ইভিএম-এ ভোট কেন?
আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম-এ ১৫০ আসনে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। কাকতালীয় কিনা জানি না, ১৫০ সংখ্যাটা আমাদের এর আগে চিনিয়েছিলেন রকিবুল
মাওলানা এরফান শাহ্
গ্রিকদেবী থেমিসের মূর্তি নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে অনেক গবেষণা, আলোচনা ও সমালোচনা হয়েছে। অনেক মতামত, প্রবন্ধ ও কলাম লেখালেখি হয়েছে। অনেক বক্তব্য, সেমিনার ও সেম্পোজিয়াম হয়েছে। অনেক যুক্তি, তর্ক ও বিতর্ক হয়েছে। বহু মিছিল, মিটিং ও সমাবেশ হয়েছে। অনেক সময় অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এখনো স্থায়ী কোনো সমাধান হয়নি। ইসলামিক স্কলাররা কেনো গ্রিকদেবীর বিরোধীতা করছেন, তা না বুঝে আর না জেনে, তথাকথিত সুশীল সমাজ ও সেক্যুলারপন্থীরা বিরোধিতার খাতিরে বিরোধিতা করছেন। হাইকোর্টের মতো স্পর্শকাতর ও আস্থার একটি জায়গায় অহেতুক, অনাকাক্সিক্ষত ও বিতর্কিত একটি বিষয় জিঁইয়ে রেখে কৌশলে জাতিকে বিভক্ত, বিভাজন ও দুর্বল করা হচ্ছে।
বিগত ১১ এপ্রিল গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ও অঙ্গীকার আলেম সমাজকে আশান্বিত করেছিল। সেই ওয়াদা ও প্রত্যাশা পূর্ণ না হওয়ায় আলেম সমাজ হতাশ, হতবাক ও বাকরুদ্ধ। মনে রাখা দরকার, আলেম-ওলামারা ব্যক্তি স্বার্থে নয়, পার্থিব উদ্দেশ্যে নয় বরং ঈমানের স্বার্থে, ইসলামী ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির স্বার্থে গ্রিকদেবীর বিরোধিতা করছেন। এখানে ধর্মীয় বিশ্বাস, অনুভূুতি ও মূল্যবোধ জড়িত। তবে আলেম-ওলামা, তাওহিদী জনতা ও ধার্মিক শ্রেণির অহিংস আন্দোলন, নীরব প্রতিবাদ ও সামাজিক সংগ্রাম প্রমাণ করে এখানে কোনো ধরনের রাজনীতি, গোঁড়ামি ও বাড়াবাড়ি নেই। এটি আদর্শিক সংগ্রাম, মনস্তাত্তি¡ক প্রতিবাদ ও ঈমানী দায়িত্ব।
বলা হয়ে থাকে ‘বন্যরা বনে সুন্দর শিশুরা মাতৃক্রোড়ে’। বাংলাদেশে হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান সম্প্রদায় দূর্গা মূর্তি ও দেব-দেবীর পূজা অর্চনা করে। হিন্দুদের মন্দির, বৌদ্ধদের পেগোঢা ও খ্রিস্টানদের গির্জায় তাদের নিজ নিজ ধর্মের প্রতিমা, মূর্তি ও দেব-দেবী থাকবে, পূজা-অর্চনা ও প্রার্থনা চলবে, এ নিয়ে কারো অভিমত, আপত্তি ও দ্বিমত নেই। যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে। এটিই ধর্র্মীয় স্বাধীনতা, এটিই ধর্মনিরপেক্ষতা। ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। ধর্মনিরপেক্ষতার দাবীদার রাষ্ট্রের বিশেষ সম্প্রদায়ের দেবী ও মূর্তিকে প্রকাশ্যে প্রদর্শনী, রূপায়ন ও পদায়ন কোন প্রকার ধর্মনিরপেক্ষতা? নাম হচ্ছে গ্রিকদেবী থেমিসের মূর্তি, আবার বলা হচ্ছে, এটি মূর্তি নয় ভাস্কর্য। শিল্পকর্মকে ভাস্কর্য বলা হয়ে থাকে, মূর্তিকেও ভাস্কর্য বলা হয়। যদি প্রশ্ন করা হয় কিসের ভাস্কর্য? কিসের মূর্তি? তখন এর উত্তরটা কী হবে? প্রত্যেক শিল্পকর্ম, মূর্তি ও ভাস্কর্যের যে একটা প্রতিশব্দ বা নাম আছে সেই সত্যটা গ্রিকদেবী প্রেমিকরা স্বীকার করতে চান না।
মূর্তি ও দেব-দেবীর সাথে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কী সম্পর্ক? শিল্পকর্ম ও ভাস্কর্যের সাথে স্বাধীনতার কী সম্পর্ক? অবাক করা বিষয় হচ্ছে, যারা প্রতিমা, মূর্তি ও দেব-দেবীর পূজা করে সেই হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের লোকজনও কিন্তু গ্রিকদেবীর পক্ষে অবস্থান নেয়নি। অথচ কিছু নামধারী মুসলিম যেভাবে মূর্তির জন্য মায়াকান্না করছে, আহাজারি করছে, হায়হুতাশ করছে, ধর্মনিরপেক্ষতা গেল, চেতনা গেল, স্বাধীনতা গেল বলে! তা দেখে মনে হয় আলেম-ওলামা, মুসলিম ও ইসলামের বিরোধিতাই তাদের মুখ্য উদ্দেশ্য। তারা জনগণ ও সরকারকে বোকা মনে করে। তারা ধর্মনিরপেক্ষতা, চেতনা ও সংস্কৃতির দোহাই দিয়ে, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাকে মুসলমান ও ইসলামের মুখোমুখী দাঁড় করাতে চায়। এসব বামপন্থী ও ধর্ম বিদ্বেষীরা ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে ব্যস্ত। এসব চেতনা ও সংস্কৃতি ব্যবসায়ীরা