Inqilab Logo

মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

তুরস্কের পার্লামেন্টে কাতারের সামরিক ঘাঁটিতে সৈন্য মোতায়েনের প্রস্তাব পাশ

কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন সেনেগাল ও মৌরিতানিয়ার

| প্রকাশের সময় : ৯ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম



২৪০ জন সদস্য প্রস্তাবটির পক্ষে ভোট দেন
এপি : কাতারের সাথে কয়েকদিন আগে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সাথে সর্বশেষ  যোগ দিয়েেেছ পশ্চিম আফ্রিকার দেশ সেনেগাল ও মৌরিতানিয়া। সেনেগাল কাতার থেকে তার রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠিয়েছে।
প্রতিবেশী দেশ মৌরিতানিয়া কাতারের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার একদিন পর বুধবার সেনেগাল তার সিদ্ধান্তের কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা করে।
সেনেগালের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, সন্ত্র্রাসী গ্রæপগুলোকে অর্থ প্রদানের অভিযোগ ও ইরানের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কারণে কাতারের সাথে সম্পর্ক ছিন্নকারী উপসাগরীয় দেশগুলোর সাথে সংহতি প্রকাশ করে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, সেনেগালের সাবেক প্রেসিডেন্টের পুত্র করিম ওয়েড দুর্নীতির দায়ে জেল খাটার পর মুক্তি পেয়ে প্রায় এক বছর ধরে কাতারে বাস করছেন।  
ক্ষুদ্র, গ্যাস সমৃদ্ধ আমিরাত কাতারের বিরুদ্ধে সউদি আরব ও অন্যান্য দেশগুলোর পক্ষ নেয়ায়  মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের শীর্ষ আইন প্রণেতা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।
মার্কিন হাউজ স্পিকার পল রায়ান বুধবার ওয়াশিংটনে সাংবাদিকদের বলেন যে কাতারে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। কিন্তু আমি মনে করি কাতারের উপর আমাদের কিছুটা চাপ সৃষ্টি করা উচিত যাতে তারা তাদের পররাষ্ট্র নীতির উন্নয়ন করে।
ট্রাম্প যে টুইট করেছেন তাতে কাতারের সন্ত্রাসী গ্রæপগুলোকে অর্থ দেয় বলে সউদি দাবিকে সমর্থন করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এক কৌশলগত অংশীদার যে দেশে হাজার হাজার মার্কিন সেনা অবস্থান করছে সে দেশের বিরুদ্ধে এটি গুরুতর অভিযোগ। প্রেসিডেন্টের সমালোচকরা বলছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে এমন এক বিরোধের মধ্যে টেনে নিয়ে গেছেন যা মার্কিন কূটনীতিকরা পরিহার করতে চেয়েছিলেন।
সউদি আরব ও অন্যান্য দেশের সাথে বিরোধের মধ্যে কাতারের প্রতি সমর্থন প্রদর্শনের পদক্ষেপে কাতারের সাথে সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য আইন পাশ করতে তুরস্কের পার্লামেন্টে বিতর্ক শুরু হয়েছে।
সামরিক সদস্যদের প্রশিক্ষণ এবং কাতারে একটি তুর্কি সামরিক ঘাঁটিতে সৈন্য মোতায়েনের জন্য পৃথক একটি বিল বুধবার তুরস্কের পার্লামেন্টে উত্থাপন করার পর তা অনুমোদিত হয়। ২৪০ জন সদস্য প্রস্তাবটির পক্ষে ভোট দেন। মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান কাতারের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেন ও তাকে বিচ্ছিন্ন করার পদক্ষেপের জন্য অন্যান্য দেশের সমালোচনা করেন।
সউদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, মিসর ও ইয়েমেন সন্ত্রাসীদের আশ্রয় প্রদান এবং ইরানকে সমর্থন দেয়ার জন্য কাতারকে অভিযুক্ত করেছে। কাতার এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
তুরস্ক ও কাতারের মধ্যে গত কয়েক বছর ধরে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিরাজ করছে । কাতার তার দেশে তুরস্কের একটি সামরিক ঘাঁটি নির্মাণের জন্য ২০১৪ সালে একটি চুক্তি স্বক্ষর করে। তুর্কি কর্মকর্তারা বলেন, কাতারে ৩ হাজারের মত সেনা মোতায়েন করা হতে পারে।
জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সউদি আরব ও অন্যান্য দেশ কাতারের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার পর তারা উপসাগর সংকট বিষয়ে মার্কিন অবস্থান বোঝার চেষ্টা করছে।
