পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
উদ্ধার কাজে গিয়ে ২ কর্মকর্তাসহ ৪ সেনা সদস্যের প্রাণহানি : আহত অনেক, বহু নিখোঁজ : রাঙামাটি, বান্দরবান ও চট্টগ্রামের অনেক এলাকা যোগযোগ বিচ্ছিন্ন : প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর শোক
চট্টগ্রাম ব্যুরো, সৈয়দ মাহাবুব আহামদ রাঙামাটি ও মোঃ সাদাত উল্লাহ বান্দরবান থেকে : টানা বর্ষণে পার্বত্য জেলার রাঙামাটি, বান্দরবান ও চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে ১০৭ জন নিহত হয়েছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। তবে আমাদের সংবাদদাতাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী নিহতের সংখ্যা ৯০ জন হতে পারে। এর মধ্যে রাঙামাটিতে সেনা কর্মকর্তাসহ ৫৩জন, বান্দরবানে ৭ জন এবং চট্টগ্রামে ৩১ জন মারা গেছেন। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ এখনও মাটির নিচে অনেকে চাপা পড়ে আছেন। গত সোমবার মধ্য রাতে থেকে গতকাল মঙ্গলবার সকাল পযন্ত প্রাণহানির এ ঘটনা ঘটেছে। আহত হয়েছেন কয়েকশত। এখনও নিখোঁজ রয়েছেন অনেকেই। এদের মধ্যে অনেকেই স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। উদ্ধারে অভিযান চালাচ্ছে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। তবে বৃষ্টি কারণে উদ্ধার কাজ চালাতে তাদের বেগ পেতে হচ্ছে। মৃত ব্যক্তির সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। রাঙামাটি, বান্দবান ও চট্টগ্রামের অনেক এলাকা যোগযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
টানা বর্ষণে চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলায় পাহাড় ধসে প্রাণহানির ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন প্রেসিডেন্ট মো.আবদুল হামিদ। এক শোক বার্তায় প্রেসিডেন্ট নিহতদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। সেই সঙ্গে উদ্ধার কাজের সময় সেনা সদস্যদের মৃত্যুর ঘটনাতেও গভীর শোক প্রকাশ করেন। অন্যদিকে অতি বৃষ্টিতে পাহাড় ধসে হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক গতকাল বিকালেই ঘটনাস্থলে পৌঁছান এবং উদ্ধার কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া গতকাল সাংবাদিকদের বলেছেন, দুই দিন ধরে মাইকিং করে পাহাড়ি এলাকায় বসবাসকারীদের সতর্ক করা হয়। তারপরও তাদের আশ্রয়কেন্দ্র্রে আনা যায়নি। মানুষের জানের চেয়ে মালের মায়া বেশি। তাই তারা মালামাল রেখে আসতে চায় না। রাঙামাটিসহ পার্বত্য এলাকায় ১৮টি আশ্রয় কেন্দ্র্র খোলা হয়েছে। এগুলোতে সাড়ে চার হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। এখনও অনেকে নিখোঁজ রয়েছে।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, নিয়ম ভেঙে পাহাড় কাটা এবং পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসের কারণে প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমেই হতাহতের ঘটনা ঘটে। ২০০৭ সালের ১১ জুন চট্টগ্রামের সাতটি স্থানে মাটিচাপায় ১২৭ জনের মৃত্যু হয়। ২০০৮ সালের ১৮ অগাস্ট চট্টগ্রামের লালখান বাজার মতিঝর্ণা এলাকায় পাহাড় ধসে চার পরিবারের ১২ জনের মৃত্যু হয়। ২০১১ সালের ১ জুলাই চট্টগ্রামের টাইগার পাস এলাকার বাটালি হিলের ঢালে পাহাড় ও প্রতিরক্ষা দেয়াল ধসে ১৭ জনের মৃত্যু হয়। ২০১২ সালে ২৬-২৭ জুন চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান ও সিলেটে ৯৪ জনের প্রাণহানি ঘটে। ২০১৫ সালের ২৬-২৭ জুন টানা বর্ষণ, ধস আর পাহাড়ি ঢলে কক্সবাজারে ১৯ জনের মৃত্যু হয়।
