Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মেঘনায় অবাধে নিধন হচ্ছে বোয়াল মাছের পোনা

| প্রকাশের সময় : ১৭ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে: নরসিংদীর মেঘনায় অবাধে বোয়াল মাছের পোনা নিধন করা হচ্ছে। মেঘনার বুকে প্রতিদিন বোয়ালের পোনা ধরার মহোৎসব চলছে। কারেন্টজাল দিয়ে, শত শত খেউ কেটে, প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ পোনা ধরে নরসিংদী জেলা শহরসহ বিভিন্ন বাজারে অবাধে বিক্রি করছে। নরসিংদীর মৎস্য বিভাগসহ স্থানীয় প্রশাসন পোনা নিধনকারী খেউয়ের মালিক তথা অসাধু জেলেদের বিরুদ্ধে কোন কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছে না। বাজারে বোয়ালের পোনার ব্যাপক আমদানী দেখে সাধারণ মানুষ বিরুপ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করছে। অথচ মৎস্য বিভাগের টনক নড়ছে না।
প্রবীন লোকেরা জানিয়েছে, নরসিংদীর মেঘনা নদীর সুস্বাদু বোয়াল মাছের স্বাদ পায়নি এমন মানুষের সংখ্যা খুবই কম। প্রতি বছর নরসিংদীর মেঘনা ও এর শাখা প্রশাখাগুলোতে লক্ষ লক্ষ বোয়াল মাছ ধরা পরে। মেঘনার অববাহিকার মানুষ বোয়াল মাছ ধরে খায়। জেলেরা এসব বোয়াল মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে। এতে সকল শ্রেণী পেশার মানুষই বোয়াল মাছ খাওয়ার সুযোগ পায়। বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ় মাসে ভারী বৃষ্টিপাত হলে মেঘনা ও এর শাখা সমূহের সাথে সংযুক্ত খাল বিল দিয়ে বোয়াল মাছ উজানে উঠতে থাকে। এসময় খালের পানিতে মানুষ জাল, চাই, টেটা, কোচ ইত্যাদি যন্ত্র দিয়ে বোয়াল ধরে। প্রতি বছরই বর্ষা মৌসুম এলে নরসিংদী জেলার বিভিন্ন উপজেলার খাল বিল, নদী-নালা ইত্যাদিতে উৎসবমুখরভাবে বোয়াল মাছ ধরে স্থানীয মানুষ। বর্ষার পানিতে খাল বিল নদী-নালা ও প্লাবন ভূমি প্লাবিত হলে নরসিংদীর মানুষ পাতা বড়শী, টেটা ও জাল দিয়ে বোয়াল ধরে। বোয়ালের মুন্ডু দিয়ে মাস ও মুগের ডাল রান্না করে খাওয়া বাঙালীর যুগযুগের ঐতিহ্য। প্রবচন রয়েছে ‘বোয়াল মাছের কোয়াল, রুই মাছের পেটি, যে না খায় সে হচ্ছে বেটি’। অর্থাৎ বোয়াল মাছ সব পুরুষেরাই খায়। সাধারণত বিভিন্ন কুসংস্কারের কারনে বাঙালী মেয়েরা গর্ভবতী থাকাবস্থায় বা অন্য কোন কোন সময় বোয়াল মাছ খেতো না। সে থেকেই এ প্রবচনটি চালু হয়েছে বলে জানা যায়। বোয়াল মাছের কোন অংশই ফেলা হয় না। বোয়াল মাছের কোয়াল বলতে মাথা ছোট করে কেটে এবং পেটের আতুরীগুলো ভাল করে ধূয়ে একত্রে পিয়াজ রসুন দিয়ে কাঁচা ভূনা করে খেতে খুবই সুস্বাদু। ভোজন রসিকরা যুগযুগ ধরেই বড় বড় বোয়াল মাছ কিনে এভাবে রান্না