পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
গত মঙ্গলবার চট্টগ্রাম, কক্সবাজার রাঙামাটিসহ পাঁচ জেলায় ভয়াবহ পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ চরম মানবিক বিপর্যয়ে পড়েছে। বিশেষ করে রাঙামাটিতে বসবাসকারি মানুষজন অত্যন্ত শোচনীয় পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে। পাহাড় ধসে রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় চট্টগ্রামের সাথে এ জেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। কবে যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এতে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। বলা যায়, জেলাটি একটি বিচ্ছিন্ন এলাকায় পরিণত হয়েছে। এর মধ্যে গ্যাস, বিদ্যুৎ, বিশুদ্ধ পানি, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ও চিকিৎসা সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে। বিদ্যুৎ না থাকায় পানি উত্তোলন করা যাচ্ছে না, রোগীদের চিকিৎসাও যথাযথভাবে করা যাচ্ছে না। জেনারেটর চালিয়ে যে কাজ সম্পন্ন করবে, তাও প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। জ্বালানি তেলের সংকট দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামও আকাশ ছোঁয়া হয়ে গেছে। মানুষ এক অস্বাভাবিক ও মানবেতর পরিস্থিতির মধ্যে দিন কাটাতে বাধ্য হচ্ছে।
পাহাড়ি এলাকায় বসবাসরতরা যখন মানবিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন তখন এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের পরিবর্তে আমরা এক ধরনের দোষারোপের রাজনীতি দেখতে পাচ্ছি। সরকারি দল বিরোধী দল বিশেষ করে বিএনপিকে দোষারোপ করে বলছে, তারা দুর্গতদের পাশে দাঁড়াচ্ছে না। অন্যদিকে বিএনপি প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলেছে, দুর্গতদের পাশে না দাঁড়িয়ে তিনি বিদেশ ভ্রমণে গিয়েছেন। দুঃখের বিষয়, যেখানে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষের জীবন বাঁচানো এবং জরুরী ভিত্তিতে তাদের পাশে দাঁড়ানো প্রয়োজন, সেখানে রাজনীতিতে পারস্পরিক দোষারোপ চলছে। যে রাজনীতি কেবল দোষারোপের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, তা জনকল্যাণে কীভাবে কাজে লাগবে? স্মরণকালের ভয়াবহ পাহাড় ধসে এ পর্যন্ত দেড় শতাধিক মানুষ মারা গেছে।এ নিয়ে শোকে কাতর হওয়া এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানো যেখানে স্বাভাবিক তা দেখা যাচ্ছে না। পাহাড় ধসে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাঙামাটি। এ জেলায় এ পর্যন্ত সর্বাধিক ১০৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ভয়াবহ দুর্যোগের মধ্যে পড়ে এর যোগাযোগ ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র যে সরবরাহ করা হবে, সড়ক পথে তার কোনো উপায় নেই। জেলাটি সারাদেশ থেকে যেন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সেখানের মানুষকে নির্ভর করতে হচ্ছে স্টক পণ্যের উপর। সরবরাহ না থাকায় এ স্টক পণ্যের দামও এখন সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে। ৮৯ টাকার অকটেন বা পেট্রলের দাম বেড়ে হয়েছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত এলপি গ্যাসের দাম ৮৬০ টাকা থেকে বেড়ে হয়ে গেছে ১১০০ টাকা। ১৮ টাকা কেজির আলুর দাম হয়ে গেছে ৪০ টাকা। অন্যান্য শাক-সবজির দাম দ্বিগুণের বেশি হয়ে গেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম আরও বৃদ্ধি পাবে বলা আশাঙ্কা করা হচ্ছে। অন্যদিকে বিদ্যুতের অভাবে বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। মটর চালাতে না পারায় পানি তোলা যাচ্ছে না। ফলে অনেককে চড়া দামে পানি কিনে পান করতে হচ্ছে। অনেকে হ্রদের পানি ব্যবহার করছে। যারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তারা পড়েছে সবচেয়ে বেশি দুর্বিপাকে। বিদ্যুতের অভাবে ছোট-খাটো অস্ত্রপচার বন্ধ থাকার পাশাপাশি অন্যান্য চিকিৎসাও ব্যাহত হচ্ছে। রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কসহ বিভিন্ন সড়কের ১০৯টি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এসব সড়কের ৩৩টি জায়গায় বড় ধরনের ভাঙন রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে সড়ক মেরামত করে কবে যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হবে, তা কারো পক্ষেই বলা সম্ভব নয়। এমতাবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষ মানবেতর পরিস্থিতি থেকে কবে বের হয়ে আসতে পারবে তাও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন এবং ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য কী ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। সরকারের উচিত অবিলম্বে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ দেয়ার ব্যবস্থা করা। দলমত নির্বিশেষে সকলেরই ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানো প্রয়োজন। দোষারোপের রাজনীতিতে সময়ক্ষেপণ না করে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় গিয়ে মানুষের দুর্দশা লাঘবে ব্যবস্থা গ্রহণ করে মানবিকতার পরিচয় দেয়া উচিত। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের পাশাপাশি যে খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে, তা যাতে আরও খারাপ পরিস্থিতির দিকে না যায় তার আগেই উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সড়ক পথে যেহেতু যোগাযোগ আপাতত সম্ভব হচ্ছে না, তাই প্রয়োজনে হেলিকপ্টারে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে। পাহাড় ধসে যেসব পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছে, তাদের পাশে দাঁড়ানো সবচেয়ে বেশি জরুরী। তাদের পুনর্বাসনের পাশাপাশি খাদ্যনিরাপত্তার আওতায় নিয়ে আসতে হবে। ইতোমধ্যে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, অতি বৃষ্টিতে আবারও পাহাড় ধসের আশঙ্কা রয়েছে। এ আশঙ্কা সামনে রেখে পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে যারা এখনও বসবাস করছে, তাদের দ্রæত নিরাপদে সরিয়ে আনার ব্যবস্থা নিতে হবে। তা নাহলে পুনরায় পাহাড় ধস শুরু হলে আরও বড় ধরনের মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হতে পারে। আমরা আশা করব, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উদ্ভূত বিপর্যয় মোকাবেলায় দ্রæত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।