সৈয়দ মাহাবুব আহামদ, রাঙামাটি থেকে জানান, ঝড়ো হাওয়া, টানা বর্ষন ও পাহাড় ধসে পার্বত্য জেলা রাঙামাটি স্মরণকালের বৃহত্তম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। ব্যাপক পাহাড় ধসে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ২ সেনা কর্মকর্তাসহ ৫৩ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। নিহতের সংখ্যার বাড়তে পারে বলে দাবি করেছে বিভিন্ন সূত্র। এখনও নিখোঁজ রয়েছে বেশ কয়েক জন। আহত হয়েছে অন্তত ৫৬ জন। দু’দিনের টানা বর্ষনের ধারাবহিকতায় মঙ্গলবার (১৩ জুন) রাত ও এসব হতাহতের ঘটনা ঘটে। হতাহতের ঘটনাস্থল রাঙামাটি সদর, কাউখালী, কাপ্তাই জুরাছড়ি ও বিলাইছড়ি উপজেলার বিভিন্ন এলাকা। এদিকে রাঙামাটির সাথে সকল জেলা এবং উপজেলা সমূহের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে দিনভর। জেলার কোথাও বিদ্যুৎ সংযোগ নেই, নেই অধিকাংশ মোবাইল নেটওয়ার্কও। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাৎক্ষনিকভাবে জেলায় শতাধিক আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে বিপর্যস্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী নিহতদের মধ্যে রাঙামাটি সদরে ২৪, কাউখালীতে ১৫, কাপ্তাইয়ে ৯, বিলাইছড়ি ২ জুরাছড়ি ২জন রয়েছে। দুই সেনা কর্মকর্তাসহ নিহত চার সেনা সদস্য উদ্ধার কাজ চালাতে গিয়ে পাহাড় ধসের মুখে পড়েন। এসময় আরো অন্তত: ১২ সেনা সদস্য আহত হয়েছেন। তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য হেলিকপ্টার যোগে চট্টগ্রাম সিএমএইচ এ পাঠানো হয়েছে। নিহত সেনা সদস্যরা হলেন মেজর মাহফুজ, ক্যাপ্টেন তানভীর, কর্পোরাল আজীজ ও সৈনিক শাহিন। এর মধ্যে ক্যাপ্টেন তানভির নব বিবাহিত এবং মেজর আেিজজের একটি সন্তান রয়েছে।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসন সুত্র জানায়, পাহাড় ধসে রাঙমাটি সদরের শিমুলতলী, ভেদভেদি, মানিকছড়ি এলাকায় অন্তত ২৪ জন নিহত হয়েছে। এ ছাড়া কাউখালীতে ১৫, কাপ্তাইয়ে ৯, বিলাইছড়ি ২ জুরাছড়ি ২জন রয়েছে। জেলা প্রশাসন প্রাথমিকভাবে নিহতদের পরিবার প্রতি ২০ হাজার টাকা করে নগদ সহায়তা ছাড়া ৩ কেজি করে চাউল প্রদান করেছে বলে জানা গেছে। কাউখালী থেকে আমাদের সংবাদদাতা জানান, উপজেলার ঘিলাছড়িতে নিহত হয় ৩জন, এরা হলো দবির হোসেন (৮৪) খোদেজা বেগম (৬৫), অজিফা খাতুন(৬০)। ঘাঘড়া ইউনিয়নে- নাসিমা বেগম (৬০) বৈশাখী চাকমা (১০), কলমপতি ইউনিয়নে লায়লা বেগম (২৮)। কাশখালী ইউনিয়নে ফাতেমা বেগম (৬০), মো ঃ মনির (২৫) ইসহাক (৩৪)। বেতবুনিয় ইউনিয়নে অংকাচিং মারমা (৫১), আচে মা মারমা (৩৬), শ্যামা মারমা, (১২), ক্যাচাচিং মারমা (৭) ফটিকছড়ি ইউনিয়নে লাই প্রæ মারমা (৪০) ও