পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সায়ীদ আবদুল মালিক : নাড়ীর টানে গ্রামমুখী মানুষ। তাই ফাঁকা হতে শুরু করেছে কর্মব্যস্ত ঢাকার পথ-ঘাট। একটু স্বস্তিতে কেনাকাটার আশায় রাজধানীবাসীর অনেকেই বাসা থেকে বেরিয়েছেন। ঢাকা ফাঁকা হতে থাকলেও রাজধানীর ফুটপাত, মার্কেট ও শপিং মলগুলোতে কিন্তু উপচেপড়া ভিড়। গ্রামমুখী মানুষের ¯্রােত এখন রেল স্টেশন, লঞ্চ ও বাস টার্মিনালের দিকে। যে কারণে মানুষ ও যানবাহনের চাপ কমতে শুরু করেছে রাজধানী ঢাকার সড়কগুলোতে। গত দুদিনে তীব্র যানজট থাকলেও গতকাল শুক্রবার দুপুরের পর থেকে যাত্রীরা যানজট থেকে কিছুটা মুক্তি পাচ্ছেন।
গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, আগের মতো যানবাহনের চাপ নেই। সড়কগুলো অনেকটা ফাঁকা। ট্রাফিক পুলিশের ব্যস্ততাও কম। দুই-এক মিনিট পরপরই ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে সিগনালগুলো। যানজটের হিসাব মাথায় রেখে যারা সময় হাতে নিয়ে বাসা থেকে বের হয়েছেন, তারা নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই স্টেশনে পৌঁছে গেছেন।
বিকাল সাড়ে পাঁচটার লঞ্চ ধরার জন্য গাজীপুর থেকে সদরঘাটের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার বাসিন্দা এনায়েত উল্যাহ। সকাল ৯টার দিকে তিনি গাজীপুর থেকে বাসে ওঠেন। তার ধারণা ছিল পথে যানজট থাকবে। কিন্তু তিনি মাত্র দেড় ঘণ্টার মধ্যে সড়রঘাটে পৌঁছে যান। এনায়েত উল্যাহ বলেন, ভেবে ছিলাম ঈদ উপলক্ষে রাস্তায় জ্যাম থাকবে। কিন্তু তা হয়নি। অন্যদিনের চেয়ে রাস্তায় চাপ অনেক কম। তাই অল্প সময়ের মধ্যেই সদরঘাটে চলে এসেছি।
প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে বেশ কিছুদিন আগে থেকেই ঢাকা থেকে গ্রামে ছুটছেন মানুষ। অনেকে স্ত্রী-সন্তানদের আগেই বাড়ি পাঠিয়েছেন। বৃহস্পতিবার ছিল সরকারি বেসরকারি অফিসের শেষ দিন। এদিন সকালে কোনো মতে হাজিরা দিয়েই অনেক মানুষ পরিবার নিয়ে ছুটেছেন গ্রামের দিকে। অনেকে আবার অফিস শেষ করে সোজা রওনা দিয়েছেন বাস, লঞ্চ বা রেল স্টেশনের দিকে। কর্মব্যস্ত ঢাকা ছেড়ে মানুষের ¯্রােত গিয়ে ঠেকেছে এসব টার্মিনালে।
প্রতিবারের মতোই এবারও লাখ লাখ মানুষ ঢাকা ছাড়ছেন। তাই চিরচেনা যানজটের নগরীতে নীরবতা নেমে আসতে শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই পাল্টে গেছে ঢাকার রাস্তাঘাটের চিত্র। ঈদের কয়েকদিন রাস্তায় গাড়ির তীব্র হর্ণ বা অসহনীয় যানজট চোখে পড়বে না ঢাকাবাসীর। অলি-গলি, মূল রাস্তা-সবখানেই শুনশান নীরবতা বিরাজ করবে সপ্তাহখানেক।
রাজধানীর কমলাপুর ও সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ছিল গ্রামমুখী মানুষের উপচেপড়া ভিড়। সিট পাওয়ার জন্য অনেকেই রাত কাটিয়েছেন টার্মিনালে।
সরেজমিন দেখা গেছে, ঘরমুখী যাত্রীরা সারিবদ্ধভাবে হেঁটে যাচ্ছেন টার্মিনালের দিকে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকার কোনো উপায় নেই। মানুষের ঢলে আপনাআপনিই চলে যাচ্ছেন ঘাটের দিকে।
লঞ্চ টার্মিনালে আসা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সৈকত হাসান বলেন, আমার বাড়ি পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে। আমার সঙ্গে আরেকজন আছেন। তাই ৩ হাজার টাকায় কেবিন নিয়েছি। দেখি এখন ভালভাবে বাড়ি যেতে পারলেই হয়।
বরিশালের গৌরনদীর যাত্রী সিকদার জোবেদ আলী বলেন, একদিন আগেই ছুটি নিয়ে ঢাকা ছাড়ছি। ঈদের খুশিতে কয়েকটি দিন বেশি পরিবারের সঙ্গে থাকতে চাই।
এদিকে রাজধানীর কমলাপুর ও বিমানবন্দর রেলস্টেশনে সকাল থেকেই হাজার হাজার মানুষকে ট্রেনের অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায়। ট্রেন আসার সঙ্গে সঙ্গে ঝুঁকি নিয়ে ছাদেই উঠে পড়ছেন অনেকে।
