Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ০৯ জুলাই ২০২৪, ২৫ আষাঢ় ১৪৩১, ০২ মুহাররম ১৪৪৬ হিজরী

সীতাকুন্ডে পানের মূল্যে হতাশ চাষিরা

| প্রকাশের সময় : ১০ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সৌমিত্র চক্রবর্তী, সীতাকু- থেকে :  সীতাকুন্ডে  পাইকারী দরে ৭২টি পান বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৫ টাকায়! যা এককথায় অচিন্তনীয়। এতে লাভ তো দূরের কথা, খরচও উঠে আসছে না। তার উপর দমকা হাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বহু পানের বরজ। ফলে কৃষকরা হতাশায় ভুগছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সীতাকু-ের বিভিন্ন স্থানে সুদীর্ঘকাল ধরে পান চাষ হয়ে আসছে। পাহাড়ের তলদেশে গড়ে উঠা কৃষকদের এসব পান বরজে প্রতিবছর প্রচুর পরিমান পানের ফলন হয়ে থাকে। উপজেলার প্রায় প্রত্যেকটি ইউনিয়নে কমবেশি পানের আবাদ হলেও সবচেয়ে পান চাষ হয় বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের বারৈয়াপাড়া, ফেদাইনগর, রহমতনগর, কলাবাড়িয়া, ধর্মপুর, পৌরসভাধীন বারৈয়াপাড়া, চৌধুরীপাড়া, ঢালিপাড়া এলাকায়। এ এলাকার পান স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রপ্তানি হয়। বর্তমানে এখানে পাইকারী বাজারে পানের দামে রীতিমত ধস নেমেছে। এখন পান বরজে এক বিড়া (৭২টি) পান বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৫ টাকায়! পানের মূল্যে এরকম ধস সচরাচর দেখা যায়নি। তারউপর সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট ঝড়ো হাওয়ায় পানবরজগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। একদিনে পানের দরপতন অন্যদিকে ঝড়ো হাওয়ায় বরজের ক্ষতিতে কৃষকরা হতাশায় ভুগছেন।
সরেজমিনে উপজেলার অন্যতম পান চাষ এলাকা বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের বারৈয়াপাড়া, ফেদাইনগর, ধর্মপুর, কলাবাড়ীয়া, রহমত নগর এলাকায় ঘুরে পান চাষীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পান চাষীরা এখন চরম দুর্দিন পার করছেন। ছোট দারোগাহাটের ধর্মপুর গ্রামের পান চাষী মৃত রজনী কুমার নাথ এর পত্র প্রবীন পান চাষী হারাধন নাথ জানান, তিনি একেবারে ছোট বয়স থেকে পানের চাষ করে আসছেন। অন্যান্য বছরের মত এবারও পাহাড়ের পাদদেশে ২০ শতক জমিতে (বরজ) পান চাষ করেছেন। তিনি বলেন, এখন পান চাষের সেই সুদিন নেই। বাপ-দাদার আমল থেকে বংশানুক্রমে পান চাষ করছি আমরা। এখন অনেক লাভ হতো। এখন খরচ বেড়েছে কিন্তু কমে গেছে পানের দাম। বরজে একজন শ্রমিক লাগালে তাকে দৈনিক ৪/৫ শ টাকা মুজুরি দিতে হয়। অথচ পাইকারি দরে এক বিড়া (৭২টি) পান বিক্রি করছি মাত্র ৫ টাকায়। অন্যান্য সময়ে এর চেয়ে কয়েকগুন বেশিতে পান বিক্রি হতো। তিনি বলেন, পানের ফলন ভালো হলেও দাম কম হওয়ায় সুফল পাচ্ছি না আমরা। তার উপর ঘূর্ণিঝড় মোরা’র সময় ঝড়ো হাওয়ায় পান বরজের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শুধু তার জমির উপরের চালা, ঘেরা-বেড়া প্রভৃতি উড়ে গিয়ে পানের লতা পড়ে অন্তত ২০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে।
একই এলাকার মৃত সৈয়দুল হকের পুত্র পান চাষী মোঃ আবুল মনছুর বলেন, বর্তমানে পানের দাম খুবই কম। সচরাচর এত কম দামে পান বিক্রি হয় না। কিন্তু চাহিদা একেবারে কমে যাওয়ায় চাষীরা এই নাম মাত্র মূল্যে পান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। তবে পাইকারী দরে তাদের কাছ থেকে ৭২টি পান মাত্র ৫টাকায় কিনলেও খুচরা বাজারে সেই পান এখনো বিড়া ২৫/৩০ থেকে ৫০/৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে এরই মধ্যে ঝড়ে তার পান বরজের বাঁশের মাচা ভেঙে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। একইভাবে পান চাষে লোকসানের কথা জানান, চাষী রঞ্জন দাস, লেদু নাথ, বানু নাথসহ অনেকে । তাদের সবার এক কথা, এত কম দামে পান বিক্রি হলে কৃষকরা বাঁচবে না। পান চাষীরা আরো বলেন, আমরা কৃষি ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংক ও এনজিও ঋণ নিয়ে পান চাষ করি। এই মূল্যে পান বিক্রি করে সেই ঋণ শোধ করা সম্ভব নয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কলাবাড়ীয়া ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা গোপাল চন্দ্রনাথ বলেন, ঘূর্ণি ঝড়ের দিন দমকা হাওয়ায় পান চাষী নয়ন চন্দ্রনাথ, মধুসূধন নাথ এর পান বরজের অনেক ক্ষতি হয়েছে। একই দিন সবজিরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এসব ক্ষতির একটি তালিকা উপজেলা কৃষি অফিসে জমা দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
সীতাকু- উপজেলা কৃষি অফিসার সুশান্ত সাহা বলেন, চলতি বছরে পানের উৎপাদন খুব ভাল হয়েছে। এবার ৩৪ হেক্টর জমিতে ৩৪৭ জন চাষী পান চাষ করেছে। জমিতে পান চাষ করার পূর্বে প্রয়োজনীয় আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি অনুযায়ী চাষাবাদ করলে অধিক পরিমান ফসল উৎপাদন ও লাভবান হবে কৃষক। পানের দাম কখনো বাড়ে আবার কখনো কমে। এটা সময়ের সাথে ঠিক হয়ে যাবে। আর বাতাসে পড়ে যাওয়া পানের গাছগুলো বাঁশের খুটির সাহায্যে সোজা করে তুলে দিলে আগের অবস্থায় ফিরে আসবে বলে জানান তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হতাশ

৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