেদ পটেল। এ ছাড়া তৃণমূলের তরফে উপস্থিত ছিলেন ডেরেক ও’ ব্রায়েন, বিএসপির সতীশ শাহ, এবং সমাজবাদী পার্টির রামগোপাল যাদব। ছিলেন জেডিএস, আরএসপি, জেএমএম, কেরল কংগ্রেস, আইইউএমএল, এআইইউডিএফ দলের নেতারা এবং এনসিপি নেতা শরদ পাওয়ার, আরজেডি নেতা লালুপ্রসাদ যাদব, সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি ও ডি রাজা, ডিএমকের তরফে কানিমোঝি এবং ন্যাশনাল কনফারেন্সের ওমর আবদুল্লাহ।
বৈঠকের শুরুতে তিনটি নামের প্রস্তাব ছিল মীরাকুমার ছাড়া মহারাষ্ট্রের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী সুশীল কুমার শিন্ডে এবং কিংবদন্তী রাজনেতা এবং ভারতের সংবিধান প্রণেতা ডা. বি.আর অম্বেদকরের নাতি তথা সাবেক নেতা প্রকাশ অম্বেদকর।
পাশাপাশি এটা ঠিক যে দলিত নেত্রী মীরাকুমার বিরোধী ১৭ টি দলের সমর্থন পেলেও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের লড়াইটাকে যে নতুন কোনও মাত্রা দিতে পারবেন তা মনে হয় না। পরিস্থিতি যা তাতে বিরাট কিছু অঘটন না ঘটলে এই লড়াইয়ে দলিত বেটি মীরাকুমারের চ্যালেঞ্জকে অতিক্রম করে ভারতের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট যে এনডিএ প্রার্থী রামনাথ কোবিন্দই হতে যাচ্ছেন তাতে আর খুব বেশি সংশয় নেই।
তবুও এটা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপার যে বিরোধী দলের হয়ে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধী এক ঢিলে অনেকগুলো পাখি মারার চেষ্টা করেছেন তা বলাই বাহুল্য। মীরাকুমারকে প্রার্থী করে দেশের দলিতদের পাশে থাকার বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি তিনি ১৭টি দলকে এক মঞ্চে এনে সর্বসম্মত প্রার্থী দিতে পারার কৃতিত্ব আদায় করতে পেরেছেন। যদিও বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারের জেডিইউকে পাশে না পাওয়ার আক্ষেপ একটা থেকেই গেছে। এমনকী উত্তর প্রদেশের সাবেক দুই মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতী ও অখিলেশকেও সোনিয়া পাশে পেতে সমর্থ হয়েছেন। প্রথম দিকে সামান্য গ্যাঁইগুঁই করলেও বিরোধীদের সঙ্গে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন শরদ পাওয়ারও।
এদিকে কোবিন্দকে নীতিশের সমর্থন নিয়ে বিহারে আর এক মুকুটহীন স¤্রাট আরজেডি সুপ্রিমো লালু প্রসাদ যাদব নিজের অসন্তোষ চেপে রাখতে পারেন নি। “কোবিন্দ ভালো লোক তাই তার দল জেডিইউ কোবিন্দকে সমর্থন করছে,” নীতিশ কুমারের এই যুক্তিকে খন্ডন করে আরজেডি নেতা লালুপ্রসাদ যাদব বলেছেন, “ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কে কত ভালো লোক সেটা বড় প্রশ্ন নয়, প্রশ্নটা হলো মতাদর্শের। আমি বিহারে ফিরে গিয়ে নীতিশকে তার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার অনুরোধ করব। তার সঙ্গে দেখা করে বলব আপনি আপনার সিদ্দান্ত বদল করুন।”
বলা বাহুল্য বিহারে এমনিতেই নীতিশকে নিয়ে দলিতদের একটা অনীহা আগের থেকেই বর্তমান তার ওপর কোবিন্দকে সমর্থন করার পর স্বাভাবিক কারণেই বিহারের দলিতদের নীতিশ আর কখনই পাশে পাবেন বলে মনে হয় না। অর্থাৎ দলিত ও সংখ্যালঘু ভোট নীতিশের হাতছাড়া হওয়ার সম্ভাবনা এই মুহূর্তে প্রবল। যদিও জেডিইউ-এর পক্ষ থেকে গত বৃহস্পতিবারও সাফ জানানো হয়েছে তাদের সিদ্ধান্ত বদলের কোনও সম্ভাবনা নেই। বরং নীতিশের পাল্টা প্রশ্ন, “শুধু শুধু হারাবার জন্য বিহারের দলিত কন্যা মীরাকুমারকে কেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ময়দানে নামানো হলো ? নির্বাচনে কোবিন্দই জিতবেন তাতে তো আর কোনও সংশয় নেই।”
এই মুহূর্তে এনডিএ-র সংগ্রহে রয়েছে : এনডিএ ৪৮.১০%, টিআরএস ১.৯৯%, এআইডিএমকে ৫.৩৯ ওযাইএসআর কংগ্রেস ১,৫৩%, জেডিইউ ১.৮৯%, বিজেডি ২.৯৯%, মোট ৬১.৮৯% ভোট। এবং ইউপিআই সংগহে রয়েছে এসপি ২.৩৬%, বিএসপি ০.৭৪%, এএপি ০.৮২ , আইএনডিএল ০.৩৮% এবং বর্তমানে ইউপিআই-এর ৫৪.৩১%, মোট ৫৪.৩১% ভোট।
কীভাবে হবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ?
মোট ৪৮৯৬ ভোটার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। এর মধ্যে আছেন বিধায়ক-৪১২০ জন এবং সাংসদ-৭৭৬ জন।
কত ভোট পাওযা জরুরি ?
মোট বিধায়ক: ৪১১৪
মোট সাংসদ: ৭৭৬
প্রত্যেক বিধায়কের ভোট মূল্য: ৫,৪৯,৪৭৪
প্রত্যেক সাংসদের ভোট মূল্য : ৫,৪৮,৪০৮
মোট ভোট মূল্য : ১০,৯৭৮৮২
প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য প্রয়োজন ৫০% ভোট অর্থাৎ মোট ৫,৪৯, ৪৪২ ভোট।
নোটিফিকেশন- ১৪ জুন
নোমিনেশন জমা দেওয়ার শেষ তারিখ-২৮ জুন
নোমিনেমন স্ক্রুটনি-২৯ জুন
নোমিনেশন প্রত্যাহার করার তারিখ- ১ জুলাই
নির্বাচন : ১৭ জুলাই, সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা।
ভোট গণনা: ২০ জুলাই, বেলা ১১টা থেকে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।