ডোনাল্ড ট্র্পা বুধবার বলেন যে তিনি সন্ত্রাসবাদকে উৎসাহিত করা উগ্রপন্থী মতাদর্শের প্রতি সমর্থন দান বন্ধ করার জন্য  দাবি জানালে মধ্যপ্রাচ্যের নেতাগণ কাতারের ব্যাপারে অভিযোগ করেন। তিনি বিরাট মার্কিন সামরিক ঘাঁটি থাকা কাতারের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার সিদ্ধান্তেরও পরামর্শ দেন বলে মনে করা হয়।
বার্লিনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মার্টিন শেফার বুধবার বলেন যে যেখানে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের বিবৃতির সাথে জার্মানির অবস্থান একই,  আমি সেখানে বস্তুত আমেরিকার প্রেসিডেন্টের ১৪০টি অক্ষর মন্তব্যে পার্থক্য দেখতে পাচ্ছি।
শেফার সাংবাদিকদের বলেন, মার্কিন অবস্থান বোঝার জন্য জার্মান কূটনীতিকরা মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর ও জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সাথে যোগাযোগ রাখছেন।  
ইউ এ ই-র এক শীর্ষ কূটনীতিক এপিকে বলেন যে কাতারের রাষ্ট্র পরিচালিত কাতার বার্তা সংস্থা লক্ষ্য করে কথিত হ্যাকের পিছনে ইউ এ ই ছিল না।
ইউ এ ই-র পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আনোয়ার গারগাশ বুধবার বলেন যে কাতারের মার্কিন রাষ্ট্রদূতের ফাঁস হওয়া যেসব ই-মেইল সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে তা সত্যি।
মে’র শেষের দিকে বার্তা সংস্থা হ্যাক করার ঘটনা উপসাগরে বর্তমান সংকটের সূচনা করে।
গারগাশ এপিকে বলেন, ওয়াশিংটনে কাতারের রাষ্ট্রদূত ইউসেফ আল-ওতাইবার ফাঁস হওয়া ই-মেইল ইউ এ ই-র আসল উদ্বেগকে প্রদর্শন করেছে এবং ব্যক্তিগত ই-মেইলে আমরা যা বলি তা আমরা প্রকাশ্যেও বলি।
একজন শীর্ষ কাতারি কূটনীতিক কাতার বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের টুইটকে অত্যন্ত সাহসী ও অসাধারণ বলে আখ্যায়িত করেন।
আনোয়ার গারগাশ বুধবার এপিকে দেয়া এক বিরল সাক্ষাতকারে বলেন যে ট্রাম্প খুব খোলামেলা ছিলেন।
গারগাশ বলেন, তিনি টুইটে প্রকাশ্যে যা বলেছেন তা আমেরিকান রাজনীতিক, ইউরোপীয় রাজনীতি , আরব রাজনীতিকরা গোপনে বলেন।
তিনি বলেন, আমি আশা করি এটা কাতারের প্রতিও একটি সংকেত যে দ্বৈততার অধ্যায়, কিছু প্রকাশ্যে করার ও কোনো কিছু গোপনে করার দিন শেষ হয়ে গেছে।
ট্রাম্প মঙ্গলবার এক গুচ্ছ টুইট করেন। তিনি এর আগে টুইটে কাতারের আমিরকে বলেছিলেন যে আমরা এখন দীর্ঘ সময়ের জন্য বন্ধু। কিন্তু তার মঙ্গলবারের টুইট কাতারের আমিরের প্রতি তার অঙ্গীকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
ফ্রান্স চলমান কূটনৈতিক সংকটের একটি সমাধান খুঁজে বের করতে কাতারকে তার প্রতিবেশীদের প্রশ্নের জবাব দেয়ার আহবান জানিয়েছে।
ফ্রান্সের সরকারী মুখপাত্র ক্রিস্টোফার ক্যাস্টানার মন্ত্রিসভার সাপ্তাহিক বৈঠকের পর বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, কাতারকে অবশ্যই তার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।
ক্যাস্টানার বলেন, ফ্রান্স কোনো পক্ষ নিতে চায় না। এসব দেশের সাথে অংশীদারিত্ব বজায় রাখা, বিশেষ করে কূটনৈতিক, আর্থিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ মনে রেখে,  ফ্রান্সের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
সউদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উগ্রপন্থী গ্রæপগুলোর প্রতি সমর্থন বন্ধ ও এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশে হস্তক্ষেপ না করার জন্য কাতারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল –জুবেইর বুধবার বার্র্লিনে তার প্রতিপক্ষের সাথে এক বৈঠকের পর এ আহবান জানান। তিনি বলেন, তিনি আশা করছেন যে কাতার উগ্রপন্থী গ্রæপগুলোর প্রতি সমর্থন বন্ধ ও এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশে হস্তক্ষেপ না করতে আমাদের আহবানে সাড়া দেবে। তিনি কাতারের প্রতি প্রতিবেশী ও অংশীদার হওয়ার আহবান জানান।
আল জুবেইর বলন, তার দেশ ও অন্যান্যরা  কাতারের বিরুদ্ধে অত্যন্ত বেদনার সাথে এ পদক্ষেপ নিয়েছে। তিনি বলেন, ছোট দেশটির সাথে বিগত কয়েক বছর ধরেই এ সংকট চলছিল।