করে খায় এবং অতিথিদেরকে খাওয়ায়। সুদূর অতীতকাল থেকে বাঙালীরা বোয়াল মাছের মাথা দিয়ে লাউ রেধে খেয়ে আসছে। বোয়াল মাছের লেজে রয়েছে অন্য রকম স্বাদ। ভোজন বিলাসী মানুষেরা বোয়াল মাছের মুড়িঘন্ট করে খেয়ে থাকে। নরসিংদীর মেঘনার বোয়াল মাছ রাজধানী ঢাকার বাজারে খুবই জনপ্রিয় মাছ হিসেবে পরিচিত। নরসিংদীর জেলেরা মেঘনা থেকে বোয়াল মাছ ধরে ঢাকার বাজারসহ বিভিন্ন উচ্চ বংশীয় লোকদের বাড়ীতে গিয়ে বিক্রি করতো। প্রবীন লোকেরা জানিয়েছে নরসিংদীর মেঘনার বোয়াল মাছ ঢাকা নবাবদের খুবই পছন্দের মাছ ছিল। নবাবরা বংশ পরস্পরায় নরসিংদী থেকে বোয়াল মাছ নিয়ে খেতো। সেই সময় তারা নরসিংদীর বোয়াল মাছ বিশেষ ব্যবস্থায় সুদূর কাশ্মীর পর্যন্ত পাঠাতো। এ ছাড়া রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে বিশেষ মর্যাদায় রান্না করা হতো নরসিংদীর বড় বড় বোয়াল মাছ। ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রীয় অতিথিরা বোয়াল মাছ খেয়ে তাদের রসনা তৃপ্ত করতো। কিন্তু বিগত কয়েক দশক ধরে অবাধে বোয়াল মাছের পোনা নিধন করার কারণে মেঘনা থেকে বোয়াল মাছ হারিয়ে যেতে শুরু করেছে। ২০০৪ সালের পূর্বে দীর্ঘ ৫ বছর মেঘনায় বোয়াল খুব একটা ধরা পড়েনি। তখন বোয়াল মাছের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গিয়েছিল। সে সময় ৪ কেজি ওজনের একটি বোয়াল বিক্রি হতো কমবেশী এক হাজার থেকে ১২ শত টাকা। ২০০৪ সালের বন্যার পর নরসিংদীর মেঘনায় আবার বোয়াল ধরা পড়তে শুরু করে। কিন্তু পূনরায় মেঘনা থেকে কারেন্ট জাল দিয়ে বোয়াল মাছের পোনা নিধন শুরু হবার পর বোয়ালের সংখ্যা আবার কমতে শুরু করে। স¤প্রতি নরসিংদীর ৪৫ কিলোমিটার মেঘনা অববাহিকা ব্যাপকভাবে বোয়াল মাছের পোনা নিধন শুরু হয়েছে। জেলেদের জালে ধরা পড়ছে লক্ষ লক্ষ পোনা। এসব পোনা এখন বাজারে অবাধে বিক্রি হচ্ছে। চোখের সামনে এসব বোয়ালের পোনা বিক্রি করতে দেখে সচেতন গ্রাহকরা আফসোস করলেও নরসিংদীর মৎস্য বিভাগ নির্বিকার। সচেতন গ্রাহকরা অভিযোগ করেছে যে, তারা অফিসে বসে বেতন নেয়া ছাড়া আর কোন কাজ করছে না। মেঘনা পোনা নিধন নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাড়িয়েছে। অথচ মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা কোনো ভ্রæক্ষেপ করছে না। নরসিংদী শহরসহ জেলার বাজারগুলোতে বোয়ালের পোনায় সয়লাব হয়ে গেছে। চোখের সামনে এসব দেখেও মৎস্য কর্মকর্তারা রহস্যজনকভাবে নির্লিপ্ত হয়ে রয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মেঘনা

২৪ জানুয়ারি, ২০২২
৩ নভেম্বর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