Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

সরকারি সংগ্রহ ব্যর্থতার মুখে

দক্ষিণ-পশ্চিমে ধান-চাল মিলারদের গা-ছাড়া ভাব, কৃষকরা মুখ ফিরিয়ে

| প্রকাশের সময় : ১৭ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সরকার নির্ধারিত মূল্যে মিজানুর রহমান তোতা : ধান ও চাল সংগ্রহ এবার পুরোপুরি ব্যর্থ হওয়ার পথে। সরকার নির্ধারিত মূল্যে কৃষক ধান বিক্রি করেননি। তারা নিয়েছেন মুখ ফিরিয়ে। মিলাররা সরকারের কঠোর নির্দেশনা সত্বেও চাল সরবরাহ করছেন না খাদ্যগুদামে। তাদের গাছাড়া ভাব। এর কারণ সরকারের সংগ্রহ মূল্য আর বাজার মূল্যের ফারাক। এই চিত্র দক্ষিণ-পশ্চিমের। খুলনা আঞ্চলিক খাদ্য অধিদপ্তরের একটি সুত্র জানায়, এবার আমরা রয়েছি হাতগুটিয়ে। খাদ্যগুদামের লেবাররাও কাজ পাচ্ছেন না। কর্মকর্তা হাল ছেড়ে দিয়ে বসে আছেন। বহু মিলার এবার চুক্তিবদ্ধ হননি। আবার চুক্তিবদ্ধ মিলাররাও খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের তাগিদ দেয়ার পরও সাড়া দিচ্ছেন না। তারা সাফ বলে দিচ্ছেন চুক্তি করেছি ঠিকই কিন্তু চাল সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে না।
খাদ্য বিভাগের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, আমরা টেলিফোন, মোবাইলে ও সরাসরি খবর পাঠিয়ে বারবার তাগিদ দিচ্ছি চুক্তিবদ্ধ মিলারদের। কিন্তু চাল যদি সরকারী খাদ্যগুদামে না ঢোকে, তাহলে আমাদেরই বা কি করার আছে। তবে কিছু মিলার জানিয়েছেন চাল সরবরাহ করবেন, কিন্তু চাল হাতে না পাওয়া পর্যন্ত সেটিও নিশ্চিত করে বলা মুশকিল। এই অঞ্চলের ১০ জেলার সরকারী খাদ্যগুদামে চাল সরবরাহ এবার প্রায় শূন্য। ছিটেফোটা কয়েকটি গুদামে সরবারহ কোনরকমে দেখানো হলেও সেটি থেকে আপদকালীন মজুদের সংশয় থেকে রেহাই পাওয়ার উপায় থাকছে না। ওই খাদ্য কর্মকর্তা নামপ্রকাশ করতে নিষেধ করে বলেন, আঞ্চলিক ও কয়েকটি জেলা কর্মকর্তার অতীতের নানা দুর্নীতি, অনিয়ম, দুর্ব্যবহার এবং ক্রয়-বিক্রয়ে প্রভাবশালীদের অর্থ আয়ের খবরদারি অনেকাংশে সংগ্রহ অভিযান ব্যর্থ হওয়ার জন্য দায়ি। অধিকাংশ সংগ্রহ মৌসুমে ধান চিটাসহ নানা কারণ দেখিয়ে কৃষককে হয়রানি ও সরকারী খাদ্যগুদামে ধান বিক্রিতে বিতৃঞ্চা সৃষ্টি করা, মিলারদের চাল সরবরাহের ক্ষেত্রে ’ওপেন’ চুক্তির সাথে একটা ’অলিখিত গোপন’ চুক্তির কারণে তারাও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।
সুত্র জানায়, সরকার এবার প্রতিকেজি ধান ২৪ টাকা ও চাল ৩৪টাকা ক্রয় মূল্য নির্ধারণ করে। কৃষকের স্বার্থে সংগ্রহ অভিযান পরিচালিত করার কথা বলা হলেও সাধারণত কৃষকের স্বার্থ সংরক্ষিত হয় না। ধান ও চালের বাজার মূল্য অনেক বেশী হওয়ায় এবার সংগ্রহ অভিযান ব্যর্থ হচ্ছে এটি অনেকটাই নিশ্চিত করে বলা যায়। সংশিষ্ট একটি সুত্র জানায়, গত কয়েক বছরের চিত্র হচ্ছে সরকার সংগ্রহ অভিযান ঘোষণা করে, দিন যায় মাস যায় সংগ্রহ অভিযান সফল হয় না। কেন সংগ্রহ অভিযান ব্যর্থ হয়, তা গভীরভাবে কখনো তদন্ত করা হয় না। তাছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে ধানের আড়তগুলোতে নজরদারীর ব্যবস্থা নেই। যার কারনে সংগ্রহের পিক পিরিয়ডে কৃষকদের কাছ থেকে মুনাফালোভী মজুদদারদের আড়তে চলে যায় ধান। অভিযোগ রয়েছে খাদ্য অধিদপ্তরের সংগ্রহ অভিযান চলে গতানুগতিক ধারায়। এমনিতেই বাজার মূল্য ও সংগ্রহ মূল্যের ফারাক থাকে বিরাট। তাছাড়া নানা কারনে সাধারণ কৃষকরা সরকারী খাদ্যগুদামে ধান বিক্রি করতে চায় না। আগ্রহী না হওয়ার কারনও কখনো অনুসন্ধান করা হয় না। আমদানিকৃত চালে সরকারী খাদ্যগুদামগুলো ঠেসে রাখার যেন মানসিকতা হয়ে গেছে।
কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ৬ লক্ষাধিক হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করে ২৪ লাখ মেট্রিক টনেরও বেশী চাল উৎপাদন হয়। এ অঞ্চলে মিলারের সংখ্যা ২হাজার ৯৩৮জন। সেখানে সরকারী খাদ্যগুদামে চাল সরবরাহের জন্য সহ¯্রাধিক মিলারের তালিকা তৈরী করা হয় চুক্তিবদ্ধ করার জন্য। এর মধ্যে কিছু চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। তারাও চাল সরবরাহ করছেন না সরকারী খাদ্যগুদামে। সংশিষ্ট একটি সুত্র জানায়, তাদের শো-কজ কিংবা লাইসেন্স বাতিল হবে কিনা তার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। সর্বশেষ ৩১ মে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার দিন ধার্য্য ছিল। কিন্তু কেউ সাড়া দেননি।
এ ব্যাপারে খাদ্য বিভাগের খুলনা আঞ্চলিক অফিস গোপনীয়তা বজায় রাখছে। যশোর, খুলনা, কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন জেলার খাদ্য কর্মকর্তারা কোন তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। বলেন নিয়েধ আছে। খুলনা আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রককে (আরসি ফুড) দু’দিন কয়েক দফা মোবাইল করে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে জেলা পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, আমাদের ব্যর্থতার কথা কি আমরা স্বীকার করবো। ধান ও চাল সংগ্রহ সফল করে আপদকালীন মজুদের আশংকা কাটাতে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কিনা-এর জবাবে তিনি বলেন, পদক্ষেপ তো নিবেন খুলনা আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক তার কোন নির্দেশনা নেই। তাছাড়া তার কোন তৎপরতা নেই এ ব্যাপারে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সরকার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