রেল বা লঞ্চে যারা যাচ্ছেন অতিরিক্ত যাত্রী তোলায় জীবনের ঝুঁকি থাকছে বরাবরই। তবে এ দুটি যানবাহনের ক্ষেত্রে যানজটের ভোগান্তি পোহাতে না হলেও যারা সড়ক পথে তথা বাসে করে গ্রামে ফিরছেন তাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হচ্ছে।
রাজধানীর বাড্ডা থেকে ময়মনসিংহের উদ্দেশে বিকেল চারটার দিকে বাসে উঠেছেন মাহমুদুল হাসান। তিনি সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে টেলিফোনে জানান, এখন তিনি গাজীপুর পাইপাসে (চৌরাস্তার আগে) আটকে আছেন দীর্ঘ সময় ধরে। সামনেও তীব্র যানজট। গাড়ি আর নড়ছে না।
জানা যায়, সকাল থেকেই ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুমুখী মহাসড়কে তীব্র যানজট রয়েছে। বরং বিকেল থেকে যানজটের মাত্রা আরও বাড়ছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঈদে ঘরমুখো মানুষ আটকে আছেন রাস্তায়। এতে শিশু ও নারীরা বেশি সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। বিশেষ করে যারা ছাদে চড়ে গন্তব্যের উদ্দেশে রওয়ানা হয়েছেন তাদের দুর্ভোগের সীমা নেই।
গতকাল দুপুরের দিকে গাবতলী, সায়েদাবাদ ও গুলিস্তান এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সড়কগুলো অনেকটাই ফাঁকা। বাসগুলো যাত্রী ভর্তি করে গন্তব্যে রওনা দিয়েছে। ভোর থেকে বাস টার্মিনালগুলোতে যাত্রীদের ভিড় দেখা গেছে। সকালে রাজধানীর টেকনিক্যাল মোড় থেকে যানবাহনের জট শুরু হয়। আমিনবাজার পর্যন্ত এ যানজট তীব্র ছিল। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের চাপ কমে আসলে যানজটও কমে যায়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গাবতলী বাস টার্মিনালের সামনের রাস্তা প্রায় ফাঁকা হয়ে যায়।
এদিকে, রাজধানীর গুলিস্তান, পল্টন, কাকরাইল, দৈনিক বাংলা, কমলাপুর, ফার্মগেট, কাওরানবাজার, শাহবাগ, মোহাম্মদপুর, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, যাত্রাবাড়ীসহ বেশিরভাগ এলাকায় যানবাহনের চাপ কম দেখা গেছে।
আগামীকাল রোববার চাঁদ দেখা গেলে তার পরের দিন সোমবার ঈদ। হাতে একদম সময় নেই।
মানুষ ঢাকা ছাড়তে শুরু করলেও মার্কেটের চিত্র ভিন্ন। সকাল থেকেই মানুষ ভিড়তে শুরু করেছে। বিক্রেতারাও স্বস্তি পাচ্ছেন। শাহআলী মার্কেটের নিচতলায় রেক্স গ্যালারি নামের একটি জুতার দোকানে বেশ কয়েকজন ক্রেতা জুতা পছন্দ করছেন। বিক্রেতারা ভীষণ ব্যস্ত। মোহাম্মদ আসিফ নামের একজন বিক্রেতা বলেন, মনে হয় সারা রোজায় যা না বেচছি, তা আজকে-কালকে দুই দিনে তা বেচা হইব।
নিউমার্কেটের বৈশাখী ফ্যাশনের বিক্রেতা আবুল হোসেন বলেন, এইবার বেচা কেনা বেশি সুবিধার হয় নাই। এখন এই শেষ দু-তিন দিনে যা বেচা যায়। অনেকেই ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছেন, তাহলে এখনকার ক্রেতা কারা জানতে চাইলে বলেন, ঢাকায় ঈদ করা মানুষেরও সংখ্যাও কম না। এ ছাড়া সব গার্মেন্টস ছুটি না হওয়ায় সে ক্রেতারাও আসছেন।
কায়সার আহমেদ পুরো পরিবার নিয়ে বসুন্ধরা সিটিতে কেনাকাটা করতে এসেছেন। পুরো রোজায় ঈদের কেনাকাটার জন্য বের হননি। রাস্তাঘাটের খোঁজ নিয়ে একটু ফাঁকা ভেবে এসেছেন। তিনি বলেন, রাস্তা তো ফাঁকাই পেলাম। কিন্তু এখানে এসে দেখি সেই একই ভিড়। ভাবছিলাম, বৃহস্পতিবার থেকে মানুষ যাওয়া শুরু হইছে, আজকে কম থাকবে। একটু হেসে নিজেই বললেন, স্বস্তিতে কেনার আশায় হয়তো অনেকেই তাঁর মতো ভেবে বের হয়েছেন বলে ভিড় হয়েছে।
ঈদের ছুটি শুরু হয়েছে। কেউ ঘরে ফেরার পথে। আবার অনেকেই ফাঁকা ঢাকায় কেনাকাটার জন্য ব্যস্ত। বিক্রেতারা বলছেন, মানুষ ঢাকা ছেড়ে গেলেও মার্কেটের ভিড় কমবে না। চাঁদরাত পর্যন্ত এর পরিমাণ আরও বাড়বে। ###
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।