পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
এম. হাসানুল হক উজ্জ্বল, বিয়ানীবাজার থেকে : আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন লঙ্গন করে ভারত সরকার সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার গজুকাটা সীমান্ত এলাকা থেকে শুরু করে মৌলভীবাজারের লাতু পর্যন্ত কাটা তারের ১৫০ গজের ভেতর কাটাতারের বেড়া নির্মাণের পরিকল্পণা বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছে ভারত। সূত্র জানিয়েছে, গজুকাটা সীমান্তের ১৩৫৭ নং পিলার থেকে শুরু করে লাতু পর্যন্ত ৮টি গ্রামকে ভারত কাটা তারের বেড়া দিয়ে তাদের নাগরিকদের ভেতরে নিয়ে যাওয়ার জন্যই এ কাজ শুরু করেছে। ভারতের একটি সূত্র জানায়, এ লক্ষ্যে মুল কাটা তারের কাছেই সকল সরঞ্জাম এনে রাখা হয়েছে। এ নিয়ে গজুকাটা ও লাতু এলাকার বাংলাদেশীদের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিলেও বিজিবি বলছে, দু’দেশের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে এক স্থরের কাটা তারের বেড়া নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর সেই সিদ্ধান্ত ভারত বাস্তবায়ন করছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ৪,০৯৬ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে।
বিজিবি ৫২’র কমান্ডিং অফিসার লে. কর্ণেল নিয়ামুল কবির জানান, ভারত-বাংলাদেশ উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে সীমান্ত এলাকায় কাটাতারের ১৫০ গজের ভেতর যেসব ভাতরীয় নাগরিক রয়েছেন তাদেরকে ভারত কাটা তারের বেড়ার মধ্যে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পণা অনেক দিন থেকে করে আসছিল। সেই মোতাবেক উচ্চ পর্যায়ে বৈঠকে কাটা তারের ১৫০ গজের ভেতর যে সব ভারতীয় নাগরিক অবস্থান করছেন সেসব ভারতীয় নাগরিকদের এক স্থরের কাটা তারের বেড়া দিয়ে আলাদা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনি, গজু কাটা সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন উল্লেখ করে বলেন, সীমান্তে এক স্থরের কাটা তারের বেড়া নির্মাণ হলে ভারতীয় নাগরিকরা আলাদা হয়ে যাবে। বাংলাদেশীদের সাথে তারা মিশে গিয়ে আর বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারবে না। এলাকাগুলোতে মাদক চোরাচালানও কমবে বলে ওই কর্মকর্তা জানান।
বিজিবি’র শীর্ষ ওই কর্মকর্তার মতে, ভারত তার সীমান্ত এলাকায় এখন মাপঝোঁক শুরু করেছে। এই পরিকল্পণা বাস্তবায়নের পরেই গজুকাটার ১৩৫৭নং পিলার থেকে শুরু করে মৌলভীবাজারের লাতু সীমান্ত পর্যন্ত ৮টি গ্রামের ভারতীয়দের তাদের নিয়ন্ত্রনে নিয়ে যাবে।
সরেজমিন বিয়ানীবাজারের গজুকাটা সীমান্ত এলাকায় গেলে কয়েকজন ভারতীয় নাগরিক বলেন, তারা ভারতীয় নাগরিক হওয়ার পরও অনেকটা সুবিধা বঞ্চিত অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। কাটা তারের বেড়া থাকায় তারা সকালে জীবিকার জন্য বের হয়ে নিদৃষ্ট সময়ের মধ্যে আবার ভেতরে প্রবেশ করতে হয়। একটু দেরি হলে গেইট বন্ধ করে দেয় বিএসএফ। তাদের মতে, এই অবস্থা চলতে থাকায় তাদের সন্তানদের লেখা পড়ায় বিঘœসহ নানা সমস্যার সম্মূখিন হতে হচ্ছে। নতুন করে কাটা তারের বেড়া নির্মাণ হলে মূল গেইট উন্মোক্ত করে দেয়া হবে আর এতে করেই তারা সকল সুবিধা সহজে ভোগ করতে পারবেন।
এদিকে সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী বাংলাদেশীরা বলেছেন, আন্তর্জাতিক সীমান্তে নো-ম্যানস ল্যান্ডের ১৫০ গজের মধ্যে কোন স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না বলে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত আইন রয়েছে। সেই মোতাবেক ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) নো-ম্যানস ল্যান্ড থেকে ১৫০ দূরে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করেছিল। ভারতীয় পক্ষ দীর্ঘকাল ধরে দাবি করে আসছিল সেই আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে নো-ম্যানস ল্যান্ড থেকে ১৫০ গজের ভেতর কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করবে। এখন ভারত সরকারের সেই দাবি বাংলাদেশের নিকট থেকে আদায় করে নিলো এবং সীমান্তের শূন্য রেখা থেকেই কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের কাজ শুরু করে দিয়েছে।
একাধিক সূত্রে জানাগেছে, গত বছরের ৩ ও ৪ অক্টোবর দিল্লিতে অনুষ্ঠিত ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ও বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর ৪৩তম সম্মেলনে এতদসংক্রান্ত নথি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই নথি অনুযায়ী এখন ভারত সীমান্তের শূন্য রেখা থেকে এক স্তরের কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করতে পারবে। আন্তর্জাতিক সীমান্তের অবস্থানকারী ভারতীয় জমিতে থাকা মোট ২৫০ গ্রামের বাসিন্দাদের সুবিধার কথা বলে এক স্তরের কাঁটাতারের বেড়া (সিঙ্গেল রো ফেন্স) নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছিল ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)।
দুবাগ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ওমর ফারুক জানান, সীমান্ত আইন লঙ্গন করে ৯০’র দশকে ভারত নো ম্যান্স ল্যান্ডের ১৫০ গজ ভেতরে কাটা তারের বেড়া নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। সে সময় উচ্চ পর্যায়ের চাপে ভারত সরকার পিছু হটতে বাধ্য হয়। সাবেক ওই জনপ্রতিনিধির মতে, ভারত এক স্থরের কাটা তারের বেড়া নির্মাণ করলে এলাকাগুলোতে ভারতীয় নাগরিক ও বাংলাদেশীদের মধ্যে বিরোধ দেখা দিতে পারে। তাঁর মতে, সীমানা নির্ধারনের সময় আঁকা বাঁকা অবস্থায় সীমা রেখা নির্ধারণ এবং জঠিল ভাবে সীমান্ত পিলার স্থাপণের ফলে অনেক বাংলাদেশীর ভ’মি ভারত অংশে এবং ভারতীয়দের ভ’মি বাংলাদেশ অংশে চলে গেছে। অনেকের পুকুর ও বশত ঘর বেদখলে চলে একই অবস্থানে রয়েছ। এক স্থরের কাটা তারের বেড়া নির্মাণ হলে অনেক বাংলাদেশী হারাবে তাদের দখলীয় ভ’মি পাশাপাশি ভারতও একই অবস্থায় পড়বে। তাই এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়ার আশংকা করছেন ওই জনপ্রতিনিধি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।