পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লা পরিবহনের জন্য ড্রেজিংয়ের ফলে হুমকীতে পড়বে ছোট-বড় জলজ প্রাণী। এমনকি আক্রান্ত মাছ ও প্রাণীগুলো বিলুপ্তও হয়ে যেতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বিজ্ঞানীরা। তারা বলেন, রামপালে কয়লা পরিবহনের জন্য গভীর চ্যানেল তৈরি করতে ৩৩ মিলিয়ন টন পলি-কাদা বঙ্গোপসাগর ও পশুর নদী থেকে ড্রেজিং করা হবে। আর এই ড্রেজিংয়ের ফলে সেখানকার মাছসহ জলজ প্রাণীগুলো হুমীতে পরবে। এতে এরা দ্রæত বিলুপ্ত হবে। রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে দুই বিদেশী বিজ্ঞানীর এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়। গতকাল (শনিবার) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচার থিয়েটার ভবনে সিরাজুল ইসলাম হলে “রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লা পরিবহন ও নদী ড্রেজিং পরিকল্পনার মূল্যায়ন’ এবং ‘তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যবহার্য কয়লা পরিবহন ও নদী ড্রেজিং পরিকল্পনার পরিবেশগত প্রভাব” শীর্ষক মূল্যায়ন প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটি ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)। মূল্যায়ন গবেষণাটি করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের মন্টানা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইলিয়াম ক্লায়েন্ডল ও অস্ট্রেলিয়ার জন ব্রæডি। অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ড.আনোয়ার হোসেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ড্রেজিং ও ডাম্পিংয়ের প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি হবে। পর্যায়ক্রমে পলি-কাদা পার্শ্ববর্তী ‘ইকোসিস্টেমে’ ছড়িয়ে পড়বে। এভাবে পানিতে ভাসমান পলির পরিমাণ (ঘোলাত্ব) বাড়িয়ে দেবে। মাছসহ জলজ প্রাণীদের কানকো, ফুলকা, নাকের ছিদ্রসহ বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ঘোলা পানির কাদা দিয়ে বন্ধ (ক্লোগিং) হয়ে যাবে। এতে জলজ জীবন বিপন্ন হবে। সরকার বঙ্গোপসাগর ও পশুর নদীতে ড্রেজিংয়ের ফলে সৃষ্ট পরিবেশের ওপর হুমকিগুলো পর্যাপ্তভাবে মূল্যায়ন করেনি বলে প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়। এই হুমকিগুলো নিরসন ও কমানোরও পর্যাপ্ত পরিকল্পনা নেই। ড্রেজিং করা ও পলি-কাদার বর্জ্য (ডিজপোজাল) সুন্দরবনের খাড়ি ও বঙ্গোপসাগরের পানি ঘোলা করবে। ফলে আলো প্রবেশ করবে না এবং খাদ্যচক্রের ভিত্তি ‘ফাইটোপ্লাঙ্কটন’ জন্মাতে বাধা সৃষ্টি করবে। ডাম্পিং করা পলি-কাদা ও ঘোলা পানি জলের তলদেশে বাস করা জলজ প্রাণীদের বৃদ্ধি ও বেঁচে থাকাকে হুমকিতে ফেলবে। ড্রেজিংয়ের ফলে শব্দদূষণ ও রাতে আলো দূষণ জলজ বন্য জীবনকে বিশৃঙ্খল করবে। ফলে প্রাণীরা ওই এলাকা এড়িয়ে চলবে এবং খাদ্য সংগ্রহের জায়গা কমে যাবে।
প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেন গবেষণা প্রতিবেদনের বিষয়ে বলেন, সরকার ড্রেজিংয়ের ফলে সৃষ্ট পরিবেশের উপর হুমকিগুলো পর্যাপ্তভাবে মূল্যায়ন করেনি এবং ঐ হুমকিগুলি নিরসন ও হ্রাস করার পর্যাপ্ত পরিকল্পনা করেনি। ড্রেজিং-এর উপর পরিবেশের মূল্যায়ন (ইআইএ) অসম্পূর্ণ এবং জনগনের মতামত বর্জিত। ড্রেজিং করা পলি-কাঁদা কোথায় ডাম্পিং করবে তা সুনির্দিষ্ট করেনি এবং জলজ প্রজাতিসমূহের উপর হুমকি মূল্যায়নও করেনি। তিনি বলেন, কয়লা পরিবহন দূর্ঘটনা জরুরীভাবে মোকাবেলা করার কোন ব্যবস্থা রাখা হয় নাই; আকরাম পয়েন্টে কয়লা ট্রান্সশিপমেন্ট হতে উদ্ভুত ঝুঁকি ও ঝুঁকি মোকাবেলা করার ব্যবস্থাগুলো পর্যাপ্তভাবে পর্যালোচনা করেনি সরকার এ ইআইএ রিপোর্টে।
রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ভবিষ্যতে ক্ষতির পর না ভেবে, এখনই যদি আমরা সুন্দরবন রক্ষার বিষয়ে চিন্তা করি এবং সঠিক পর্যালোচনা করে পদক্ষেপ গ্রহন করি তবে সুন্দরবন রক্ষা হবে, দেশ রক্ষা হবে। সুন্দরবন ও পরিবেশের ক্ষতি করে কোন পদক্ষেপ নেয়া সঠিক হবে না, মনে রাখতে হবে প্রকৃতি তার প্রতিশোধ নেবে। তিনি আরো বলেন, শুধু রামপাল প্রকল্প নয়, সুন্দরবনের কাছে শিল্প পার্ক হচ্ছে, এতে পাশের নদীগুলো ধ্বংস হচ্ছে, সুন্দরবনও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এসব নিয়ে স্থানীয় জনগণ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগণ আতঙ্কিত। তাই পরিবেশ বিধ্বংসী এসকল কার্যক্রমও বন্ধ করা জরুরী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রফেসর এম এম আকাশ বলেন, এমনিতেই এই প্রকল্পটি পরিবেশ ও অর্থনীতির দিক থেকে ঝুঁকিপূর্ণ। তাছাড়া সরকার এই প্রকল্প বিষয়ে যে সব যুক্তি বা কথা বলছে, তা কন্ট্রাক্ট চুক্তির সাথে মিলছে না। রামপাল প্রকল্প বাস্তবায়নে যে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি হয়েছে সেটাও এক ধরণের ঝুঁকিপূর্ণই বলা যায়। কারণ নির্মাণ চুক্তি অনুযায়ী এর পুরো কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোন প্রকার তদারকি করারও সুযোগ নেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত¡ বিভাগের প্রফেসর বদরুল ইমাম বলেন, আমরা যথেষ্ট তথ্য ও বৈজ্ঞানিক গবেষণা থেকে রামপাল প্রকল্পের বিরোধীতা করছি। তবে আমাদের এসকল তথ্য ও গবেষণার বিষয়ে যদি সরকারের কোন দ্বিমত থাকে তবে তথ্যভিত্তিক যুক্তি খÐনের আহবান জানান তিনি।
সাবেক তত্ত¡াবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন, বাপার সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন। এসময় উপস্থিত ছিলেন, বাপা’র যুগ্মসম্পাদক মিহির বিশ্বাস, আলমগীর কবির ও হুমায়ন কবির সুমনসহ বাপা ও সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।###
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।