সরকারের শুভাকাক্সক্ষী সেজে নিজেদের আখের গোচাচ্ছে, সরকার ও জাতিকে বিভ্রান্ত করছে। অথচ ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ এসব লোকগুলো জানে না, এ পৃথিবীতে উদারতা, স্বাধীনতা ও সংস্কৃতি ইসলামই নিয়ে এসেছে। হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানরাও চায় না তাদের প্রতিমা ও মূর্তি যত্রতত্র প্রদর্শন করে মানুষের অনাস্থা, বিতর্ক ও নিন্দা কুড়াক। মূর্তি থাকবে উপাসনালয়ে, প্রতিমা থাকবে মন্দিরে। আর শিল্পকর্ম ও ভাস্কর্য থাকবে যাদুঘর ও মিউজিয়ামে। তা প্রকাশ্যে মাঠে-ময়দানে ও পাবলিক প্যালেসে কেনো? তাও আবার জাতীয় ঈদগাহ ও সুপ্রিম কোর্টের সামনে! অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, কিছু নামধারী মুসলিম যেভাবে গ্রিকদেবীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে, তাতে মনে হয় ইসলামের বিরোধিতা করতে গিয়ে তারা গ্রিকদেবীর পূজা-অর্চনা করতেও দ্বিধাবোধ করবে না!
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল ‘সমতা, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা’। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধোঁয়া তোলে সমাজের পরতে পরতে হিংসা-বিদ্বেষ ছড়ানো, জাতিকে বিভাজিত ও বিভক্ত করা, দেশকে দুর্বল করাই কি চেতনাধারীদের ব্যবসা ও উদ্দেশ্য? সুপ্রিম কোর্টের সামনে বাংলাদেশের মানচিত্র আড়াল করে গ্রিকদেবী থেমিসের যে ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছিল তা অপসারণ করা হয়েছে। আর আমরা সমস্বরে চেঁচাতে লাগলাম চেতনা গেল, চেতনা গেল! হায়রে স্বাধীনতা, হায়রে চেতনা! মানচিত্র আচ্ছাদিত করলে চেতনা ঊর্ধ্বমুখী হয়ে যায়! আর মূর্তি অপসারণ করলে চেতনা ভুলন্ঠিত হয়! এ কেমন চেতনা? মানচিত্র বড় নাকি থেমিসের মূর্তি? কোথায় আমাদের বিবেক? কোথায় দেশপ্রেম? মুক্তিযুদ্ধের চেতনার লাগাম কি এখন মৃনাল হকের হাতে? শিল্পী মৃনাল হককে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের আলোচনা শোনা যাচ্ছে। আমি ঐসব বিতর্কে যেতে চাই না। হাইকোর্টের সামনে থেকে গ্রিকদেবীকে সরানোর সময় উনি বলেছেন যে, উনার মা মারা যাওয়ার পরেও নাকি তিনি এভাবে কাঁদেননি। তার কথায় প্রমাণ করে তিনি একজন নির্দয়, নকল শিল্পী ও আতœপ্রতারক। যার শিল্পকর্ম নিয়ে এত হৈচৈ তার মান নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার ডিন চারুশিল্পী নেছার হোসেন বলেছেন, অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করায় অনেক ভাস্কর্য ঢাকা শহরের সৌন্দর্য নষ্ট করেছে, সেগুলো সরিয়ে ফেলা উচিত। বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদের সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর মনিরুজ্জামান বলেছেন, ঢাকা শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য কোথায় কোন ধরনের ভাস্কর্য নির্মাণ করা যায় তা গবেষণা করে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। মৃনাল হক যেখানেই ভাস্কর্য নির্মাণ করেছেন সেটা নিয়ে বিতর্ক হয়েছে। তার শিল্পকর্ম কুরুচিপূর্ণ, বির্তকিত ও নি¤œমানের। প্রফেসর সলিমুল্লাহ খান বলেছেন, সুপ্রিম কোর্ট বিল্ডিং স্বয়ং এক অনন্য ভাস্কর্য। তার সন্মুখে গ্রিক মূর্তি বসিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বিল্ডিং এর সৌর্ন্দয নষ্ট করা হয়েছে।
আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি স্বাধীন বাংলাদেশ এক আজব দেশ! এখানে জাতীয়, আর্ন্তজাতিক ও গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয়ে দেশের প্রধান দু’ দল আওয়ামীলীগ ও বিএনপি একমত হতে পারেন না। তবে জাতির সৌভাগ্য, নজিরবিহীন ও প্রসংশার কথা, হাইকোর্ট থেকে গ্রিকদেবী থেমিসের মূর্তি অপসারণের পক্ষে প্রধান দল দুটি একমত পোষণ করেছে। উল্লেখ্য সরকার প্রধান, মাওলানা-মুফতি ও প্রধান দুই দল একমত পোষণ করা সত্তে¡ও কেনো সেই বিতর্কের পরিপূর্ণ অবসান হল না, তা এখন জনগণের মনে একবড় বিস্ময়কর ও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন?
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।