তিনি বলেন, তার দেশ, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মিসর যেসব দাবি করেছে কাতার তার জবাব দিয়ে অতীতের মত সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করবে বলে তিনি আশা করেন। তিনি বলেন, তিনি শীঘ্রই জবাবের আশা করছেন।
আল জুবেইর বলেন, অনেক দিন ধইে এ অবস্থা চলছে।  তিনি বলেন, সমঝোতা হয়েছিল যে কাতার কিছু সংস্থা ও ব্যক্তির সাথে সম্পর্ক রক্ষা ও সমর্থনের ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু দেশটি তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি।
একজন হামাস কর্মকর্তা বলেন, তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য কাতারের প্রতি সউদি আরবের আহবান দুঃখজনক এবং ফিলিস্তিনি স্বার্থের প্রতি আরবদের ঐতিহ্যবাহী সমর্থনের বিরোধী। হামাস কর্মকর্তা মুসির আল মাসরি বুধবার হামাসকে সন্ত্রাসবাদীদের তালিকায় রাখতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইহুদি আহবানের পক্ষ নেয়ার জন্য সউদি আরবকে অভিযুক্ত করেন।
আঞ্চলিক শক্তি সউদি আরবের প্রতি কঠোর ভাষায় আল মাসরির এ সমালোচনা হামাসের জন্য এক অস্বাভাবিক ঘটনা।
হামাস ২০০৭ সাল থেকে গাজা ভূখন্ড শাসন করছে। আন্তর্জাতিক ভাবে পরিহারকৃত হামাসকে বিদেশী যে কয়েকটি দেশ সমর্থন করে তাদের মধ্যে কাতার অন্যতম।
সউদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল জুবেইর মঙ্গলবার বলেন, কাতারকে অবশ্যই হামাসের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিচার মন্ত্রণালয় সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীদের হুঁশিয়ার করে বলেছে যে মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমবর্ধমান কূটনৈতিক সংকটের মধ্যে কাতারের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করলে তার জেল ও জরিমানা হতে পারে।  
বুধবার সামাজিক মাধ্যমে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, যারা দোষী প্রমাণিত হবে তাদের ৩ থেকে ১৫ বছরের জেল ও জরিমানা হতে পারে যা শুরু হবে ৫ লাখ দিরহাম (১ লখ ৩৬ হাজার ডলার) থেকে।
মন্ত্রণালয় ইউ এ ই অ্যাটর্নি জেনারেল  হামাদ সাইফ আল শামসিকে উদ্ধৃত করে এ হুঁশিয়ারিতে বলে, কাতারের বৈরী ও বেপরোয়া নীতির কারণে এ পরিস্থিতি ঘটেছে।
মধ্যপ্রাচ্যের অধিকাংশ দেশের তুলনায় উদার হলেও ইউ এ ই-তে কঠোর সাইবার অপরাধ ও কটূক্তি আইন কার্যকর রয়েছে যাতে কারো বিনানুমতিতে ছবি তুললে বা সে অপমানিত বোধ করলে অভিযুক্তকে গ্রেফতার, কারাদন্ড প্রদান বা বহিষ্কার করা হতে পারে।
এদিকে উপসাগরীয় দেশগুলো ও অন্যান্য আরব দেশ ক্রমবর্ধমান বিরোধের কারণে কাতারের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার পর মৌরিতানিয়াও তাদের সাথে যোগ দিয়েছে।
মৌরিতানিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে সন্ত্রাসী সংস্থাগুলোর সাথে যোগাযোগ রাখার জন্য কাতারকে অভিযুক্ত করা হয়।  বিবৃতিতে বলা হয়, কাতার অনেক আরব দেশে উগ্রবাদী চিন্তার প্রসার এবং গোলযোগ ও বিশৃঙ্খলা ছড়াচ্ছে যা মানুষের দুর্দশার কারণ হচ্ছে।
সউদি আরবের সাথে মৌরিতানিয়ার শক্তিশালী সামরিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে।
কাতারের ক্ষমতাসীন পরিবারের এক স্পষ্টভাষী সদস্য দেশে নেতৃত্বে পরিবর্তনের সম্ভাবনা উত্থাপন করেছেন। সুলতান সুদ আল কাসেমি বলেন, কাতারের নাগরিকরা প্রশ্ন  তুলেছেন যে এ ঘটনায় স্বয়ং নেতৃত্বের পরিবর্তন হবে কিনা।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজার ক্ষমতাসীন পরিবারের আল-কাসেমি বুধবার এপিকে বলেন, কাতার তার গোয়ার্তুমি ও হঠকারিতা বন্ধ করবে বলে তিনি আশা করেন। তিনি বলেন, এ সংকট থেকে উদ্ধার পেতে হলে কাতারকে আল জাজিরা নিউজ নেটওয়ার্ক বন্ধ বা প্রচার সীমিত করতে হবে এবং উগ্রপন্থী গ্রæগুলের অর্থায়ন বন্ধ করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কাতার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