পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
এপি ও সিএনএন : রাশিয়া রাক্কার বাইরে এক বিমান হামলায় ইসলামিক স্টেটের (আইএস) প্রধান আবু বকর আল বাগদাদিকে সম্ভবত হত্যা করেছে বলে ঘোষণা করেছে। রাশিয়ার এ দাবির পর আল-বাগদাদির ভাগ্য নিয়ে এক অনিশ্চয়তা ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। খোদ রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বাগদাদির নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত নন বলে জানিয়েছেন। অন্যদিকে মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, বাগদাদি নিহত হওয়ার নিশ্চিত কোনো প্রমাণ নেই।
রাশিয়ার সেনাবাহিনী জানায়, ২৮ মে আল বাগদাদি আই এসের কার্যত রাজধানী রাক্কার দক্ষিণে একটি স্থানে সভা করছেন বলে একটি ড্রোনের পাঠানো তথ্যে জানা যায়। তারপর রুশ সুখোই জঙ্গি বিমান সেখানে হামলা চালায়। ঐ সভায় আই এস সামরিক পরিষদের সিনিয়র কমান্ডারগণ, ৩০ জন মাঝারি পর্যায়ের ফিল্ড কমান্ডার এবং সভার নিরাপত্তার জন্য ৩শ’রও বেশী আইএস যোদ্ধা উপস্থিত ছিলেন। ১০ মিনিট ধরে পরিচালিত হামলায় সবাই নিশ্চিহ্ন হয়। নিহতদের মধ্যে আল বাগদাদিও থাকতে পারেন।
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার রাতে বলে, আল বাগদাদি রাক্কা থেকে আইএসের প্রত্যাহারের বিষয় আলোচনার জন্য বৈঠক করছিলেন। খবর পেয়ে ড্রোনগুলোকে এলাকা মনিটর করার জন্য পাঠোনো হয়। তারপর এসইউ -৩৪ বোমারু ও এসইউ-৩৫জঙ্গি বিমানগুলো হামলা চালায়। মন্ত্রণালয় বলে, হামলা চালানোর আগে তারা মার্কিনীদের অবহিত করে। মন্ত্রণালয় আরো বলে, বিভিন্ন চ্যানেলের মাধ্যমে আল বাগদাদির মৃত্যুর খবর যাচাই করে দেখা হচ্ছে। মস্কোতে এক সংবাদ সম্মেলনে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, এ তথ্যের ব্যাপারে আমি একশ’ ভাগ নিশ্চিত নই। তবে তার মুত্যুর খবর যদি নিশ্চিত হয় তবে তার গুরুত্ব নিয়ে অতিরিক্ত মন্তব্য করা অপ্রয়োজনীয়।
এদিকে ক্রেমলিন বলেছে, সিরিয়ায় রাশিয়ার বিমান হামলায় আইএস প্রধান আল বাগদাদি নিহত হওয়ার দাবি বিষয়ে আলোচনা করার জন্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন শুক্রবার তার নিরাপত্তা পরিষদের সাথে বৈঠক করেন। তার মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানান, প্রতিরক্ষামন্ত্রী সেরগেই শোইগু সভায়য় বলেন, রাক্কায় রুশ বিমান হামলায় ১শ’রও বেশী জঙ্গি মারা গেছে । তাদের মধ্যে আইএস নেতৃত্বের সদস্যরাসহ সম্ভবত আল বাগদাদিও রয়েছেন।
সিরীয় বিরোধী কর্মীরা ২৮ মে রাক্কার দক্ষিণে বিমান হামলার কথা এবং তাতে এক ডজনেরও বেশী লোক নিহত হওয়ার কথা জানিয়েছে। ব্রিটেন ভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস বলেছে, রাতলা ও কাসরাত নামক দু’টি গ্রামের সংযোগকারী রাস্তায় চালানো হামলায় ১৮ জন নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে ১০ জন আইএস সদস্য রয়েছে।
মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের এক মুখপাত্র এ খবর সম্পর্কে সতর্কতা অবলম্বনের আহবান জানান। মার্কিন সেনাবাহিনীর লে.কর্নেল রায়ান ডিলন শুক্রবার বলেন, এর আগেও এ ধরনের কয়েকবার করা দাবি মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। আমরা এ বিষয়ে কোনো নিশ্চিত প্রমাণ পাইনি। পেন্টাগনের মুখপাত্র ক্যাপ্টেন জেফ ডেভিসও বলেন, এ খবর সমর্থন করার মত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
সি এন এনের আন্তর্জাতিক সংবাদদাতা আরওয়া ড্যামন মধ্যপ্রাচ্যে আইএস বিরোধী লড়াইয়ের সংবাদ প্রেরণ করেন। তিনি বলেন, রুশ বিমান হামলায় আল বাগদাদি নিহত হওয়ার খবর সন্দেহের সাথে গ্রহণ করা উচিত। শুক্রবার তিনি বলেন, রাশিয়ানরা বলেছে, তারা এখনো যাচাই করে দেখছে যে যে বৈঠকে রুশ বিমান বোমা বর্ষণ করে সেখানে আল বাগদাদি উপস্থিত ছিলেন কিনা।
আরওয়া বলেন, আইএসের মত একটি দক্ষ গ্রæপ এবং আল বাগদাদির নিজের সবার চোখের আড়ালে থাকার কথা বিবেচনা করলে এ ধরনের একটি বড় বৈঠক ও গ্রæপের এত শীর্ষ নেতৃত্বের সাথে তার উপস্থিত থাকার কথা ভাবা কঠিন। এটা বাস্তবসম্মত বলে মনে হয় না।
