Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

নেপালের নয়া প্রধানমন্ত্রী ও চীন-ভারতের সাথে ভারসাম্য রক্ষার প্রশ্ন

| প্রকাশের সময় : ২১ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

গেøাবাল টাইমস : নেপালের প্রধানমন্ত্রী ও নেপাল কম্যুনিস্ট পার্টির (মাওয়িস্ট-সেন্টার) চেয়ারম্যান পুষ্প কমল দাহাল ওরফে প্রচন্ড গত ২৪ মে পদত্যাগ করেছেন। এর আগে নেপালি কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট শের বাহাদুর দিউবার সাথে ঐকমত্য অনুযায়ী প্রচন্ড নয় মাস প্রধানমন্ত্রীত্ব করার পর তার কাছে নেতৃত্ব হস্তান্তর করেন। তিনি এখন নেপালের প্রধানমন্ত্রী।
নেপালের রাজা পৃথ্বী নারায়ণ শাহ চীন ও ভারতের মধ্যে স্যান্ডউইচ হয়ে থাকা ভারতকে ‘দুই পাথরের মাঝে একটি আলু’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। নেপাল যদিও চীনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগের অংশ হওয়ার জন্য চীনের সাথে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে, দেশটি তার ভৌগোলিক সুবিধা কাজে লাগাতে পারে এবং দক্ষিণ এশিয়ার পাশাপাশি চীন ও ভারতকে সংযুক্তকারী একটি গতিশীল সেতু হতে পারে যা তার অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে।
রাজা নেপালের সর্বাধিক কল্যাণ অর্জন করতে চীন ও ভারতের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার জন্য তার উত্তরাধিকারীদের হুঁশিয়ার করে দিয়েছিলেন। এই ভারসাম্য রক্ষা নেপালের সকল নেতৃত্বের জন্য এক চিরন্তন বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে নেপাল তার নয়া সংবিধান গ্রহণের পর থেকে তিনটি প্রধান রাজনৈতিক দল থেকে যথাক্রমে তিনজন প্রধানমন্ত্রী পেয়েছেঃ নেপাল কম্যুনিস্ট পার্টির (ঐক্যবদ্ধ মার্কসপন্থী-লেনিনপন্থী) চেয়ারম্যান খড়গ প্রসাদ অলি, নেপাল কম্যুনিস্ট পার্টির (মাওয়িস্ট-সেন্টার) চেয়ারম্যান প্রচন্ড এবং নেপালী কংগ্রেস-এর প্রেসিডেন্ট শের বাহাদুর দিউবা। তাদের কারো মেয়াদ এক বছর অতিক্রম করেনি বা করবে না।
প্রধানমন্ত্রী অলি ক্ষমতায় থাকা কালে ভারতের অবরোধের কারণে চীনের কাছে সমর্থন চেয়েছিলেন। অলির ব্যাপারে নেতিবাচক ধারণা পোষণকারী ভারত তাকে ক্ষমতা ত্যাগে বাধ্য করতে ঐক্যবদ্ধ মার্কসবাদী-লেনিনবাদী ও মাওয়িস্ট-সেন্টার পার্টির জোট ভাঙতে প্রচন্ডকে সমর্থন দেয়।
প্রচন্ড তার দ্বিতীয় মেয়াদে চীন ও অলির মধ্যে স্বাক্ষরিত সহযোগিতা চুক্তি বরফে মুড়ে রেখে ভারতপন্থী নীতি গ্রহণ করেন। দিউবা এখন ক্ষমতায় এবং এখন দেখার বিষয় যে তিনি চীন ও ভারতের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা এবং নেপালি জনগণের জন্য কল্যাণ চান কিনা।
নেপালি কংগ্রেস ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক সব সময়ই মসৃণ ছিল। দিউবা তার বিরাট রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা নিয়ে তার পূর্বসূরিদের চেয়ে চীন ও ভারতের সাথে নেপালের সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে আরো কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারেন।
১২ মে নেপাল চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। দু’দিন পর নেপাল সাফল্যের সাথে তার স্থানীয় নির্বাচনের প্রথম পর্যায় সম্পন্ন করে। এসব থেকে বোঝা যায়, বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের কাঠামোর মধ্যে নেপাল চীনের সহযোগিতা প্রত্যাশা করছে।
নেপালি জনগণের অভিন্ন আকাক্সক্ষা হচ্ছে চীন ও ভারতের দ্রæত উন্নতি থেকে লাভবান হতে ও দারিদ্র থেকে মুক্তি পেতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন।
ভূমকম্প-উত্তর নেপালে পুনর্গঠন, অবকাঠামো পুননির্মাণ ও পানি সম্পদ উন্নয়নে নেপালকে সাহায্য করতে চীনের ইচ্ছা, কারিগরি ক্ষমতা ও আর্থিক সামর্থ আছে। ভারতের উচিত চীনের সাথে নেপালের সাহযোগিতা এবং বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের মাধ্যমে অথনৈতিক উন্নয়ন লাভে নেপালকে সমর্থন করা।
সাম্প্রতিক চীন-ভারত সম্পর্ক নি¤œতম পর্যায়ে নেমে এসেছে। পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের মধ্য দিয়ে যাওয়া চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর নিয়ে উদ্বেগের কারণে ভারত বেল্ট অ্যান্ড রোড ফোরামে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। চীনের বাধাদানের কারণে ভারত নিউক্লিয়ার সাপ্লায়ার্স গ্রæপে প্রবেশ করতে পারেনি বলে চীনের প্রতি তার গাত্রদাহ রয়েছে। এছাড়া পাকিস্তানের জয়শে মোহাম্মদ নেতা মাওলানা মাসুদ আজহারকে চীনের বাধার কারণে ভারত জাতিসংঘের কালো তালিকাভুক্ত করতে পারেনি বলেও ভারত চীনের প্রতি অসন্তুষ্ট।
ভারত দালাইলামা ও ভারতে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত রিচার্ড ভারমাকে দক্ষিণ তিব্বত সফরের অনুমতি দেয় যা চীনের স্বার্থের ক্ষতি করেছে। তা সত্তে¡ও চীন সাংহাই সহযোগিতা সংস্থায় ভারতের অন্তর্ভুক্তির বিরোধিতা করেনি। চীন, নেপাল ও ভারতের সহযোগিতা জোরদার করা, শূন্য সমষ্টি চিন্তা পরিত্যাগ ও জয়ী হওয়ার পরিস্থিতি খোঁজা উচিত। ধারণা করা হয় যে, চীন ও ভারতের সাথে লেন-দেনের এবং নেপালের লোকদের কল্যাণে কাজ করার সক্ষমতা দিউবার আছে। আশা করা হচ্ছে যে, দিউবার নেতৃত্বে নেপাল দীর্ঘমেয়াদী ও স্থিতিশীল সরকারের জন্য একটি ভালো ভিত্তি স্থাপনের লক্ষ্যে গণতান্ত্রিক রূপান্তর বাস্তবয়ন করবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চীন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