সুভাষ চাকমা (৩৫)। কাউখালীর সাথে সকল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। জুরাছড়িতে নিহতরা হলো চিত্রলতা (৫৫), বিশ্বমনি চাকমা (৬)। কাপ্তাই উপজেলার নতুন বাজার, রাইখালী ও বড়্ইছড়িতে পাহাড়ে ধসে ৯ জন মারা গেলেও তাদের নাম এ রিপোর্ট পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিলাইছড়ি উপজেলার কেংড়াছড়িতে পাহাড় ধসে ৩জন নিহত হয়েছে। রাঙামাটি সিভিল সার্জন ডাঃ শহীদ তালূকদার জানান, এ পর্যন্ত রাঙামাটি সদর হাসপাতালে ২১ জনের লাশ আনা হয়েছে। চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামে পাহাড় ধস, পাহাড়ী ঢল, ঝড়ো হাওয়া এবং বজ্রপাতে নারী, শিশুসহ ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে। জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানানো হয়, সন্ধ্যায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত রাঙ্গুনিয়ায় পাহাড় ধসে ১৩ জন ও পাহাড়ী ঢলে ৭ জনসহ ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া চন্দনাইশে পাহাড় ধসে ৪ জন, রাউজানে ঝড়ে ও পানিতে ভেসে ৩ জন, চট্টগ্রাম মহানগরীতে ২ জন এবং বাঁশখালীতে ১ জন মারা গেছে। ধস আতঙ্কে মহানগরীর বিভিন্ন পাহাড় থেকে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ২ শতাধিক পরিবারকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। গতকাল ভোর রাতের কয়েক সেকেন্ডের প্রচন্ড ঝড়ো হাওয়ায় লন্ডভন্ড হয় নগরীর হালিশহরের বিশাল এলাকা। ফইল্ল্যাতলীতে দেয়াল চাপায় মোঃ হানিফ (৪০) নামে একজন নিহত হয়। আহত হয়েছে আরও অন্তত তিনজন। স্থানীয়রা জানায়, গতকাল ভোরে কয়েক সেকেন্ডের টর্নোডোগতির এ ঝড়ো হাওয়ায় কাচা, আধা পাকা বসতঘরের পাশাপাশি গাছপালা, দোকান-পাট বিধ্বস্ত হয়। হালিশহর ফইল্ল্যাতলী, কলেজ রোড, উত্তর সরাইপাড়া লোহার পুল, সগির চৌধুরী পাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানান ১১ নম্বর দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোর্শেদ আক্তার চৌধুরী। তিনি বলেন, ওইসব এলাকায় ছোট ছোট ঘর ভাঙার পাশাপাশি বিভিন্ন ভবনের জানালার কাঁচও ভেঙে গেছে। উপড়ে পড়েছে বেশ কয়েক স্থানের বিদ্যুতের খুঁটি। টর্নোডোতে পাহাড়তলী বিতরণ বিভাগের অধীনে হালিশহর এলাকার বিভিন্ন স্থানে অন্তত ২০টি খুঁটি উপড়ে গেছে বলে জানান বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রামের প্রধান প্রকৌশলী প্রবীর কুমার সেন। এতে ওই এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হয়েছে। স্থানীয়রা এটি টর্নোডো বললেও মৌসুমি ঝড় অভিহিত করে এটি টর্নোডো নয় বলে জানান পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ শেখ ফরিদ আহমেদ। তিনি বলেন, এ মৌসুমে এ ধরনের ঝড় হয়। কোনো জায়গায় এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয়। এদিকে ঝড়ের সাথে বজ্রপাতে নগরীর বাকলিয়ায় মোঃ দেলোয়ার হোসেন নামে এক দোকান কর্মচারী মারা গেছে। বাকলিয়া থানার চাক্তাই ওসমানিয়া গলির বাসিন্দা দেলোয়ার ওই এলাকার ওসমান অ্যান্ড ব্রাদার্স নামের একটি দোকানের কর্মচারী ছিলেন। চন্দনাইশ উপজেলা সংবাদদাতা জানান, উপজেলায় দুর্গম (বান্দরবানসংলগ্ন) ধোপাছড়ি সম্বুনিয়া গ্রামে পাহাড়ধসে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। ভোরে পাহাড় ধসে চাপা পড়ে পুরো পরিবার। এতে দাদি মোখাও খিয়াং (৫৫) ও নাতি মি মাও খিয়াং (৭), খেও চাপ খিয়াং (১০) মারা যায়। এক দিন আগে ওই বাড়িতে বেড়াতে আসা ১৩ বছরের কিশোরী মেম্রাউ খিয়াংও পাহাড় ধসে মারা গেছে। এ ঘটনায় আহত আরও ৩ জনকে বান্দরবানের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নুরুল আবছার চৌধুরী, রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম) থেকে জানান, প্রবল বর্ষণে রাঙ্গুনিয়ায় পাহাড় ধসে ও গাছ চাপা পড়ে ২১ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। রাঙ্গুনিয়ার পৌরসভা সহ ১৫টি ইউনিয়ন বন্যার পানিতে থৈ থৈ করছে। শতশত ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। পানি বন্দি হয়ে পড়েছে হাজার হাজার পরিবার। ইসলামপুর বড়বিল মঘাইছড়ি এলাকায় পাহাড় ধসে তিন পরিবারে ১৩ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলেন শেফালী বেগম (৫৫), মো. হোসেন (২০), মো. পারভেস (১৭), রিজিয়া বেগম (৫৬), মুনমুন আক্তার (১৫), মানিক (২০), হিরু মিয়া (১৭), মইন্যারটেক এলাকার মো. সুজন (২৪), মুন্নি আক্তার (১৯), মনোয়ারা বেগম (১৮), জোৎ¯œা আক্তার (১৬), হালিমা (৬), মীম (২)। ইসলামপুর ইউপি চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন চৌধুরী মিল্টন জানান, পাহাড় ধসে মাটি চাপার ঘটনায় আরও কয়েকজন নিখোঁজ রয়েছে। আহত হয়েছে ৭/৮ জন। নিহতদের উদ্ধার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। জঙ্গল বগাবিলি বালু খালী এলাকার মোহাম্মদ ইসমাইল (৪২) তার স্ত্রী মুন্নি আক্তার (৩৭), শিশুকন্যা ইসামনি (৮) ও ছেলে ইবামনি (৪) এবং চাক্কর ঘোনা এলাকার নজরুল ইসলাম (৪০), তার স্ত্রী বাসু আকতার (৩৫) ছেলে ননাইয়া (১৫) ও মেয়ে সাথী আকতার (৯)।
রাউজান উপজেলা সংবাদদাতা জানান, উপজেলার উরকিরচরে ঝড়ো হাওয়ায় গাছ চাপা পড়ে ফরিদা খাতুন (৪৬) নিহত হয়েছেন। তিনি ওই এলাকার মোঃ সফির স্ত্রী। ডাবুয়া লাকায় পানির তোড়ে ভেসে যায় স্কুল ছাত্র নয়ন (১৪)। তিন বন্ধু মিলে খালের পানি স্রোত দেখতে গেলে সেখানে পড়ে যায় তারা। দু’জনকে স্থানীয়রা উদ্ধার করলেও নয়ন পানিতে তলিয়ে যায়। হলুদিয়া এলাকায় মোঃ সাবের নামে এক যুবক পাহাড়ী ঢলে ভেসে গেছে। পরে তার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ভারী বর্ষণের সাথে ঝড়ো হাওয়ায় উপজেলার গাছপালা, বসতঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে প্রায় দুই শতাধিক মাটির ঘর। পাহাড় ধসের আশঙ্কায় বন্দর নগরীর পাহাড় থেকে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি সরিয়ে নিতে অভিযান শুরু করেছে প্রশাসন। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন পাহাড় থেকে প্রায় দুই শতাধিক পরিবারকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। লালখান বাজার মতিঝর্ণা, এ কে খান, বায়েজিদ বোস্তামি ও মুরাদপুর এলাকায় উচ্ছেদ অভিযানের নেতৃত্ব দেন সহকারী কমিশনার ইশতিয়াক আহমেদ। তিনি বলেন, অতিবৃষ্টির কারণে চট্টগ্রামজুড়ে পাহাড় ধসের আশংকা বেড়ে যাওয়ায় জেলা প্রশাসকের নির্দেশে এ অভিযান শুরু হয়েছে। লালখান বাজার ও এ কে খান এলাকায় অভিযানের নেতৃত্বে দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদুর রহমান। তিনি বলেন, লালখান বাজার মতিঝর্ণা পাহাড়ের তালিমুল কোরআন মাদরাসা এলাকা থেকে ঝূঁকিপূণ বসতি উচ্ছেদে অভিযান শুরু হয়। আশপাশের বেশ কয়েকটি পাহাড় থেকে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারগুলোকে সরিয়ে দেয়া হয়। নগরীরর বায়েজিদ থানা ও মুরাদপুর এলাকার অভিযানে নেতৃত্ব দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হাবিবুল হাসান। ওই পাহাড় থেকেও বেশ কয়েকটি পরিবারকে সরিয়ে দেয়া হয়। । চট্টগ্রাম মহানগরী ও এর আশপাশের এলাকায় ৩১টি পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস করছে প্রায় লাখো মানুষ। মহানগরীর কয়েকটি পাহাড়ে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলেও উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়নি। অবশেষে গতকাল থেকে লোকজনকে সরিয়ে নিতে শুরু করে জেলা প্রশাসন।
মোঃ সাদাত উল্লাহ, বান্দরবান থেকে জানান, বান্দরবানের বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসে ৭ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৭ জন। সোমবার দিবাগত রাতে জেলা শহরের বালাঘাটা, লেমুঝিড়ি পাড়া ও আগা পাড়া এলাকায় এসব ঘটনা ঘট। এছাড়াও বান্দরবানের সাথে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। পাহাড় ধসে নিহতরা হলেন রেবা ত্রিপুরা (২৪), লতা বড়–য়া (৭), মিতু বড়–য়া (৫), শুভ বড়–য়া (৪), কামরুন নাহার (৪০) ও সুপ্রিয়া বেগম (৮)। রেবা ত্রিপুরা বান্দরবান সরকারি কলেজের এবং কামরুন নাহার ছাড়া অন্যরা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী বলে জানা গেছে। আহতরা হলেন পসান ত্রিপুরা (২২), বীর বাহাদুর ত্রিপুরা (১৬) ও দুজাকিন ত্রিপুরাসহ (২৬) আরো কয়েকজন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাত আড়াইটার দিকে বালাঘাটা পুলিশ ক্যাম্প এলাকায় পাহায় ধসের ঘটনা ঘটে। ঘটনার সময় হতাহতরা ঘরের মধ্যে ঘুমন্ত অবস্থায় ছিলেন। টানা বর্ষণের কারণে হঠাৎ পাহাড় ধসে ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়লে ঘুমন্ত অবস্থায় রেবা ত্রিপুরা মারা যান। অন্যদিকে রাতে শহরের লেমুঝিড়ি পাড়া ও আগা পাড়ায় অনুরূপভাবে পাহাড় ধসে আরো ৫ জন নিহত ও ৪ জন আহত হন। পরে স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে বান্দরবান সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। এদিকে, টানা বৃষ্টির কারণে বান্দরবান শহরের অধিকাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। শহর সংলগ্ন সাঙ্গু নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সারা দেশের সাথে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এতে করে এলাকাবাসী চরম দূর্ভোগের মধ্যে রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।