তিনি বৈঠকের স্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, রাক্কায় যেখানে প্রচন্ড লড়াই চলছে সেখানে আল বাগদাদি থাকবেন কেন? আগেও তার নিহত বা আহত হওয়ার খবর প্রকাশিত হয়েছে, কিন্তু কোনোটারই সত্যতা মেলেনি।
তিনি বলেন, শেষ কথা হচ্ছে, আমরা স্মরণ করতে পারি যে এ সংগঠনের নেতাদের হত্যা করা হলেও তার অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়নি।
সি এনএনের সিনিয়র আন্তর্জাতিক সংবাদদাতা ক্লারিসা ওয়ার্ড বলেন, রুশদের দেয়া তথ্য আইএস নেতার প্রচলিত জীবনযাপন রীতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। ড্রোন হামলার ভয়ে তারা এত বড় গ্রæপে বৈঠক করে না, কারণ তাদের উপর অব্যাহত বোমা বর্ষণ করা হয়।
আল বাগদাদি নিহত হয়ে থাকলে তা হবে সিরিয়ার শেষ শক্তঘাঁটি ও কার্যত রাজধানী রাক্কা ও ইরাকে আইএসের শেষ শক্তঘাঁটি মসুল ধরে রাখার জন্য মরণপণ লড়াইরত ইসলামিক স্টেটের জন্য এক মারাত্মক আঘাত। মধ্য চল্লিশ বয়সের বাগদাদি ৩ নভেম্বর তার সর্বশেষ অডিও মেসেজে মসুলের জন্য লড়াই চালিয়ে যেতে তার অনুসারীদের প্রতি আহবান জানিয়েছিলেন।
তার অসমর্থিত মৃত্যুর খবর এমন সময়ে প্রচারিত হল যখন আইএসের অধিকাংশ কমান্ডারকে মায়াদিনে পুনঃমোতায়েন করা হয়েছে। এটি সিরিয়ার আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত ফোরাত নদীর অববাহিকায় ইরাক সীমান্তবর্তী একটি প্রত্যন্ত শহর।
অতি সম্প্রতি আইএস ইরানের পার্লামেন্ট ও ইসলামী বিপ্লবের নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনির মাজারে বোমা হামলা চালিয়ে ১৭ জনকে হত্যা করে। আহত হয় ৫০ জনেরও বেশী। ৩ জুন তারা লন্ডনে হামলা চালালে ৮ জন নিহত হয়। এ দু’টি স্থানেই হামলা ঘটে রাশিয়ার বিমান হামলায় আল-বাগদাদির হত্যার দাবির পর।
সোমবার আইএস তাদের প্রধান মুখপাত্র আবু হাসান আল মুহাজেরের অডিও বার্তা প্রকাশ করে। এতে তিনি রমজান মাসে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে হামলা চালাতে সমর্থকদের প্রতি আহবান জানান। এতে বাগদাদির কোনো উল্লেখ করা হয়নি।
ওয়াশিংটন ভিত্তিক মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো চার্লস লিস্টার বলেন, সিরিয়ায় হস্তক্ষেপের পর থেকে ভুয়া দাবি করা ও ভুল তথ্য প্রদানের রাশিয়ার দীর্ঘ রেকর্ড রয়েছে। তিনি বলেন, কোনো বোধগম্য যুক্তি নেই যে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের রাক্কার উপর চূড়ান্ত হামলার দিন কয়েক আগে আল বাগদাদি একটি ঘেরাও জায়গায় সিটিং টার্গেট হওয়ার ঝুঁকি নেবেন। উল্লেখ্য, আল বাগদাদির গ্রেফতার বা হত্যার জন্য যুক্তরাষ্ট্র আড়াইকোটি ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছে।
আল বাগদাদি যদি নিহত হন তাহলে তার স্থান কে দখল করবেন তা পরিষ্কার নয়। মার্কিন বিমান হামলায় আইএস বহু ঊর্ধ¦তন নেতাকে হারিয়েছে যার মধ্যে ফাযিল আহমাদ আল হায়ালিও আছেন। যুক্তরাষ্ট্র তাকে আল বাগদাদির পর দ্বিতীয় নেতা মনে করত।
সাদ্দাম আমলের সাবেক ইরাকি কর্মকর্তা আবু সালেহ হাইফা নামে পরিচিত আয়াদ আবদেল রহমান আল ওবেইদি আইএসের বর্তমান দ্বিতীয় নেতা। কিন্তু ইরাক সরকারের পরামর্শদাতা ও ইরাক বিশেষজ্ঞ হিশাম আল হাশিমির মতে, তিনি খলিফা হিসেবে আল বাগদাদির স্থলাভিষিক্ত হবেন না যেহেতু এ খেতাব শুধুমাত্র হযরত মুহাম্মদ সা.-এর কুরাইশ বংশের সদস্যদের জন্য সংরক্ষিত। আল ওবেইদি কুরাইশ নন।
আল হাশিমি ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে আল বাগদাদির মৃত্যু আইএসকে ৩টি গ্রæপে বিভক্ত করতে পারে। এক দল মূল সংগঠন আল কায়েদার কাছে ফিরে যেতে ও ইরাকে তার শাখা গঠন করতে পারে, আরেক গ্রæপ সিরিয়ায় আল কায়েদার শাখা ফাতাহ-আল শাম ফ্রন্টে যোগ দিতে পারে এবং তৃতীয় গ্রæপ যারা সবচেয়ে দুর্বল তারা বাগদাদির মতাদর্শের প্রতি অনুগত থাকতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।